মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: দ্বৈত বিষয় সম্পর্কে যা এসেছে
১৩. 'আবদুল্লাহ ইবন 'উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাও। আর দুনিয়াতে তুমি মুসাফির অথবা পথচারী হয়ে থাকো। অন্য বর্ণনায় আছে, তুমি কবরবাসী হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরী রাখ।
كتاب جامع للأدب والمواعظ والحكم وجوامع الكلم في الترغيبات
باب ما جاء في الثنائيات
عن عبد الله بن عمر (8) قال احذ رسول الله صلى الله عليه وسلم ببعض جسدي فقال اعبد الله كأنك تراه وكن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে দুনিয়ায় অবস্থানের দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন এক মহান শিক্ষক। তাঁর শিক্ষার্থী সাহাবীগণকে বেজায় ভালোবাসতেন। যে ভালোবাসার পরিচয় মেলে এ শিক্ষাদানকালে সাহাবীর প্রতি তাঁর আচরণের ভেতরেও। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর দু'কাঁধ ধরেন, যাতে তিনি তাঁর শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হন এবং অন্যসব লিপ্ততা থেকে বিমুখ হয়ে পরিপূর্ণরূপে তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করেন। দু'কাঁধ ধরে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার ভেতর শিক্ষার বিষয়টি যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তারও ইঙ্গিত বহন করে। বলাবাহুল্য, এরূপ আচরণ এমন কারও সঙ্গেই করা হয়ে থাকে, যার প্রতি অন্তরে ভরপুর স্নেহ-মমতা বিরাজ করে। এমন গুরুত্বের সঙ্গে যে বিষয়টি কাউকে শিক্ষা দেওয়া হয় তা সে শিক্ষার্থীর মনে গভীর রেখাপাত করে, ফলে সে তা কখনও ভুলতে পারে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে বললেন- كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ (তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথিক)। غَرِيْب মানে প্রবাসী, বিদেশে বসবাসকারী। যে ব্যক্তি বিদেশে বসবাস করে সে ওই দেশকে কখনও তার নিজের দেশ মনে করে না। একদিন এ দেশ ছেড়ে তাকে তার নিজের দেশে চলে যেতে হবে, এ কথাটি মাথায় রেখেই সে সব কাজ করে। সে যা-কিছু উপার্জন করে তা ওই দেশে খরচ করে ফেলে না; বরং নিজ দেশে পাঠায়, যাতে নিজ দেশের ঘরবাড়ি আবাদ হয় এবং ফিরে আসার পর সুখে-শান্তিতে সেখানে বসবাস করতে পারে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে বিদেশীর মত জীবনযাপনে উপদেশ দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে, তুমি ইহজগৎকে বিদেশ বলেই গণ্য করবে। এ জগৎকে নিজের দেশ মনে করবে না। সুতরাং তোমার মূল পুঁজি অর্থাৎ আয়ুষ্কাল এবং তোমার যাবতীয় যোগ্যতা ও সক্ষমতা ইহকাল নির্মাণে খরচ করে ফেলো না; বরং তোমার প্রকৃত দেশ আখিরাত গড়ার পেছনে খরচ করো। ইহকালের পেছনে খরচ করবে কেবল ততটুকুই, যতটুকু এখানে থাকার জন্য প্রয়োজন হয়। এর অতিরিক্ত সবটাই আখিরাতের কাজে ব্যবহার করবে।
عَابِرُ سَبيْلٍ এর অর্থ পথিক। তুমি দুনিয়ায় থাকবে পথিকের মত। প্রকৃতপক্ষে তুমি একজন পথিকই বটে। তুমি অবিরাম আখিরাতের পথে চলছ। তোমার এই চলা শেষ হবে মৃত্যুতে। পথিক ব্যক্তি ক্ষণিকের জন্য কোনও পান্থশালায় বা গাছতলায় বিশ্রাম করে। তারপর আবার চলা শুরু করে। সে পান্থশালা বা গাছতলাকে নিজের বাসস্থান ও ঠিকানা মনে করে না। তাই একে নির্মাণ করা বা এর সাজানো-গোছানোর প্রতি সে বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেয় না। ক্ষণিকের অবস্থানের জন্য যতটুকু ঝাড়পোছের দরকার হয়, ব্যস অতটুকুই করে। তো তুমি যখন আখিরাতের পথের পথিক, তখন এ দুনিয়াকে পান্থশালা বা গাছতলার বেশি কিছু মনে করবে না। একজন পথিক পান্থশালা বা গাছতলার প্রতি যতটুকু মন দেয়, কেবল ততটুকুই। তোমার মূল ফিকির থাকবে আখিরাত। কিভাবে সেখানে মুক্তি পাবে, কিভাবে সেখানে নিবাস গড়ে তুলবে, সেটাই হবে তোমার জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
إِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيُوةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
‘এই পার্থিব জীবন তো তুচ্ছ ভোগ মাত্র। নিশ্চয়ই আখিরাতই অবস্থিতির প্রকৃত নিবাস।’ ২২৩
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচ্য হাদীছের এ শিক্ষাটি সরাসরি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে লক্ষ্য করে দিলেও এর উদ্দেশ্য ব্যাপক। তাঁর মাধ্যমে উম্মতের সকলকেই এ নসীহত করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দুনিয়ায় এভাবেই বসবাস করতেন। তিনি বলেন-
مَا لِي وَلِلدُّنْيَا ؟ مَا أَنَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اِسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا
'দুনিয়ার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? দুনিয়ায় তো আমি একজন মুসাফিরস্বরূপ, যে কোনও গাছের নিচে ছায়া গ্রহণ করে, তারপর তা ছেড়ে চলে যায়।' ২২৪
কুরআন-হাদীছের যাবতীয় শিক্ষার মূলকথা এটাই যে, দুনিয়াকে নিজের আসল ঠিকানা মনে করো না। তোমার আসল ঠিকানা জান্নাত। এখানে যতদিন থাক, সেই ঠিকানার নির্মাণ ও বিন্যাসে সচেষ্ট থেকো। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا
'আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা করো এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না। '২২৫
আরও ইরশাদ হয়েছে-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ
'হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে।' ২২৬
সারকথা, আমরা ওই গোলামের মত, যাকে তার মনিব বিশেষ কাজের জন্য কোথাও পাঠিয়েছে। সে গোলামের যেমন কর্তব্য সেখানে গিয়ে অন্য কাজে মশগুল না হয়ে যে কাজের জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে সে কাজেই ব্যস্ত থাকা, তারপর কাজ শেষ হওয়ামাত্র মনিবের কাছে ফিরে আসা, তেমনি আমাদেরও কর্তব্য দুনিয়ায় আমাদেরকে যে কাজে পাঠানো হয়েছে মৌলিকভাবে সে কাজেই ব্যস্ত থাকা, অন্য কোনও কাজে বিভোর না হওয়া। পরিশেষে মৃত্যুর মাধ্যমে দায়িত্বশীল ও কর্তব্যকর্ম সম্পাদনকারী বান্দারূপে মহামনিব আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাঠিয়েছেন দুনিয়াদারী করার জন্য নয়; বরং ইবাদত-বন্দেগীর জন্য। তাই ইবাদত-বন্দেগীই হবে আমাদের আসল ব্যস্ততা। দুনিয়ার কাজকর্ম করব যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। তাতেও দিল-দেমাগে থাকবে আখিরাতের চিন্তা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব ও আসবাব-উপকরণে বেশি জড়াতে নেই। পরকালই আসল ঠিকানা। সেখানকার পাথেয় সংগ্রহেই বেশি ব্যস্ত থাকা চাই।
খ. আগামীতে বেঁচে থাকার কোনও ভরসা নেই। তাই নগদ যে সময় হাতে আছে সেটাকে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
গ. সুস্থতা ও অবসর সময় আমলের মহাসুযোগ। এ সুযোগ হারাতে নেই।দীর্ঘদীন বেঁচে থাকার আশা শয়তানের ধোকা। সে এ পথে মানুষের অন্তরে অলসতা সৃষ্টি করে। তারপর যখন অকস্মাৎ মৃত্যু এসে যায় তখন দেখা যায় কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি। তাই শয়তানের এ ধোঁকায় পড়তে নেই।
২২৩. সূরা গাফির (৪০), আয়াত ৩৯
২২৪. জামে' তিরমিযী: ২৩৭৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১০৯; মুসনাদে আহমাদ: ৩৭০৯; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৫২২৯; সহীহ ইবন হিব্বান ৬৩৫২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৮৯৮: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৯৯৩০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৩৫
২২৫. সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৭৬
২২৬. সূরা হাশর (৫৯), আয়াত ১৮
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে বললেন- كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ (তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথিক)। غَرِيْب মানে প্রবাসী, বিদেশে বসবাসকারী। যে ব্যক্তি বিদেশে বসবাস করে সে ওই দেশকে কখনও তার নিজের দেশ মনে করে না। একদিন এ দেশ ছেড়ে তাকে তার নিজের দেশে চলে যেতে হবে, এ কথাটি মাথায় রেখেই সে সব কাজ করে। সে যা-কিছু উপার্জন করে তা ওই দেশে খরচ করে ফেলে না; বরং নিজ দেশে পাঠায়, যাতে নিজ দেশের ঘরবাড়ি আবাদ হয় এবং ফিরে আসার পর সুখে-শান্তিতে সেখানে বসবাস করতে পারে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে বিদেশীর মত জীবনযাপনে উপদেশ দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে, তুমি ইহজগৎকে বিদেশ বলেই গণ্য করবে। এ জগৎকে নিজের দেশ মনে করবে না। সুতরাং তোমার মূল পুঁজি অর্থাৎ আয়ুষ্কাল এবং তোমার যাবতীয় যোগ্যতা ও সক্ষমতা ইহকাল নির্মাণে খরচ করে ফেলো না; বরং তোমার প্রকৃত দেশ আখিরাত গড়ার পেছনে খরচ করো। ইহকালের পেছনে খরচ করবে কেবল ততটুকুই, যতটুকু এখানে থাকার জন্য প্রয়োজন হয়। এর অতিরিক্ত সবটাই আখিরাতের কাজে ব্যবহার করবে।
عَابِرُ سَبيْلٍ এর অর্থ পথিক। তুমি দুনিয়ায় থাকবে পথিকের মত। প্রকৃতপক্ষে তুমি একজন পথিকই বটে। তুমি অবিরাম আখিরাতের পথে চলছ। তোমার এই চলা শেষ হবে মৃত্যুতে। পথিক ব্যক্তি ক্ষণিকের জন্য কোনও পান্থশালায় বা গাছতলায় বিশ্রাম করে। তারপর আবার চলা শুরু করে। সে পান্থশালা বা গাছতলাকে নিজের বাসস্থান ও ঠিকানা মনে করে না। তাই একে নির্মাণ করা বা এর সাজানো-গোছানোর প্রতি সে বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেয় না। ক্ষণিকের অবস্থানের জন্য যতটুকু ঝাড়পোছের দরকার হয়, ব্যস অতটুকুই করে। তো তুমি যখন আখিরাতের পথের পথিক, তখন এ দুনিয়াকে পান্থশালা বা গাছতলার বেশি কিছু মনে করবে না। একজন পথিক পান্থশালা বা গাছতলার প্রতি যতটুকু মন দেয়, কেবল ততটুকুই। তোমার মূল ফিকির থাকবে আখিরাত। কিভাবে সেখানে মুক্তি পাবে, কিভাবে সেখানে নিবাস গড়ে তুলবে, সেটাই হবে তোমার জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
إِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيُوةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
‘এই পার্থিব জীবন তো তুচ্ছ ভোগ মাত্র। নিশ্চয়ই আখিরাতই অবস্থিতির প্রকৃত নিবাস।’ ২২৩
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচ্য হাদীছের এ শিক্ষাটি সরাসরি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-কে লক্ষ্য করে দিলেও এর উদ্দেশ্য ব্যাপক। তাঁর মাধ্যমে উম্মতের সকলকেই এ নসীহত করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দুনিয়ায় এভাবেই বসবাস করতেন। তিনি বলেন-
مَا لِي وَلِلدُّنْيَا ؟ مَا أَنَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اِسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا
'দুনিয়ার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? দুনিয়ায় তো আমি একজন মুসাফিরস্বরূপ, যে কোনও গাছের নিচে ছায়া গ্রহণ করে, তারপর তা ছেড়ে চলে যায়।' ২২৪
কুরআন-হাদীছের যাবতীয় শিক্ষার মূলকথা এটাই যে, দুনিয়াকে নিজের আসল ঠিকানা মনে করো না। তোমার আসল ঠিকানা জান্নাত। এখানে যতদিন থাক, সেই ঠিকানার নির্মাণ ও বিন্যাসে সচেষ্ট থেকো। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا
'আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা করো এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না। '২২৫
আরও ইরশাদ হয়েছে-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ
'হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে।' ২২৬
সারকথা, আমরা ওই গোলামের মত, যাকে তার মনিব বিশেষ কাজের জন্য কোথাও পাঠিয়েছে। সে গোলামের যেমন কর্তব্য সেখানে গিয়ে অন্য কাজে মশগুল না হয়ে যে কাজের জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে সে কাজেই ব্যস্ত থাকা, তারপর কাজ শেষ হওয়ামাত্র মনিবের কাছে ফিরে আসা, তেমনি আমাদেরও কর্তব্য দুনিয়ায় আমাদেরকে যে কাজে পাঠানো হয়েছে মৌলিকভাবে সে কাজেই ব্যস্ত থাকা, অন্য কোনও কাজে বিভোর না হওয়া। পরিশেষে মৃত্যুর মাধ্যমে দায়িত্বশীল ও কর্তব্যকর্ম সম্পাদনকারী বান্দারূপে মহামনিব আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাঠিয়েছেন দুনিয়াদারী করার জন্য নয়; বরং ইবাদত-বন্দেগীর জন্য। তাই ইবাদত-বন্দেগীই হবে আমাদের আসল ব্যস্ততা। দুনিয়ার কাজকর্ম করব যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। তাতেও দিল-দেমাগে থাকবে আখিরাতের চিন্তা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব ও আসবাব-উপকরণে বেশি জড়াতে নেই। পরকালই আসল ঠিকানা। সেখানকার পাথেয় সংগ্রহেই বেশি ব্যস্ত থাকা চাই।
খ. আগামীতে বেঁচে থাকার কোনও ভরসা নেই। তাই নগদ যে সময় হাতে আছে সেটাকে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
গ. সুস্থতা ও অবসর সময় আমলের মহাসুযোগ। এ সুযোগ হারাতে নেই।দীর্ঘদীন বেঁচে থাকার আশা শয়তানের ধোকা। সে এ পথে মানুষের অন্তরে অলসতা সৃষ্টি করে। তারপর যখন অকস্মাৎ মৃত্যু এসে যায় তখন দেখা যায় কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি। তাই শয়তানের এ ধোঁকায় পড়তে নেই।
২২৩. সূরা গাফির (৪০), আয়াত ৩৯
২২৪. জামে' তিরমিযী: ২৩৭৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১০৯; মুসনাদে আহমাদ: ৩৭০৯; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৫২২৯; সহীহ ইবন হিব্বান ৬৩৫২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৮৯৮: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৯৯৩০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৩৫
২২৫. সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৭৬
২২৬. সূরা হাশর (৫৯), আয়াত ১৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)