আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
১৯- জানাযার অধ্যায়
হাদীস নং: ১২৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ১৩১৪
- জানাযার অধ্যায়
৮৩৩. পুরুষরা জানাযা বহন করবে, মহিলারা নয়।
১২৩৫। আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং পুরুষরা তা কাঁধে বহন করে নেয়, তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর নেককার না হলে সে বলতে থাকে, হায় আফসোস! তোমরা এটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানবজাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষেরা তা শুনলে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলত।
كتاب الجنائز
باب حَمْلِ الرِّجَالِ الْجِنَازَةَ دُونَ النِّسَاءِ
1314 - حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِذَا وُضِعَتِ الجِنَازَةُ [ص:86]، وَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ، فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً، قَالَتْ: قَدِّمُونِي، وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ، قَالَتْ: يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الإِنْسَانَ، وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি দ্বারা কয়েকটি বিষয় জানা যায়। নিচে বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যাচ্ছে।
এক. হাদীছটিতে বলা হয়েছে, লোকজন যখন লাশ বহন করে নিয়ে যায়...। শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে الرجال (পুরুষগণ)। বোঝা গেল যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষলোক থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারাই লাশ বহন করবে। লাশ নারীর হোক বা পুরুষের। কেননা মৌলিকভাবে এটা পুরুষেরই কাজ। এটি করতে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই কোমল নারীর উপর এ দায়িত্ব রাখা হয়নি। এর দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, নারীকে দিয়ে শারীরিক কসরতের কাজ করানো উচিত নয়।
দুই, লাশটি নেককার ব্যক্তির হলে সে বলে- (আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল)। এটা বলার কারণ পরকালে যাওয়ার আগ্রহ। পরকালের প্রথম ঘাটি কবর। নেককার ব্যক্তির জন্য কবরে জান্নাতের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা থাকে। দুনিয়া তার জন্য কারাগারস্বরূপ। তাই এ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আরাম-আয়েশপূর্ণ কবরে যাওয়ার জন্য সে উদগ্রীব হয়ে ওঠে, যেমন কারাগার থেকে খুব দ্রুত বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়।
তিন. লাশটি পাপী ব্যক্তির হলে সে আক্ষেপ করে বলতে থাকে- (হায় দুর্ভোগ! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?)। তার এ আক্ষেপের কারণ সে তার পরকাল ধ্বংস করে দুনিয়ার জীবন সাজিয়েছিল। এখন এই সাজানো-গোছানো সংসার ছেড়ে তাকে কবরে যেতে হচ্ছে, যেখানে তার জন্য রয়েছে নানারকম শাস্তির ব্যবস্থা। কবর তার জন্য নিদারুণ কষ্টের কারাগার। সুখের সংসার ছেড়ে সে কারাগারে যেতে চাবে কেন? তাই তার এ আক্ষেপ। কিন্তু অসময়ের এ আক্ষেপ কোনও কাজে আসবে না। আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার, যাতে এমন আক্ষেপের সঙ্গে কবরে যেতে না হয়।
চার, পাপী ব্যক্তির আক্ষেপের আওয়াজ মানুষ শুনতে পায় না। অন্যসব জীব শুনতে পায়। এটা সম্ভব। আল্লাহ তা'আলার এ ক্ষমতা আছে যে, তিনি কোনও আওয়াজ তার এক সৃষ্টিকে শুনতে দেবেন, অপর সৃষ্টিকে শুনতে দেবেন না। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী ক্ষমতার ব্যবহার করে থাকেন। মানুষকে শুনতে না দেওয়ার হিকমত হল তার সে আওয়াজ অতি বিকট হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় মানুষকে শোনানো হলে মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়ত। এতে মানুষের পার্থিব জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। তাছাড়া ইহজগৎ পরীক্ষার জগৎ। মৃত্যুপরবর্তী অবস্থা প্রকাশ করে দেওয়া হলে পরীক্ষার কিছু থাকে না। অদৃশ্য জগতের বিষয়াবলী শুনে বিশ্বাস করার মধ্যেই পরীক্ষার কৃতকার্যতা।
পাঁচ. এ হাদীছটি দ্বারা জানা যাচ্ছে মৃত্যুর পর মায়্যিত সুনির্দিষ্ট কথা বলে থাকে। এটা অসম্ভব কিছু নয়। মৃত্যু দ্বারা রূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও দেহের সঙ্গে তার বিশেষ একরকম সম্পর্ক থেকে যায়, যদিও সে সম্পর্ক ইহকালীন সম্পর্কের মত নয়। সেই বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তিতেই মায়্যিত জীবিতদের কথা শুনতে পায়, জীবিতদের লক্ষ্য করে কথা বলে। সেই সম্পর্কের ভিত্তিতেই কবরে দেহ আরাম ও আযাব অনুভব করে থাকে। বিষয়টি যেহেতু সম্পূর্ণই অদৃশ্যজগতের, তাই দৃশ্যমান এ জগতে বসে আমাদের পক্ষে সেখানকার সবকিছু পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। ওহীর মাধ্যমে আমাদেরকে যতটুকু জানানো হয়েছে, তাতে বিশ্বাস রাখাই আমাদের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নেককার ব্যক্তির জন্য কবরে অভাবনীয় আরামের ব্যবস্থা থাকায় মৃত্যুর পর সে দ্রুত সেখানে পৌঁছার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। এরকম শুভ পরিণাম লাভের আশায় নিজেদের নেককাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য।
খ. বদকার ব্যক্তির পরিণাম অতিমন্দ। তাই সে কবরে যেতে চায় না। আমাদের যাতে এ অবস্থার সম্মুখীন হতে না হয়, তাই অন্তরে আযাব ও গযবের ভয় জাগ্রত রেখে অসৎকর্ম হতে দূরে থাকতে হবে।
গ. কুরআন ও হাদীছে অদৃশ্যজগতের যেসকল বিষয় জানানো হয়েছে, তা বাহ্যত বুঝে না আসলেও সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে।
এক. হাদীছটিতে বলা হয়েছে, লোকজন যখন লাশ বহন করে নিয়ে যায়...। শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে الرجال (পুরুষগণ)। বোঝা গেল যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষলোক থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারাই লাশ বহন করবে। লাশ নারীর হোক বা পুরুষের। কেননা মৌলিকভাবে এটা পুরুষেরই কাজ। এটি করতে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই কোমল নারীর উপর এ দায়িত্ব রাখা হয়নি। এর দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, নারীকে দিয়ে শারীরিক কসরতের কাজ করানো উচিত নয়।
দুই, লাশটি নেককার ব্যক্তির হলে সে বলে- (আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল)। এটা বলার কারণ পরকালে যাওয়ার আগ্রহ। পরকালের প্রথম ঘাটি কবর। নেককার ব্যক্তির জন্য কবরে জান্নাতের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা থাকে। দুনিয়া তার জন্য কারাগারস্বরূপ। তাই এ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আরাম-আয়েশপূর্ণ কবরে যাওয়ার জন্য সে উদগ্রীব হয়ে ওঠে, যেমন কারাগার থেকে খুব দ্রুত বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়।
তিন. লাশটি পাপী ব্যক্তির হলে সে আক্ষেপ করে বলতে থাকে- (হায় দুর্ভোগ! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?)। তার এ আক্ষেপের কারণ সে তার পরকাল ধ্বংস করে দুনিয়ার জীবন সাজিয়েছিল। এখন এই সাজানো-গোছানো সংসার ছেড়ে তাকে কবরে যেতে হচ্ছে, যেখানে তার জন্য রয়েছে নানারকম শাস্তির ব্যবস্থা। কবর তার জন্য নিদারুণ কষ্টের কারাগার। সুখের সংসার ছেড়ে সে কারাগারে যেতে চাবে কেন? তাই তার এ আক্ষেপ। কিন্তু অসময়ের এ আক্ষেপ কোনও কাজে আসবে না। আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার, যাতে এমন আক্ষেপের সঙ্গে কবরে যেতে না হয়।
চার, পাপী ব্যক্তির আক্ষেপের আওয়াজ মানুষ শুনতে পায় না। অন্যসব জীব শুনতে পায়। এটা সম্ভব। আল্লাহ তা'আলার এ ক্ষমতা আছে যে, তিনি কোনও আওয়াজ তার এক সৃষ্টিকে শুনতে দেবেন, অপর সৃষ্টিকে শুনতে দেবেন না। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী ক্ষমতার ব্যবহার করে থাকেন। মানুষকে শুনতে না দেওয়ার হিকমত হল তার সে আওয়াজ অতি বিকট হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় মানুষকে শোনানো হলে মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়ত। এতে মানুষের পার্থিব জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। তাছাড়া ইহজগৎ পরীক্ষার জগৎ। মৃত্যুপরবর্তী অবস্থা প্রকাশ করে দেওয়া হলে পরীক্ষার কিছু থাকে না। অদৃশ্য জগতের বিষয়াবলী শুনে বিশ্বাস করার মধ্যেই পরীক্ষার কৃতকার্যতা।
পাঁচ. এ হাদীছটি দ্বারা জানা যাচ্ছে মৃত্যুর পর মায়্যিত সুনির্দিষ্ট কথা বলে থাকে। এটা অসম্ভব কিছু নয়। মৃত্যু দ্বারা রূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও দেহের সঙ্গে তার বিশেষ একরকম সম্পর্ক থেকে যায়, যদিও সে সম্পর্ক ইহকালীন সম্পর্কের মত নয়। সেই বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তিতেই মায়্যিত জীবিতদের কথা শুনতে পায়, জীবিতদের লক্ষ্য করে কথা বলে। সেই সম্পর্কের ভিত্তিতেই কবরে দেহ আরাম ও আযাব অনুভব করে থাকে। বিষয়টি যেহেতু সম্পূর্ণই অদৃশ্যজগতের, তাই দৃশ্যমান এ জগতে বসে আমাদের পক্ষে সেখানকার সবকিছু পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। ওহীর মাধ্যমে আমাদেরকে যতটুকু জানানো হয়েছে, তাতে বিশ্বাস রাখাই আমাদের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নেককার ব্যক্তির জন্য কবরে অভাবনীয় আরামের ব্যবস্থা থাকায় মৃত্যুর পর সে দ্রুত সেখানে পৌঁছার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। এরকম শুভ পরিণাম লাভের আশায় নিজেদের নেককাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য।
খ. বদকার ব্যক্তির পরিণাম অতিমন্দ। তাই সে কবরে যেতে চায় না। আমাদের যাতে এ অবস্থার সম্মুখীন হতে না হয়, তাই অন্তরে আযাব ও গযবের ভয় জাগ্রত রেখে অসৎকর্ম হতে দূরে থাকতে হবে।
গ. কুরআন ও হাদীছে অদৃশ্যজগতের যেসকল বিষয় জানানো হয়েছে, তা বাহ্যত বুঝে না আসলেও সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
বর্ণনাকারী: