আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৩. অধ্যায়ঃ ইলেম

হাদীস নং: ১৬৫
অধ্যায়ঃ ইলেম
আলিমদের সম্মান করা এবং তাঁদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের অনুপ্রেরণা এবং তাঁদের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রদর্শনের প্রতি ভীতি প্রদর্শন
১৬৫. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) উহুদের শহীদদের লাশ দু'জন করে একত্র করছিলেন এবং বলছিলেন, তাদের দু'জনের মধ্যে কুরআনের পাণ্ডিত্যের দিক থেকে কে অগ্রগণ্য? তাদের দু'জনের একজনের প্রতি যখন ইশারা করা হতো, তখন তিনি তাকে আগে কবরে রাখতেন।
(ইমাম বুখারী এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।)
كتاب الْعلم
التَّرْغِيب فِي إكرام الْعلمَاء وإجلالهم وتوقيرهم والترهيب من إضاعتهم وَعدم المبالاة بهم
165 - عَن جَابر رَضِي الله عَنهُ أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كَانَ يجمع بَين الرجلَيْن من قَتْلَى أحد يَعْنِي فِي الْقَبْر ثمَّ يَقُول أَيهمَا أَكثر أخذا لِلْقُرْآنِ فَإِذا أُشير إِلَى أَحدهمَا قدمه فِي اللَّحْد
رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে উহুদ যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের দাফনকার্য সম্পর্কিত একটি বিশেষ তথ্য দেওয়া হয়েছে। উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী ৪র্থ সনে। এতে ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন অনেকেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ভীষণভাবে আহত হন। যখন দাফন-কাফনের পালা আসে, তখন সাহাবায়ে কেরামকে যে কঠোর-কঠিন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তারা ছিলেন নেহায়েত গরীব। সকল শহীদের পূর্ণাঙ্গ কাফনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সকলেই ছিলেন আহত ও ক্ষত-বিক্ষত। এতগুলো কবর তাদের পক্ষে কিভাবে খনন করা সম্ভব? আনসারগণ এসে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো ক্ষত-বিক্ষত, সংকটাপন্ন। তিনি বললেন, তোমরা একটু প্রশস্ত গর্ত কর এবং প্রতি কবরে দুই-তিনজন করে দাফন কর। তা-ই করা হয়েছিল। এমনকি একই কবরে পুরুষ ও নারীকেও স্থান দেওয়া হয়েছিল। মাঝখানে মাটি দিয়ে আড়াল করা হয়েছিল। একেকজনের কাফন এতই ছোট ছিল যে,মাথা ঢাকলে পা ঢাকে না, পা ঢাকলে মাথা ঢাকে না। অগত্যা মাথা ঢেকে পায়ের উপর ঘাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

যাহোক যখন দু-দু'জনকে একেক কবরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জেনে নিচ্ছিলেন যে, তাদের মধ্যে কুরআন বেশি কে জানে। যার দিকে ইশারা করা হত যে সে বেশি জানে, তাকে কেবলার দিকে সামনে রাখা হতো। অপরজনকে রাখা হত তার পেছনে। অর্থাৎ এ অগ্রগণ্যতা বয়স বা অন্য কোনও বিচারে বিবেচনা করা হত না; তা বিবেচনা করা হত কুরআন কম-বেশি জানার ভিত্তিতে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. প্রয়োজনে একাধিক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা যেতে পারে।

খ. কুরআন যে বেশি জানে তার মর্যাদাও বেশি। এমনকি দাফনের ক্ষেত্রেও সে মর্যাদা বিবেচনাযোগ্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)