আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৪. অধ্যায়ঃ জানাযা

হাদীস নং: ৫১৭৬
অধ্যায়ঃ জানাযা
ধৈর্যধারণের প্রতি উৎসাহ প্রদান, বিশেষত সেই ব্যক্তিকে, যে তার ধন-প্রাণে বিপদাক্রান্ত হয়েছে। বালা-মুসিবত, রোগ-ব্যাধি ও জ্বর তাপের ফযীলত এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহঃ
৫১৭৬. হযরত সুহায়ব রূমী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: মু'মিনের ব্যাপার স্যাপার আশ্চর্যজনক। কেননা, মু'মিনের সর্ব অবস্থাই কল্যাণকর। মু'মিন ব্যতীত এ সৌভাগ্য আর কারও নেই। সে যদি স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করে তবে শুকরিয়া আদায় করে। তখন এটা হয় তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি সে অসচ্ছলতার সম্মুখীন হয় তবে সে ধৈর্যধারণ করে। তাও হয় তার জন্য কল্যাণকর।
(মুসলিম (র) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الجنائز
التَّرْغِيب فِي الصَّبْر سِيمَا لمن ابْتُلِيَ فِي نَفسه أَو مَاله وَفضل الْبلَاء وَالْمَرَض والحمى وَمَا جَاءَ فِيمَن فقد بَصَره
5176- وَعَن صُهَيْب الرُّومِي رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عجبا لأمر الْمُؤمن إِن أمره لَهُ كُله خير وَلَيْسَ ذَلِك لأحد إِلَّا لِلْمُؤمنِ إِن أَصَابَته سراء شكر فَكَانَ خيرا لَهُ وَإِن أَصَابَته ضراء صَبر فَكَانَ خيرا لَهُ

رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইহজগত দুঃখ-কষ্ট ও সুখ-শান্তির মিলনস্থল। প্রত্যেক ব্যক্তির এখানে যেমন সুখ আছে, তেমনি দুঃখও আছে। সমগ্র জীবন কেবল সুখে কিংবা কেবলই দুঃখে কারওই কাটে না। সেজন্যে আছে আখিরাতের জীবন। সেখানে যারা জান্নাতে যাবে তাদের কেবল সুখই সুখ। কষ্টের কোনও ছোঁয়া সেখানে নেই। অন্যদিকে জাহান্নাম কেবলই দুঃখ-কষ্টের জায়গা। সেখানে যারা যাবে, কোনও সুখের স্পর্শ তারা পাবে না। তো দুনিয়ায় যখন সুখ-দুঃখ দুইই আছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে এ দুই অবস্থাই স্পর্শ করে তখন এমন কিছু নীতি থাকা দরকার, যা অনুসরণ করলে উভয় ব্যক্তির পক্ষে কল্যাণকর হয়। এ হাদীছে সেই নীতির কথাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত মু'মিন ব্যক্তি সেই নীতির অনুসরণ করে বলে তার জীবনে কোনও অবস্থাই অশুভ হয় না। এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, মু'মিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক! সুখ ও দুঃখ উভয়ই তার জন্যে ভালো। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার যদি কোনও নি'আমত লাভ হয়, যেমন জ্ঞান-বিদ্যা, সুস্বাস্থ্য, শক্তি ও ক্ষমতা, অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি, তবে এর জন্য সে শোকর আদায় করে। ফলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। খুশি হয়ে তিনি বান্দার নি'আমত বাড়িয়ে দেন। যে নি'আমতের কারণে তার সুখ, তার থেকে তা কেড়ে নেন না; বরং আরও বেশি পরিমাণে দেন। এবং তার ক্ষতি থেকেও তাকে রক্ষা করেন। সেইসংগে শোকরের বিনিময়ে আখিরাতের ছওয়াব তো রয়েছেই। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-

لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

অর্থ : তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদেরকে আরও বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞতা কর, তবে জেনে রেখ আমার শাস্তি অতি কঠিন।' - ইব্রাহীমঃ ০৭
আবার যদি দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়, তবে সে সবর করে। কষ্টের কথা মানুষকে বলে বেড়ায় না এবং ভাগ্যকে দোষারোপ করে না। সে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে এবং সেই কষ্ট থেকে মুক্তির জন্যে তাঁর কাছে দু'আ করে। ফলে আল্লাহ তার কষ্ট লাঘব করে দেন এবং তার ক্ষতি থেকে তাকে হেফাজত করেন। আর আখিরাতে সবরের অপরিমিত প্রতিদান তো আছেই। পক্ষান্তরে কাফিরের বেলায় ব্যাপারটা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সুখ ও আনন্দের সময় সে উল্লসিত হয়। অহংকার-অহমিকা প্রকাশ করে। সে নি'আমতের কদর করে না এবং তার শোকর আদায়েরও প্রয়োজন বোধ করে না। বরং সে আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমতকে নাজায়েয কাজে ব্যবহার করে। ফলে সেই নি'আমতের সুখ ও আনন্দ তার জন্যে অশুভ পরিণাম ডেকে আনে। অনুরূপ কষ্টের সময়ও সে অস্থির হয়ে পড়ে এবং ভাগ্যকে দোষারোপ করে। ফলে এক কষ্ট তার জন্যে আরও বহু কষ্ট ডেকে আনে। এই নাশোকরি ও ধৈর্যহীনতার কুফল যেমন দুনিয়ার জীবনে তাকে ভুগতে হয়, তেমনি আখিরাতেও এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাহলে দেখা যাচ্ছে কাফিরের জন্যে প্রকৃতপক্ষে সুখ ও দুঃখ কোনও অবস্থাই শুভ নয়। অপরদিকে মু'মিনের পক্ষে অশুভ নয় কোনও অবস্থাই। এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্ময় প্রকাশের মাধ্যমে তা ব্যক্ত করেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য সর্বক্ষণ আল্লাহ তা'আলার শোকরগুযার হয়ে থাকা । কারণ প্রতি মুহূর্তেই সে আল্লাহর পক্ষ থেকে অগণিত নি'আমত ভোগ করছে এবং প্রতিক্ষণে তার আনন্দ ও সুখের কোনও না কোনও কারণ আছে।

খ. সাময়িক যেসব দুঃখ-কষ্ট সামনে আসে, মু'মিনের কর্তব্য সেজন্য সবর করা। সবর দ্বারা যেমন কষ্ট লাঘব হয়, তেমনি আখিরাতে অপরিমিত ছওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান