আখলাকুন্নবী (ﷺ)

أخلاق النبي وآدابه لأبي الشيخ الأصبهاني

কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ২০ টি

হাদীস নং: ১
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১। হযরত (জা’ফর) সাদিক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সকল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
أبواب الكتاب
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى سَتْرِهِ، مَا أَعْجَزَ الْمَسْتُورَ عَنْ شُكْرِهِ مَا ذَكَرَ مِنْ حُسْنِ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَرَمِهِ وَكَثْرَةِ احْتِمَالِهِ، وَشِدَّةِ حَيَائِهِ، وَعَفْوِهِ، وَجُودِهِ، وَسَخَائِهِ، وَشَجَاعَتِهِ، وَتَوَاضُعِهِ، وَصَبْرِهِ عَلَى الْمَكْرُوهِ، وَإِغْضَائِهِ، وَإِعْرَاضِهِ عَمَّا كَرِهَهُ، وَرِفْقِهِ بِأُمَّتِهِ، وَكَظْمِهِ الْغَيْظَ، وَحِلْمِهِ، وَكَثْرَةِ تَبَسُّمِهِ، وَسُرُورِهِ، وَمِزَاحِهِ، وَبُكَائِهِ، وَحُزْنِهِ، وَمَنْطِقِهِ، وَألْفَاظِهِ، وَقَوْلِهِ عِنْدَ قِيَامِهِ مِنْ مَجْلِسِهِ، وَمَشْيِهِ، وَالْتِفَاتِهِ، وَذِكْرِ مَحَبَّتِهِ الطِّيبَ، وَتَطَيُّبِهِ، وَذِكْرِ قَمِيصِهِ، وَجُبَّتِهِ، وَشُكْرِهِ رَبَّهُ عِنْدَ لُبْسِهِ فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
1 - أَخْبَرَنَا الشَّيْخُ الْإِمَامُ الْأَجَلُّ السَّيِّدُ أَبُو الْفَضْلِ الْعَبَّاسُ ابْنُ الشَّيْخِ أَبِي الْعَبَّاسِ السَّقَانِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ، فِي الْمُحَرَّمِ سَنَةَ اثْنَتَيْنِ وَخَمْسِمِائَةٍ قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي عَاصِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ مِهْرَانَ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ، عَنِ الصَّادِقِ قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا»
হাদীস নং: ২
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
২। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর চেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী (দুনিয়ায়) আর কোন লোক ছিল না। তাঁর সাহাবা ও পরিবারবর্গের কেউ যখন তাঁকে ডাকতেন, তখন তিনি তার জবাবে বলতেনঃ ‘লাব্বায়িক’ আমি হাযির আমি হাযির’। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ তাঁর সম্পর্কে নাযিল করেছেন وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
2 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ نَصْرٍ الْجَمَّالُ، حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ يَحْيَى، قَالَ: حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عُلْوَانَ الْكُوفِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا كَانَ أَحَدٌ أَحْسَنَ خُلُقًا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا دَعَاهُ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ وَلَا مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ إِلَّا قَالَ: لَبَّيْكَ، فَلِذَلِكَ أَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: {وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ} [القلم: 4]
হাদীস নং: ৩
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৩। হযরত আবু জা’ফর [মুহাম্মাদ বাকের (রাহঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! জবাবে তিনি বললেনঃ ‘ইয়া লাব্বায়ক’।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
3 - نَا أَحْمَدُ بْنُ جَعْفَرٍ، نَا جَرِيرُ بْنُ يَحْيَى، نَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ الْفَضْلِ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ سُوَيْدٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: يَا لَبَّيْكَ
হাদীস নং: ৪
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৪। হযরত যায়দ ইবন সাবিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (ﷺ) -এর কাছে বসতাম, তখন যদি আমরা আখিরাতের কথা আলোচনা শুরু করতাম, তিনিও আমাদের সাথে তাতে মশগুল হতেন। আমরা যদি দুনিয়ার আলোচনা করতাম, তিনিও আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করতেন। আর আমরা যদি পানাহারের আলোচনা করতাম তিনিও তাতে অংশ নিতেন । আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে এ সমুদয় কথা তোমাদেরকে বলছি।
খারিজা (রাহঃ) বলেন, আমরা যায়দ ইবন সাবিত (রাযিঃ)-কে বললাম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর চরিত্র সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমি তাঁর কোন্ কোন্ চরিত্র সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবো। আমি তো তাঁর প্রতিবেশী ছিলাম। তাঁর উপর যখনই ওহী নাযিল হতো, আমাকে ডেকে পাঠাতেন। আমি তা লিখে ফেলতাম। আর আমরা যখন দুনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতাম; তিনিও আমাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিতেন। এরপর পূর্বানুরূপ রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন। ।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
4 - نَا عَبْدَانُ، نَا زَيْدُ بْنُ الْحَرِيشِ، نَا خَالِدُ بْنُ الْقَاسِمِ، نَا لَيْثٌ، حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ بْنُ أَبِي الْوَلِيدِ، أَنَّ ابْنَ خَارِجَةَ يَعْنِي سُلَيْمَانَ حَدَّثَهُ، أَنَّ أَبَاهُ خَارِجَةَ بْنَ زَيْدٍ حَدَّثَهُ، أَنَّ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ قَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّا إِذَا جَلَسْنَا إِلَيْهِ إِنْ أَخَذْنَا بِحَدِيثٍ فِي ذِكْرِ الْآخِرَةِ أَخَذَ مَعَنَا، وَإِنْ أَخَذْنَا فِي ذِكْرِ الدُّنْيَا أَخَذَ مَعَنَا، وَإِنْ أَخَذْنَا فِي ذِكْرِ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ أَخَذَ مَعَنَا، فَكُلُّ هَذَا أُحَدِّثُكُمْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» وَبِإِسْنَادِهِ قَالَ: قُلْنَا لِزَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ: أَخْبِرْنَا عَنْ أَخْلَاقِ، رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: عَنْ أَيِّ أَخْلَاقِهِ أُخْبِرُكُمْ؟ كُنْتُ جَارَهُ، فَإِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْي بَعَثَ إِلَيَّ فَأَكْتُبَهُ، وَكُنَّا إِذَا ذَكَرْنَا الدُّنْيَا ذَكَرَهَا مَعَنَا - فَذَكَرَ مِثْلَهُ
হাদীস নং: ৫
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৫। সিমাক (রাহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবন সামুরা (রাযিঃ)-কে বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর সাহচর্যে বসতেন ? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। (আমি তাঁর সাহচর্যে বসে দেখলাম) তিনি অধিকতর নীরব থাকতেন। সাহাবা (রাযিঃ) তাঁর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন; জাহিলী যুগের প্রসঙ্গ আলোচনা করতেন এবং পরিহাস করতেন। তাঁরা যখন হাসতেন, তখন তিনিও মুচকি হাসতেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
5 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الْمَرْوَزِيُّ، نَا عَاصِمُ بْنُ عَلِيٍّ، نَا قَيْسٌ، نَا سِمَاكٌ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: قُلْتُ لَهُ: أَكُنْتَ تُجَالِسُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، كَانَ طَوِيلَ الصَّمْتِ، وَكَانَ أَصْحَابُهُ يَتَنَاشَدُونَ الشِّعْرَ عِنْدَهُ، وَيَذْكُرُونَ أَشْيَاءَ مِنْ أَمَرِ الْجَاهِلِيَّةِ وَيَضْحَكُونَ، فَيَبْتَسِمُ مَعَهُمْ إِذَا ضَحِكُوا
হাদীস নং: ৬
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৬। হযরত মুগীরা ইব্‌ন শু’বা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসুন খেয়েই মসজিদে গেলাম। (সালাত) এক রাকআত আমার ছুটে ছিল। আমি মসজিদে প্রবেশ করতেই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রসুনের গন্ধ অনুভব করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, এই বৃক্ষ (রসুন) কেউ ভক্ষণ করলে তার গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন আমাদের কাছে না আসে। (রাবী বলেন) আমি সালাত শেষ করে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি আপনার হাত মুবারক একটু আমাকে দিন । তিনি তাঁর হাতখানা আমাকে দিলেন। [হুমাইদ (রাহঃ) বলেন, এ সময় তো মুগীরা নবী (ﷺ) -কে অবশ্যই কোমল ও নিকটবর্তী পেয়ে থাকবেন]১। তখন আমি তাঁর হাতখানা আমার জামার হাতার মধ্য দিয়ে আমার বক্ষের উপর রাখলাম। তখন নবী (ﷺ) লক্ষ করলেন যে, আমার বুকের উপর একটি পট্টি বাঁধা রয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ আরে তোমার তো ওযর রয়েছে।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
6 - أَخْبَرَنَا الْمَرْوَزِيُّ، نَا عَاصِمُ بْنُ عَلِيٍّ، نَا أَبُو هِلَالٍ، نَا حُمَيْدُ بْنُ هِلَالٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى، عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ: أَكَلْتُ ثُومًا فَانْتَهَيْتُ إِلَى الْمُصَلَّى وَقَدْ سُبِقْتُ بِرَكْعَةٍ، فَلَمَّا دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ، وَجَدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رِيحَ الثُّومِ، فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ قَالَ: مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ فَلَا يَقْرَبَنَا حَتَّى يَذْهَبَ رِيحُهَا، أَوْ رِيحُهُ، فَلَمَّا قَضَيْتُ صَلَاتِي جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ لَتُعْطِيَنِّي يَدَكَ، فَأَعْطَاهُ يَدَهُ - قَالَ حُمَيْدٌ: إِذَنْ لَيَجِدَنَّهُ سَهْلًا قَرِيبًا - فَأَدْخَلْتُ يَدَهُ فِي كُمِّي، فَوَضَعَهَا عَلَى صَدْرِي، فَإِذَا أَنَا مَعْصُوبُ الصَّدْرِ، فَقَالَ: أَمَا إِنَّ لَكَ عُذْرًا
হাদীস নং: ৭
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৭। হযরত জারীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) তাঁর একটি গৃহে প্রবেশ করলেন। গৃহটি লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। [তাই জারীর (রাযিঃ) বসার স্থান না পেয়ে] গৃহের বাইরে বসে পড়লেন । নবী (ﷺ) যখন তাঁকে (বাইরে বসতে) দেখলেন, তখন তিনি তাঁর কাপড় ভাঁজ করে জারীর (রাযিঃ)-এর দিকে ছুঁড়ে দিলেন এবং বললেন, এই কাপড়টির উপর বসো। জারীর (রাযিঃ) ঐ কাপড়টি তুলে তাঁর চেহারায় লাগালেন এবং চুমু দিলেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
7 - حَدَّثَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ الطِّهْرَانِيُّ، نَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ رَاشِدٍ الْآدَمَيُّ، نَا مُسْلِمٌ، نَا عَمْرُو بْنُ عَوْنٍ الْقَيْسِيُّ، نَا سَعِيدٌ الْجَرِيرِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمُرَ، عَنْ جَرِيرٍ، " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ بَعْضَ بُيُوتِهِ، فَامْتَلَأَ الْبَيْتُ، وَدَخَلَ جَرِيرٌ فَقَعَدَ خَارِجَ الْبَيْتِ، فَأَبْصَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخَذَ ثَوْبَهُ فَلَفَّهُ وَرَمَى بِهِ إِلَيْهِ، وَقَالَ: اجْلِسْ عَلَى هَذَا، فَأَخَذَهُ جَرِيرٌ، وَوَضَعَهُ عَلَى وَجْهِهِ، وَقَبَّلَهُ "
হাদীস নং: ৮
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৮। জুবায়র ইবন নুফায়র (রাহঃ) বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, তাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন’। অর্থাৎ নবী (ﷺ) -এর চরিত্র ছিল সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা। পবিত্র কুরআনে যতগুলো চারিত্রিক দিক-নিদের্শনা দেয়া হয়েছে নবী (ﷺ) জীবন ছিল তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তব নমুনা।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
8 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ أَحْمَدَ، نَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُمَرَ، نَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، نَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَسَأَلْتُهَا عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتِ: الْقُرْآنُ
হাদীস নং: ৯
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
৯। ইমাম হাসান বসরী (রাহঃ) কুরআন কারীমের আয়াত فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ (হে মুহাম্মাদ) (ﷺ) আল্লাহ্‌র দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন। (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এই ছিল মুহাম্মাদ -এর চরিত্র, যা আল্লাহ্ তাআলা বর্ণনা করেছেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
9 - حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ أَبَانَ، نَا الْحَسَنُ بْنُ أَحْمَدَ، نَا مُوسَى بْنُ مُحَلِّمٍ، نَا عَبْدُ الْكَبِيرِ، نَا عَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ، عَنِ الْحَسَنِ، فِي قَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ: {فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ} [آل عمران: 159] قَالَ: هَذَا خُلُقُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، نَعَتَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১০। আসওয়াদ (রাহঃ) বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর পরিজনের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতেন ? তিনি বললেন, তিনি তাঁর পরিজনের সাথে কাজে লেগে থাকতেন। যখন সালাতের সময় হতো, তখন উঠে দাঁড়াতেন এবং সালাত আদায় করতেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
10 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حُسَيْنٍ الْحَذَّاءُ، نَا عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ، نَا خَالِدُ بْنُ الْحَارِثِ، نَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: " كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ فِي أَهْلِهِ؟ قَالَتْ: كَانَ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ قَامَ فَصَلَّى "
হাদীস নং: ১১
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১১। হযরত হিশাম ইব্‌ন উরওয়া (রাহঃ) জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কিভাবে তাঁর গৃহে সময় কাটাতেন ?
তিনি বললেন, তিনিও তোমাদের মতো গৃহস্থালীর কাজকর্মে মশগুল থাকতেন। নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন এবং নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
11 - حَدَّثَنَا الْحَذَّاءُ، نَا عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ، نَا حَمَّادُ بْنُ أُسَامَةَ، نَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ رَجُلٍ حَدَّثَهُ، أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا سُئِلَتْ: كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهِ؟ قَالَتْ: كَانَ يَعْمَلُ كَعَمَلِ أَحَدِكُمْ فِي بَيْتِهِ يَخِيطُ ثَوْبَهُ، وَيَخْصِفُ نَعْلَهُ
হাদীস নং: ১২
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১২। উরওয়া (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (ﷺ) একান্তে কি কি কাজ করতেন ? তিনি বললেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং একজন মানুষ তার ঘরে বসে যে সব কাজ করে থাকে, তিনি তা সবই করতেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
12 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعِيدٍ الْوَشَا، نَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ عَتَّابٍ، نَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: مَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ إِذَا خَلَا؟ قَالَتْ: يَخِيطُ ثَوْبَهُ، وَيَخْصِفُ نَعْلَهُ، وَيَصْنَعُ مَا يَصْنَعُ الرَّجُلُ فِي أَهْلِهِ
হাদীস নং: ১৩
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৩। হযরত উরওয়া (রাহঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-কে অনুরূপ প্রশ্ন করা হলো।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
13 [ص:102] حَدَّثَنَا الْحَذَّاءُ، نَا عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ، نَا بِشْرُ بْنُ عُمَرَ، نَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، مِثْلَهُ
হাদীস নং: ১৪
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৪। যুহরী (রাহঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর গৃহের মধ্যে কি ধরনের আচরণ করতেন ? তিনি বললেন, তোমরা যেরূপ কোন একটি বস্তু উপরে তুলে রাখো এবং নীচে নামিয়ে রাখো তিনিও সেরূপ করতেন। তবে সেলাই কাজই ছিল তার সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
14 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ، نَا سَعِيدُ بْنُ عَمْرٍو، نَا بَقِيَّةُ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَقِيلِ بْنِ خَالدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: سُئِلَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: كَيْفَ كَانَ خُلُقُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهِ؟ فَقَالَتْ: «كَأَحَدِكُمْ يَرْفَعُ شَيْئًا وَيَضَعُهُ، وَكَانَ أَحَبَّ الْعَمَلِ إِلَيْهِ الْخِيَاطَةُ»
হাদীস নং: ১৫
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৫। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -এর গৃহে কাপড়ের পুতুল নিয়ে খেলা করতাম। আমার কিছু সখীও ছিল। তারা আমার কাছে এসে আমার সাথে খেলা করতো। তারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে আসতে দেখলে গৃহের এদিক সেদিক লুকিয়ে থাকতো। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাদেরকে এদিক সেদিক থেকে একত্র করে পুনরায় আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তারা পুনরায় আমার সাথে খেলা শুরু করতো ।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
15 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ الْفِرْيَابِيُّ، نَا مِنْجَابٌ، نَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَلْعَبُ بِالْبَنَاتِ فِي بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكُنَّ لِي صَوَاحِبُ يَأْتِينَنِي، فَيَلْعَبْنَ مَعِي، فَيَنْقَمِعْنَ إِذَا رَأَيْنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَرِّبُهُنَّ إِلَيَّ، فَيَلْعَبْنَ مَعِي
হাদীস নং: ১৬
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৬। হযরত আনাস ইব্‌ন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নয় বছর পর্যন্ত নবী (ﷺ) -এর খিদমত করেছি। কিন্তু আমার জানা নেই, তিনি কখনো আমাকে বলেছেন, তুমি এরূপ কেন করেছো? এবং তিনি কখনো আমার কোনো কাজে সামান্যতম দোষও ধরেননি।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
16 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ شُعَيْبٍ، نَا الْحَسَنُ بْنُ عَلَيٍّ الْخَلَّالُ، نَا أَبُو زُهَيْرٍ، نَا زَكَرِيَّا، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: خَدَمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَ سِنِينَ فَمَا أَعْلَمُهُ قَالَ لِي قَطُّ: هَلَّا فَعَلْتَ كَذَا وَكَذَا؟ وَلَا عَابَ عَلَيَّ شَيْئًا قَطُّ
হাদীস নং: ১৭
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৭। হযরত হাসান ইব্‌ন আলী ইব্‌ন আবু তালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে [হযরত আলী (রাযিঃ)-কে) নবী (ﷺ) -এর গৃহ-মধ্যকার কাজকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর এ অনুমতি ছিল যে, যখনই ইচ্ছা করতেন, তখনই তিনি গৃহে প্রবেশ করতে পারতেন।১ (তবুও) তাঁর অভ্যাস ছিল, যখনই গৃহে গমন করতেন, তাঁর সময়কে তিন ভাগ করতেন। এক ভাগ আল্লাহ্‌র ইবাদতের জন্য, দ্বিতীয় ভাগ নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য এবং তৃতীয় ভাগ নিজের আরামের জন্য। আবার নিজ আরামের সময়টুকুও লোকজনকে দিয়ে দিতেন। আর তা এইভাবে যে, বিশেষদের মাধ্যমে তার উপকারিতাও সাধারণদের মধ্যে ফিরিয়ে দিতেন। অর্থাৎ ঐ সময় বিশেষ বিশেষ সাহাবা কিরাম প্রবেশ করতেন এবং তাঁর কাছে দীনী মাসায়েল ও মর্মকথা শ্রবণ করে সাধারণ লোকদের মধ্যে পৌঁছে দিতেন। তাঁদের কাছে কোনো কথা গোপন রাখতেন না অর্থাৎ দীন ও দুনিয়ার লাভজনক সব কথাই বলতেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, উম্মতের জন্য নির্ধারিত সময়ে স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী জ্ঞানীদেরকে প্রাধান্য দিতেন এবং ঐ সময়ের বণ্টনে দীনী মর্যাদা হিসাবে তারতম্য ঘটতো।২ তাদের মধ্যে কারো থাকতো একটি কাজ, কারো দু’টি কাজ এবং কারো কয়েকটি কাজ। তিনি তাদের কাজে লেগে যেতেন এবং তাদেরকেও ঐসব কাজে মশগুল রাখতেন। তাতে তাদের এবং উম্মতের সংশোধন হতো। তিনি তাদের সমস্যাবলি জানতে চাইতেন এবং তাদের অবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে পরামর্শ দিতেন। বলতেন, যারা এখানে উপস্থিত আছে, তারা যেন তা অনুপস্থিতদেরকে পৌঁছে দেয়। (তিনি বলতেন) আমাকে সেই ব্যক্তির প্রয়োজন অবগত করো, যে তার প্রয়োজন আমার কাছে পৌঁছাতে পারে না। কেননা যে ব্যক্তি আমীর (প্রশাসক) পর্যন্ত এমন কোনো ব্যক্তির প্রয়োজনকে পৌঁছে দিয়েছে, যে তার নিজের প্রয়োজন ঐ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে দৃঢ়পদ রাখবেন। এ কথাই তাঁর কাছে আলোচিত হতো এবং এ ছাড়া তিনি কারো কোনো কথা পছন্দ করতেন না।
সুফিয়ান ইব্‌ন ওয়াকী’র রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবা তাঁর (নবী (ﷺ)) কাছে ইল্‌ম ও দীন অন্বেষী হয়ে যেতেন এবং স্বাদ না নিয়ে সেখান থেকে ফিরতেন না। আর যখন বের হতেন, তখন পথ-প্রদর্শক হয়ে বের হতেন। বর্ণনাকারী পথ-প্রদর্শকের ব্যাখ্যা করেছেন ‘ফুকাহা’ শব্দ দ্বারা (অর্থাৎ দ্বীনের অগাধ পাণ্ডিত্য নিয়ে উঠে আসতেন)।
হযরত হুসাইন (রাযিঃ)৩ বলেন, তারপর আমি (আমার পিতাকে) জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর (নবী (ﷺ) ) গৃহের বাইরের কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুটা বলুন। অর্থাৎ গৃহের বাইরে তিনি কি কাজকর্ম করতেন ? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) অনর্থক কথাবার্তা থেকে স্বীয় রসনা মুবারককে রক্ষা করতেন। মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতেন। বিচ্ছিন্ন হতে দিতেন না। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করতেন এবং তাকেই তাদের নেতা ও অভিভাবক বানাতেন। তিনি মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু কারো সাথে স্বীয় আন্তরিকতা ও প্রফুল্লচিত্ততার ক্ষেত্রে তারতম্য করতেন না। স্বীয় সঙ্গীদের খোঁজ-খবর নিতেন। মানুষকে তাদের হাল অবস্থা জিজ্ঞেস করতেন। ভাল কথাকে ভাল বলতেন এবং তার প্রশংসা করতেন। আর মন্দ কথাকে মন্দ বলতেন এবং তার নিন্দা করতেন। প্রত্যেক কাজে তাঁর ভারসাম্য বজায় থাকতো, এদিকে-ওদিকে ঝুঁকে পড়তেন না। তিনি মানুষের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখতেন যাতে তারা অমনোযোগী না হয়ে পড়ে কিংবা অতিষ্ঠ হয়ে না ওঠে। প্রত্যেক অবস্থার জন্যই তাঁর নিকট তার উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতো। সত্য গ্রহণেও ত্রুটি করতেন না এবং সত্য ত্যাগ করেও অন্য দিকে চলে যেতেন না। তাঁর সঙ্গী-সাথীরা ছিলেন উত্তম লোক। তাঁর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি সবার মঙ্গল কামনা করতেন। এবং তাঁর কাছে সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাশীল ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি তাদের সমব্যথী ও সাহায্য-সহায়তার ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম।
[হযরত হুসাইন (রাযিঃ) বলেন], এরপর আমি (আমার পিতাকে) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মজলিস ও উঠাবসার অবস্থা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) আল্লাহ্‌র যিকর করতেন। তিনি কোনো স্থানকে নিজের জন্য নির্ধারিত করতেন না এবং অন্য লোককেও এরূপ করতে নিষেধ করতেন।৪ তিনি যখন মানুষের সাথে বসতেন, তখন -এর উঠতে বসতে যেখানেই বসার স্থান পেতেন বসে পড়তেন এবং মানুষকেও এরূপ করতে নির্দেশ দিতেন। তিনি তাঁর মজলিসের প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দান করতেন। কেউ একথা অনুভব করতো না যে, সে ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি তাঁর বেশী প্রিয় ব্যক্তি। যে ব্যক্তি (কোনো প্রয়োজন) তাঁর কাছে এসে বসতো কিংবা উঠে যেত তিনি তার সাথে নিজেকে সেই সময় পর্যন্ত আটকে রাখতেন যে পর্যন্ত সে নিজেই চলে না যেত। কেউ যদি তাঁর কাছে কোনো কিছু চাইতে আসতো, সে তার বাসনা পূরণ করে ফিরে যেতো কিংবা কোমল ব্যবহার ও সান্ত্বনা নিয়ে ফিরে যেতো। তাঁর ব্যবহার সমস্ত লোকের জন্য সমান ছিল। (স্নেহ-মমতার ক্ষেত্রে) তিনি ছিলেন তাঁদের পিতা। আর লোকেরা সব (অধিকারের ক্ষেত্রে) তাঁর কাছে ছিল সমান। তাঁর মজলিস ছিল ধৈর্যশীলতা, লজ্জাশীলতা, সত্যতা ও আমানতের মজলিস । সেখানে উচ্চঃস্বরে কথাবার্তা হতো না। কারো ইযযত-আব্রুর উপর কলংক আরোপ করা হতো না। কারো দোষত্রুটি সমালোচিত হতো না। সভার সদস্যদের মধ্যে সংযত ভাব ছিল। তাক্‌ওয়া বজায় থাকতো। পরস্পরে ভদ্রতা ও নম্র আচরণ করতো। বড়দের শ্রদ্ধা করতো, ছোটদের স্নেহ করতো। অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দিতো। অপরিচিত আগন্তুকদের প্রতি খেয়াল রাখতো।
হযরত হুসাইন (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমি (আমার পিতাকে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তাঁর সভার সদস্যদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতেন ? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁদের সাথে আনন্দচিত্তে মিলিত হতেন। তিনি নম্র ও বিনয়ী ছিলেন। কঠোর ও দুর্বিনীত ছিলেন না। তিনি হাট-বাজারে হৈহুল্লোড় করতেন না। অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করতেন না। কাউকে দোষারোপ করতেন না। কারো অহেতুক প্রশংসাও করতেন না। অপছন্দনীয় জিনিস থেকে তিনি দূরে থাকতেন এবং এ ব্যাপারে মানুষ তাঁর সম্পর্কে নিরাশ হতো। তিনি সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্যও করতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি নিজকে দূরে রেখেছিলেন। এক. ঝগড়া-বিবাদ থেকে, দুই. বেশী কথা বলা থেকে, তিন. অর্থহীন কাজ থেকে। তিনটি বিষয় থেকে তিনি অন্য মানুষকে রক্ষা করেছিলেন। এক. কারো কুৎসা রটনা করতেন না। দুই. কাউকে লজ্জা দিতেন না। তিন. কারো দোষ অন্বেষণ করতেন না। যে কথা বললে সাওয়াবের আশা করা যেতো, তিনি তাই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন সভাসদগণ তাঁদের গর্দান এমনভাবে ঝুঁকিয়ে রাখতেন যেনো তাঁদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তিনি যখন কথা বন্ধ করতেন তখন অন্যরা কথা বলতেন। তাঁর সামনে কেউ কারো কথার প্রতিবাদ করতেন না। যখন কেউ কোনো কথা শুরু করতেন, তখন অন্যরা তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকতেন। তাদের মধ্যে প্রত্যেকের কথাই তাঁর কাছে ততটুকু গুরুত্বের অধিকারী হতো, যতটুকু গুরুত্ব পেতো প্রথম ব্যক্তির কথা। সবাই যে কথা শুনে হাসতো, তিনিও তাতে হাসতেন। সবাই যাতে আশ্চর্য হতো, তিনিও তাতে আশ্চর্য হতেন। আগন্তুকের অসংলগ্ন কথাবার্তা ও প্রশ্নাবলি তিনি ধৈর্যসহকারে শ্রবণ করতেন। তাঁর সাহাবীগণ এরূপ লোকদেরকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতেন (যাতে তাদের প্রশ্নাবলি থেকে নতুন বিষয় জানা যায়)। তিনি বলতেন, তোমরা যখন কোনো অভাবগ্রস্তকে তার অভাব দূর করার প্রার্থনা করতে দেখো, তখন তাকে সাহায্য করো। কেউ তাঁর প্রশংসা করুক, তিনি তা পছন্দ করতেন না। তবে কেউ কৃতজ্ঞতা বশত কিছু বললে তা ছিল স্বতন্ত্র। তিনি কারো কথার প্রতিবাদ করতেন না। অবশ্য সে যদি সীমা অতিক্রম করে যেতো, তবে তার কথার প্রতিবাদ করতেন। হয়তো তাকে নিষেধ করতেন কিংবা সেখান থেকে তিনি উঠে দাঁড়াতেন।
[হযরত হাসান (রাযিঃ) বলেন] এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর চুপ থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর চুপ থাকা ছিল চারটি কারণে। এক. সহনশীলতার কারণে দুই. সাবধানতার দরুন, তিন. আন্দাজ করার উদ্দেশ্যে ও চার. চিন্তা-ভাবনা করার জন্য। তাঁর আন্দাজ করা ছিল অবস্থার উপর পূর্ণ চিন্তা-ভাবনা করা এবং মানুষের আলাপ-আলোচনা শ্রবণ করা। আর তিনি চিন্তা-ভাবনা করতেন সেসব বিষয়ে, যা অবশিষ্ট থাকে এবং বিলীন হয় না। আর সহনশীলতা তাঁর ধৈর্যের মধ্যেই একত্র করা হয়েছিল। অর্থাৎ কোনো বিষয় তাঁকে ক্রুদ্ধও করতে পারতো না এবং অস্থিরও করতে পারতো না। আর সাবধানতা তাঁর জন্য চারটি জিনিসের মধ্যে একত্র করা হয়েছে। (আর তা হচ্ছে) তিনি উত্তম বস্তুটি গ্রহণ করতেন, যাতে মানুষ তাঁকে গ্রহণ করে এবং তিনি মন্দ বস্তু পরিত্যাগ করতেন, যাতে মানুষ তা থেকে বিরত থাকে। এবং যে জিনিসে তাঁর উম্মতের সংশোধন হতো, তিনি তার পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করতেন আর যাতে তাদের কল্যাণ হতো, তিনি সে বিষয়ে সক্রিয় থাকতেন। এভাবে তিনি তাঁর উম্মতের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণকে সমন্বিত করেছিলেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
17 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَبَّاسِ بْنِ أَيُّوبَ، نَا عُبَيْدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْهَبَّارِيُّ، مِنْ كِتَابِهِ، وَحَدَّثَنَا ابْنُ جَمِيلٍ، نَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا جُمَيْعُ بْنُ عُمَرَ الْعِجْلِيُّ، حَدَّثَنِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، مِنْ وَلَدِ أَبِي هَالَةَ زَوْجِ خَدِيجَةَ، عَنِ ابْنٍ لِأَبِي هَالَةَ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلَيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، عَلَيْهِمَا السَّلَامُ، قَالَ: " سَأَلْتُ أَبِي عَنْ دُخُولِ النَّبِيِّ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: كَانَ دُخُولُهُ لِنَفْسِهِ، مَأْذُونًا لَهُ فِي ذَلِكَ، وَكَانَ إِذَا أَتَى إِلَى مَنْزِلِهِ جَزَّأَ دُخُولَهُ ثَلَاثَةَ أَجْزَاءٍ: جُزْءٌ لِلَّهِ، وَجُزْءٌ لِأَهْلِهِ، وَجُزْءٌ لِنَفْسِهِ، ثُمَّ يَجْعَلُ جُزْأَهُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَرُدُّ ذَلِكَ عَلَى الْعَامَّةِ بِالْخَاصَّةِ، وَلَا يَدَّخِرُ عَنْهُمْ شَيْئًا، فَكَانَ مِنْ سِيرَتِهِ فِي جُزْءِ الْأُمَّةِ إِيثَارُ أَهْلِ الْفَضْلِ بِإِذْنِهِ وَقِسْمَتِهِ، عَلَى قَدْرِ فَضْلِهِمْ فِي الدِّينِ، مِنْهُمْ ذُو الْحَاجَةِ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَوَائِجِ، فَيَتَشَاغَلُ بِهِمْ، وَيَشْغَلُهُمْ فِيمَا يُصْلِحُهُمْ وَالْأَمَةَ مِنْ مَسْأَلَتِهِ عَنْهُمْ، وَإِخْبَارِهِمْ بِالَّذِي يَنْبَغِي لَهُمْ، وَيَقُولُ: لِيُبَلِّغُ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ، وَأَبْلِغُونِي حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيعُ إِبْلَاغِي حَاجَتَهُ، فَإِنَّهُ مَنْ أَبْلَغَ سُلْطَانًا حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيعُ إِبْلَاغَهَا ثَبَّتَ اللَّهُ قَدَمَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَا يُذْكَرُ عِنْدَهُ إِلَّا ذَلِكَ، وَلَا يُقْبَلُ مِنْ أَحَدٍ غَيْرُهُ. قَالَ فِي حَدِيثِ سُفْيَانَ بْنِ وَكِيعٍ: يَدْخُلُونَ رُوَّادًا وَلَا يَتَفَرَّقُونَ إِلَّا عَنْ ذَوَاقٍ، وَيَخْرُجُونَ أَدَلَّةً - يَعْنِي فُقَهَاءَ. قُلْتُ: فَأَخْبِرْنِي عَنُ مَخْرَجِهِ كَيْفَ كَانَ يَصْنَعُ فِيهِ؟ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْزِنُ لِسَانَهُ إِلَّا مِمَّا يَعْنِيهِمْ وَيُؤَلِّفُهُمْ، وَلَا يُفَرِّقُهُمْ، يُكْرِمُ كَرِيمَ كُلِّ قَوْمٍ، وَيُوَلِّيهِ عَلَيْهِمْ، وَيُحَذِّرُ النَّاسَ وَيَحْتَرِسُ عَنْهُمْ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يُطْوَيَ عَنْ أَحَدٍ بِشْرَهُ وَخُلُقَهُ، وَيَتَفَقَّدُ أَصْحَابَهُ، وَيَسْأَلُ النَّاسَ عَمَّا فِي النَّاسِ، وَيُحَسِّنُ الْحَسَنَ وَيُصَوِّبُهُ، وَيُقَبِّحُ الْقَبِيحَ وَيُوَهِّنُهُ، مُعْتَدِلُ الْأَمْرِ غَيْرُ مُخْتَلِفٍ، لَا يَغْفُلُ مَخَافَةَ أَنْ يَغْفُلُوا، أَوْ يَمَلُّوا، لِكُلِّ حَالٍ عِنْدَهُ عَتَادٌ، لَا يُقَصِّرُ عَنِ الْحَقِّ، وَلَا يُجَاوِزَهُ إِلَى غَيْرِهِ، الَّذِينَ يَلُونَهُ مِنَ النَّاسِ خِيَارُهُمْ، وَأَفْضَلُهُمْ عِنْدَهُ أَعَمُّهُمْ نَصِيحَةً وَأَعْظَمُهُمْ عِنْدَهُ مَنْزِلَةً: أَحْسَنُهُمْ مُوَاسَاةً وَمُؤَازَرَةً. وَسَأَلْتُهُ عَنْ مَجْلِسِهِ؟ فَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَجْلِسُ وَلَا يَقُومُ إِلَّا ذَكَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، وَلَا يُوَطِّنُ الْأَمَاكِنَ، وَيَنْهَى عَنْ إِيطَانِهَا، وَإِذَا جَلَسَ إِلَى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِي بِهِ الْمَجْلِسُ، وَيَأْمُرُ بِذَلِكَ، وَيُعْطَى كُلَّ جُلَسَائِهِ بِنَصِيبِهِ، لَا يَحْسِبُ أَحَدٌ مِنْ جُلَسَائِهِ أَنَّ أَحَدًا أَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْهُ مَنْ جَالَسَهُ أَوْ قَاوَمَهُ لِحَاجَةٍ، صَابَرَهُ حَتَّى يَكُونَ هُوَ الْمُنْصَرِفُ، وَمَنْ سَأَلَهُ حَاجَةً لَمْ يَنْصَرِفْ إِلَّا بِهَا أَوْ بِمَيْسُورٍ مِنَ الْقَوْلِ قَدْ وَسِعَ النَّاسَ مِنْهُ خُلُقَهُ فَصَارَ لَهُمْ أَبًا، وَصَارُوا عِنْدَهُ فِي الْحَقِّ سَوَاءٌ مَجْلِسُهُ مَجْلِسُ حِلْمٍ، وَحَيَاءٍ، وَصِدْقٍ، وَأَمَانَةٍ لَا تُرْفَعُ فِيهِ الْأَصْوَاتُ، وَلَا تُؤْبَنُ فِيهِ الْحَرُمُ، وَلَا تُنْثَى فَلَتَاتُهُ مُعْتَدِلِينَ يَتَوَاصَلُونَ فِيهِ بِالتَّقْوَى، مُتَوَاضِعِينَ، يُوَقِّرُونَ فِيهِ الْكَبِيرَ، وَيَرْحَمُونَ فِيهِ الصَّغِيرَ وَيُؤْثِرُونَ ذَا الْحَاجَةِ، وَيَحْفَظُونَ الْغَرِيبَ. قُلْتُ: كَيْفَ كَانَتْ سِيرَتُهُ فِي جُلَسَائِهِ؟ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَائِمُ الْبِشْرِ، سَهْلُ الْخُلُقِ، لَيِّنُ الْجَانِبِ، لَيْسَ بِفَظٍّ، وَلَا غَلِيظٍ وَلَا صَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ، وَلَا فَاحِشٍ وَلَا عَيَّابٍ، وَلَا مَدَّاحٍ يَتَغَافَلُ عَمَّا لَا يَشْتَهِي، وَيُؤْيَسُ مِنْهُ، وَلَا يُجِيبُ فِيهِ قَدْ تَرَكَ نَفْسَهُ مِنْ ثَلَاثٍ: الْمِرَاءِ، وَالْإِكْثَارِ، وَمَالَا يُعْنيِهِ وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلَاثٍ: كَانَ لَا يَذُمُّ أَحَدًا، وَلَا يُعَيِّرُهُ، وَلَا يَطْلُبُ عَوْرَاتِهِ، وَلَا يَتَكَلَّمُ إِلَّا فِيمَا رَجَا ثَوَابَهُ إِذَا تَكَلَّمَ أَطْرَقَ جُلَسَاؤُهُ، كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ، وَإِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوا، وَلَا يَتَنَازَعُونَ عِنْدَهُ الْحَدِيثَ مَنْ تَكَلَّمَ أَنْصَتُوا لَهُ، حَتَّى يَفْرُغَ حَدِيثُهُمْ عِنْدَهُ حَدِيثُ أَوَّلِهِمْ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُونَ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُونَ وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهِ، وَمَسْأَلَتِهِ حَتَّى إِنْ كَانَ أَصْحَابُهُ لَيَسْتَجْلِبُونَهُمْ، فَيَقُولُ: إِذَا رَأَيْتُم طَالِبَ الْحَاجَةِ يَطْلُبُهَا فَارْفِدُوهُ، وَلَا يَقْبَلُ الثَّنَاءَ إِلَّا مِنْ مُكَافٍ، وَلَا يَقْطَعُ عَلَى أَحَدٍ حَدِيثَهُ، حَتَّى يَجُوزَ فَيَقْطَعَهُ بِنَهْي، أَوْ قِيَامٍ. فَسَأَلْتُ: كَيْفَ كَانَ سُكُوتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: كَانَ سُكُوتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَرْبَعٍ: عَلَى الْحِلْمِ، وَالْحَذَرِ، وَالتَّقْدِيرِ، وَالتَّفْكِيرِ، فَأَمَّا تَقْدِيرُهُ فَفِي تَسْوِيَةِ النَّظَرِ، وَالِاسْتِمَاعِ مِنَ النَّاسِ، وَأَمَّا تَفْكِيرُهُ فَفِيمَا يَبْقَى، وَلَا يَفْنَى وَجُمِعَ لَهُ الْحِلْمَ فِي الصَّبْرِ، فَكَانَ لَا يُغْضِبُهُ شَيْءٌ، وَلَا يَسْتَفِزُّهُ وَجُمِعَ لَهُ الْحَذَرُ فِي أَرْبَعٍ: أَخْذِهِ بِالْحَسَنِ لِيُقْتَدَى بِهِ، وَتَرْكِهِ الْقَبِيحَ لِيُنْتَهَى عَنْهُ، وَاجْتِهَادِهِ الرَّأْيَ فِيمَا أَصْلَحَ أُمَّتَهُ، وَالْقِيَامِ فِيمَا هُوَ خَيْرٌ لَهُمْ، جَمَعَ لَهُمْ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ "
হাদীস নং: ১৮
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৮। হযরত আনাস ইব্‌ন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দশ বছর পর্যন্ত আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর সাহচর্যে ছিলাম এবং সব রকমের আতরের আমি ঘ্রাণ নিয়েছি। কিন্তু তাঁর মুখের ঘ্রাণ থেকে উত্তম কোনো ঘ্রাণ আমি শুকিনি। সাহাবাদের মধ্যে কারো সাথে যখন তাঁর সাক্ষাৎ হতো, তখন তিনি তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং যে পর্যন্ত তিনি তাঁর থেকে পৃথক না হতেন, তিনি নিজে তাঁর থেকে পৃথক হতেন না। আর যখন কোনো সাহাবী তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার সময় তাঁর হাত মুবারক তাঁর হাতে নিতেন তখন যে পর্যন্ত ঐ সাহাবী তাঁর হাত গুটিয়ে না নিতেন, তিনি তাঁর হাত মুবারক গুটিয়ে নিতেন না। আর কোনো সাহাবী যখন তাঁর সাথে মিলিত হয়ে তাঁর কানে কানে কোনো কথা বলতে চাইতেন, তখন তিনি তাঁর কান তার দিকে পেতে দিতেন এবং সেই সময় পর্যন্ত তাঁর কান সরিয়ে আনতেন না, যে পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি নিজে না সরিয়ে নিতেন।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
18 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ الرَّازِيُّ، نَا ابْنُ أَبِي الثَّلْجِ، نَا أَبُو الْوَلِيدِ خَلَفُ بْنُ الْوَلِيدِ، نَا أَبُو جَعْفَرٍ الرَّازِيُّ، عَنْ أَبِي دِرْهَمٍ، عَنْ يُونُسَ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ مَوْلَى لِآلِ أَنَسٍ - قَدْ سَمَّاهُ وَنَسِيتُهُ - عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ، وَشَمِمْتُ الْعِطْرَ كُلَّهُ، فَلَمْ أَشُمَّ نَكْهَةً أَطْيَبَ مِنْ نَكْهَتِهِ، وَكَانَ إِذَا لَقِيَهُ وَاحِدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ قَامَ مَعَهُ فَلَمْ يَنْصَرِفْ حَتَّى يَكُونَ الرَّجُلُ يَنْصَرِفُ عَنْهُ وَإِذَا لَقِيَهُ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَتَنَاوَلَ يَدَهُ، نَاوَلَهَا إِيَّاهُ، فَلَمْ يَنْزِعْ مِنْهُ حَتَّى يَكُونَ الرَّجُلُ هُوَ الَّذِي يَنْزِعُ عَنْهُ وَإِذَا لَقِيَهُ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ فَتَنَاوَلَ أُذُنَهُ، نَاوَلَهَا إِيَّاهُ، فَلَمْ يَنْزِعْهَا عَنْهُ حَتَّى يَكُونَ الرَّجُلُ هُوَ الَّذِي يَنْزِعُهَا مِنْهُ
হাদীস নং: ১৯
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
১৯। হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মাতা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হলেন এবং তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এই আপনার ছোট্ট সেবক। তারপর আমি নয় বছর পর্যন্ত নবী (ﷺ)-এর সেবা করলাম। (এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে) তিনি কখনো আমাকে বলেননি যে, তুমি এ কাজটি ভাল করোনি কিংবা তুমি এ কাজটি খারাপ করেছো।১
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
19 - حَدَّثَنَا ابْنُ رُسْتَةَ، نَا عَلْقَمَةُ بْنُ عَمْرٍو، نَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: أَتَتْ بِي أُمِّي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا خُوَيْدِمُكَ، فَخَدَمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَ سِنِينَ، فَمَا قَالَ لِي لشَيْءٍ قَطُّ: أَسَأْتَ، وَلَا بِئْسَ مَا صَنَعْتَ
হাদীস নং: ২০
কিতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ
নবী (ﷺ) -এর চারিত্রিক সৌন্দর্য
২০। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হাবশী লোকেরা তখন মসজিদে নবীতে যুদ্ধের কসরত দেখাচ্ছিল। আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কসরত দেখছিলাম। তখন তিনি আমাকে তাঁর চাদর দ্বারা আড়াল করে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং যে পর্যন্ত আমি সেখান থেকে সরে না এসেছি, তখন পর্যন্ত তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেন। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, তোমরা অনুমান করো, একজন অল্প বয়সী বালিকার খেলাধুলার প্রতি কতখানি আগ্রহ থাকতে পারে (এবং তিনি কত দীর্ঘসময় পর্যন্ত তখন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন)।
أبواب الكتاب
فَأَمَّا حُسْنُ خُلُقِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
20 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ أَحْمَدَ، نَا صَالِحُ بْنُ مِسْمَارٍ، نَا هِشَامُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنِي يُونُسُ بْنُ يَزِيدَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: «وَقَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَابَ حُجْرَتِي، وَالْحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُمْتُ أَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، فَقَامَ يَسْتُرُنِي بِرِدَائِهِ، حَتَّى انْصَرَفْتُ أَنَا مِنْ قِبَلِ نَفْسِي، فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ، الْحَرِيصَةِ عَلَى اللَّهْوِ»