হাদীসে কুদসী

من صحاح الأحاديث القدسية

কিতাবের হাদীস সমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ২০ টি

হাদীস নং: ১
কিতাবের হাদীস সমূহ
১। হযরত আবু ইদরিস খাওলানী (রহ) থেকে বর্ণিত, আবু যর গিফারী (রাযিঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। কাজেই তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব।

হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার্য চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন উলঙ্গ আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন গুনাহ করে থাক। আর আমিই সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কছে মাগফিরাত কামনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।

হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করার মত কিছু খুজে পাবে না যা দিয়ে তোমরা আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করার মত কিছু খুজে পাবে না, যাতে আমি উপকৃত হতে পারি। হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম ব্যক্তি হতে তোমাদের শেষ ব্যক্তি, তোমাদের সকল মানুষ ও জ্বীন তোমাদের মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশী ভয় পায়, তোমরা সত্যই যদি তার মত হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না।

হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম, তোমাদের শেষ, তোমাদের সকল মানুষ, সকল জ্বিন তোমাদের মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তার মত হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জ্বীন যদি কোন বিস্তীর্ণমাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে চাও আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী ঘাটতি হবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সুচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু ঘাটতি হয়।

হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় দান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ লাভ করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজকেই দোষারোপ করে।
أحاديث الكتاب
1- عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلاَنِيِّ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ الغفاري رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا رَوَى عَنِ اللَّهِ، تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ " يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ- يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ- يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ- يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ- يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُونِي- يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا- يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا- يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلاَّ كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ- يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلاَ يَلُومَنَّ إِلاَّ نَفْسَهُ "
হাদীস নং: ২
কিতাবের হাদীস সমূহ
২। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি যতদিন আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে আশা করতে থাকবে তোমার পাপ যাই হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দিব, এতে আমার কোন পরওয়া নেই। হে আদম সন্তান! তোমার পাপরাশি যদি আকাশের মেঘমালায়ও উপনীত হয়, এরপর তুমি যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবুও আমি সব ক্ষমা করে দিব, এতে আমার কোন পরওয়া নেই। হে আদম সন্তান! তুমি যদি যমীন পরিমাণ পাপরাশি নিয়েও আমার কাছে এসে উপস্থিত হও, আর আমার সঙ্গে যদি কিছুর শরীক না করে থাক, তবে আমি সেই পরিমাণ ক্ষমা ও মাগফিরাত তোমাকে দান করব।
أحاديث الكتاب
2- عن أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " قَالَ اللَّهُ تبارك و تعالي: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي- يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي- يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً
হাদীস নং: ৩
কিতাবের হাদীস সমূহ
৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি শিরক হতে শরীকদের মধ্যে সর্বাধিক বেপরোয়া। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমি ব্যতিরেকে অন্য কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে (শরীক ও শিরকী কাজকে) তাঁর অবস্থায় ছেড়ে দেই।
أحاديث الكتاب
3- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
হাদীস নং: ৪
কিতাবের হাদীস সমূহ
৪। শুফাই আসবাহী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার মদীনায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন এক ব্যক্তিকে ঘিরে লোকেরা সমবেত হয়ে আছে। তিনি বললেনঃ ইনি কে? লোকেরা বললঃ ইনি আবু হুরায়রা (রাযিঃ)।

(শুফাইয়া বলেনঃ) আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং তাঁর সামনে গিয় বসে পড়লাম। তিনি তখনো লোকদের হাদীস শুনাচ্ছিলেন। তিনি যখন নিরব এবং একা হলেন আমি তাঁকে বললামঃ আমি আপনার কাছে সত্যিকার ভাবেই যাঞ্ছা করছি যে আপনি আমাকে হাদীস শুনাবেন যা আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছ থেকে শুনেছেন, বুঝেছেন এবং জেনেছেন।

আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বললেনঃ আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমাকে হাদীস বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বর্ণনা করেছেন এবং আমি যা বুঝেছি ও জেনেছি। এরপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) কেমন জানি ভাব–তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এরপর তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন এবং বললেনঃ অবশ্যই আমি তোমাকে হাদীস বর্ণনা করব যে হাদীস রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই ঘরে বর্ণনা করেছিলেন। আমাদের সঙ্গে তখন তিনি এবং আমি ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিল না।

এরপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) আরো গভীরভাবে উন্মনা হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন এবং মুখমণ্ডল মুছলেন। বললেনঃ আমি তা করব। অবশ্যই তোমাকে এমন হাদীস বর্ণনা করব যে হাদীস রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বর্ণনা করেছেন। তিনি এবং আমি এই ঘরে ছিলাম। তিনি এবং আমি ছাড়া সেখানে আমাদের সঙ্গে আর কেউ ছিল না।

তারপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) গভীরভাবে তন্ময়াভিভূত হয়ে পড়লেন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে দীর্ঘক্ষণ ঠেস দিয়ে রাখলাম। তারপর তাঁর হুশ হল। বললেনঃ রাসয়ূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালার জন্য নাযিল হবেন। প্রত্যেক উম্মতই সেদিন থাকবে নতজানু। প্রথম যাদের তলব হবে তারা হল কুরআনের হাফিজ, আল্লাহর পথে শহীদ এবং প্রচুর ধন–সম্পদের অধিকারী একব্যক্তি। এরপর আল্লাহ তাআলা কুরআনের পাঠক সেই ব্যক্তিকে বলবেনঃ আমার উপর যে বিষয় নাযিল করেছিলাম তোমাকে আমি কি সেই বিষয়ের জ্ঞান দেই নাই?

সে বলবেঃ হ্যাঁ, অবশ্যই দিয়েছিলেন, হে আমার রব। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ যে জ্ঞান তুমি লাভ করেছিলে তদনুসারে কি আমল করেছিলে? লোকটি বলবেঃ আমি তো রাত–দিন এই কুরআন নিয়েই কায়েম থেকেছি।

আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ, ফিরিশতাগণও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ, পরে আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ তোমার নিয়ত ছিল তোমাকে যেন বলা হয় ’‘অমুক ক্বারী’’। আর তোমাকে তা বলাও হয়েছে।

এরপর ধনাঢ্য ব্যক্তিটিকে আনা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ তোমাকে কি আমি প্রচুর বিত্ত–বৈভব দেই নি? এমনকি কারো প্রতিই তোমাকে মুখাপেক্ষী হিসাবে রাখিনি? লোকটি বলবেঃ হ্যাঁ, অবশ্যই হে আমার রব। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে আমি যা দিয়েছিলাম তা দিয়ে কি আমল করেছ তুমি?

লোকটি বলবেঃ তা দিয়ে আমি আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রেখেছি এবং সাদ্‌কা–খয়রাত করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ, ফিরিশতাগণও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। পরে আল্লাহ বলবেনঃ তোমার ইচ্ছা ছিল তোমাকে যেন বলা হয়, ’‘অমুক ব্যক্তি খুব দানশীল’’। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে।

আল্লাহর পথে নিহত এক ব্যক্তিকে আনা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ কিসে তুমি নিহত হয়েছিলে? লোকটি বলবেঃ আপনি আপনার পথে জিহাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই আমি লড়াই করলাম। শেষে আপনার পথে নিহত হলাম। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তোমার কামনা ছিল যে, ’‘তোমাকে যেন বলা হয়,’‘অমুক ব্যক্তি বাহাদুর’’। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে।

তারপর নবী (ﷺ) আমার হাটুতে হাত চাপড়ালেন এবং বললেনঃ হে আবু হুরায়রা, এই তিনজই হল আল্লাহর প্রথম মাখলুক যাদের দিয়ে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হবে।

মুআবিয়া (রাযিঃ)–এর তলোয়ার বরদার আলা‘ ইবনে হাকীম (রাহঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি মুআবিয়া (রাযিঃ)–এর কাছে এল এবং আবু হুরায়রা (রাযিঃ)–এর বরাতেই এই হাদীসটি বর্ণনা করল। তখন মুআবিয়া (রাযিঃ) বললেনঃ এই তিন ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয় তবে অন্যান্য লোকদের কি হাল হবে? এরপর তিনি এত প্রবলভাবে কাঁদতে লাগলেন যে, আমাদের ধারণা হল তিনি বুঝি হালাক হয়ে যাবেন। আমরা বললামঃ এই লোকটি আজ অমঙ্গল নিয়ে এসেছে।

পরে মুআবিয়া (রাযিঃ) আত্মসংবরণ করলেন এবং চেহারা থেকে অশ্রু মুছে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সত্য বলেছেনঃ

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর শোভা কামনা করে তবে দুনিয়াতে আমি তাদের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করি এবং সেখানে তাদের কোন কম দেওয়া হবে না। তাদের জন্য আখিরাতে জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই নাই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল গণ্য হবে আর তাদের কর্ম হবে নিরর্থক। (সূরা হূদ ১১ঃ ১৫, ১৬)।
أحاديث الكتاب
4- عن شُفَيّ الأَصْبَحِيَّ أَنَّهُ، دَخَلَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَدِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالُوا أَبُو هُرَيْرَةَ . فَدَنَوْتُ مِنْهُ حَتَّى قَعَدْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُوَ يُحَدِّثُ النَّاسَ فَلَمَّا سَكَتَ وَخَلاَ الناس قُلْتُ لَهُ أَنْشُدُكَ بِحَقٍّ وَبِحَقٍّ لَما حَدَّثْتَنِي حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتَهُ وَعَلِمْتَهُ . فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتُهُ وَعَلِمْتُهُ . ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً فَمَكَثَ قَلِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ . ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ فَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا وَهُوَ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ . ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ وَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا مَعَهُ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَهُ أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ . ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً شَدِيدَةً ثُمَّ مَالَ خَارًّا عَلَى وَجْهِهِ فَأَسْنَدْتُهُ عَلَىَّ طَوِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ حَدَّثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِيَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ يقتل فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لِلْقَارِئِ أَلَمْ أُعَلِّمْكَ مَا أَنْزَلْتُ عَلَى رَسُولِي قَالَ بَلَى يَا رَبِّ . قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عُلِّمْتَ قَالَ كُنْتُ أَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ . فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ إِنَّ فُلاَنًا قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ . وَيُؤْتَى بِصَاحِبِ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ أَلَمْ أُوَسِّعْ عَلَيْكَ حَتَّى لَمْ أَدَعْكَ تَحْتَاجُ إِلَى أَحَدٍ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ . قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا آتَيْتُكَ قَالَ كُنْتُ أَصِلُ به الرَّحِمَ وَأَتَصَدَّقُ . فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ . وَيُؤْتَى بِالَّذِي قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ فِي مَاذَا قُتِلْتَ فَيَقُولُ أُمِرْتُ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِكَ فَقَاتَلْتُ حَتَّى قُتِلْتُ . فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ " . ثُمَّ ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رُكْبَتِي فَقَالَ " يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أُولَئِكَ الثَّلاَثَةُ أَوَّلُ خَلْقِ اللَّهِ تُسَعَّرُ بِهِمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " قَالَ الْعَلاَءُ بْنُ أَبِي حَكِيمٍ وكَانَ سَيَّافًا لِمُعَاوِيَةَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ قَدْ فُعِلَ بِهَؤُلاَءِ هَذَا فَكَيْفَ بِمَنْ بَقِيَ مِنَ النَّاسِ ثُمَّ بَكَى مُعَاوِيَةُ بُكَاءً شَدِيدًا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ هَالِكٌ وَقُلْنَا قَدْ جَاءَنَا هَذَا الرَّجُلُ بِشَرٍّ ثُمَّ أَفَاقَ مُعَاوِيَةُ وَمَسَحَ عَنْ وَجْهِهِ وَقَالَ صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُْ : (مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ)
হাদীস নং: ৫
কিতাবের হাদীস সমূহ
৫। হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ আমি এমন মাখলুক সৃষ্টি করেছি যাদের যবান মধুর চেয়েও মিষ্টি কিন্তু তাদের হৃদয় তিক্ত ফলের রসের চেয়েও তিক্ত।
আমি আমার শপথ করে বলছি, আমি অবশ্যই এদের উপর এমন ফিতনা আপতিত করব যা এদের সবচেয়ে সহিষ্ণু লোকটিকেও হয়রান করে তুলবে। এরা কি আমার ব্যাপারে প্রবঞ্চনায় আছে না আমার প্রতি দৃষ্টতা প্রদর্শন করছে।
أحاديث الكتاب
5- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لَقَدْ خَلَقْتُ خَلْقًا أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَقُلُوبُهُمْ أَمَرُّ مِنَ الصَّبِرِ فَبِي حَلَفْتُ لأُتِيحَنَّهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الْحَلِيمَ مِنْهُمْ حَيْرَانًا فَبِي يَغْتَرُّونَ أَمْ عَلَىَّ يَجْتَرِءُونَ؟
হাদীস নং: ৬
কিতাবের হাদীস সমূহ
৬। হযরত যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত, হুদায়বিয়ায় রাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল ও উহার চিহ্ন সকালেও বিদ্যমান ছিল, সেই অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদিগকে ফজরের নামায পড়ালেন। যখন নামায সমাপ্ত করিলেন, তখন পবিত্র মুখমণ্ডল লোকের দিকে করিলেন এবং তাদেরকে বলিলেনঃ তোমরা অবগত আছ কি তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তাহারা বলিলেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁহার রসূল অধিক অবগত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিলেনঃ (আল্লাহ) বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্য হইতে কিছুসংখ্যক লোক প্রভাত করেছে আমার প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) রাখিয়া, আর (কিছুসংখ্যক) প্রভাত করেছে আমার সাথে কুফরী করে। যে বলেছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, তার আমার প্রতি ঈমান রয়েছে, আর নক্ষত্রের প্রতি অস্বীকারী হয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক নক্ষত্রের দ্বারা বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে।
أحاديث الكتاب
6- عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ رضي الله عنه قَالَ: صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنْ اللَّيْلِ فَلَمَّا انْصَرَفَ النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ لهم هل تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ قَالَ أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِي فَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي مُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ
হাদীস নং: ৭
কিতাবের হাদীস সমূহ
৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, আদম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যমানাকে গালি দেয়; অথচ আমিই যমানা। আমার হাতেই ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।
أحاديث الكتاب
7- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: " يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ، بِيَدِي الأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
হাদীস নং: ৮
কিতাবের হাদীস সমূহ
৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “বনী আদম আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে; অথচ এরূপ করা তার জন্য সমীচীন হয়নি। বনী আদম আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার জন্য উচিত হয়নি। আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ আমাকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অনুরূপভাবে তিনি আমাকে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন না। অথচ তাকে পুনরায় জীবিত করা অপেক্ষা প্রথম সৃষ্টি করা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমাকে তার গালি দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ্ তাআলা সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি একক, কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও কেউ জন্ম দেয়নি এবং কেউ আমার সমতুল্য নয়”।
أحاديث الكتاب
8- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " قَالَ اللَّهُ: كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ، وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ، فَأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ: لَنْ يُعِيدَنِي، كَمَا بَدَأَنِي، وَلَيْسَ أَوَّلُ الخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ إِعَادَتِهِ، وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ: اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا وَأَنَا الأَحَدُ الصَّمَدُ، لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفْئًا أَحَدٌ
হাদীস নং: ৯
কিতাবের হাদীস সমূহ
৯। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, ‘‘অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার লুঙ্গী স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি এ দু’টি জিনিসে আমার শরীক হতে চায়, আমি তাকে দোজখে নিক্ষেপ করবো।’’
أحاديث الكتاب
9- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ "
হাদীস নং: ১০
কিতাবের হাদীস সমূহ
১০। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং [রাসূল (ﷺ)] বললেন, আল্লাহ তাআলার হাত পরিপূর্ণ। (তোমার) রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কি পরিমাণ খরচ করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হতে সম্পদের কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তাআলার আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান।
أحاديث الكتاب
10- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: أَنْفِقْ أُنْفِقْ عَلَيْكَ، وَقَالَ-ﷺ-: يَدُ اللَّهِ مَلْأَى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ، وَقَالَ-ﷺ-: أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى المَاءِ، وَبِيَدِهِ المِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ "
হাদীস নং: ১১
কিতাবের হাদীস সমূহ
১১। হযরত আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।
أحاديث الكتاب
11- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ "
হাদীস নং: ১২
কিতাবের হাদীস সমূহ
১২। একদা হযরত উবাদা ইবনে ছামিত (রাযিঃ) তার পুত্রকে বলেনঃ হে আমার প্রিয় পুত্র! তুমি ততক্ষণ ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পাবে না, যতক্ষণ না তুমি অনুধাবন কর যে, ভালো মন্দ যা কিছু তোমার ভাগ্যে রয়েছে তা ভুল করে অন্য কোথাও চলে যাবে না। এমনিভাবে যা না হওয়ার তা ভুলক্রমে তোমার ভাগ্যে ঘটে যাবে, তা হবে না। এরপর তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ সর্ব প্রথম কলম তৈরী করেন। এরপর তিনি কলমকে বলেনঃ লিখ। কলম বলেঃ হে আমার প্রতিপালক, আমি কি লিখব? তখন আল্লাহ বলেনঃ তুমি কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট সমস্ত জীবের তাকদীর লিখ। হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস ব্যতীত মারা যাবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
أحاديث الكتاب
12- عن عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ لاِبْنِهِ يَا بُنَىَّ إِنَّكَ لَنْ تَجِدَ طَعْمَ حَقِيقَةِ الإِيمَانِ حَتَّى تَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَمَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ لَهُ اكْتُبْ . قَالَ رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَىْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ " . يَا بُنَىَّ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ مَاتَ عَلَى غَيْرِ هَذَا فَلَيْسَ مِنِّي "
হাদীস নং: ১৩
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৩। মুসলিম ইবনে ইয়াসার জুহানী (রাহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর (রাযিঃ)–এর নিকট (وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ) (সূরা আ’রাফঃ ১৭২) আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম)–কে সৃষ্টি করলেন এবং তার পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাসেহ করলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হইতে তার সন্তানদেরকে বাহির করলেন এবং বললেন, আমি এদেরকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা বেহেশতের কাজ করবে। অতঃপর পুনরায় তার পৃষ্ঠদেশে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বুলালেন এবং তার আর কিছু সংখ্যক সন্তান বাহির করলেন এবং বললেন, আমি এদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা দোযখের কাজ করবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমল করায় লাভ কি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহু পাক যখন কোন বান্দাকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময়েও সে নেক কাজ করে মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা দোযখীদের কাজ করিয়ে থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাকে খারাপ কাজ করিয়ে মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ তখন তাকে দোযখে প্রবেশ করিয়ে থাকেন।
أحاديث الكتاب
13- عَنْ مُسْلِمِ بْنِ يَسَارٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضي الله عنه سُئِلَ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسْأَلُ عَنْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى خَلَقَ آدَمَ ثُمَّ مَسَحَ ظَهْرَهُ بِيَمِينِهِ حتي اسْتَخْرَجَ مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقْتُ هَؤُلَاءِ لِلْجَنَّةِ وَبِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَعْمَلُونَ ثُمَّ مَسَحَ ظَهْرَهُ فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقْتُ هَؤُلَاءِ لِلنَّارِ وَبِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ يَعْمَلُونَ فَقَالَ رَجُلٌ فَفِيمَ الْعَمَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ إِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلْجَنَّةِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ مِنْ أَعْمَالِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُدْخِلُهُ رَبُّهُ الْجَنَّةَ وَإِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلنَّارِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ مِنْ أَعْمَالِ أَهْلِ النَّارِ فَيُدْخِلُهُ رَبُّهُ النَّارَ
হাদীস নং: ১৪
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৪। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞাসা করবেন, যদি পৃথিবীর সব ধন–সম্পদ তোমার হয়ে যায়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে? সে উত্তর দিবে হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদম (আলাইহিস সালাম)– এর পৃষ্ঠদেশে ছিলে, তখন আমি তোমার কাছে এর চেয়েও সহজ একটি জিনিস চেয়েছিলাম। সেটা হল, তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করে শিরক করতে লাগলে।
أحاديث الكتاب
14- عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَرْفَعُهُ: " إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَقُولُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ كُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَقَدْ سَأَلْتُكَ مَا هُوَ أَهْوَنُ مِنْ ذلك وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ، أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي، فَأَبَيْتَ إِلَّا الشِّرْكَ "
হাদীস নং: ১৫
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৫। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করলেন, তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও, সে সব ফিরিশতাদের গিয়ে সালাম দাও। অতপর তুমি মনোযোগ সহকারে শুনবে, তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ, এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষন (তাহিয়্যা)। তাই তিনি (আদম আ.) গিয়ে বললেনঃ ‘আসসালামু আলাইকুম’। তারা (ফিরিশতা) জবাবে বললেনঃ “আসসালামুআলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তারা ওয়া রাহমাতুল্লাহ বাক্যটি বাড়িয়ে বললেন। তারপর নবী (ﷺ) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।
أحاديث الكتاب
15- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثم قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ "
হাদীস নং: ১৬
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৬। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম)–কে সৃষ্টি করে তার মাঝে রূহ ফুঁকলেন। তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং বললেনঃ আলহামদুলিল্লাহ। যাবতীয় হামদ আল্লাহ তাআলার জন্য।
তিনি আল্লাহর অনুমতিতে তার তারিফ করলেন। পরওয়ারদিগার আল্লাহ তাআলা বললেনঃ হে আদম আল্লাহ তাআলা তোমার উপর রহম করুন। সেখানে বসা একদল ফিরিশতার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ ঐ ফিরিশতাদের কাছে যাও এবং তাদের বল আসসালামু আলাইকুম।

যাহোক ফিরিশতারা বললেনঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
পরে আদম (আলাইহিস সালাম) তার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এলেন তার প্রতিপালক বললেনঃ এ হল তোমার এবং তোমার সন্তানদের পরস্পরের অভিবাদন।
এরপর আল্লাহ তাআলা তার দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় তাকে বললেনঃ যে কোনটি ইচ্ছা তুমি নাও। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমার প্রতিপালকের ডান হাতটি আমি গ্রহণ করলাম। আর আমার প্রতিপলকের উভয় হাতই ডান হাত বরকতময়। এরপর তিনি সেটি প্রসারিত করলেন তাতে ছিল আদম ও তার সন্তান–সন্তুতিদের প্রতিকৃতি। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হে প্রতিপালক এসব কি? তিনি বললেনঃ এ হল তোমার সন্তান–সন্তুতি।
প্রতিটি মানুষের দুই চোখের মাঝে তার বয়স লিপিবদ্ধ ছিল। তাদের মাঝে একজন ছিল সবচেয়ে জ্যোতিময়। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হে প্রতিপালক ইনি কে? তিনি বললেনঃ তিনি হলেন আপনার সন্তান দাউদ। তার বয়স লিখেছি চল্লিশ বছর।
তিনি বললেনঃ হে প্রতিপালক! এর বয়স বৃদ্ধি করে দিন।
আল্লাহ তাআলা বললেনঃ তাই থাকবে – যা লেখা হয়েছে।
তিনি বললেনঃ আমি আমার বয়স থেকে একে ষাট বছর দিয়ে দিলাম।
আল্লাহ তাআলা বললেনঃ তুমি আর তোমার অঙ্গীকার যা তা–ই ঘটবে।

এরপরে আদম (আলাইহিস সালাম) যতদিন ইচ্ছা জান্নাতে বসবাস করলেন। পরে তাকে সেখান থেকে নীচে নামিয়ে দেওয়া হল। তিনি তার নিজের বয়স গণনা করে রাখছিলেন। শেষে একদিন মৃত্যুর ফিরিশতা তার কাছে এলেন। তিনি বললেনঃ বড় তাড়াতাড়ি এসে গেলেন। আমার বয়সতো এক হাজার বছর লেখা হয়েছিল। ফিরিশতা বললেনঃ হ্যাঁ ঠিকই কিন্তু আপনিতো আপনার সন্তান দাউদকে ষাট বছর দিয়ে দিয়েছিলেন।
আদম (আলাইহিস সালাম) তা মানতে অস্বীকার করলেন। তাই তার সন্তানরাও আজ অস্বীকার করে। আদম ভুলে গেলেন তাই তার সন্তানরাও আজ ভুলে যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ সে দিন থেকে চুক্তি পত্র লিখে রাখার এবং সাক্ষী রাখার বিধান দেওয়া হয়।
أحاديث الكتاب
16- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَنَفَخَ فِيهِ الرُّوحَ عَطَسَ فَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ فَحَمِدَ اللَّهَ بِإِذْنِهِ فَقَالَ لَهُ رَبُّهُ رحمكَ اللَّهُ يَا آدَمُ اذْهَبْ إِلَى هؤلاء الْمَلاَئِكَةِ إِلَى مَلإٍ مِنْهُمْ جُلُوسٍ فَقُلِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ . قَالُوا وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ . ثُمَّ رَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ بَنِيكَ بَيْنَهُمْ . فَقَالَ اللَّهُ لَهُ وَيَدَاهُ مَقْبُوضَتَانِ اخْتَرْ أَيَّهُمَا شِئْتَ قَالَ اخْتَرْتُ يَمِينَ رَبِّي وَكِلْتَا يَدَىْ رَبِّي يَمِينٌ مُبَارَكَةٌ . ثُمَّ بَسَطَهَا فَإِذَا فِيهَا آدَمُ وَذُرِّيَّتُهُ فَقَالَ أَىْ رَبِّ مَا هَؤُلاَءِ فَقَالَ هَؤُلاَءِ ذُرِّيَّتُكَ فَإِذَا كُلُّ إِنْسَانٍ مَكْتُوبٌ عُمْرُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ فَإِذَا فِيهِمْ رَجُلٌ أَضْوَؤُهُمْ أَوْ مِنْ أَضْوَئِهِمْ . قَالَ يَا رَبِّ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا ابْنُكَ دَاوُدُ قَدْ كَتَبْتُ لَهُ عُمْرَ أَرْبَعِينَ سَنَةً . قَالَ يَا رَبِّ زِدْهُ فِي عُمْرِهِ . قَالَ ذَاكَ الَّذِي كَتَبْتُ لَهُ . قَالَ أَىْ رَبِّ فَإِنِّي قَدْ جَعَلْتُ لَهُ مِنْ عُمْرِي سِتِّينَ سَنَةً قَالَ أَنْتَ وَذَاكَ . قَالَ ثُمَّ أُسْكِنَ الْجَنَّةَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أُهْبِطَ مِنْهَا فَكَانَ آدَمُ يَعُدُّ لِنَفْسِهِ . قَالَ فَأَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُ آدَمُ قَدْ عَجِلْتَ قَدْ كُتِبَ لِي أَلْفُ سَنَةٍ . قَالَ بَلَى وَلَكِنَّكَ جَعَلْتَ لاِبْنِكَ دَاوُدَ سِتِّينَ سَنَةً فَجَحَدَ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ . قَالَ فَمِنْ يَوْمِئِذٍ أُمِرَ بِالْكِتَابِ وَالشُّهُود
হাদীস নং: ১৭
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৭। হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, (হাশরের দিন) নূহ এবং তাঁর উম্মত (আল্লাহর দরবারে) হাযির হবেন। তখন আল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি (আমার বাণী) পৌছিয়েছ? তিনি বলবেন,হাঁ হে আমার রব! তখন আল্লাহ তার উম্মতকে জিজ্ঞসা করবেন,নূহ কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছিয়েছেন। তারা বলবে, না, আমাদের কাছে কোন নবীই আসেননি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর উম্মত। (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন) তখন আমরা সাক্ষ্য দিব। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর বাণী পৌছিয়েছেন। আর এটাই হল আল্লাহর বাণীঃ আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যেন তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হও। (২ঃ ১৪৩) الْوَسَطُ অর্থ ন্যায়বান।
أحاديث الكتاب
17- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَجِيءُ نُوحٌ وَأُمَّتُهُ، فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى، هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ نَعَمْ أَيْ رَبِّ، فَيَقُولُ لِأُمَّتِهِ: هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ لاَ مَا جَاءَنَا مِنْ نَبِيٍّ، فَيَقُولُ لِنُوحٍ: مَنْ يَشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأُمَّتُهُ، فَنَشْهَدُ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ، وَهُوَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ: (وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ) وَالوَسَطُ العَدْلُ "
হাদীস নং: ১৮
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডলে কালিমা এবং ধূলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) (আল্লাহর কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নীচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সর্বশরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে।
أحاديث الكتاب
18- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لاَ تَعْصِنِي، فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَاليَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ، فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لاَ تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ، فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الأَبْعَدِ؟ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: " إِنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ عَلَى الكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ، مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ، فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ، فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ
হাদীস নং: ১৯
কিতাবের হাদীস সমূহ
১৯। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কোন ব্যক্তির একথা বলা উচিৎ হবে না যে, আমি (নবী) ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে উত্তম। নবী (ﷺ) একথা বলতে গিয়ে ইউনুস (আলাইহিস সালাম)– এর পিতার নাম উল্লেখ করেছেন।
أحاديث الكتاب
19- عن ابْن عَبَّاسٍ رضي الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فيما يرويه عن ربه قَالَ " لاَ يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى ". وَنَسَبَهُ إِلَى أَبِيهِ.
হাদীস নং: ২০
কিতাবের হাদীস সমূহ
২০। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মালাকুল মাউত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বললো, মুসা, আপনার পালনকর্তার ডাকে সাড়া দিন। রাবী বলেন, তখন মালাকুল মাউতের চোখের উপর মুসা (আলাইহিস সালাম) একটা থাপ্পড় মারলেন, এতে তাঁর চোখ নষ্ট করে ফেলেছিলেন। এরপর ফিরিশতা আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না এবং সে আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তাঁর চোখ ভালো করে দিলেন এবং বললেন, আমার বান্দার কাছে আবার যাও এবং বল, তুমি কি আরও হায়াত চাও? যদি তা চাও তবে তোমার হাত একটি বলদের পিঠের উপর রাখ। এতে তোমার হাত যতগুলো পশম ঢেকে ফেলবে, তত বছর তুমি বেঁচে থাকবে।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর কি? ফিরিশতা বললেন, এরপর মৃত্যু বরণ করবে। মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, তবে নিকটবর্তী সময়ে এখনই ভালো। (অতপর তিনি দোআ করলেন,) আয় রব! আমাকে পবিত্র ভূমির একটি পাথরের টিলার নিকটে নিয়ে মৃত্যু দান করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি যদি ওখানে হতাম তবে পথের কিনারে লাল বালিয়াড়ির পাশে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।
أحاديث الكتاب
20- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «جَاءَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوسَى فَقَالَ لَهُ: أَجِبْ رَبَّكَ، قَالَ: فَلَطَمَ مُوسَى عَيْنَ مَلَكِ الْمَوْتِ فَفَقَأَهَا، قَالَ: فَرَجَعَ الْمَلَكُ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ: إِنَّكَ أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لَكَ لَا يُرِيدُ الْمَوْتَ وَقَدْ فَقَأَ عَيْنِي، قَالَ: فَرَدَّ اللَّهُ عَيْنَهُ، قَالَ: ارْجِعْ إِلَى عَبْدِي فَقُلْ لَهُ: الْحَيَاةَ تُرِيدُ؟ فَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْحَيَاةَ فَضَعْ يَدَكَ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ فَمَا وَارَتْ يَدُكَ مِنْ شَعْرَةٍ، فَإِنَّكَ تَعِيشُ بِهَا سَنَةً، قَالَ: ثُمَّ مَهْ؟ قَالَ: ثُمَّ تَمُوتُ: قَالَ: فَالْآنَ مِنْ قَرِيبٍ , قَالَ: رَبِّ أَدْنِنِي مِنَ الْأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ. وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:» والله لَوْ أَنِّي عِنْدَهُ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ "