মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
হাদীস নং: ২১
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: তিনটি বিষয় উল্লেখ করে যা এসেছে
২১. ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, বিবাহের ওলীমার দাওয়াত কবুল করবে, হাদীয়া ফেরৎ দেবে না এবং মুসলমানদেরকে মারধর করবে না।
كتاب جامع للأدب والمواعظ والحكم وجوامع الكلم في الترغيبات
باب ما جاء في الثلاثيات
عن عبد الله بن مسعود (9) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اجيبوا الداعي (10) ولا تردوا الهدية ولا تضربوا المسلمين
হাদীসের ব্যাখ্যা:
দাওয়াত কবুল করা
এক মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের একটি হক হচ্ছে দাওয়াত কবুল করা। এর আক্ষরিক অর্থ ডাকে সাড়া দেওয়া। ডাকে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক। আরবীতে এর দ্বারা সাধারণত অনুষ্ঠানের দাওয়াত বোঝায়। তবে কেউ যদি কাউকে কোনও প্রয়োজনে ডাকে, তা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ডাকা হোক বা অন্য কোনও সাহায্যের প্রয়োজনে ডাকা হোক, তবে যাকে ডাকা হয় তার কর্তব্য সে ডাকে সাড়া দেওয়া এবং নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সাহায্য করা। এটাও এক মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের হক, যেমন একাধিক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
আরেক হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ডাকা অর্থাৎ দাওয়াত করা। কেউ যদি কাউকে বৈধ দাওয়াতে অংশগ্রহণের অনুরোধ করে, তবে তা কবুল করা উচিত। এর দ্বারা পরস্পরে মহব্বত সৃষ্টি হয়। দুই মুমিনের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। এটা জান্নাত লাভের উপায়। জান্নাত লাভ করা মুমিনদের পরম লক্ষ্য।যে দাওয়াত গ্রহণ তা লাভের পক্ষে সহায়ক হয়, তা কবুল করতে কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়। হাদীছে তো দাওয়াত কবুলকে মুমিন ব্যক্তির হক বলা হয়েছে। হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها 'কাউকে যদি ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, তবে সে যেন তাতে আসে।
নির্দোষ দাওয়াত কবুল না করাটা অপরাধ। হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ومن دعي إلى وليمة فلم يجب فقد عصى الله ورسوله 'যে ব্যক্তিকে ওলীমায় দাওয়াত দেওয়া হয় আর সে তা কবুল না করে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল।
অবশ্য দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে অথবা দাওয়াতটাই কোনও অবৈধ উপলক্ষ্যে হয়, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়।
ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না।তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনওকিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক দাওয়াতসমূহের আরও একটি বড় দোষ হচ্ছে গরীব-ধনীর ভেদাভেদ করা। অনেকেই গরীব আত্মীয় বা গরীব প্রতিবেশীকে অবজ্ঞা করে থাকে। তারা তাদের অনুষ্ঠানসমূহে অনাত্মীয় ধনী বন্ধু-বান্ধবকে তো দাওয়াত করে, কিন্তু গরীব আত্মীয় ও গরীব প্রতিবেশীর কথা মনে করে না। এ জাতীয় অনুষ্ঠান অতি নিকৃষ্ট। এর খানাদানায় বরকত থাকে না। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ- بئس الطعام طعام الوليمة يدعى إليها الأغنياء ويترك الفقراء ‘অতি নিকৃষ্ট খাবার সে ওলীমার খাবার, যাতে ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয়, গরীবদের ত্যাগ করা হয়।[১৪]
সমস্ত মুসলিম যখন ভাই-ভাই; বরং একদেহতুল্য, তখন গরীব-ধনী ভেদাভেদ করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। এ প্রভেদ একরকম বর্ণবাদ ও জাহিলিয়াত। আলোর ধর্ম ইসলামের অনুসারীদেরকে এরকম জাহিলী ভেদনীতি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দাওয়াত কবুল করা এবং অন্যের ডাকে সাড়া দেওয়াও একটি হক, যা রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্য।
এক মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের একটি হক হচ্ছে দাওয়াত কবুল করা। এর আক্ষরিক অর্থ ডাকে সাড়া দেওয়া। ডাকে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক। আরবীতে এর দ্বারা সাধারণত অনুষ্ঠানের দাওয়াত বোঝায়। তবে কেউ যদি কাউকে কোনও প্রয়োজনে ডাকে, তা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ডাকা হোক বা অন্য কোনও সাহায্যের প্রয়োজনে ডাকা হোক, তবে যাকে ডাকা হয় তার কর্তব্য সে ডাকে সাড়া দেওয়া এবং নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সাহায্য করা। এটাও এক মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের হক, যেমন একাধিক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
আরেক হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ডাকা অর্থাৎ দাওয়াত করা। কেউ যদি কাউকে বৈধ দাওয়াতে অংশগ্রহণের অনুরোধ করে, তবে তা কবুল করা উচিত। এর দ্বারা পরস্পরে মহব্বত সৃষ্টি হয়। দুই মুমিনের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। এটা জান্নাত লাভের উপায়। জান্নাত লাভ করা মুমিনদের পরম লক্ষ্য।যে দাওয়াত গ্রহণ তা লাভের পক্ষে সহায়ক হয়, তা কবুল করতে কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়। হাদীছে তো দাওয়াত কবুলকে মুমিন ব্যক্তির হক বলা হয়েছে। হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها 'কাউকে যদি ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, তবে সে যেন তাতে আসে।
নির্দোষ দাওয়াত কবুল না করাটা অপরাধ। হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ومن دعي إلى وليمة فلم يجب فقد عصى الله ورسوله 'যে ব্যক্তিকে ওলীমায় দাওয়াত দেওয়া হয় আর সে তা কবুল না করে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল।
অবশ্য দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে অথবা দাওয়াতটাই কোনও অবৈধ উপলক্ষ্যে হয়, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়।
ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না।তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনওকিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক দাওয়াতসমূহের আরও একটি বড় দোষ হচ্ছে গরীব-ধনীর ভেদাভেদ করা। অনেকেই গরীব আত্মীয় বা গরীব প্রতিবেশীকে অবজ্ঞা করে থাকে। তারা তাদের অনুষ্ঠানসমূহে অনাত্মীয় ধনী বন্ধু-বান্ধবকে তো দাওয়াত করে, কিন্তু গরীব আত্মীয় ও গরীব প্রতিবেশীর কথা মনে করে না। এ জাতীয় অনুষ্ঠান অতি নিকৃষ্ট। এর খানাদানায় বরকত থাকে না। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ- بئس الطعام طعام الوليمة يدعى إليها الأغنياء ويترك الفقراء ‘অতি নিকৃষ্ট খাবার সে ওলীমার খাবার, যাতে ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয়, গরীবদের ত্যাগ করা হয়।[১৪]
সমস্ত মুসলিম যখন ভাই-ভাই; বরং একদেহতুল্য, তখন গরীব-ধনী ভেদাভেদ করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। এ প্রভেদ একরকম বর্ণবাদ ও জাহিলিয়াত। আলোর ধর্ম ইসলামের অনুসারীদেরকে এরকম জাহিলী ভেদনীতি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দাওয়াত কবুল করা এবং অন্যের ডাকে সাড়া দেওয়াও একটি হক, যা রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)