রোযা কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল নয়! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৯
রোযা কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল নয়! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৯
ইসলামে রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, এ ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত এবং হাদবস বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসা শাস্ত্রেও রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের কাছে রোযা গুরুত্বপূর্ণ কোনো আমল নয়। দেখুন, তারা কী লিখেছে–
এই ধর্মের পণ্ডিতদের, আলেমদের কাছে দীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ, রোজা, দাড়ি, তারাবি, টুপি, টাখনু, মিলাদ, মেসওয়াক ইত্যাদি আর জেহাদ একেবারেই নিষ্প্রয়োজন। এজন্য তাদের এই ইসলাম একটি মৃত, আল্লাহর রসুলের ইসলামের বিপরীতমুখী ধর্ম। -সওমের উদ্দেশ্য : পৃ. ১৫
বিকৃত এসলামে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, আত্মার পরিচ্ছন্নতার জন্য নানারকম ঘষামাজা, আধ্যাত্মিক উন্নতির ওপর গুরুত্ব প্রাধান্য দেয়া হোল। কারণ এরা ঐ এবাদত, উপাসনা নিয়ে যত বেশি ব্যস্ত থাকবে ব্রিটিশরা তত নিরাপদ হবে। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১১২
উপরিউক্ত দুটি বক্তব্য থেকে তারা দুটো বিষয়ের দাবী করলো–
১. রোযা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়।
২. রোযার ওপর গুরুত্ব দেওয়া বিকৃত ইসলামের কাজ।
ইসলাম কী বলে?
রমাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। সুতরাং রামাযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা ও নারীর ওপর পূর্ণ রমাযান মাসে রোযা রাখা ফরয। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন–
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। –সুরা বাকারা : ১৮৩
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোযা রাখে। –সুরা বাকারা : ১৮৫
উপরন্তু রোযা এমন একটি ফরজ বিধান, যা কোনো, ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করলে ও এ ফরজ বিধানকে ইবাদত বলে অস্বীকার করলে, তাকে জাহান্নামে যেতে হবে এটাও আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (স্থিরীকৃত) সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। –সুরা নিসা : ১৪
আয়াতত্রয় থেকে সুস্পষ্টভাবে রোযা ফরয হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। যেখানে খোদ আল্লাহ তাআলা-ই রোযার গুরুত্ব দিয়েছেন, সেখানে হেযবুত তওহীদের দাবী হলো–রোযা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
তাছাড়া হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
قَالَ اللهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোযা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু রোযা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। রোযা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোযাদার। যাঁর কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিস্কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। রোযাদারের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। –সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৯০৪
হযরত আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِعَمَلٍ قَالَ: عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَا عَدْلَ لَهُ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِعَمَلٍ قَالَ: عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَا عِدْلَ لَهُ
আমি বললাম–হে আল্লাহর রসূল, আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, রোযা রাখো, কারণ, এর কোনো তুলনাই নেই। পুনরায় আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনিও পুনরায় বললেন, তুমি রোযা রাখো। কারণ, এর কোনো তুলনাই নেই। –সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ২২২৩
প্রিয় পাঠক, এতো এতো হাদিস থাকার পরও যারা মনে করে, রোযা কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল নয়, তাদের ব্যাপারে কী বলা যেতে পারে? নিশ্চয় তারা হয়তো মিথ্যাবাদী অথবা ইসলামাবিদ্বেষী।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২৫৬৫

মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন