আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১১. অধ্যায়ঃ হজ্জ

হাদীস নং: ১৮১০
অধ্যায়ঃ হজ্জ
আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান করার প্রতি উৎসাহ দান ও আরাফা দিবসের ফযীলত প্রসঙ্গ
১৮১০. হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক আনসারী ব্যক্তি নবী করীম ﷺ -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আচ্ছা, তুমি বস। ইতিমধ্যে সাকীফ গোত্রের আর এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমি আপনাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। রাসূলুল্লাহ বললেন, আনসারী ব্যক্তিটি তো তোমার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে আছে। আনসারী লোকটি তখন বলল, এই লোকটি মুসাফির। আর দূরাগত লোকের একটি বাড়তি অধিকার রয়েছে। তাই আপনি তাকে দিয়েই শুরু করুন। রাসুলুল্লাহ ﷺ তখন সাকাফী লোকটির দিকে মুখ করে বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে আমি বলে দিতে পারি যে, তুমি কি কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছ। আর যদি চাও, তবে তুমি প্রশ্ন কর, তবে আমি উত্তর দিয়ে যাব। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। বরং আপনিই আমার মনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান। তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে রুকু, সিজদা, নামায ও রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে এসেছ। সে বলল, ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আপনি আমার মনের প্রশ্ন বুঝতে মোটেও ভুল করেন নি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন বললেন, তুমি যখন রুকু করবে, তখন তোমার হাতের তালু দু'টি হাঁটুতে স্থাপন করবে এবং আঙ্গুলগুলো বিস্তৃত রাখবে। তারপর তুমি স্থির হয়ে থাকবে যাতে প্রতিটি আঙ্গুল স্বস্থানে স্থির হয়ে যায়। আর যখন সিজদা করবে তখন তোমার কপালকে দৃঢ়ভবে মাটিতে স্থাপন করবে এবং সিজদা আদায়ে তাড়াহুড়া করবে না। আর দিনের প্রথমভাগে ও শেষভাগে (কিছু নফল) নামায আদায় করবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর নবী। আমি যদি এ দু'টির মাঝেও কিছু নামায পড়ি? রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, তাহলে নামাযী গণ্য হবে। প্রতি মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে তুমি রোযা রাখবে। অতঃপর সাকাফী লোকটি উঠে গেল। এবার তিনি আনসারী লোকটির প্রতি মুখ করলেন এবং বললেন, তুমি যদি ইচ্ছা কর তবে তুমি কি প্রশ্ন করতে এসেছ, তা আমি বলে দিতে পারি। আর ইচ্ছা হলে তুমি প্রশ্ন করে যাও, আমি উত্তর দিয়ে যাব। লোকটি বলল, জ্বী না হে আল্লাহর নবী। বরং আপনিই বলুন, আমি কি জিজ্ঞেস করতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, তুমি হাজী সম্পর্কে প্রশ্ন করতে এসেছ যে, সে যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন তার জন্য কি পুণ্য রয়েছে? সে যখন আরাফায় অবস্থান করে, তখন তার কি পুণ্য হয়? সে যখন শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করে, তখন তার কি পুণ্য হয়? সে যখন মাথা মুড়িয়ে নেয়, তখন তার কি পুণ্য হয়? সে যখন বিদায়ী তওয়াফ করে, তখন তার কি পুণ্য হয়? লোকটি বলল, হে আল্লাহর নবী। ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আমার অন্তরের প্রশ্নগুলো বুঝতে আপনি মোটেও ভুল করেন নি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন বললেন, হাজী যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন তার বাহনটির প্রতি কদমে তার জন্য একটি করে নেকী লিখা হয় অথবা একটি গুনাহ মোচন করা হয়। তারপর যখন সে আরাফায় অবস্থান করে, তখন মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং (ফিরিশতাদেরকে) বলেন, তোমরা আমার এলোকেশী ও মলিনবেশী বান্দাদেরকে দেখ। তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিলাম, যদিও তা আকাশের বৃষ্টির ফোঁটার সমান সংখ্যক এবং আলিজের বালুকারাশির সমান হয়। আর হাজী যখন শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করে, তখন কেউ বলতে পারে না যে, তার জন্য কি পুণ্য রয়েছে-যে পর্যন্ত না আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। হাজী যখন বায়তুল্লাহর বিদায়ী তওয়াফ করে, তখন সে তার গুনাহ থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যায় যেমন তার মা তাকে প্রসব করার দিন সে নিষ্পাপ ছিল।
(হাদীসটি বাযযার ও তাবারানী এবং ইবন হিব্বান তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত শব্দমালা তাঁরই।)
كتاب الْحَج
التَّرْغِيب فِي الْوُقُوف بِعَرَفَة والمزدلفة وَفضل يَوْم عَرَفَة
1810 - وَعَن ابْن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ رجل من الْأَنْصَار إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ يَا رَسُول الله كَلِمَات أسأَل عَنْهُن فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم اجْلِسْ وَجَاء رجل من ثَقِيف فَقَالَ يَا رَسُول الله كَلِمَات أسأَل عَنْهُن فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سَبَقَك الْأنْصَارِيّ فَقَالَ الْأنْصَارِيّ إِنَّه رجل غَرِيب وَإِن للغريب حَقًا فابدأ بِهِ فَأقبل على الثَّقَفِيّ فَقَالَ إِن شِئْت أَنْبَأتك عَمَّا كنت تَسْأَلنِي عَنهُ وَإِن شِئْت تَسْأَلنِي وأخبرك فَقَالَ يَا رَسُول الله بل أجبني عَمَّا كنت أَسأَلك قَالَ جِئْت تَسْأَلنِي عَن الرُّكُوع وَالسُّجُود وَالصَّلَاة وَالصَّوْم فَقَالَ وَالَّذِي بَعثك بِالْحَقِّ مَا أَخْطَأت مِمَّا كَانَ فِي نَفسِي شَيْئا قَالَ فَإِذا ركعت فضع راحتيك على ركبتيك ثمَّ فرج أصابعك ثمَّ اسكن حَتَّى يَأْخُذ كل عُضْو مأخذه وَإِذا سجدت فمكن جبهتك وَلَا تنقر نقرا وصل أول النَّهَار وَآخره فَقَالَ يَا نَبِي الله فَإِن أَنا صليت بَينهمَا قَالَ فَأَنت إِذا مصل وصم من كل شهر ثَلَاث عشرَة وَأَرْبع عشرَة وَخمْس عشرَة فَقَامَ الثَّقَفِيّ ثمَّ أقبل على الْأنْصَارِيّ فَقَالَ إِن شِئْت أَخْبَرتك عَمَّا جِئْت تَسْأَلنِي وَإِن شِئْت تَسْأَلنِي وأخبرك فَقَالَ لَا يَا نَبِي الله أَخْبرنِي بِمَا جِئْت أَسأَلك قَالَ جِئْت تَسْأَلنِي عَن الْحَاج مَا لَهُ حِين يخرج من بَيته وَمَا لَهُ حِين يقوم بِعَرَفَات وَمَا لَهُ حِين يَرْمِي الْجمار وَمَا لَهُ حِين يحلق رَأسه وَمَا لَهُ حِين يقْضِي آخر طواف بِالْبَيْتِ فَقَالَ يَا نَبِي الله وَالَّذِي بَعثك بِالْحَقِّ مَا أَخْطَأت مِمَّا كَانَ فِي نَفسِي شَيْئا قَالَ فَإِن لَهُ حِين يخرج من بَيته أَن رَاحِلَته لَا تخطو خطْوَة إِلَّا كتب الله بهَا حَسَنَة أَو حط عَنهُ بهَا خَطِيئَة فَإِذا وقف بِعَرَفَات فَإِن الله عز وَجل ينزل إِلَى سَمَاء الدُّنْيَا فَيَقُول انْظُرُوا إِلَى عبَادي شعثا غبرا اشْهَدُوا أَنِّي قد غفرت لَهُم ذنوبهم وَإِن كَانَت عدد قطر السَّمَاء وَرمل عالج وَإِذا رمى الْجمار لَا يدْرِي أحد مَا لَهُ حَتَّى يتوفاه الله يَوْم الْقِيَامَة وَإِذا قضى آخر طواف بِالْبَيْتِ خرج من ذنُوبه كَيَوْم وَلدته أمه

رَوَاهُ الْبَزَّار وَالطَّبَرَانِيّ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَاللَّفْظ لَهُ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান