আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার

হাদীস নং: ৩৭৬২
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
অধ্যায় : সদ্ব্যবহার, সুসম্পর্ক ইত্যাদি।
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার, তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা, তাদের আনুগত্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং মৃত্যুর পর তাদের বন্ধুবর্গের প্রতি সদাচরণের প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৭৬২. মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের বায়'আত হতে চাই, যার বিনিময়ে আমি আপনার কাছে পুরস্কার কামনা করি। তিনি বললেনঃ তোমার পিতামাতার দু'জনের একজনও কি জীবিত আছেন। তিনি বললেনঃ হাঁ, দুজনেই জীবিত। নবী (ﷺ) বললেন, তুমি কি (তাদের খিদমত করে) আল্লাহর নিকট পুরস্কার চাইবে না? সে বলল: হাঁ। তিনি বললেন: তুমি তোমার পিতামাতার নিকট ফিরে যাও এবং তাদের উত্তম সাহচর্য লাভ কর।
كتاب البر والصلة
كتاب الْبر والصلة وَغَيرهمَا
التَّرْغِيب فِي بر الْوَالِدين وصلتهما وتأكيد طاعتهما وَالْإِحْسَان إِلَيْهِمَا وبر أصدقائهما من بعدهمَا
3762- وَفِي رِوَايَة لمُسلم قَالَ أقبل رجل إِلَى رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ أُبَايِعك على الْهِجْرَة وَالْجهَاد أَبْتَغِي الْأجر من الله قَالَ فَهَل من والديك أحد حَيّ قَالَ نعم بل كِلَاهُمَا حَيّ
قَالَ فتبتغي الْأجر من الله قَالَ نعم قَالَ فَارْجِع إِلَى والديك فَأحْسن صحبتهما

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হিজরত ও বায়আতের উদ্দেশ্যে আগমনকারী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তার নাম জাহিমা ইবন আব্বাস ইবন মিরদাস রাযি. অথবা মুআবিয়া ইবন জাহিমা রাযি.। নাসাঈ ও আহমাদের বর্ণনায় আছে জাহিমা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি এবং সেজন্য আপনার পরামর্শ গ্রহণের জন্য এসেছি। এ উভয় বর্ণনা যদি একই ব্যক্তি সম্পর্কে হয়ে থাকে, তবে তার নাম জাহিমা প্রমাণিত হয়। যাহোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জিহাদ ও হিজরত দ্বারা তার উদ্দেশ্য কী তা জানতে চাইলেন। তিনি জানালেন যে, উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। তারপর জানতে চাইলেন তার পিতা-মাতা জীবিত কি না। যখন জানালেন যে তার পিতা-মাতা জীবিত, তখন তাকে ফিরিয়ে দিলেন এবং পিতা-মাতার সেবাই নিয়োজিত থাকতে বললেন। কেননা জিহাদ হয়তো তখন তার উপর ওয়াজিব ছিল না, অন্যদিকে পিতা-মাতার হক আদায় করা ওয়াজিব। তাই জিহাদ অপেক্ষা পিতা-মাতার সেবাই নিয়োজিত থাকাই তার কর্তব্য ছিল। আর যদি জিহাদ তখন তার উপর ওয়াজিব হয়েও থাকে, তবুও পিতা-মাতার হক যেহেতু তারচে'ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে ছুটি দিয়ে দেন।

লক্ষণীয়, ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন সে সময়ে জিহাদ কতইনা গুরুত্বপূর্ণ ছিল! তখন প্রতিটি যুদ্ধে শত্রুবাহিনী অপেক্ষা মুসলিম মুজাহিদদের অস্ত্র ও জনবল ছিল নিতান্তই নগণ্য। স্বাভাবিকভাবেই তখন মুসলিম বাহিনীর পক্ষে একজন সৈন্যেরও অনেক মূল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সাহাবীর জন্য জিহাদে যোগদান অপেক্ষা পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টি ও বিবেচনাবোধ ছিল কতইনা প্রশস্ত, নিরপেক্ষ ও নিঃস্বার্থ!

এমনিভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকার জন্য এ সাহাবীর হিজরতকেও অনুমোদন করেননি। অবশ্য অন্যান্য ঈমান রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়, তবে দীন ও ঈমান রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে পিতা-মাতা, দলীল-প্রমাণ দ্বারা বোঝা যায়, পিতা-মাতার কাছে থাকা অবস্থায় যদি নিজের দীন ও ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন সকলকে পরিত্যাগ করে হিজরত করাই অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গমনকারী মুহাজিরগণ তাই করেছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, পিতা-মাতার সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকা জিহাদে যাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

খ. আরও শিক্ষা পাওয়া যায়, নিজ আগ্রহ-উদ্দীপনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের নাম দীন নয়; বরং দীন হলো আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-নিষেধ পালনের নাম।

গ. এ হাদীছের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে দীনী কাজসমূহেও গুরুত্বের পর্যায়ক্রম বিবেচনায় রাখা চাই। একইসঙ্গে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনে এসে গেলে তখন যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ঘ. নেতার কর্তব্য নিজ স্বার্থ-সুবিধার দিকে না তাকিয়ে কর্মী ও সঙ্গীর ব্যক্তিগত ও আনুষাঙ্গিক অবস্থাদি বিবেচনায় রাখা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান