আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার

হাদীস নং: ৩৭৭২
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
অধ্যায় : সদ্ব্যবহার, সুসম্পর্ক ইত্যাদি।
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার, তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা, তাদের আনুগত্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং মৃত্যুর পর তাদের বন্ধুবর্গের প্রতি সদাচরণের প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৭৭২. ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে নিজ শব্দে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি হযরত আবু দারদা (রা)-এর নিকট এসে বলল: আমার পিতা আমাকে বিয়ের চাপ দেন, এমন কি তিনি আমাকে বিয়ে করান এবং এখন তিনি আমাকে তাকে তালাকের নির্দেশ দিচ্ছেন। (এমতাবস্থায় আমি কি করব?) তিনি বলেন: আমি তোমার পিতামাতার কষ্টদানের ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারি না। এবং তোমার স্ত্রীকে তালাকের নির্দেশ দিতে পারি না। তুমি চাইলে আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে একটি হাদীস শুনাতে পারি, যা আমি তাঁকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: পিতা হলো জান্নাতে প্রবেশের উত্তম দরজা। তুমি চাইলে ঐ দরজা সংরক্ষণ কর। তিনি বলেন: আমি মনে করি আতা বলেছেন, তাকে তালাক দাও।
كتاب البر والصلة
كتاب الْبر والصلة وَغَيرهمَا
التَّرْغِيب فِي بر الْوَالِدين وصلتهما وتأكيد طاعتهما وَالْإِحْسَان إِلَيْهِمَا وبر أصدقائهما من بعدهمَا
3772- وَرَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه وَلَفظه أَن رجلا أَتَى أَبَا الدَّرْدَاء فَقَالَ إِن أبي لم يزل بِي حَتَّى زَوجنِي وَإنَّهُ الْآن يَأْمُرنِي بِطَلَاقِهَا قَالَ مَا أَنا بِالَّذِي آمُرك أَن تعق والديك وَلَا بِالَّذِي آمُرك أَن تطلق امْرَأَتك غير أَنَّك إِن شِئْت حدثتك بِمَا سَمِعت من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سمعته يَقُول الْوَالِد أَوسط أَبْوَاب الْجنَّة فحافظ على ذَلِك الْبَاب إِن شِئْت أَو دع
قَالَ فأحسب عَطاء
قَالَ فَطلقهَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছের মূল বিষয়বস্তু, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ভালোবাসত। কিন্তু বাবার সে বধূ পসন্দ নয়। তাই ছেলেকে হুকুম করছেন যেন সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু সে কী করবে বুঝতে পারছে না। তাই এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর কাছে বিধান জানতে আসল। তিনি ফয়সালাস্বরূপ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনিয়ে দিলেন। সে হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ (পিতা জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম দরজা)। অর্থাৎ পিতার আনুগত্য দ্বারা শ্রেষ্ঠতম দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায়। কাজেই বাবার আনুগত্য করা জান্নাতলাভের পক্ষে যে সহায়ক হবে তা অতি স্পষ্ট। আকূলী রহ. বলেন, এর অর্থ- যেসকল উপায়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায় তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হলো পিতা-মাতার আনুগত্য।

ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, পিতার প্রতি সন্তানের আনুগত্য প্রদর্শনের একটা দিক এইও যে, পিতা যা অপসন্দ করবে সন্তানও তা অপসন্দ করবে, যদিও তা সন্তানের প্রিয় হয়। অবশ্য এটা তখনই, যখন পিতা দীনদার ও নেককার হবেন এবং কার ভালো লাগা ও নালাগা সবই আল্লাহ তাআলার জন্য হবে; নিজের খেয়াল-খুশিমত কিছু করবে না।

এ হাদীছ শোনানোর পর হযরত আবুদ দারদা রাযি. ওই ব্যক্তিকে বললেন- فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ البَابَ أَوْ احْفَظْهُ (এখন তুমি চাইলে সে দরজাটি ভেঙে ফেল কিংবা চাইলে হেফাজত কর)। অর্থাৎ তুমি চাইলে মায়ের অবাধ্যতা করে ও তার হুকুম অমান্য করে জান্নাতের সে দুয়ার নষ্ট করে ফেলতে পার অথবা চাইলে তার আনুগত্য করে ও তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে সে দরজা রক্ষাও করতে পার। তোমার ক্ষেত্রে ধারণা তো এটাই যে, তুমি জান্নাতে যাওয়ার দুয়ার রক্ষাই করবে। সুতরাং তোমার কর্তব্য মায়ের কথা শোনা।

প্রকাশ থাকে যে, অন্যের প্রতি জুলুম করা কোনওক্রমেই জায়েয নয়। তালাকের বিষয়টি দেশ ও কালভেদে বিভিন্নভাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে নারীর পক্ষে তালাক কলঙ্ক বয়ে আনে। তালাকপ্রাপ্তা নারীর পুনর্বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। কাজেই বিনাদোষে তাকে তালাক দেওয়া উচিত নয় এবং পিতা-মাতারও উচিত না নিজ ছেলে-মেয়েকে তালাকে উৎসাহিত করা। কিন্তু আধুনিক ইউরোপ-আমেরিকায় এটাকে বিশেষ দোষের মনে করা হয় না। তৎকালীন আরব পরিবেশেও তালাকপ্রাপ্তা নারীর পুনর্বিবাহ আটকাত না। একাধিকবার তালাকপ্রাপ্তা নারীরও সহজেই বিয়ে হয়ে যেত। কাজেই তখনকার সে পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সমাজবাস্তবতাকে তুলনা করা যাবে না। সুতরাং তাড়াহুড়া করে তালাক পর্যন্ত পৌঁছা ঠিক হবে না। এটা সর্বশেষ ব্যবস্থা। তাই সবশেষেই এটা বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাদীছের দৃষ্টিতে বৈধ কাজসমূহের মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাপেক্ষা অপসন্দ হলো তালাক। সুতরাং বাবার কথামত স্ত্রীকে তালাক দেওয়া অবশ্যকর্তব্য হবে তখনই, যখন বাবার সে হুকুম ন্যায়সঙ্গত হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের কর্তব্য সর্বাবস্থায় মাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা।

খ. পিতা-মাতার আনুগত্য জান্নাতলাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়।

গ. দীনী কোনও বিষয়ে নিজ কর্তব্য স্থির করতে না পারলে কোনও সুদক্ষ ও পরহেযগার আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান