আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৮. অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩২২৫
অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়
বাম হাতে পানাহার করার প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং খাবার পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা, পাত্র থেকে পান করা এবং ভাঙ্গা পাত্রে পান করা নিষেধ
৩২২৫. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) পানীয় বস্তুতে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন। এক ব্যক্তি বলল: আমি যদি পাত্রে ময়লা দেখতে পাই (তাহলে কি করব)। তিনি বলেন, তুমি তা ঢেলে দেবে। সে বলল, এক নিঃশ্বাসে পান করলে আমার তৃপ্তি হয় না। নবী বললেন, এমতাবস্থায় পেয়ালাটি মুখ হতে পৃথক করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নেবে।
(তিরমিযী বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।)
كتاب الطعام
التَّرْهِيب من الْأكل وَالشرب بالشمال وَمَا جَاءَ فِي النَّهْي عَن النفخ فِي الْإِنَاء وَالشرب من فِي السقاء وَمن ثلمة الْقدح
3225- وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ رَضِي الله عَنهُ أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نهى عَن النفخ فِي الشَّرَاب فَقَالَ رجل القذاة أَرَاهَا فِي الْإِنَاء فَقَالَ أهرقها قَالَ فَإِنِّي لَا أروى من نفس وَاحِد قَالَ فَأَبِنْ الْقدح إِذا عَن فِيك

رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن صَحِيح

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন, তাতে পাত্রে পানি থাকুক বা শরবত বা অন্য কিছু, যেমন বর্তমানকালে চা, কফি ইত্যাদি।

পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও ফুঁ দিতে নিষেধ করার কারণ এক তো এই হতে পারে যে, তাতে পাত্রের ভেতর থুথু বা শ্লেষ্মা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এরপর সে পাত্র থেকে পান করতে নিজেরই খারাপ লাগবে। অন্যের তো অরুচি লাগবেই। ফলে পাত্রের পানি, শরবত কিংবা অন্য যা-ই থাকে তা ফেলে দিতে হবে। এটা নি'আমতের অপচয়।

চিকিৎসা শাস্ত্রীয় গবেষণা অনুযায়ী পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করাটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। কেননা মানুষ নাক ও মুখ দিয়ে যখন নিঃশ্বাস গ্রহণ করে, তখন বায়ুমণ্ডল থেকে তার ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করে। আর যখন নিঃশ্বাস ছাড়ে, তখন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়ে আসে। তার ভেতর দেহের দূষিত বাষ্প ও রোগ-জীবাণু থাকে। পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে খাবার বা পানির সঙ্গে তা মিশে যায়। সেই খাবার বা পানি যখন খাওয়া হয়, তখন ওই দূষিত বাষ্প ও রোগ-জীবাণু পুনরায় শরীরে প্রবেশ করে। ফলে নানা রোগ-ব্যাধি জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কারণ যাই হোক, হাদীছে যেহেতু পাত্রে ফুঁ দিতে ও নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন আমরা অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকব। এটা সুন্নতের অনুসরণ। এতে ছাওয়াব পাওয়া যাবে। ছাওয়াব অর্জনই আমাদের মূল লক্ষ্যবস্তু।

অনেক সময় পাত্রের পানি বা শরবত ইত্যাদিতে পিঁপড়া, ময়লা ইত্যাদি দেখা দেয়। অনেকে তা ফুঁ দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর তা পান করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফুঁ দিতে নিষেধ করায় সাহাবী প্রশ্ন করলেন, পাত্রে ময়লা দেখা গেলে তখন কী করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঢেলে ফেলে দেবে। অর্থাৎ তবুও ফুঁ দিয়ে খাবে না। সাহাবী আবার বললেন-
إِنِّي لَا أَرْوَى مِنْ نَفْسٍ وَاحِدٍ ‘আমি এক নিঃশ্বাসে (পান করে) তৃপ্ত হই না'। অর্থাৎ এক নিঃশ্বাসে যতটুকু পানি পান করা হয়, তাতে তৃষ্ণা মেটে না। আরও পানি পান করার প্রয়োজন হয়। তা পান করতে গেলে তো পাত্রের ভেতর নিঃশ্বাস ছাড়া হবে। এ অবস্থায় আমি কী করব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
فَأَبِنِ الْقَدَحَ إِذًا عَنْ فِيْكَ (তাহলে তোমার মুখ থেকে পাত্র সরিয়ে নিয়ো)। অর্থাৎ পাত্র সরিয়ে নিঃশ্বাস ফেলবে। তারপর আবার পান করবে। এভাবে দুই-তিনবার যাই তোমার প্রয়োজন হয়। বোঝা গেল তিন নিঃশ্বাসে যে পানি পান করতে বলা হয়েছে, তার মানে যার সে পরিমাণ পানি পান করার প্রয়োজন হয়। এক নিঃশ্বাসে যতটুকু পান করা হয়, তাতে তৃষ্ণা মিটে গেলে তারপরও যে বাইরে দম ফেলে পুনরায় পান করে 'তিন' সংখ্যা পূরণ করতে হয় এমন নয়। যার দুই নিঃশ্বাসে পান করার দ্বারা তৃষ্ণা মিটে যায়, সে তাতেই ক্ষান্ত থাকবে। তার আর তৃতীয়বার পান করতে হবে না। মূল বিষয় হল পাত্রের ভেতর নিঃশ্বাস না ফেলা বা ফুঁ না দেওয়া। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা হারাম পর্যায়ের নয়। বরং মাকরূহ পর্যায়ের। কাজেই কেউ তা করলে কোনও গুনাহ হবে না। তারপরও তা করা উচিত নয়। এক তো সুন্নত তরক হবে, দ্বিতীয়ত তা রুচিশীলতারও পরিপন্থী। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পানি ও শরবতের গ্লাস, চায়ের কাপ ইত্যাদিতে ফুঁ দেওয়া ও নিঃশ্বাস ছাড়া উচিত নয়।

খ. তাতে ময়লা দেখা গেলে ফুঁ না দিয়ে বরং ফেলে দেবে।

গ. গরম চা ঠাণ্ডা করার জন্য ফুঁ না দিয়ে অপেক্ষা করবে বা অন্যভাবে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করবে।

ঘ. একাধিক নিঃশ্বাসে পানি পান করার প্রয়োজন হলে গ্লাস সরিয়ে নিঃশ্বাস ফেলবে। তারপর পুনরায় পান করবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান