কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩১২
আন্তর্জাতিক নং: ১৩১২
নামাযের অধ্যায়
৩১৩. নামাযের মধ্যে তন্দ্রা এলে।
১৩১২. যিয়াদ ইবনে আইয়ুব (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পান যে, দুটি খুটির সাথে একটি রশি বাঁধা আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ এটা কেন? তখন জনৈক ব্যক্তি বলেনঃ এটা হামনা বিনতে জাহাশ (রাযিঃ) এর রশি। তিনি রাত্রিতে নামায আদায়কালে যখন ক্লান্তিবোধ করেন, তখন তিনি নিজেকে এর দ্বারা আটকে রাখেন। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ সামর্থ অনুযায়ী নামায আদায় করবে এবং যখন ক্লান্তি বোধ করবে, তখন বিশ্রাম গ্রহণ করবে।
রাবী যিয়াদ বলেনঃ তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ এটা কি? জবাবে তাঁরা বলেনঃ এটা যয়নাব (রাযিঃ) এর রশি। তিনি রাত্রিতে নামায আদায়কালে যখন ক্লান্তিবোধ করেন, তখন তিনি এর দ্বারা নিজেকে আটকে রাখেন। তখন তিনি নির্দেশ দেন, এটা খুলে ফেল। অতঃপর তিনি বলেনঃ তোমরা আনন্দের সাথে নামায আদায় করবে এবং যখন ক্লান্তি বোধ করবে তখন বিশ্রাম নিবে।
রাবী যিয়াদ বলেনঃ তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ এটা কি? জবাবে তাঁরা বলেনঃ এটা যয়নাব (রাযিঃ) এর রশি। তিনি রাত্রিতে নামায আদায়কালে যখন ক্লান্তিবোধ করেন, তখন তিনি এর দ্বারা নিজেকে আটকে রাখেন। তখন তিনি নির্দেশ দেন, এটা খুলে ফেল। অতঃপর তিনি বলেনঃ তোমরা আনন্দের সাথে নামায আদায় করবে এবং যখন ক্লান্তি বোধ করবে তখন বিশ্রাম নিবে।
كتاب الصلاة
باب النُّعَاسِ فِي الصَّلاَةِ
حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ أَيُّوبَ، وَهَارُونُ بْنُ عَبَّادٍ الأَزْدِيُّ، أَنَّ إِسْمَاعِيلَ بْنَ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَهُمْ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَسْجِدَ وَحَبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ سَارِيَتَيْنِ فَقَالَ " مَا هَذَا الْحَبْلُ " . فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ حَمْنَةُ بِنْتُ جَحْشٍ تُصَلِّي فَإِذَا أَعْيَتْ تَعَلَّقَتْ بِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لِتُصَلِّ مَا أَطَاقَتْ فَإِذَا أَعْيَتْ فَلْتَجْلِسْ " . قَالَ زِيَادٌ فَقَالَ " مَا هَذَا " . فَقَالُوا لِزَيْنَبَ تُصَلِّي فَإِذَا كَسِلَتْ أَوْ فَتَرَتْ أَمْسَكَتْ بِهِ . فَقَالَ " حُلُّوهُ " . فَقَالَ " لِيُصَلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ فَإِذَا كَسِلَ أَوْ فَتَرَ فَلْيَقْعُدْ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে যে যায়নাবের কথা বলা হয়েছে, তিনি কোন্ যায়নাব তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ নামে একাধিক মহিলা সাহাবী আছেন। তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট একজন হচ্ছেন উম্মুল মু'মিনীন হযরত যায়নাব বিনতে জাহশ রাযি। তিনি অত্যন্ত ‘ইবাদতগুযার ছিলেন। খুব বেশি রোযা রাখতেন। অত্যধিক দানখয়রাত করতেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচে' বেশি লম্বা, আমার মৃত্যুর পর সে-ই আমার সাথে সবার আগে মিলিত হবে। পরে দেখা গেল তাঁদের মধ্যে সবার আগে ইন্তিকাল হয় হযরত যায়নাব বিনতে জাহশ রাযি.-এর। তখন এ কথার ব্যাখ্যা জানা গেল যে, লম্বা হাত দ্বারা বেশি দানখয়রাত বোঝানো হয়েছিল। অত্যধিক দানখয়রাত করার কারণে তাঁর উপাধি হয়ে গিয়েছিল 'উম্মুল মাসাকীন'- অর্থাৎ গরীবমাতা। তিনি হিজরী ২০ সালে ইন্তিকাল করেন।
কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, হযরত যায়নাব বিনতে জাহশ রাযি.-ই মসজিদে রশিটি বেঁধে রেখেছিলেন। তিনি অনেক দীর্ঘ নামায পড়তেন। যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তখন রশিটি ধরে রাখতেন। কোনও কোনও বর্ণনায় অপর উম্মুল মু'মিনীন হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিছ রাযি.-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত তিনিও এরকম করতেন।
যাহোক সুনির্দিষ্টভাবে জানা জরুরি নয় যে, এরকম কে করতেন। যিনিই এটা করতেন তাঁর নিয়ত ছিল ভালো। দীর্ঘক্ষণ ইবাদত করা ভালোই তো বটে। কিন্তু এর মধ্যে যে ক্ষতি রয়েছে সে সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা জাহানের শিক্ষাগুরু। দীন সম্পর্কিত ভালোমন্দের জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া যায়। সব সাহাবী ছিলেন তাঁর সরাসরি ছাত্র। তিনি নানাভাবে তাঁদের শিক্ষা দান করেছেন। সে শিক্ষাদানের একটা পদ্ধতি ছিল এইও যে, তাঁর সামনে কেউ কোনও কাজ করলে সে কাজটি সঠিক হলে তা অনুমোদন করতেন। তাঁর নীরব থাকাটাও অনুমোদনরূপেই গণ্য হত। আর কাজটি সঠিক না হলে তা সংশোধন করে দিতেন। এস্থলে তাই হয়েছে।
তিনি রশিটি খুলে ফেলতে বললেন এবং মূলনীতিও বলে দিলেন যে, ইবাদত করবে ততক্ষণই, যতক্ষণ শরীর-মন প্রফুল্ল থাকে। যখন ক্লান্তি দেখা দেয় তখন শুয়ে পড়বে। ঘুম আসলে ঘুমিয়ে যাবে। তাতে ক্লান্তি দূর হবে। ঘুম আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় এক নি'আমত। তাতে ক্লান্তি দূর হয়। তাই এ নি'আমতেরও কদর করা দরকার এবং এটা শরীরের হকও বটে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, “তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে” । ক্ষুধা ও পিপাসা লাগলে পানাহার করা, রোগব্যাধির চিকিৎসা করানো এবং ক্লান্তির সময় বিশ্রাম করা ও ঘুমানো হচ্ছে শরীরের হক। কাজেই ‘ইবাদতরত অবস্থায় যদি ঘুম পায় তবে ঘুমিয়ে পড়া উচিত। তারপর যখন ঘুম ভাঙবে এবং ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে, তখন আবার ‘ইবাদত করবে। এটাই 'ইবাদতের নিয়ম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নফল ইবাদত-বন্দেগীতে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। যতক্ষণ শরীর-মনে প্রফুল্লতা থাকে, ‘ইবাদত ততক্ষণই করা উচিত।
খ. উস্তায ও মুরুব্বীস্থানীয় কারও সামনে কেউ কোনও অনুচিত কাজ করলে তাদের কর্তব্য সংশোধন করে দেওয়া এবং তার করণীয় কী তা বুঝিয়ে দেওয়া।
কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, হযরত যায়নাব বিনতে জাহশ রাযি.-ই মসজিদে রশিটি বেঁধে রেখেছিলেন। তিনি অনেক দীর্ঘ নামায পড়তেন। যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তখন রশিটি ধরে রাখতেন। কোনও কোনও বর্ণনায় অপর উম্মুল মু'মিনীন হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিছ রাযি.-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত তিনিও এরকম করতেন।
যাহোক সুনির্দিষ্টভাবে জানা জরুরি নয় যে, এরকম কে করতেন। যিনিই এটা করতেন তাঁর নিয়ত ছিল ভালো। দীর্ঘক্ষণ ইবাদত করা ভালোই তো বটে। কিন্তু এর মধ্যে যে ক্ষতি রয়েছে সে সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা জাহানের শিক্ষাগুরু। দীন সম্পর্কিত ভালোমন্দের জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া যায়। সব সাহাবী ছিলেন তাঁর সরাসরি ছাত্র। তিনি নানাভাবে তাঁদের শিক্ষা দান করেছেন। সে শিক্ষাদানের একটা পদ্ধতি ছিল এইও যে, তাঁর সামনে কেউ কোনও কাজ করলে সে কাজটি সঠিক হলে তা অনুমোদন করতেন। তাঁর নীরব থাকাটাও অনুমোদনরূপেই গণ্য হত। আর কাজটি সঠিক না হলে তা সংশোধন করে দিতেন। এস্থলে তাই হয়েছে।
তিনি রশিটি খুলে ফেলতে বললেন এবং মূলনীতিও বলে দিলেন যে, ইবাদত করবে ততক্ষণই, যতক্ষণ শরীর-মন প্রফুল্ল থাকে। যখন ক্লান্তি দেখা দেয় তখন শুয়ে পড়বে। ঘুম আসলে ঘুমিয়ে যাবে। তাতে ক্লান্তি দূর হবে। ঘুম আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় এক নি'আমত। তাতে ক্লান্তি দূর হয়। তাই এ নি'আমতেরও কদর করা দরকার এবং এটা শরীরের হকও বটে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, “তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে” । ক্ষুধা ও পিপাসা লাগলে পানাহার করা, রোগব্যাধির চিকিৎসা করানো এবং ক্লান্তির সময় বিশ্রাম করা ও ঘুমানো হচ্ছে শরীরের হক। কাজেই ‘ইবাদতরত অবস্থায় যদি ঘুম পায় তবে ঘুমিয়ে পড়া উচিত। তারপর যখন ঘুম ভাঙবে এবং ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে, তখন আবার ‘ইবাদত করবে। এটাই 'ইবাদতের নিয়ম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নফল ইবাদত-বন্দেগীতে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। যতক্ষণ শরীর-মনে প্রফুল্লতা থাকে, ‘ইবাদত ততক্ষণই করা উচিত।
খ. উস্তায ও মুরুব্বীস্থানীয় কারও সামনে কেউ কোনও অনুচিত কাজ করলে তাদের কর্তব্য সংশোধন করে দেওয়া এবং তার করণীয় কী তা বুঝিয়ে দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)