জিহাদ না করে রোযা রেখে কোনো ফায়দা নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮১
জিহাদ না করে রোযা রেখে কোনো ফায়দা নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮১
রোযা ইসলামের একটি স্বতন্ত্র বিধান এবং ইসলামের ৫ স্তম্ভের একটি। এই বিধানকে অন্য কোনো বিধানের সাথে শর্তযুক্ত করা অন্যায্য।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবী হলো, রোযা কোনো স্বতন্ত্র আমল নয়, বরং এটা জিহাদের ট্রেণিং। সুতরাং যদি কেউ জিহাদ না করে, তাহলে তার রোযা রাখার কোনো মূল্য নেই। দেখুন, তারা কী লিখেছে,
আল্লাহ সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে অশান্তির আগুনে জ্বলতে দেখেও যারা কাপুরুষের মতো করে লুকায় আর এবাদত মনে পড়ে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, নানা উপাসনায় মশগুল থাকে তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। –ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৩
আল্লাহর লা'নতের নির্মম শাস্তি সত্ত্বেও এই জাতি তওবা করে তওহীদে, সিরাতুল মুস্তাকিমে, দ্বীন কায়েমায় ফিরে না এসে, নির্বোধের মত নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত হাজার রকমের নফল ইবাদত করে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৬০
কেউ যদি নামাজ রোজা হজ্ব পূজা-অর্চনা উপাসনা ইত্যাদি নিয়ে দিনরাত ব্যপৃত থাকে, কিন্তু তার ভিতরে মানবতার গুণাবলী না থাকে তাহলে সে প্রকৃত ধার্মিক নয়, আল্লাহর প্রকৃত উপাসক নয়। –ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ১৪
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো–মানবতার প্রতি অশান্তি দূর করার প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে রোযা রাখার ভেতরে কোনো ফায়দা নেই।
ইসলাম কী বলে?
সুতরাং ‘জিহাদ ছেড়ে দিলে নামাজের কোনো মূল্য নেই' এগুলো নিতান্তই ধর্মবিরোধী বক্তব্য। তাছাড়া রোযা হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَان
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত–এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল,নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৮
এ হাদিসে ইসলামের স্তম্ভ করা হয়েছে ৫ টি। এর মধ্যে কিন্তু জিহাদ নেই। অবশ্যই ইসলামে জিহাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিন্তু রোযার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, জিহাদ ইসলামের স্তম্ভ নয়। সুতরাং যে রোযা ইসলামের স্তম্ভ, সেটাকে অন্য কোনো আমলের সাথে শর্তযুক্ত করা ইসলাম বিকৃতির শামিল।
তাছাড়া হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنْ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ خَيْرٌ مِنْ الْمَاشِي وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنْ السَّاعِي مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ فَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِهِ
শীঘ্রই ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে ভাল (ফিতনামুক্ত) থাকবে, দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে, চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে। যে ব্যক্তি সে ফিতনার দিকে তাঁকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। কাজেই, তখন কেউ যদি কোথাও কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থল কিংবা আত্মরক্ষার ঠিকানা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৭০৮২
এই হাদিসটির দিকে খেয়াল করুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন ফিতনায় পুরো দুনিয়া ভরে যাবে, তখন তিনি নিজের ঈমান-আমল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য আদেশ করলেন। এ হাদিস থেকে বুঝা গেলো, মানবতার কাজ করা থেকেও নিজের ঈমান-আমল হিফাযত করা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ হেযবুত তওহীদের কাছে নিজের ঈমান-আমলের চেয়ে মানবদরদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২১৫৮

মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন