আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৭. অধ্যায়ঃ পোশাক-পরিচ্ছদ

হাদীস নং: ৩১০৩
অধ্যায়ঃ পোশাক-পরিচ্ছদ
জামা পরিধান করার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং জামা ও অন্যান্য পোশাক, যা পরিধেয়, তা শরী'আত পরিপন্থী লম্বা করা, অহংকার করে পোশাক টেনে চলা এবং সালাত ও অন্যান্য সময়ে (পায়ের নিচে) ঝুলিয়ে দেয়ার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩১০৩. হযরত আলা ইবনে আবদুর রহমান (র) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি আবু সাঈদ (রা)-এর কাছে পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, প্রকৃত বিষয় অবগত হওয়ার মত ব্যক্তির নিকটই তুমি পৌঁছেছ। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: মু'মিনের পরিধেয় বস্ত্র নলার মাঝামাঝি থাকা চাই এবং তাতে দোষ নেই অথবা তিনি বলেছেন: টাখনুর গিরার মধ্যবর্তী হওয়ায় কোন দোষ নেই। কিন্তু টাখনুর নিচে যা প্রলম্বিত হবে, তা দোযখে যারে। আর যে ব্যক্তি অহংকারবশত পরিধেয় বস্ত্র হেঁচড়ায়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা তার প্রতি তাকাবেন না।
(মালিক, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিববানের সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত।)
كتاب اللباس
التَّرْغِيب فِي الْقَمِيص والترهيب من طوله وَطول غَيره مِمَّا يلبس وجره خُيَلَاء وإسباله فِي الصَّلَاة وَغَيرهَا
3103- وَعَن الْعَلَاء بن عبد الرَّحْمَن رَضِي الله عَنهُ عَن أَبِيه قَالَ سَأَلت أَبَا سعيد عَن الْإِزَار فَقَالَ على الْخَبِير بهَا سَقَطت
قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أزرة الْمُؤمن إِلَى نصف السَّاق وَلَا حرج أَو قَالَ لَا جنَاح عَلَيْهِ فِيمَا بَينه وَبَين الْكَعْبَيْنِ وَمَا كَانَ أَسْفَل من ذَلِك فَهُوَ فِي النَّار وَمن جر إزَاره بطرا لم ينظر الله إِلَيْهِ يَوْم الْقِيَامَة

رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه وَابْن حبَان فِي صَحِيحه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে পোশাক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরার অবৈধতা তুলে ধরার পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, মুসলিম পুরুষ তার পায়ের গোছার কোন জায়গা পর্যন্ত পোশাক নামাতে পারবে। এতে প্রথমে বলা হয়েছে- إزرة المسلم إلى نصف الساق (মুসলিমের লুঙ্গি হবে পায়ের নলার মাঝখান পর্যন্ত)। অর্থাৎ এ পর্যন্ত পরা উত্তম। কারণ এটা পোশাক পবিত্র রাখার পক্ষে বেশি সহায়ক। এতে পোশাকে রাস্তাঘাটের ময়লা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া এটা বিনয়েরও পরিচায়ক। অহংকারী ব্যক্তির পক্ষে পরিধানের পোশাক এতটা উঁচুতে তুলে পরা কঠিন। কিন্তু যে ব্যক্তি বিনয়ী, সে এতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

তবে এরচে' বেশি উপরে না ওঠানোই ভালো। সেটা দৃষ্টিকটু। আর হাঁটুর নিচে তো নামাতেই হবে। কেননা হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত। মধ্যনলা থেকে টাখনু পর্যন্ত যে-কোনও স্থান বরাবর পোশাক পরিধানে কোনও দোষ নেই। এ হাদীছে এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, এতে কোনও গুনাহ নেই। সুতরাং কেউ যদি তার পোশাক টাখনু পর্যন্ত নামিয়ে পরে, কিন্তু তার নিচে না নামায়, তবে তা পুরোপুরিই জায়েয হবে। মাকরূহও হবে না। নিষেধ হল এরও নিচে নামানো। অপর একটি হাদীছে এ বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হযরত হুযায়ফা রাযি. বলেন-
أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِأَسْفَلِ عَضَلَةِ سَاقِي أَوْ سَاقِهِ، فَقَالَ: هَذَا مَوْضِعُ الْإِزَارِ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَأَسْفَلَ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَأَسْفَلَ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَلَا حَقَّ لِلْإِزَارِ فِي الْكَعْبَيْنِ
'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পায়ের নলার মাংসল স্থানের নিচে ধরলেন। তারপর বললেন, এটা হল লুঙ্গির স্থান। তুমি যদি এটা না মান, তবে আরেকটু নিচে। তাও না মানলে আরেকটু নিচে। যদি তাও না মান, তবে মনে রাখবে টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরার কোনও অধিকার নেই।’
(সুনানে ইবন মাজাহ ৩৫৭২; জামে তিরমিযী: ১৭৮৩; সুনানে নাসাঈ ৫৩২৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৪৪৮; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ১৭৭৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৪৮১৮)

যদি কেউ টাখনুরও নিচে নামায়, তবে কী হবে?
হাদীছে ইরশাদ হয়েছে- فما كان أسفل من الكعبين فَهُوَ في النَّار (কিন্তু টাখনুর নিচে যতটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে)। অর্থাৎ লুঙ্গির যতটুকু অংশ টাখনুর নিচে থাকবে, ততটুকু জাহান্নামে যাবে। এর দু'টি অর্থ হতে পারে। এক অর্থ হল পায়ের সেই অংশ অর্থাৎ টাখনুর নিচের অংশ, যা পরিধানের কাপড় দ্বারা ঢাকা হয়েছে তা জাহান্নামে যাবে। বলাবাহুল্য কোনও ব্যক্তির এক অংশ যদি জাহান্নামে যায়, তবে বাকি অংশও অবশ্যই জাহান্নামেই যাবে। তার মানে লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা জাহান্নামে যাওয়ার একটি কারণ।

দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে এরকম যে, লুঙ্গি টাখনুর নিচে নামিয়ে পরার কাজটি জাহান্নামীদের কাজের মধ্যে গণ্য। অর্থাৎ এভাবে লুঙ্গি পরে তারাই, যারা জাহান্নামে যাবে। কাজেই কোনও মুমিন-মুসলিম ব্যক্তির এভাবে লুঙ্গি, প্যান্ট, পায়জামা ও জামা কিছুতেই পরা উচিত নয়।

হাদীছটিতে আরও সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে- وَمَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ الله إِلَيْهِ (যে ব্যক্তি অহংকারবশে লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। রহমতের দৃষ্টিতে তাঁর না তাকানোর অর্থ তিনি এরূপ ব্যক্তির প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন। কিয়ামতের দিন যার প্রতি আল্লাহ তা'আলা অসন্তুষ্ট থাকবেন, তার পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। আল্লাহ তা'আলা সে পরিণাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

সাধারণত টাখনুর নিচে পোশাক পরাই হয় অহংকারবশে। যাদের এরকম পরার অভ্যাস, তারা টাখনুর উপরে উঠাতে পারে না। তাতে লজ্জাবোধ করে। এটা অহংকারেরই লক্ষণ। সুতরাং সাধারণ এ অবস্থার প্রতি লক্ষ করেই হাদীছটিতে অহংকারের কথা বলা হয়েছে। না হয় কোনও কোনও হাদীছে অহংকারের উল্লেখ ছাড়াই এ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। কাজেই কেউ যদি তার পোশাক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে আর বলে আমি এটা অহংকারবশে করছি না, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. লুঙ্গি, পায়জামা ইত্যাদি পায়ের নলার মাঝ বরাবর নামিয়ে পরা উত্তম, যদিও টাখনু পর্যন্ত নামিয়ে পরাও জায়েয।

খ. পোশাক টাখনুর নিচে নামিয়ে পরা হারাম।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান