মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৮
নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়
আল্লাহ্ নবী মূসা ইবনে ইমরান (আ) সম্পর্কিত পরিচ্ছেদসমূহ
পরিচ্ছেদ : আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর মর্যাদা এবং খানিকটা আমাদের প্রিয়নবী (ﷺ)-এর মর্যাদা
পরিচ্ছেদ : আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর মর্যাদা এবং খানিকটা আমাদের প্রিয়নবী (ﷺ)-এর মর্যাদা
(৪৮) আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে মেরাজের ঘটনা বর্ণিত, তাতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, অতঃপর আমাদেরকে ষষ্ঠ আকাশে আরোহণ করানো হয়। জিব্রাইল (আ) দরজা খুলতে বলেন। তাঁকে বলা হলো, আপনি কে? তিনি বলেন, জিব্রাইল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বলেন, মুহাম্মদ (ﷺ)। বলা হলো, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ ডাকা হয়েছে। এরপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হল। তখন আমি মূসার (আ) মুখোমুখি হলাম। তিনি আমাকে অভিনন্দন জানালেন এবং কল্যাণ কামনায় দোয়া করলেন। (এই হাদীসে আরও এসেছে) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা আমার প্রতি যা ওহী করবার তা করেন এবং তিনি আমার উপর দিবা-রাত্রি পঞ্চাশবার সালাত ফরয করেন। আমি অবরোহণ করে মূসার (আ) নিকট পৌঁছালাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রভু আপনার উম্মতের উপর কী ফরয করেছেন? আমি বললাম, দিবা-রাত্রিতে পঞ্চাশ বার সালাত। তিনি বললেন, আপনি আবার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে আরো সহজ করার অনুরোধ করুন। আপনার উম্মত তা পালনে সমর্থ হবে না। আমি বনী ইসরাইলকে পরীক্ষা করে দেখেছি এবং তাদের খবর আমি জানি।
রাসূল (ﷺ) বলেন, অতঃপর আমি মহাপ্রভুর নিকট ফিরে গিয়ে আরয করলাম, ইয়া রব, আমার উম্মতের জন্য সহজ করে দিন। তখন তিনি পাঁচ কমিয়ে দেন। আবার আমি মূসার (আ) কাছে ফিরে এলাম, তিনি বললেন, আপনি কী করেছেন? আমি বললাম, আমার প্রতিপালক পাঁচবার কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনার উম্মত তা করতে পারবে না, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে উম্মতের জন্য আরও সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, এইভাবে আমি আমার প্রভু ও মূসার (আ) মধ্যে যাতায়াত করতে থাকি; এবং প্রতিবারই পাঁচ পাঁচ করে তিনি কমাতে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি (প্রভু) বলেন, হে মুহাম্মদ, এই নিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত দিবা-রাত্রিতে। প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য দশ (ওয়াক্তের সওয়াব) পাবে, আর তাতেই পঞ্চাশ ওয়াক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি কোন নেক কাজের নিয়্যত করলো, কিন্তু বাস্তবে করতে পারলোনা, তার জন্য একটি নেকী (পুণ্য) লেখা হবে। আর যদি সে বাস্তবে তা আমল করে, তাহলে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে। অপরদিকে যদি কেউ কোন খারাপ কাজ করার নিয়্যত করে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে এর বিপরীতে কিছু লেখা হবে না। তবে যদি সে তা বাস্তবায়িত করে, তাহলে মাত্র একটি গোনাহ লেখা হবে। (প্রভুর এই নির্দেশনা প্রাপ্তির পর) আমি অবরোহণ করে মূসার (আ) কাছে এসে (সবিস্তারে) তাঁকে অবহিত করি। কিন্তু তিনি বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে গিয়ে আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার অনুরোধ করুন। কারণ, আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, আমি আমার রবের কাছে এতবার ফিরে গিয়েছি যে, এখন আমি লজ্জাবোধ করছি।
(এটি একটি সুদীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ। বিস্তারিত বর্ণনা ও তাখরীজ 'ইসরা'-এর ঘটনায় আসছে ইনশাআল্লাহ্।)
রাসূল (ﷺ) বলেন, অতঃপর আমি মহাপ্রভুর নিকট ফিরে গিয়ে আরয করলাম, ইয়া রব, আমার উম্মতের জন্য সহজ করে দিন। তখন তিনি পাঁচ কমিয়ে দেন। আবার আমি মূসার (আ) কাছে ফিরে এলাম, তিনি বললেন, আপনি কী করেছেন? আমি বললাম, আমার প্রতিপালক পাঁচবার কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনার উম্মত তা করতে পারবে না, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে উম্মতের জন্য আরও সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, এইভাবে আমি আমার প্রভু ও মূসার (আ) মধ্যে যাতায়াত করতে থাকি; এবং প্রতিবারই পাঁচ পাঁচ করে তিনি কমাতে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি (প্রভু) বলেন, হে মুহাম্মদ, এই নিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত দিবা-রাত্রিতে। প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য দশ (ওয়াক্তের সওয়াব) পাবে, আর তাতেই পঞ্চাশ ওয়াক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি কোন নেক কাজের নিয়্যত করলো, কিন্তু বাস্তবে করতে পারলোনা, তার জন্য একটি নেকী (পুণ্য) লেখা হবে। আর যদি সে বাস্তবে তা আমল করে, তাহলে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে। অপরদিকে যদি কেউ কোন খারাপ কাজ করার নিয়্যত করে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে এর বিপরীতে কিছু লেখা হবে না। তবে যদি সে তা বাস্তবায়িত করে, তাহলে মাত্র একটি গোনাহ লেখা হবে। (প্রভুর এই নির্দেশনা প্রাপ্তির পর) আমি অবরোহণ করে মূসার (আ) কাছে এসে (সবিস্তারে) তাঁকে অবহিত করি। কিন্তু তিনি বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে গিয়ে আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার অনুরোধ করুন। কারণ, আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, আমি আমার রবের কাছে এতবার ফিরে গিয়েছি যে, এখন আমি লজ্জাবোধ করছি।
(এটি একটি সুদীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ। বিস্তারিত বর্ণনা ও তাখরীজ 'ইসরা'-এর ঘটনায় আসছে ইনশাআল্লাহ্।)
كتاب أحاديث الأنبياء عليهم وعلى نبينا الصلاة والسلام
أبواب ذكر نبى الله موسى بن عمران عليه السلام
باب ما جاء فى فضل نبى الله موسى وشئ من فضل نبينا عليهما الصلاة والسلام
باب ما جاء فى فضل نبى الله موسى وشئ من فضل نبينا عليهما الصلاة والسلام
عن أنس بن مالك (3) من حديث الأسراء أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال ثم عرج بنا إلى السماء السادسة فاستفتح جبريل فقيل من أنت؟ قال جبريل، قيل ومن معك؟ قال محمد صلي الله عليه وسلم فقيل وقد بعث اليه؟ قال قد بعث اليه، ففتح لنا فاذا أنا بموسى عليه السلام فرحب ودعا بخير (وفيه أيضا) أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال فأوحى الله عز وجل اليّ ما أوحى، وفرض علىّ فى كل يوم وليلة خمسين صلاة فنزلت حتى انتهيت الى موسى، فقال ما فرض ربك على أمتك؟ قال قلت خمسين صلاة فى كل يوم وليلة، قال أرجع الى ربك فاسأله التخفيف فان أمتك لا تطيق ذلك فانى قد بلوت بنى اسرائيل وخبرتهم، قال فرجعت الى ربى عز وجل فقلت أى رب خفف عن أمتى فحط عنى خمسا، فرجعت الى موسى فقال ما فعلت؟ قلت حط عنى خمسا، قال أن أمتك لا تطيق ذلك فارجع الى ربك فاسأله التخفيف لأمتك، قال فلم أزل أرجع بين ربى وبين موسى ويحط عنى خمسا خمسا حتى قال يا محمد هى خمس صلوات فى كل يوم وليلة بكل صلاة عشر فتلك خمسون صلاة، ومن هم بحسنة فلم يفعلها كتبت له حسنة، فان عملها كتبت عشرا ومن هم بسيئة فلم يعملها لم تكتب شيئا، فان عملها كتبت سيئة واحدة، فنزلت حتى أنهيت الى موسى فأخبرته فقال أرجع الى ربك فاسأله التخفيف لأمتك فان أمتك لا تطيق ذلك، فقال رسول الله صلي الله عليه وسلم لقد رجعت الى ربى حتى لقد أستحيت
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।
অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।
গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।
ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।
ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।
চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।
গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।
ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।
ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।
চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)