আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ

হাদীস নং: ২৩৪০
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
মানুষ কোন মজলিসে বসল অথচ আল্লাহর যিকর ও তাঁর নবী মুহাম্মদ-এর প্রতি দরূদ পাঠ করলনা, এ প্রসঙ্গে সতর্কবাণী
২৩৪০. উক্ত হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকেই বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কতিপয় লোক যদি কোন মজলিসে বসে, আর এতে মহান আল্লাহর যিকর ও নবী করীম-এর প্রতি দরূদ পাঠ না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন এটি তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হবে। যদিও তারা পুণ্যের ভিত্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করে।
(হাদীসটি আহমদ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন। ইবন হিব্বানও তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন। হাকিমও এটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি বুখারীর শর্ত অনুযায়ী সহীহ।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْهِيب من أَن يجلس الْإِنْسَان مَجْلِسا لَا يذكر الله فِيهِ وَلَا يصلى على نبيه مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
2340- وَعنهُ رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَا قعد قوم مقْعدا لم يذكرُوا الله عز وَجل فِيهِ وَيصلونَ على النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِلَّا كَانَ عَلَيْهِم حسرة يَوْم الْقِيَامَة وَإِن دخلُوا الْجنَّة للثَّواب

رَوَاهُ أَحْمد بِإِسْنَاد صَحِيح وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَالْحَاكِم وَقَالَ صَحِيح على شَرط البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারাই এমন কোনও মজলিসে বসে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করে না এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদ পড়ে না, তাদের জন্য সে মজলিস ক্ষতির কারণ হবে। আল্লাহ চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আর চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।

ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছে প্রতিটি মজলিস ও সভা-সেমিনারে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মজলিসে বিভিন্ন লোক একত্র হয়। তাতে নানারকম কথা হয়। সেসব কথা মানুষের অন্তরে উদাসীনতা সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। সে গাফলাতের ভেতর মজলিসের পুরোটা সময়ই কেটে যায়। অথচ মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কত মূল্যবান। এ মূল্যবান সময় নষ্ট করার কারণে কিয়ামতের দিন বড়ই আক্ষেপ হবে। দুনিয়ার সময়টা তো আখিরাতের পুঁজি সংগ্রহের জন্যই। সে পুঁজি সংগ্রহ ছাড়া এমনি এমনিই সময়টা নষ্ট হয়ে যাওয়া কতইনা ক্ষতিকর। তাই এ হাদীছে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে যেন আমরা কোনও মজলিস অবহেলার ভেতর না কাটাই। অর্থাৎ এমনভাবে না কাটে যে, তাতে আল্লাহর কোনও যিকির করা হয়নি। যিকির কথাটি ব্যাপক। কুরআন তিলাওয়াত, সুবহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ জপা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা, নসীহত করা, দরূদ পড়া সবই আল্লাহর যিকির। এসব যিকিরের যে-কোনও একটি করলেও মজলিস মূল্যবান হয়ে হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদপাঠ অতি মূল্যবান যিকির। এ যিকির যত বেশি করা যায় ততোই লাভ। কোনওরকমের যিকির না করাটা নেহাৎ ক্ষতিকর। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الا كان عليهم ترة (তাদের জন্য সে মজলিস ক্ষতির কারণ হবে)। ترة এর অর্থ ক্ষতি,দায়,আক্ষেপ, এরূপ মজলিসকে আক্ষেপের কারণ বলা হয়েছে। আক্ষেপ হবে অহেতুক সময় নষ্ট হওয়ার কারণে। যিকিরবিহীন সময় পার করা সময় নষ্ট করাই বটে। অপচয় তো কোনওকিছুরই জায়েয নেই। এ অবস্থায় মহামূল্যবান সময় নষ্ট করা কীভাবে জায়েয হতে পারে? তা মোটেই জায়েয নয়; বরং অপরাধ। তাই তো এর পরে ইরশাদ হয়েছে-
فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ، وَإِن شَاءَ غَفَرَ أَنَّهُمْ (আল্লাহ চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আর চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন) বোঝা গেল প্রতিটি মজলিসে আল্লাহ তা'আলার কোনও না কোনওরকমের যিকির ও স্মরণ অবশ্যই করা চাই। তা না করলে আখিরাতে শান্তিপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা মহাক্ষমাশীল। তিনি চাইলে ক্ষমাও করতে পারেন। কিন্তু ক্ষমা করতে পারেন বলে গাফলাতি করা কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। মনে ভয় থাকলেই ক্ষমার আশা থাকে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে-কোনও মজলিসে কিছু না কিছু যিকির অবশ্যই করা চাই।

খ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদপাঠ অতি মূল্যবান যিকির।

গ. সময় অতি মূল্যবান। তা অহেতুক নষ্ট করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান