আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৩. অধ্যায়ঃ ইলেম

হাদীস নং: ১৭০
অধ্যায়ঃ ইলেম
আলিমদের সম্মান করা এবং তাঁদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের অনুপ্রেরণা এবং তাঁদের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রদর্শনের প্রতি ভীতি প্রদর্শন
১৭০. হযরত উবাদা ইব্‌ন সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে বড়দের মান্য করে না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের আলিমদের সম্মান করে না, সে আমার উম্মত নয়।
(ইমাম আহমদ হাসান সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন। তাবারানী এবং হাকিমও হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন তবে হাকিম لَيْسَ من أمتِي স্থলে لَيْسَ منا বলেছেন।)
كتاب الْعلم
التَّرْغِيب فِي إكرام الْعلمَاء وإجلالهم وتوقيرهم والترهيب من إضاعتهم وَعدم المبالاة بهم
170 - وَعَن عبَادَة بن الصَّامِت أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَيْسَ من أمتِي من لم يجل كَبِيرنَا وَيرْحَم صَغِيرنَا وَيعرف لعالمنا
رَوَاهُ أَحْمد بِإِسْنَاد حسن وَالطَّبَرَانِيّ وَالْحَاكِم إِلَّا أَنه قَالَ لَيْسَ منا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি ছোট ও বড়'র অধিকার সম্পর্কে সচেতনতামূলক একটি হাদীছ। ছোটকে স্নেহ করা ও বড়কে সম্মান করা যে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তা এ হাদীছের প্রতি লক্ষ করলে ভালোভাবেই বোঝা যায়। যে ব্যক্তি এতে গাফলাতি করে তার সম্পর্কে জানানো হয়েছে— সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের একজন নয়।

কত কঠিন সতর্কবাণী! দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি তো তাঁর উম্মত হওয়ার উপরই নির্ভর করে। বলাবাহুল্য, তাঁর উম্মত হওয়ার অর্থ তাঁর আদর্শের উপর থাকা। যে ব্যক্তি তার আদর্শের উপর নয়, সে নিজেকে তাঁর উম্মত বলে কিভাবে দাবি করতে পারে? কিভাবেই বা সে মুক্তির আশা করতে পারে? এ হাদীছ জানাচ্ছে, তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত থাকতে চাইলে তাকে অবশ্যই ছোটকে স্নেহ করতে হবে এবং বড়কে সম্মান করতে হবে। কেননা এটা তাঁর আদর্শ।

বড়র কাছে স্নেহ পাওয়া ছোটার হক। বড়'র কর্তব্য ছোটার সঙ্গে কোমল-মধুর কথা বলা, তার ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। এমনিভাবে তাকে ইসলামী শিষ্টাচার ও আদব-কায়দা শেখানো তার প্রতি স্নেহ প্রদর্শনেরই অংশ। এ স্নেহের দাবি এটাও যে, তার দ্বারা ভুল-ত্রুটি হলে মমত্বের সঙ্গে সংশোধন করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দেওয়া কিছুতেই স্নেহসুলভ আচরণ নয়।

বয়সে ছোটজন যদি শিশু হয়, তবে বড়'র কাছে বিশেষ স্নেহ-মমতা তার প্রাপ্য। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের প্রতি অত্যন্ত মমতাশীল ছিলেন। তিনি শিশুর কান্না নিবারণের চেষ্টা করতেন, তাকে কোলে-পিঠে নিতেন, ঘোড়া সেজে তাকে পিঠে চড়াতেন, কান্নারত শিশুর জন্য নামায সংক্ষেপ করতেন, তাকে চুমু দিতেন, কোলে পেশাব করে দিলে তাতে বিরক্ত হতেন না এবং আরও কত কী। তাঁর কাছ থেকে শিখে শিশুদের প্রতি এ জাতীয় আচরণের চর্চা করা চাই।

অনুরূপ ছোট'র কাছে সম্মান ও আদব-ইহতিরাম পাওয়া বড়'র অধিকার। বড়কে সম্মান করার অর্থ তার সঙ্গে বিনয়ের সাথে কথা বলা, তার সামনে সামনে না হাঁটা, তাকে নিজের চেয়ে উঁচু স্থানে বসতে দেওয়া, তাঁর শরীআতসম্মত হুকুম পালন করা, পানাহারকালে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি।

ছোটকে স্নেহ করা ও বড়কে সম্মান করা হুকুকুল ইবাদ তথা বান্দার হকসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।

প্রকাশ থাকে যে, বয়সে যে ব্যক্তি বড় তার সম্মানপ্রাপ্তির জন্য আলেম, বুযুর্গ বা নেককার হওয়ার শর্ত নেই। এটি আলাদা কথা যে, ইলমের কারণে আলেমকে এবং বুযুর্গীর কারণে বুযুর্গ ব্যক্তিকে সম্মান করা চাই। কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তির কেবল বয়স্ক হওয়ার কারণেই পৃথক মর্যাদা আছে। সুতরাং এক হাদীছে আছে, কোনও যুবক কোনও বৃদ্ধকে তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান করলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই এমন কোনও লোক তার জন্য নিযুক্ত করে দেবেন, যে তার বৃদ্ধাবস্থায় তাকে সম্মান করবে (হাদীছটি সামনে আসছে)।

এর দ্বারা বোঝা গেল, বয়স বেশি হওয়াটাই সম্মানপ্রাপ্তির এক কারণ। তাই প্রত্যেক ছোট'র তারচে' বয়োজ্যেষ্ঠকে সম্মান করা কর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ছোটকে স্নেহ করা ও বড়কে সম্মান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই এ আদর্শের চর্চা করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১৭০ | মুসলিম বাংলা