আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

الجامع الكبير للترمذي

১৩. তালাক - লি'আনের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ১২০২
আন্তর্জাতিক নং: ১২০২
তালাক - লি'আনের অধ্যায়
লিআন।*
১২০৫. হান্নাদ (রাহঃ) ...... সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুসআব ইবনে যুবাইর যখন (ইরাক অঞ্চলের) আমীর তখন আমাকে লিআনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়ে কি বলব তা আমার জনা ছিল না। তাই আমি আমার ঘর থেকে উঠে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) এর বাড়িতে গেলাম এবং তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। আমাকে বলা হল যে, তিনি দুপুরের বিশ্রাম নিচ্ছেন। এই সময় তিনি (নিজে ভিতর থেকে) আমার কথা শুনে বললেন, ইবনে জুবাইর, ভিতরে এসো। কোন প্রয়োজন ছাড়া অন্য কিছু তোমাকে এখানে নিয়ে আসেনি। ইবনে জুবাইর বলেন, আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। (দেখলাম) তিনি উটের পিঠে ব্যবহৃত আসেনের একটি কাপড়ের টুকরায় শুয়ে আছেন। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান, লিআনকারী স্বামী-স্ত্রীর একজনকে আরেকজন থেকে কি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে? তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্, হ্যাঁ।

এই বিষয়ে অমুকের ছেলে অমুক সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, কি বলেন, কেউ যদি তার স্ত্রীকে অপকর্মে দেখতে পায় তবে সে কি করবে? যদি সে এই বিষয়ে কথা বলে তবুও ভীষণ এক বিষয়ে সে কথা বলল। আর চুপ থাকলেও তো সে মারাত্মক এক বিষয়ে চুপ রইল। ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, (এই কথা শুনে) নবী (ﷺ) চুপ করে রইলেন, তাকে কোন জবাব দিলেন না। এই ঘটনার পর ঐ সাহাবী আবার নবী (ﷺ)-এর কাছে এলেন। বললেন, যে বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম সে বিষয়ে আমিই নিপতিত। তখন আল্লাহ্ তাআলা সূরা নূরের এই আয়াত নাযিল করেনঃ وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ شُهَدَاءُ إِلاَّ أَنْفُسُهُمْ - আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাদের কোন সাক্ষী নাই ......আয়াতের শেষ পর্যন্ত। পঞ্চমবার বলবে, সে মিথ্যাবাদী হলে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর লা’নত। আর স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য দেয় যে তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী। এবং পঞ্চমবারে বলে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেতে না। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা নূর ২৪ : ৬-১০]

অনন্তর তিনি ঐ ব্যক্তিকে ডাকলেন এবং আয়াতগুলো তাকে তিলাওয়াত করে শোনালেন, তাকে নছীহত করে বুঝালেন এবং জানালেন যে, দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের আযাবের তুলনায় সহজতর। সে বলল, না, ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে মিথ্যা বলিনি। এরপর তিনি মহিলাটির দিকে ফিরলেন এবং তাকে নসীহত করলেন ও উপদেশ দিলেন। আর তাকে জানালেন, দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের আযাবের তুলনায় সহজতর। মহিলাটি বলল, না, ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন। সে সত্য বলেনি। রাবী বলেন অতঃপর নবী (ﷺ) পুরুষটিকে দিয়ে শুরু করলেন। সে চারবার আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য দিল যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী। পঞ্চমবারে বলল, সে যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লা’নত। এরপর নবী (ﷺ) মহিলাটির প্রতি ফিরলেন। মহিলাটিও চারবার আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য দিল যে, পুরুষটি মিথ্যা বলেছে। পঞ্চমবারে বলল, পুরুষটি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তার নিজের উপর আল্লাহর গযব নেমে আসবে। অতঃপর নবী (ﷺ) তাদের উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। - আবু দাউদ , মুসলিম

এই বিষয়ে সাহল ইবনে সা’দ, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, ও ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ।

* কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের সন্দেহ করে তবে কাজীর দরবারে বিশেষ এক প্রক্রিয়ায় মিথ্যাবাদী হলে নিজের উপর লা'নত করে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধানকে লিআন বলে। বিস্তারিত ফিক্হ গ্রন্থসমূহের ‘লিআন' অধ্যায়ে দেখুন।
أبواب الطلاق واللعان عن رسول الله ﷺ
باب مَا جَاءَ فِي اللِّعَانِ
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ سُئِلْتُ عَنِ الْمُتَلاَعِنَيْنِ، فِي إِمَارَةِ مُصْعَبِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَيُفَرَّقُ بَيْنَهُمَا فَمَا دَرَيْتُ مَا أَقُولُ فَقُمْتُ مَكَانِي إِلَى مَنْزِلِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ اسْتَأْذَنْتُ عَلَيْهِ فَقِيلَ لِي إِنَّهُ قَائِلٌ . فَسَمِعَ كَلاَمِي فَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ ادْخُلْ مَا جَاءَ بِكَ إِلاَّ حَاجَةٌ . قَالَ فَدَخَلْتُ فَإِذَا هُوَ مُفْتَرِشٌ بَرْدَعَةَ رَحْلٍ لَهُ . فَقُلْتُ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُتَلاَعِنَانِ أَيُفَرَّقُ بَيْنَهُمَا قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ نَعَمْ إِنَّ أَوَّلَ مَنْ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنٍ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ أَحَدَنَا رَأَى امْرَأَتَهُ عَلَى فَاحِشَةٍ كَيْفَ يَصْنَعُ إِنْ تَكَلَّمَ تَكَلَّمَ بِأَمْرٍ عَظِيمٍ وَإِنْ سَكَتَ سَكَتَ عَلَى أَمْرٍ عَظِيمٍ . قَالَ فَسَكَتَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُجِبْهُ فَلَمَّا كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ الَّذِي سَأَلْتُكَ عَنْهُ قَدِ ابْتُلِيتُ بِهِ . فَأَنْزَلَ اللَّهُ هَذِهِ الآيَاتِ الَّتِي فِي سُورَةِ النُّور : (وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ شُهَدَاءُ إِلاَّ أَنْفُسُهُمْ ) حَتَّى خَتَمَ الآيَاتِ فَدَعَا الرَّجُلَ فَتَلاَ الآيَاتِ عَلَيْهِ وَوَعَظَهُ وَذَكَّرَهُ وَأَخْبَرَهُ أَنَّ عَذَابَ الدُّنْيَا أَهْوَنُ مِنْ عَذَابِ الآخِرَةِ . فَقَالَ لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا كَذَبْتُ عَلَيْهَا . ثُمَّ ثَنَّى بِالْمَرْأَةِ فَوَعَظَهَا وَذَكَّرَهَا وَأَخْبَرَهَا أَنَّ عَذَابَ الدُّنْيَا أَهْوَنُ مِنْ عَذَابِ الآخِرَةِ فَقَالَتْ لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا صَدَقَ . قَالَ فَبَدَأَ بِالرَّجُلِ فَشَهِدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ إِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ وَالْخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ . ثُمَّ ثَنَّى بِالْمَرْأَةِ فَشَهِدَتْ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ إِنَّهُ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ وَالْخَامِسَةَ أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ . ثُمَّ فَرَّقَ بَيْنَهُمَا . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَابْنِ مَسْعُودٍ وَحُذَيْفَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ .