আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
الجامع الكبير للترمذي
৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ২ টি
হাদীস নং: ৩৩৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩৩৩৯
কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
সূরা বুরুজ
৩৩৩৯. আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ (الْيَوْمُ الْمَوْعُود) প্রতিশ্রুত দিন হল কেয়ামতের দিন। (الْيَوْمُ الْمَشْهُودُ) হল আরাফা দিবস এবং (الشَّاهِد) হল জুম’আর দিন।
তিনি আরো বলেনঃ এই (জুম’আর) দিনের চেয়ে উত্তম কোন দিন নাই যার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। এ দিনের মাঝে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোন মুমি’ন বান্দা সে মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। কোন বিষয়ে যদি সে আল্লাহর কাছে পানাহ চায় তবে তিনি তা থেকে তাকে পানাহ দেন।
তিনি আরো বলেনঃ এই (জুম’আর) দিনের চেয়ে উত্তম কোন দিন নাই যার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। এ দিনের মাঝে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোন মুমি’ন বান্দা সে মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। কোন বিষয়ে যদি সে আল্লাহর কাছে পানাহ চায় তবে তিনি তা থেকে তাকে পানাহ দেন।
أبواب تفسير القرآن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَاب وَمِنْ سُورَةِ البُرُوجِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، وَعُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ أَيُّوبَ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْيَوْمُ الْمَوْعُودُ يَوْمُ الْقِيَامَةِ وَالْيَوْمُ الْمَشْهُودُ يَوْمُ عَرَفَةَ وَالشَّاهِدُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَمَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَلاَ غَرَبَتْ عَلَى يَوْمٍ أَفْضَلَ مِنْهُ فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُؤْمِنٌ يَدْعُو اللَّهَ بِخَيْرٍ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ وَلاَ يَسْتَعِيذُ مِنْ شَرٍّ إِلاَّ أَعَاذَهُ اللَّهُ مِنْهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ . وَمُوسَى بْنُ عُبَيْدَةَ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ وَغَيْرُهُ
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৩৪০
আন্তর্জাতিক নং: ৩৩৪০
কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
সূরা বুরুজ
৩৩৪০. মাহমুদ ইবনে গাইলান ও আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ..... সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসরের নামায আদায় করে ঠোঁট নাড়াচড়া করতেন। তিনি যেন কথা বলছেন। তাঁকে বলা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ! আসরের নামায শেষে আপনি যেন চুপে চুপে কথা বলেন?
তিনি বললেন নবীগণের কোন একজন তাঁর উম্মত নিয়ে গৌরববোধ করছিলেন। বলেছিলেনঃ এদের মুকাবিলায় কে দাঁড়াতে পারবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তার নিকট ওহী পাঠালেনঃ আমি তাদের শাস্তি দিব বা তাদের উপর শত্রু চাপিয়ে দিব। এ দুয়ের একটি গ্রহণ করার জন্য তাদের ইখতিয়ার দিন। তারা শাস্তিকেই গ্রহণ করে নিল। সে মতে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর মৃত্যু চাপিয়ে দিলেন। ফলে একদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোকের মৃত্যু হল।
এ হাদীসটি বর্ণনার সাথে তিনি পরবর্তী এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন। তিনি বলেনঃ কোন এক বাদশা ছিল। তার ছিল একজন গণক। সে তার জন্য ভবিষ্যৎ গণনা করত। একবার তাকে ঐ গণক বললঃ একটি বুদ্ধিমান শক্তি সম্পন্ন বালক তালাশ করুন। আমি তাকে আমার এ জ্ঞান শিক্ষা দিব। কারণ আমার আশঙ্কা হয় যদি আমি মারা যাই তবে আপনাদের থেকে এ জ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। এই জ্ঞানের আধিকারী আপনাদের মধ্যে কেউ থাকবে না। তাদের বর্ণনানুযায়ি এক বালক তারা তালাশ করে বের করল। তারা তাকে গণকের কাছে হাযির হতে নির্দেশ দিল এবং তার কাছে আসা-যওয়া করতে বলল। সে মতে বালকটি তার কাছে আসা-যাওয়া করলে লাগল। আসা-যাওয়ার পথে এক গীর্জায় এক জন পাদ্রী থাকত। (বর্ণনাকারী মা‘মার (রাহঃ) বলেন, তৎকালে গীর্জার উপাসনাকারিগণ সত্য দ্বীন বিশ্বাসী ছিলেন)। বালকটি যখনই সেখান দিয়ে যেত সে পাদ্রীকে তার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত। শেষে পাদদ্রী তাকে জানালঃ আমি আল্লাহর ইবাদত করি।
বালকটি পাদ্রীর কাছে সময় দিতে লাগল এবং উক্ত গণকের কাছে যেতে দেরী করতে লাগল। এতে গণক বালকটির পরিবার পরিজনকে খবর পাঠায় যে সে প্রায়ই হাজির হয় না। বালকটি পাদ্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করে। পাদ্রী তাকে বললঃ গণক যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কোথায় ছিলে, তবে তুমি বলবে যে, তুমি তোমার পরিবারের লোকদের কাছেই ছিলে। আর তোমার পরিবারের লোকরা যখন জিজ্ঞাসা করবে তখন বলবে গণকের কাছে ছিলে।
এভাবেই চলছিল। একদিন বালকটি মানুষের এক বিরাট ভিড়ের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিল। লোকদেরকে একটা হিংস্র জন্তু পথ আটকে রেখেছিল। কোন কোন রাবী বলেছেন। এ জন্তুটি ছিল একটা সিংহ। বালকটি একটা পাথর হাতে নিয়ে বললঃ হে আল্লাহ! পাদ্রী যা বলে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আমি যেন জন্তুটিকে হত্যা করতে পারি। এরপর সে পাথরটি ছুড়ে মারল এবং জন্তুটি মারা গেল। লোকেরা বলতে লাগল কে এ জন্তুটি হত্যা করেছে? অন্যরা বলল এ বালকটি। মানুষের মাঝে এতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তারা বলাবলি করতে থাকে যে, এই বালকটি এমন কিছু জ্ঞান শিখেছে যা অন্যরা শিখেনি। এক অন্ধও বালকটির কথা শুনতে পায়। সে তাকে বললঃ তুমি যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পার তবে তুমি অমুক অমুক জিনিস পাবে।
বালকটি বললঃ আমি তোমার কাছে এই অর্থ চাই না। কিন্তু তুমি যদি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাও তবে কি তুমি সেই সত্তার উপর ঈমান আনবে যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিবেন? সে বললঃ হ্যাঁ। তখন বালকটি আল্লাহর কাছে দুআ করল। আল্লাহ এ অন্ধের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর এ অন্ধ ঈমান গ্রহণ করল।
সেই বাদশাহর কাছে তাদের এ ঘটনার সংবাদ পৌঁছল। সে তখন লোক পাঠিয়ে তাদের ধরে আনল। বললঃ তোমাদের প্রত্যেককে আমি এমন ভাবে হত্যা করব যে, কাউকে এমনভাবে আমি আর হত্যা করিনি। তার নির্দেশে পাদ্রী এবং অন্ধ লোকটির একজনকে মাথার সিথি থেকে করাত দিয়ে চিরে শহীদ করে দেওয়া হল এবং আন্যজনকে অন্য একভাবে হত্যা করা হল।
পরে বালকটি সম্পর্কে সে নির্দেশ দিয়ে বলরঃ তাকে নিয়ে অমুক পাহাড়ে যাও এবং চূড়া থেকে তাকে ফেলে দিবে। লোকেরা তাকে পাহাড়ে নিয়ে গেল। যে স্থান থেকে তাকে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছা করছিল। সে স্থানে তারা পৌছার পর নিজেরাই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল। বালকটি ছাড়া আর কেউ তাদের বাকী রইল না। শেষে বালকটি ফিরে এল। বাদশাহ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। তদনুসারে তাকে সাগরে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু যারা সঙ্গে গিয়েছিল তাদেরকে আল্লাহ ডুবিয়ে দিলেন আর বালকটিকে বাঁচিয়ে দিলেন।
শেষে বালকটি বাদশাহকে বললঃ শূলীতে ঝুলিয়ে তীর নিক্ষেপ করে মারা ভিন্ন তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না। আর যখন তীর নিক্ষেপ করবে তখন বলবেঃ ’‘এই বালকটির প্রতিপালক আল্লাহর নামে’’। যা হোক, বাদশা উক্ত মর্মে নির্দেশ জারি করে এবং বালকটিকে শূলীতে ঝুলিয়ে ’এই বালকটির রব আল্লাহর নামে’ বলে তাকে তীর ছোড়া হল। তীর নিক্ষেপের সময় বালকটি তার হাত কানপট্রিতে স্থাপন করে রেখেছিল।
লোকেরা বললঃ এ বালকটি এমন এক জ্ঞানর অধিকারী - যা আর কেউ জানে না। এই বালকের রবের উপর আমরা ঈমান আনলাম। বাদশাহকে বালা হল মাত্র তিন ব্যক্তি তোমার বিরোধিতা করায় তুমি ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলে আর এখন পৃথিবীর সবাই তোমার বিরোধী হয়ে উঠেছে।
তারপর এই বাদশা আনেকগুলো গর্ত খনন করে এবং এতে লাকড়ি ফেলে আগুন জ্বালায়। পরে সে লোকদের একত্রিত করে বললঃ যে এই ধর্ম থেকে ফিরে আসবে তাকে ছেড়ে দিব আর যে ব্যক্তি ফিরে আসবে না তাকে এই অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করব। অতপর সে মু’মিনদেরও অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قتِلَ أَصْحَابُ الأُخْدُودِ * النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ - (العَزِيزِ الْحَمِيدِ)
ধ্বংস হয়েছে কুন্ড অধিপতিরা। ইন্ধনপূর্ণ যে কুন্ডে ছিল অগ্নি ...... যিনি পরাক্রমশালী এবং প্রশংসিত। (সূরা বুরুজ ৮৫ঃ ৪-৮)
বালকটিকে পরে দাফন করা হয়। বর্ণনা করা হয় যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) এর খিলাফত আমলে তার লাশ বের করা হয়। শহীদ হওয়ার সময় তার আঙুলগুলি যে কানপট্রিতে রাখা ছিল, তখনও ঠিক তেমনই ছিল।
তিনি বললেন নবীগণের কোন একজন তাঁর উম্মত নিয়ে গৌরববোধ করছিলেন। বলেছিলেনঃ এদের মুকাবিলায় কে দাঁড়াতে পারবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তার নিকট ওহী পাঠালেনঃ আমি তাদের শাস্তি দিব বা তাদের উপর শত্রু চাপিয়ে দিব। এ দুয়ের একটি গ্রহণ করার জন্য তাদের ইখতিয়ার দিন। তারা শাস্তিকেই গ্রহণ করে নিল। সে মতে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর মৃত্যু চাপিয়ে দিলেন। ফলে একদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোকের মৃত্যু হল।
এ হাদীসটি বর্ণনার সাথে তিনি পরবর্তী এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন। তিনি বলেনঃ কোন এক বাদশা ছিল। তার ছিল একজন গণক। সে তার জন্য ভবিষ্যৎ গণনা করত। একবার তাকে ঐ গণক বললঃ একটি বুদ্ধিমান শক্তি সম্পন্ন বালক তালাশ করুন। আমি তাকে আমার এ জ্ঞান শিক্ষা দিব। কারণ আমার আশঙ্কা হয় যদি আমি মারা যাই তবে আপনাদের থেকে এ জ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। এই জ্ঞানের আধিকারী আপনাদের মধ্যে কেউ থাকবে না। তাদের বর্ণনানুযায়ি এক বালক তারা তালাশ করে বের করল। তারা তাকে গণকের কাছে হাযির হতে নির্দেশ দিল এবং তার কাছে আসা-যওয়া করতে বলল। সে মতে বালকটি তার কাছে আসা-যাওয়া করলে লাগল। আসা-যাওয়ার পথে এক গীর্জায় এক জন পাদ্রী থাকত। (বর্ণনাকারী মা‘মার (রাহঃ) বলেন, তৎকালে গীর্জার উপাসনাকারিগণ সত্য দ্বীন বিশ্বাসী ছিলেন)। বালকটি যখনই সেখান দিয়ে যেত সে পাদ্রীকে তার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত। শেষে পাদদ্রী তাকে জানালঃ আমি আল্লাহর ইবাদত করি।
বালকটি পাদ্রীর কাছে সময় দিতে লাগল এবং উক্ত গণকের কাছে যেতে দেরী করতে লাগল। এতে গণক বালকটির পরিবার পরিজনকে খবর পাঠায় যে সে প্রায়ই হাজির হয় না। বালকটি পাদ্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করে। পাদ্রী তাকে বললঃ গণক যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কোথায় ছিলে, তবে তুমি বলবে যে, তুমি তোমার পরিবারের লোকদের কাছেই ছিলে। আর তোমার পরিবারের লোকরা যখন জিজ্ঞাসা করবে তখন বলবে গণকের কাছে ছিলে।
এভাবেই চলছিল। একদিন বালকটি মানুষের এক বিরাট ভিড়ের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিল। লোকদেরকে একটা হিংস্র জন্তু পথ আটকে রেখেছিল। কোন কোন রাবী বলেছেন। এ জন্তুটি ছিল একটা সিংহ। বালকটি একটা পাথর হাতে নিয়ে বললঃ হে আল্লাহ! পাদ্রী যা বলে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আমি যেন জন্তুটিকে হত্যা করতে পারি। এরপর সে পাথরটি ছুড়ে মারল এবং জন্তুটি মারা গেল। লোকেরা বলতে লাগল কে এ জন্তুটি হত্যা করেছে? অন্যরা বলল এ বালকটি। মানুষের মাঝে এতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তারা বলাবলি করতে থাকে যে, এই বালকটি এমন কিছু জ্ঞান শিখেছে যা অন্যরা শিখেনি। এক অন্ধও বালকটির কথা শুনতে পায়। সে তাকে বললঃ তুমি যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পার তবে তুমি অমুক অমুক জিনিস পাবে।
বালকটি বললঃ আমি তোমার কাছে এই অর্থ চাই না। কিন্তু তুমি যদি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাও তবে কি তুমি সেই সত্তার উপর ঈমান আনবে যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিবেন? সে বললঃ হ্যাঁ। তখন বালকটি আল্লাহর কাছে দুআ করল। আল্লাহ এ অন্ধের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর এ অন্ধ ঈমান গ্রহণ করল।
সেই বাদশাহর কাছে তাদের এ ঘটনার সংবাদ পৌঁছল। সে তখন লোক পাঠিয়ে তাদের ধরে আনল। বললঃ তোমাদের প্রত্যেককে আমি এমন ভাবে হত্যা করব যে, কাউকে এমনভাবে আমি আর হত্যা করিনি। তার নির্দেশে পাদ্রী এবং অন্ধ লোকটির একজনকে মাথার সিথি থেকে করাত দিয়ে চিরে শহীদ করে দেওয়া হল এবং আন্যজনকে অন্য একভাবে হত্যা করা হল।
পরে বালকটি সম্পর্কে সে নির্দেশ দিয়ে বলরঃ তাকে নিয়ে অমুক পাহাড়ে যাও এবং চূড়া থেকে তাকে ফেলে দিবে। লোকেরা তাকে পাহাড়ে নিয়ে গেল। যে স্থান থেকে তাকে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছা করছিল। সে স্থানে তারা পৌছার পর নিজেরাই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল। বালকটি ছাড়া আর কেউ তাদের বাকী রইল না। শেষে বালকটি ফিরে এল। বাদশাহ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। তদনুসারে তাকে সাগরে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু যারা সঙ্গে গিয়েছিল তাদেরকে আল্লাহ ডুবিয়ে দিলেন আর বালকটিকে বাঁচিয়ে দিলেন।
শেষে বালকটি বাদশাহকে বললঃ শূলীতে ঝুলিয়ে তীর নিক্ষেপ করে মারা ভিন্ন তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না। আর যখন তীর নিক্ষেপ করবে তখন বলবেঃ ’‘এই বালকটির প্রতিপালক আল্লাহর নামে’’। যা হোক, বাদশা উক্ত মর্মে নির্দেশ জারি করে এবং বালকটিকে শূলীতে ঝুলিয়ে ’এই বালকটির রব আল্লাহর নামে’ বলে তাকে তীর ছোড়া হল। তীর নিক্ষেপের সময় বালকটি তার হাত কানপট্রিতে স্থাপন করে রেখেছিল।
লোকেরা বললঃ এ বালকটি এমন এক জ্ঞানর অধিকারী - যা আর কেউ জানে না। এই বালকের রবের উপর আমরা ঈমান আনলাম। বাদশাহকে বালা হল মাত্র তিন ব্যক্তি তোমার বিরোধিতা করায় তুমি ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলে আর এখন পৃথিবীর সবাই তোমার বিরোধী হয়ে উঠেছে।
তারপর এই বাদশা আনেকগুলো গর্ত খনন করে এবং এতে লাকড়ি ফেলে আগুন জ্বালায়। পরে সে লোকদের একত্রিত করে বললঃ যে এই ধর্ম থেকে ফিরে আসবে তাকে ছেড়ে দিব আর যে ব্যক্তি ফিরে আসবে না তাকে এই অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করব। অতপর সে মু’মিনদেরও অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قتِلَ أَصْحَابُ الأُخْدُودِ * النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ - (العَزِيزِ الْحَمِيدِ)
ধ্বংস হয়েছে কুন্ড অধিপতিরা। ইন্ধনপূর্ণ যে কুন্ডে ছিল অগ্নি ...... যিনি পরাক্রমশালী এবং প্রশংসিত। (সূরা বুরুজ ৮৫ঃ ৪-৮)
বালকটিকে পরে দাফন করা হয়। বর্ণনা করা হয় যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) এর খিলাফত আমলে তার লাশ বের করা হয়। শহীদ হওয়ার সময় তার আঙুলগুলি যে কানপট্রিতে রাখা ছিল, তখনও ঠিক তেমনই ছিল।
أبواب تفسير القرآن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَاب وَمِنْ سُورَةِ البُرُوجِ
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، - الْمَعْنَى وَاحِدٌ قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ صُهَيْبٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى الْعَصْرَ هَمَسَ - وَالْهَمْسُ فِي قَوْلِ بَعْضِهِمْ تَحَرُّكُ شَفَتَيْهِ كَأَنَّهُ يَتَكَلَّمُ فَقِيلَ لَهُ إِنَّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذَا صَلَّيْتَ الْعَصْرَ هَمَسْتَ قَالَ . " إِنَّ نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ كَانَ أُعْجِبَ بِأُمَّتِهِ فَقَالَ مَنْ يَقُولُ لِهَؤُلاَءِ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ أَنْ خَيِّرْهُمْ بَيْنَ أَنْ أَنْتَقِمَ مِنْهُمْ وَبَيْنَ أَنْ أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوَّهُمْ فَاخْتَارَ النِّقْمَةَ فَسَلَّطَ عَلَيْهِمُ الْمَوْتَ فَمَاتَ مِنْهُمْ فِي يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفًا " . قَالَ وَكَانَ إِذَا حَدَّثَ بِهَذَا الْحَدِيثِ حَدَّثَ بِهَذَا الْحَدِيثِ الآخَرِ . قَالَ " كَانَ مَلِكٌ مِنَ الْمُلُوكِ وَكَانَ لِذَلِكَ الْمَلِكِ كَاهِنٌ يَكْهَنُ لَهُ فَقَالَ الْكَاهِنُ انْظُرُوا لِيَ غُلاَمًا فَهِمًا أَوْ قَالَ فَطِنًا لَقِنًا فَأُعَلِّمُهُ عِلْمِي هَذَا فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ أَمُوتَ فَيَنْقَطِعَ مِنْكُمْ هَذَا الْعِلْمُ وَلاَ يَكُونُ فِيكُمْ مَنْ يَعْلَمُهُ . قَالَ فَنَظَرُوا لَهُ عَلَى مَا وَصَفَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَحْضُرَ ذَلِكَ الْكَاهِنَ وَأَنْ يَخْتَلِفَ إِلَيْهِ فَجَعَلَ يَخْتَلِفُ إِلَيْهِ وَكَانَ عَلَى طَرِيقِ الْغُلاَمِ رَاهِبٌ فِي صَوْمَعَةٍ " . قَالَ مَعْمَرٌ أَحْسِبُ أَنَّ أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ كَانُوا يَوْمَئِذٍ مُسْلِمِينَ قَالَ " فَجَعَلَ الْغُلاَمُ يَسْأَلُ ذَلِكَ الرَّاهِبَ كُلَّمَا مَرَّ بِهِ فَلَمْ يَزَلْ بِهِ حَتَّى أَخْبَرَهُ فَقَالَ إِنَّمَا أَعْبُدُ اللَّهَ " . قَالَ " فَجَعَلَ الْغُلاَمُ يَمْكُثُ عِنْدَ الرَّاهِبِ وَيُبْطِئُ عَلَى الْكَاهِنِ فَأَرْسَلَ الْكَاهِنُ إِلَى أَهْلِ الْغُلاَمِ إِنَّهُ لاَ يَكَادُ يَحْضُرُنِي فَأَخْبَرَ الْغُلاَمُ الرَّاهِبَ بِذَلِكَ فَقَالَ لَهُ الرَّاهِبُ إِذَا قَالَ لَكَ الْكَاهِنُ أَيْنَ كُنْتَ فَقُلْ عِنْدَ أَهْلِي . وَإِذَا قَالَ لَكَ أَهْلُكَ أَيْنَ كُنْتَ فَأَخِبِرْهُمْ أَنَّكَ كُنْتَ عِنْدَ الْكَاهِنِ " . قَالَ " فَبَيْنَمَا الْغُلاَمُ عَلَى ذَلِكَ إِذْ مَرَّ بِجَمَاعَةٍ مِنَ النَّاسِ كَثِيرٍ قَدْ حَبَسَتْهُمْ دَابَّةٌ " . فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ تِلْكَ الدَّابَّةَ كَانَتْ أَسَدًا قَالَ " فَأَخَذَ الْغُلاَمُ حَجَرًا قَالَ اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مَا يَقُولُ الرَّاهِبُ حَقًّا فَأَسْأَلُكَ أَنْ أَقْتُلَهَا . قَالَ ثُمَّ رَمَى فَقَتَلَ الدَّابَّةَ . فَقَالَ النَّاسُ مَنْ قَتَلَهَا قَالُوا الْغُلاَمُ فَفَزِعَ النَّاسُ وَقَالُوا لَقَدْ عَلِمَ هَذَا الْغُلاَمُ عِلْمًا لَمْ يَعْلَمْهُ أَحَدٌ . قَالَ فَسَمِعَ بِهِ أَعْمَى فَقَالَ لَهُ إِنْ أَنْتَ رَدَدْتَ بَصَرِي فَلَكَ كَذَا وَكَذَا . قَالَ لَهُ لاَ أُرِيدُ مِنْكَ هَذَا وَلَكِنْ أَرَأَيْتَ إِنْ رَجَعَ إِلَيْكَ بَصَرُكَ أَتُؤْمِنُ بِالَّذِي رَدَّهُ عَلَيْكَ قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَدَعَا اللَّهَ فَرَدَّ عَلَيْهِ بَصَرَهُ فَآمَنَ الأَعْمَى فَبَلَغَ الْمَلِكَ أَمْرُهُمْ فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ فَأُتِيَ بِهِمْ فَقَالَ لأَقْتُلَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِنْكُمْ قِتْلَةً لاَ أَقْتُلُ بِهَا صَاحِبَهُ فَأَمَرَ بِالرَّاهِبِ وَالرَّجُلِ الَّذِي كَانَ أَعْمَى فَوَضَعَ الْمِنْشَارَ عَلَى مَفْرِقِ أَحَدِهِمَا فَقَتَلَهُ وَقَتَلَ الآخَرَ بِقِتْلَةٍ أُخْرَى . ثُمَّ أَمَرَ بِالْغُلاَمِ فَقَالَ انْطَلِقُوا بِهِ إِلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَأَلْقُوهُ مِنْ رَأْسِهِ فَانْطَلَقُوا بِهِ إِلَى ذَلِكَ الْجَبَلِ فَلَمَّا انْتَهَوْا بِهِ إِلَى ذَلِكَ الْمَكَانِ الَّذِي أَرَادُوا أَنْ يُلْقُوهُ مِنْهُ جَعَلُوا يَتَهَافَتُونَ مِنْ ذَلِكَ الْجَبَلِ وَيَتَرَدَّوْنَ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ إِلاَّ الْغُلاَمُ " . قَالَ " ثُمَّ رَجَعَ فَأَمَرَ بِهِ الْمَلِكُ أَنْ يَنْطَلِقُوا بِهِ إِلَى الْبَحْرِ فَيُلْقُونَهُ فِيهِ فَانْطُلِقَ بِهِ إِلَى الْبَحْرِ فَغَرَّقَ اللَّهُ الَّذِينَ كَانُوا مَعَهُ وَأَنْجَاهُ فَقَالَ الْغُلاَمُ لِلْمَلِكِ إِنَّكَ لاَ تَقْتُلُنِي حَتَّى تَصْلُبَنِي وَتَرْمِيَنِي وَتَقُولَ إِذَا رَمَيْتَنِي بِسْمِ اللَّهِ رَبِّ هَذَا الْغُلاَمِ . قَالَ فَأَمَرَ بِهِ فَصُلِبَ ثُمَّ رَمَاهُ فَقَالَ بِسْمِ اللَّهِ رَبِّ هَذَا الْغُلاَمِ . قَالَ فَوَضَعَ الْغُلاَمُ يَدَهُ عَلَى صُدْغِهِ حِينَ رُمِيَ ثُمَّ مَاتَ . فَقَالَ أُنَاسٌ لَقَدْ عَلِمَ هَذَا الْغُلاَمُ عِلْمًا مَا عَلِمَهُ أَحَدٌ فَإِنَّا نُؤْمِنُ بِرَبِّ هَذَا الْغُلاَمِ . قَالَ فَقِيلَ لِلْمَلِكِ أَجَزِعْتَ أَنْ خَالَفَكَ ثَلاَثَةٌ فَهَذَا الْعَالَمُ كُلُّهُمْ قَدْ خَالَفُوكَ . قَالَ فَخَدَّ أُخْدُودًا ثُمَّ أَلْقَى فِيهَا الْحَطَبَ وَالنَّارَ ثُمَّ جَمَعَ النَّاسَ فَقَالَ مَنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ تَرَكْنَاهُ وَمَنْ لَمْ يَرْجِعْ أَلْقَيْنَاهُ فِي هَذِهِ النَّارِ فَجَعَلَ يُلْقِيهِمْ فِي تِلْكَ الأُخْدُودِ . قَالَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى : (قتِلَ أَصْحَابُ الأُخْدُودِ * النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ ) حَتَّى بَلَغَ : (العَزِيزِ الْحَمِيدِ ) " . قَالَ " فَأَمَّا الْغُلاَمُ فَإِنَّهُ دُفِنَ " . قَالَ فَيُذْكَرُ أَنَّهُ أُخْرِجَ فِي زَمَنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَأُصْبُعُهُ عَلَى صُدْغِهِ كَمَا وَضَعَهَا حِينَ قُتِلَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .