জিহাদ ও মানবতার কাজ না করে হজ্ব করলে কোনো ফায়দা নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৪
জিহাদ ও মানবতার কাজ না করে হজ্ব করলে কোনো ফায়দা নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৪
জিহাদ ও মানবতার সেবার সাথে হজ্বের কোনো সম্পর্ক নেই। হজ্বের সম্পর্ক সামর্থ্যের সাথে শর্তযুক্ত।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবী হলো, জিহাদ ও মানবতার কাজ না করে হজ্ব করলে কোনো ফায়দা নেই। দেথুন, তারা লিখেছে,
কেউ যদি নামাজ রোজা হজ্ব পূজা-অর্চনা উপাসনা ইত্যাদি নিয়ে দিনরাত ব্যপৃত থাকে, কিন্তু তার ভিতরে মানবতার গুণাবলী না থাকে তাহলে সে প্রকৃত ধার্মিক নয়, আল্লাহর প্রকৃত উপাসক নয়। –ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ১৪
আল্লাহর লা'নতের নির্মম শাস্তি সত্ত্বেও এই জাতি তওবা করে তওহীদে, সিরাতুল মুস্তাকিমে, দ্বীন কায়েমায় ফিরে না এসে, নির্বোধের মত নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত হাজার রকমের নফল ইবাদত করে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৬০
প্রকৃত এসলামের, জীবনব্যবস্থার উদ্দেশ্য মানব জীবনের নিরাপত্তা, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, আর বর্তমান এসলামের উদ্দেশ্য ওসব কিছুই নয় বরং সময়মত নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ্ব করা, রোজা রাখা, দাড়ি রাখা, লম্বা পোশাক ও খাটো পায়জামা পরা ইত্যাদি। –হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃ. ৭
আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে অশান্তির আগুনে জ্বলতে দেখেও যারা কাপুরুষের মতো ঘরে লুকায় আর এবাদত মনে করে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, নানা উপাসনায় মশগুল থাকে তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৩
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, মানবতার কষ্ট দূরিভূত না করে বা দ্বীন কায়েমের জিহাদ না করে হজ্ব করে কোনো ফায়দা নেই।
ইসলাম কী বলে?
জিহাদ যখন ফরজ হবে, তখন জিহাদ করা যেমন আবশ্যক, ঠিক তেমনি হজ্ব করার সামর্থ হলে হজ্ব করাও তেমন ফরজ। সুতরাং ‘জিহাদ না করে হজ্ব করে কোনো ফায়দা নেই বা হজ্ব না করে জিহাদ করে কোনো ফায়দা নেই’ এ ধরণের কথা বলা ভ্রান্তি, বরং ইসলামী বিধান অনুযায়ী যখন যেটা ফরজ হবে, তখন সেটা করা আবশ্যক। এ বিষয়ে নিন্মোক্ত কয়েকটি হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে জবাব পাওয়া যাবে আশা করি–
এক. নারীদের জন্য জিহাদের চেয়ে হজ্বকে উত্তম বলেছেন খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! أَلاَ نَغْزُوْا وَنُجَاهِدُ مَعَكُمْ؟ فَقَالَ : لَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ الْحَجُّ، حَجٌّ مَبْرُوْرٌ. فَقَالَتْ عَائِشَةُ فَلاَ أَدَعُ الْحَجَّ بَعْدَ إِذْ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم-
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিহাদ হলো হজ্ব, কবুল হজ্ব। আয়েশা রা. বললেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ্জ ছাড়ব না। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৮৬১
দুই. হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَأْذِنُهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ أَحَىٌّ وَالِدَاكَ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। এরপর তিনি তাঁর নিকট জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের উভয়ের (খিদমাত করে) সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করো। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৪৯
তিন. হাদিস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا صَرُورَةَ فِي الإِسلامِ
(সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) হজ্ব পালন না করে সন্ন্যাসী থাকা ইসলামে নেই। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ১৭২৯
চার. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِي حَاجَّةً قَالَ: «اذهبْ فاحجُجْ مَعَ امرأتِكَ
কোনো পুরুষ যেন কখনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোনো মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল, অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্বের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব করো। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৩০০৬
এসকল হাদিস থেকে বুঝা গেলো, জিহাদ বা মানবতার কাজ না করে হজ্ব করে কোনো ফায়দা নেই কথাটা ভিত্তিহীন।

মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন