আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৩. অধ্যায়ঃ তাওবা ও যুহদ

হাদীস নং: ৪৭৬৭
অধ্যায়ঃ তাওবা ও যুহদ
অধ্যায়: তাওবা ও যুহদ।
তাওবা করা, তাওবার প্রতি ধাবিত হওয়া এবং মন্দকাজের পর ভালকাজ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান
৪৭৬৭. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা রাত্রিকালে আপন হস্ত সম্প্রসারিত করেন, যাতে দিনের বেলার অপরাধকারীরা তাওবা করে নেয় এবং দিনের বেলায় আপন হস্ত সম্প্রসারিত করেন, যাতে রাত্রিকালের অপরাধকারীরা তাওবা করে নেয়। সূর্য তার অস্তাচল থেকে উদিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে।
(মুসলিমও নাসাঈ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب التوبة والزهد
كتاب التَّوْبَة والزهد
التَّرْغِيب فِي التَّوْبَة والمبادرة بهَا وإتباع السَّيئَة الْحَسَنَة
4767 - عَن أبي مُوسَى رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن الله عز وَجل يبسط يَده بِاللَّيْلِ ليتوب مسيء النَّهَار ويبسط يَده بِالنَّهَارِ ليتوب مسيء اللَّيْل حَتَّى تطلع الشَّمْس من مغْرِبهَا

رَوَاهُ مُسلم وَالنَّسَائِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন- হাত প্রসারিত করা দ্বারা রূপকার্থে চাওয়া বা গ্রহণ করা বোঝানো হয়ে থাকে। এ হিসেবে অর্থ হবে, আল্লাহ তা'আলা রাতের বেলা চান যেন দিনের বেলা যারা অপরাধ করেছে তারা তাওবা করে ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অথবা এর অর্থ, আল্লাহ তা'আলা রাতের বেলা ওই সকল অপরাধির তাওবা গ্রহণ করেন, যারা দিনের বেলা পাপকর্ম করেছে। এমনিভাবে তিনি দিনের বেলা চান যেন রাতে অপরাধকারীগণ তাঁর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করে কিংবা তিনি দিনের বেলা ওই সকল অপরাধির তাওবা ও ইস্তিগফার কবূল করেন, যারা রাতে পাপকর্ম করেছে।
হাত প্রসারিত করার এক অর্থ হয়ে থাকে দান-দক্ষিণা করা। সেই হিসেবে হাদীছের অর্থ হবে, তিনি দিবারাত্রে তাঁর রহমত বর্ষণ করেন এবং অত্যধিক পরিমাণে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন বান্দার গুনাহ ক্ষমা করা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় দানই বটে। এভাবেও অর্থ করা যায় যে, তিনি দিবারাত্র সর্বক্ষণ বান্দাকে তাওবার তাওফীক দান করে থাকেন। নিঃসন্দেহে তাওবার তাওফীকদান বান্দার পক্ষে আল্লাহ তা'আলার অতিবড় দান।

হাদীছের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ তা'আলা সর্বদা তাঁর পাপী বান্দাকে তাওবা ও ইস্তিগফারের তাওফীক দান করে থাকেন এবং তিনি বান্দার তাওবা কবূল করেন ও তার পাপরাশি ক্ষমা করেন।
বান্দার জন্যে আল্লাহর কাছে তাওবা কবূলের এই ধারা অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া কিয়ামতের সর্বাপেক্ষা বড় আলামত। এ আলামত প্রকাশের পর আর কারও তাওবা কবূল হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর হাত বলতে তাঁর শক্তি-ক্ষমতা ও দান-দক্ষিণা বোঝানো হয়ে থাকে। সকল ভাষায়ই শব্দের এরকম রূপক ব্যবহারের প্রচলন আছে। আরবী ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং আল্লাহর ক্ষেত্রে শব্দটিকে এই রূপক অর্থেই বুঝতে হবে। আল্লাহ তা'আলা মানুষ বা তার অন্য কোনও সৃষ্টির মত নয় যে, তাদের মত তাঁর হাত বা অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও তাওবার প্রতি উৎসাহ যোগানো হয়েছে।

খ. দিবারাত্র সর্বক্ষণই তাওবার দুয়ার খোলা। কাজেই পাপ হওয়ামাত্রই তাওবা করে ফেলা উচিত। দিনের বেলা যে পাপ হয়ে যায়, তার জন্যে সেই দিবাগত রাতে এবং রাতে যেই পাপ হয়ে যায়, তার জন্যে রাতপরবর্তী দিনের মধ্যেই তাওবা করে ফেলা বাঞ্ছনীয়। কে জানে কখন আয়ু ফুরিয়ে যায় আর তাওবার সুযোগ ফুরিয়ে যায়!

গ. ক্ষমা করা আল্লাহর গুণ। বান্দার উচিত এ গুণে গুণান্বিত হওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান