আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৭- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ

হাদীস নং: ৫১০৩
আন্তর্জাতিক নং: ২০২৪-২
- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ
১৩. দাঁড়িয়ে পান করা প্রসঙ্গে
৫১০৩। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) কোন ব্যক্তির দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা বলেন, আমরা বললাম, তবে খাওয়া? তিনি বললেন, সেটা তো আরো খারাপ, আরো নিকৃষ্ট।
كتاب الأشربة
باب فِي الشُّرْبِ قَائِمًا
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ نَهَى أَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا . قَالَ قَتَادَةُ فَقُلْنَا فَالأَكْلُ فَقَالَ ذَاكَ أَشَرُّ أَوْ أَخْبَثُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোন কোন হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয। উলামায়ে কেরাম উভয় হাদীছের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যে, দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা হারাম অর্থে নয়; বরং মাকরূহ অর্থে। অর্থাৎ এমনিতে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয। তবে তা অপসন্দনীয় তথা মাকরূহ। সে কারণেই এই হাদীছে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনও মুমিন-মুসলিমের অপসন্দনীয় কাজও করা উচিত নয়। তার সব কাজই সুন্দর ও সুচারুরূপে হওয়া উচিত। দাঁড়িয়ে পানাহার করা অপেক্ষা বসে পানাহার করাটা যে সুন্দর, তা যে-কেউ স্বীকার করবে। এটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। বসে শান্তভাবে পানাহার করলে খাবার ও পানীয় ধীরে সচ্ছন্দ্যে উদরস্থ হয়। দাঁড়িয়ে পানাহার করলে তা হয় দ্রুতগতিতে। তাতে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে। হজমেও ব্যাঘাত ঘটে।

প্রশ্ন হতে পারে, কোন কোন হাদীছে তো ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করতে বলা হয়েছে, তা দ্বারা ইঙ্গিত হয় না যে, দাঁড়িয়ে পান করাটা খুবই মন্দ কাজ?
উত্তর হল, বমি করার আদেশ 'মুস্তাহাব' অর্থে। অর্থাৎ বমি করা ওয়াজিব ও অপরিহার্য নয়; করাটা ভালো। উচিত ছিল সুন্নতের অনুসরণার্থে বসে পান করা। তা যখন করা হয়নি, তখন তার জন্য ভালো এটাই যে, বমি করে সে পানি ফেলে দেবে, তারপর নতুন করে সুন্নত মোতাবেক পান করবে। এমনও হতে পারে যে, বমি করার আদেশ কেবলই তিরস্কার করার জন্য। প্রকৃত অর্থেই বমি করতে বলা হয়নি।

হাদীছে ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করতে বলা হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, ইচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পান করলে কোনও অসুবিধা নেই। বরং বিষয়টিকে এভাবে বুঝতে হবে যে, ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলেই যখন বমির হুকুম, তখন ইচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পান করলে তো তা অধিকতর মন্দ হবে। অথবা বিশেষভাবে ভুলের কথা বলা হয়েছে এ কারণে যে, মুমিন ব্যক্তি তো অবশ্যই সুন্নত মোতাবেক পান করবে। ইচ্ছাকৃত সে দাঁড়িয়ে পান করতেই পারে না। তাঁর দাঁড়িয়ে পান করাটা হতে পারে ভুলক্রমে। তবে ভুলক্রমে হলেও কাজটি যেহেতু মন্দ, তাই তার প্রতিকার দরকার। সে হিসেবেই বমি করার হুকুম।

হাদীসে আছে, শিষ্য কাতাদা রহ.-এর জিজ্ঞাসার উত্তরে হযরত আনাস রাযি. দাঁড়িয়ে আহার করাকে অধিকতর মন্দ বলেছেন। কেননা পান করার চেয়ে আহার করাতে সময় বেশি লাগে। দাঁড়িয়ে পান করলে মন্দ কাজটি অল্পসময়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দাঁড়িয়ে আহার করলে মন্দ কাজ করা হয় অপেক্ষাকৃত বেশি সময়। এ কারণেই দাঁড়িয়ে আহার করাকে অধিকতর মন্দ বলেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পানি, শরবত ইত্যাদি দাঁড়িয়ে পান করতে নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা অনুযায়ী তা অপসন্দনীয় কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)