মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বনী ইসরাঈল ও অতীতের অন্যান্য জাতিসমূহের ঘটনাবলী, আইয়্যামূল আরব তথা আরবদের ইতিহাস ও তাঁদের জাহিলিয়াত সংক্রান্ত ঘটনাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ১২
বনী ইসরাঈল ও অতীতের অন্যান্য জাতিসমূহের ঘটনাবলী, আইয়্যামূল আরব তথা আরবদের ইতিহাস ও তাঁদের জাহিলিয়াত সংক্রান্ত ঘটনাবলী অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: আসহাবুল উখদূদ এর ঘটনা এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা বলা
(১২) আবদুর রহমান ইব্‌ন আবু লাইলা সুহাইব (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। সে যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল, তখন বাদশাহকে বললো, আমি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং আমার মৃত্যুও সন্নিকটে। কাজেই একটি বালককে আমার নিকট পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে যাদু শিক্ষা দেব। বাদশাহ একটি বালককে যাদু শিক্ষা করার জন্য তার কাছে প্রেরণ করলো। যাদুকর তাকে যাদু শিক্ষা দিতে লাগলো। বাদশাহ এবং যাদুকরের যাতায়াতস্থলের মাঝে এক খ্রীষ্টান দরবেশ থাকত। বালক পথিমধ্যে এই দরবেশের কাছে এসে তাঁর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল। (এভাবে সে যাদুকরের কাছে আসার পথে দরবেশের কাছে বসতে লাগলো।) ফলে সে যাদুকরের কাছে (বিলম্বে গেলে সে তাকে মারধর করতো এবং জিজ্ঞেস করত, কে তোমাকে আটকে রেখেছিল? আর সে যখন তার পরিবারবর্গের কাছে (বিলম্বে) ফিরে আসতো, তখন তারা তাকে মারতো এবং জিজ্ঞেস করতো- কে তোমাকে আটকে রেখেছিল? বালক এ বিষয়ে দরবেশের কাছে অভিযোগ করলো। দরবেশ বলেন, যখন তুমি যাদুকরের জিজ্ঞাসাবাদের ভয় করবে, তখন তাকে বলবে, আমার পরিবারবর্গ আমাকে আটকে রেখেছিল। আর যখন তোমার পরিবারবর্গের ভয় করবে, তখন বলবে, যাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল। এইভাবেই চলছিল। এমতাবস্থায় একদিন একটি বিরাট ভয়াল জানোয়ার এসে লোকদের পথ আটকে দিল। লোকজন কোনক্রমেই চলাচল করতে পারছিলো না। বালকটি তখন (মনে মনে) বললো, আজ আমি জেনে যাব, আল্লাহর কাছে দরবেশের কাজ পছন্দনীয় নাকি যাদুকরের? তখন বালক একটি পাথর খণ্ড হাতে নিয়ে বললো, হে আল্লাহ্ দরবেশের কাজ যাদুকরের কাজ অপেক্ষা তোমার কাছে যদি অধিক পছন্দনীয় ও সন্তোষজনক হয়, তবে এই জানোয়ারটিকে মেরে ফেল, যাতে করে লোকজন চলাচল করতে পারে। এই বলে পাথরটি নিক্ষেপ করবো, জানোয়ারটি মারা গেল এবং লোকজন চলাচল করতে পারলো। তারপর সে দরবেশের কাছে এসে তাকে এ খবর জানালো। দরবেশ বললেন, বৎস, আজ তুমি আমার চেয়ে উত্তম। তুমি শীঘ্রই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি তুমি পরীক্ষায় পড়ে যাও, তবে আমার সন্ধান দেবে না। অতঃপর বালক অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে ভাল করে দিত এবং মানুষের সব রকম রোগের চিকিৎসা করতো। বাদশাহের পারিষদবর্গের একজন অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে এ খবর শুনে বালকটির কাছে বহু উপহার-উপঢৌকনসহ উপস্থিত হল এবং বললো, তুমি আমাকে আরোগ্য করে দাও, বিনিময়ে এ সবই তোমার। বালক বললো, আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না। আল্লাহই আরোগ্য দান করেন। যদি আপনি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন, তবে আমি আল্লাহর নিকট দোয়া করবো, তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করবেন। সে তখন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, বালক দোয়া করলো, আল্লাহ্ তাকে শেফা দান করলেন। তারপর সে পূর্বের ন্যায় বাদশাহর দরবারে বসে গেল। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলো, কে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল? সে উত্তর দিল, আমার প্রতিপালক। বাদশাহ বললো, আমি? সে বললো না। বরং আল্লাহ্, যিনি আমার প্রতিপালক এবং আপনারও প্রতিপালক। বাদশাহ বললো, আমি ছাড়াও তোমার রব আছে? সে উত্তর করলো, হ্যাঁ। এতে বাদশাহ তাকে ধরে শাস্তি দিতে লাগলো। অবশেষে সে বাদশাহকে বালকটির কথা বলে দিল। তখন বালকটিকে আনা হলো। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞেস করলো, হে বৎস, তোমার যাদুশক্তি এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তুমি অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করতে পার এবং এমনি আরো অনেক রোগের চিকিৎসা করতে সক্ষম হও? বালকটি বললো, আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না। আরোগ্য দান করেন আল্লাহ্ তা'আলা। বাদশাহ বললো, আমি? বালক বললো, না। বাদশাহ বললো, আমি ছাড়াও তোমার রব আছে? বালক উত্তর দিল, হ্যাঁ। আমার রব এবং আপনার রব আল্লাহ্। বাদশাহ বালকটিকে শাস্তি দিতে লাগলো। অবশেষে সে সেই দরবেশের কথা বলে দিল। তখন দরবেশকে আনা হল এবং তাকে বললো, তুমি তোমার দ্বীন থেকে ফিরে আস। সে অস্বীকার করলো। তখন বাদশাহ করাত আনতে বললো। তারপর করাতটি তার মাথার মাঝখানে রাখা হলো এবং করাত তাকে চিরে ফেললো। এমনকি সে দু'টুকরো হয়ে পড়ে গেল। তারপর বাদশাহ সেই অন্ধ পারিষদকে বললো, তোমার দ্বীন থেকে ফিরে আস। কিন্তু সে অস্বীকার কলো। তখন তার মাথার মাঝখানে করাত রাখা হলো, (করাত তাকে চিরে ফেললো) এবং দু'টুকরো হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এবার বাদশাহ বালকটিকে বললো, তোমার দ্বীন থেকে ফিরে আস। সে অস্বীকার করলো। তখন তাকে বাদশাহ কতিপয় লোকের নিকট সোপর্দ করে একটি বিশেষ পাহাড়ে নিয়ে যেতে বললো এবং বলে দিল, পাহাড়ের উচ্চ শিখরে তাকে নিয়ে যখন পৌছবে, তখন সে যদি তার দ্বীন থেকে ফিরে আসে, তাহলে ভাল। নতুবা তাকে সেখান থেকে ফেলে দেবে। তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ে উঠলো। বালক বললো, হে আল্লাহ্, তুমি যেভাবে চাও এদের হাত থেকে আমাকে মুক্তি দান কর। তখন পাহাড়টি কেঁপে উঠলো এবং তারা সবাই নীচে পড়ে গেল (এবং মৃত্যুবরণ করলো)। বালক ফিরে এসে বাদশাহর কাছে উপস্থিত হলো। বাদশাহ বললো, তোমার সঙ্গীদের কী হলো? সে বললো, আমার পক্ষ হতে আল্লাহ্ তা'আলাই তাদের নিপাত করেছেন। তখন বাদশাহ তাকে অন্য একদল লোকের সাথে একটি নৌকায় করে পাঠাল এবং বলে দিল, তোমরা যখন তাকে নিয়ে মাঝ সাগরে যাবে, তখন সে যদি তার দ্বীন থেকে প্রত্যাবর্তন করে, ভাল। অন্যথায় তাকে সাগরে ফেলে দিবে। বালকটি বললো, ইয়া আল্লাহ্, তুমি যেভাবে চাও, এদের কাছ থেকে আমাকে মুক্তি দাও। এতে নৌকা তাদেরকে নিয়ে ডুবে গেল এবং তারা সবাই ডুবে মরলো। আর বালক চলে এল এবং বাদশাহর কাছে উপস্থিত হলো। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলো, তোমার সঙ্গীদের কী হলো? সে বললো, আল্লাহই আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন। সে বাদশাহকে আরো বললো, আপনি আমাকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন না যতক্ষণ না আপনি আমার নির্দেশমত কাজ করবেন। আপনি যদি আমার নির্দেশমত কাজ করেন, আমাকে হত্যা করতে পারবেন, অন্যথায় আপনি আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। বাদশাহ বললো, তা কী? সে বললো, একটি মাঠে লোকদেরকে একত্রিত করুন, তারপর আমাকে শূলের অগ্রভাগে উঠাবেন এবং আমার তূনীর থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকে যোজনা করবেন। তারপর বলবেন "বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলামি" অর্থাৎ আল্লাহর নামে, যিনি বালকের প্রতিপালক। এইরূপ করলেই কেবল আপনি আমাকে হত্যা করতে পারবেন। তখন বাদশাহ তাই করলো। ধনুকে তীর যোজনা করে "বিছমিল্লাহি রাব্বিল গুলামি" বলে ছুঁড়ে দিল। তীরটি বালকের কানের কাছে মাথায় বিদ্ধ হলো। বালক সেখানে তার একটি হাত রাখলো এবং মৃত্যুবরণ করলো। উপস্থিত জনতা বলে উঠলো: আমরা এই বালকের রবের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন বাদশাহকে বলা হলো, যে আশংকা আপনার ছিল, তাই তো হয়ে গেল। সকল মানুষ (উপস্থিত) (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে। বাদশাহ তখন রাস্তার পার্শ্বে বিশালাকৃতির গর্ত করার নির্দেশ দেয় এবং তাতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয়। বাদশাহ ঘোষণা দিল, যে ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে ফিরে আসবে, তাকে ছেড়ে দিবে। অন্যথায় অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর যারা তাদের দ্বীন থেকে ফিরে এল না, তাদেরকে সেই অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে একটি মহিলা তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে এগিয়ে এল। সে যেন অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লো। তখন সেই শিশুটি বলে উঠলো, মাতা, ধৈর্য ধারণ কর, কারণ তুমি সত্যের উপর (রয়েছ)। (সুতরাং এই অগ্নিকে ভয় করো না।)
(মুসলিম, তিরমিযী ও অন্যান্য)
كتاب قصص الماضين من بنى اسرائيل وغيرهم
باب ذكر قصة أصحاب الأخدود وفيها من تكلم فى المهد أيضاً
عن عبد الرحمن بن أبى ليلى (5) عن صهيب أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال كان ملِك فيمن كان قبلكم (6) وكان له ساحر فلما كبِر الساحر قال للملك أنى قد كبِرت سنى وحضر أجلى فادفع الىّ خادما فلأعلمه السحر، فدفع اليه غلاما فكان يعلمه السحر، وكان بين الساحر وبين الملِك راهب فأتى الغلام على الراهب فسمع من كلامه فأعجبه نحوه وكلامه، فكان أذا أتى الساحر ضربه وقال ما حبسك؟ واذا أتى أهله ضربوه وقالوا ما حبسك؟ فشكى ذلك الى الراهب، فقال أذا أراد الساحر أن يضربك فقل حبسنى أهلى، وأذا أراد أهلك أن يضربوك فقل حبسنى الساحر وقال فبينما هو كذلك اذ أتى ذات يوم على دابة فظيعة عظيمة وقد حبست الناس فلا يستطيعون أن يجوزوا، فقال اليوم أعلم أمر الراهب أحب الى الله أم أمر الساحر، فأخذ حجراً فقال اللهم أن كان أمر الراهب أحب أليك وأرضى لك من أمر الساحر فاقتل هذه الدابة حتى يجوز الناس ورماها فقتلها ومشى الناس، فأخبر الراهب بذلك، فقال أى نبى أنت أفضل منى وأنك ستبتلى، فان ابتليت فلا تدل علىّ، فكان الغلام يبرئ الأكمة (1) وسائر الأدواء ويشفيهم، وكان يجلس للملك جليس فعمى فسمع به فأتاه بهدايا كثيرة فقال أشفنى ولك ما هنا أجمع، فقال ما أشفى أنا أحدا إنما يشفى الله عز وجل فان أنت آمنت به دعوت الله فشفاك، فآمن فدعا الله له فشفاه، ثم أتى الملك فجلس منه نحو ما كان يجلس، فقال له الملك يا فلان من رد عليك بصرك؟ فقال ربى فقال أنا؟ قال لا ولكن ربى وربك الله، قال لك رب غيرى؟ قال نعم، فلم يزل يعذبه حتى دله على الغلام فبعث اليه فقال أى بنى قد بلغ من سحرك أن تبرئ الأكمة والأبرص (2) وهذه الأدواء قال ما أشفى أنا أحدا، ما يشفى غير الله عز وجل، قال أنا؟ قال لا، قال أولك رب غيرى؟ قال نعم ربى وربك الله، فآخذه أيضا بالعذاب فلم يزل به حتى دل على الراهب، فأنى بالراهب فقال ارجع عن دينك فأبى، فوضع المنشار (3) فى مَفِرق رأسه حتى وقع شقاه وقال للأعمى أرجع عن دينك فأبى فوضع المنشار فى مَفْرِق رأسه حتى وقع شقاه على الأرض، وقال للغلام أرجع عن دينك فأبى فبعث مع نفرالى جبل كذا وكذا فقال أذا بلغتم ذروته (1) فان رجع عن دينه وألا فدهدهوه (2) من فوقه فذهبوا به فلما علوا به الجبل قال اللهم اكفنيهم بما شئت فرَجف (3) بهم الجبل فدهدهوا أجمعون، وجاء الغلام يتلمس حتى دخل على الملك فقال ما فعل أصحابك؟ فقال كفانيهم الله عز وجل فبعثه فى قرقور (4) فقال أذا لججتم به البحر (5) فان رجع عن دينه وألا فغرقوه، فلججوا به البحر فقال الغلام اللهم اكفنيهم بما شئت فغرقوا أجمعون وجاء الغلام يتلمس حتى دخل على الملك فقال ما فعل أصحابك؟ فقال كفانيهم الله عز وجل، ثم قال للملك إنك لست بقاتلى حتى تفعل ما آمرك به، فان أنت فعلت ما آمرك به قتلتنى والا فأنك لا تستطيع قتلى، قال وما هو؟ قال تجمع الناس فى صعيد (6) ثم تصلبنى على جزع فتأخذ سهما من كنانتى (7) ثم قل بسم الله رب الغلام فانت إذا فعلت ذلك قتلتنى، ففعل ووضع السهم فى كبد قوسه (8) ثم رمى فقال بسم الله رب الغلام فوقع السهم فى صدغه فوضع الغلام يده على موضع السهم ومات فقال الناس آمنا برب الغلام، فقيل للملك أرأيت ما كنت تحذر فقد والله نزل بك (9) قد آمن الناس كلهم فأمر بأفواه السكك فخدت فيها الأخاديد (10) وأضرمت فيها النيران وقال من رجع عن دينه فدعوه والا فأقحموه (11) فيها قال فكانوا يتعادون فيها ويتدافعون، فجاءت امرأة بابن لها ترضعه فكأنها تقاعست (12) أن تقع فى النار، فقال الصبى يا أسمه اصبرى فانك على حق

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে সবর সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি আমাদের পূর্ববর্তী জাতির। অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস-সালামের অনুসারী খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের, যেহেতু এর ভেতর এক রাহিবের উল্লেখ আছে। আর রাহিব বলা হয় খৃষ্টান সন্ন্যাসীকে। তবে সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না ঠিক কখন এটি ঘটেছিল। তা জানা না গেলেও ঈমানের উপর অবিচলতা ও ঈমানী পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এর দ্বারা পাওয়া যায়।

বলা হয়েছে, পূর্বকালে এক রাজার একজন জাদুকর ছিল। সেকালে রাজা-বাদশার কাছে জাদুকরদের খুব খাতির ছিল। তখন জাদুবিদ্যারও খুব প্রসার ছিল। মানুষের বিশ্বাস ছিল, জাদুকর ভূত ও ভবিষ্যত এবং শুভ-অশুভ জানে। জাদুকরগণও মানুষের এ বিশ্বাসের খুব সুযোগ নিত। রাজা-বাদশাগণ যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজকীয় কাজকর্মে তাদের পরামর্শ নিত। কোন কাজের পরিণাম শুভ এবং কোন কাজের পরিণাম অশুভ, তা তাদের জিজ্ঞেস করত। তারা তাদের ভোজভাজি ও শাস্ত্রীয় তেলেসমাতির ভিত্তিতে একটা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে দিত। যে জাদুকর যতবেশি ভোজভাজি জানত, তার ততবেশি কদর হত। খুব বেশি দক্ষতা থাকলে রাজদরবারেও স্থান হয়ে যেত। ঠিক রাজ-কবির মত তখন রাজ-জাদুকরেরও একটা পদ ছিল। বর্ণিত এ ঘটনায়ও রাজার একজন রাজ-জাদুকর ছিল। রাজ-জাদুকর বুড়ো হয়ে গেলে রাজার কাছ থেকে একটি বালক চেয়ে নিল, যাতে তাকে জাদুবিদ্যা শিখিয়ে তার জায়গায় বসাতে পারে আর তার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সে রাজ-জাদুকরের দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারে।
বলা হয়েছে, জাদুকরের কাছে বালকটির যাতায়াতপথে এক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী) ছিলেন। একদিন বালকটি তার কাছে বসে যখন তার কথাবার্তা শুনল, তাতে খুব মুগ্ধ হয়ে গেল। তা মুগ্ধ হওয়ারই কথা। কারণ তার কথাবার্তা কাঁচাবয়সী বালকের বাইরের প্রভাবমুক্ত স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনার সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল। সব শিশুই তো স্বভাবধর্ম তথা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর আনুগত্যের স্বভাব নিয়ে জন্ম নেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত বাইরের দূষিত চিন্তা-ভাবনা দ্বারা তার বিশুদ্ধ স্বভাব নষ্ট না হয়ে যায়, ততক্ষণ তাওহীদ ও ইসলামের শিক্ষা সে খুব কবুল করে। বালকটি যদিও নষ্ট পরিবেশে প্রতিপালিত হচ্ছিল, তদুপরি জাদুকরের শিরকী শিক্ষা তার স্বভাবধর্মকে বিকৃত করে ফেলার প্রয়াস পাচ্ছিল, কিন্তু বয়স অল্প হওয়ায় এবং ওই বিকৃত শিক্ষা গ্রহণে সদ্য অবতীর্ণ হওয়ায় তার স্বভাবধর্ম এখনও পুরোপুরি নষ্ট হতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত তা সুস্থ ও শুদ্ধ শিক্ষা গ্রহণের পক্ষে প্রস্তুতই ছিল। সুতরাং সে তা গ্রহণ করে নিল। তাওহীদের শিক্ষা তার অন্তরে বেশ ভালোভাবেই শিকড় গেড়ে নিল। সে একজন পাক্কা ঈমানদার হয়ে উঠল। তার সে ঈমান কতটা পরিপক্ক ছিল, পরবর্তী ঘটনাবলীই তার প্রমাণ।

জাদুকরের কাছে আসা-যাওয়ার পথে রাহিবের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে সে জাদুকর ও নিজ পরিবার উভয়দিক থেকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। জাদুকরের কাছে উপস্থিত হতে দেরি হলে জাদুকর তাকে মারধর করত, আবার জাদুকরের কাছ থেকে ছুটির পর পরিবারের কাছে পৌঁছতে দেরি হলেও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হত। এই জটিলতা থেকে মুক্তির জন্যে রাহিব তাকে এই কৌশল শিক্ষা দিলেন যে, জাদুকরকে বলবে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয়েছে আর পরিবারকে বলবে, জাদুকরের কাছ থেকে ছুটি দেরিতে হয়েছে। সুস্পষ্ট অসত্য কথা। প্রশ্ন হতে পারে, রাহিব তাকে অসত্য বলতে শিক্ষা দিলেন যে? এর উত্তর হল, এখানে দুই মন্দের ভেতরে অপেক্ষাকৃত সহজ মন্দকে অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাকে বলা হয় মন্দের ভালো। অর্থাৎ মিথ্যা বলাটাও পাপ। কিন্তু শিরক ও জাদুশিক্ষা আরও কঠিন পাপ। এই মিথ্যা বলে যদি সে নিজেকে রক্ষা না করে, তবে তাদের জুলুম-নির্যাতনে নির্ঘাত শিরকে লিপ্ত হতে হবে। সেই শিরক থেকে বাঁচার লক্ষে এই সাময়িক মিথ্যার আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। বড় স্বার্থ ও অধিকতর কল্যাণ রক্ষার্থে এরকম কৌশল অবলম্বনের অবকাশ আছে। উদাহরণস্বরূপ- বিবদমান দুই ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার জন্যে যদি মিথ্যা বলার প্রয়োজন পড়ে. শরী'আতের পক্ষ থেকে তা বলার অনুমতি আছে। এমনিভাবে কাউকে অন্যের জুলুম থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলার প্রয়োজন দেখা দিলে তাও বলার অবকাশ আছে।

বলা হয়েছে, একটি বিরাট প্রাণী মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দিল। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, কোথা থেকে একটি সিংহ এসে রাস্তায় বসে গিয়েছিল। সিংহের ভয়ে সেই পথে মানুষ চলাচল করার সাহস পাচ্ছিল না। মানুষকে এই বিপদ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বালকটি এগিয়ে আসল। এর জন্য সে এমন একটি পন্থা বেছে নিল, যাতে একই সংগে মানুষ সিংহের কবল থেকে বাঁচতে পারে আবার রাহিব ও জাদুকরের মধ্যে কে সত্যের উপর আছে তাও প্রমাণিত হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা তার ইচ্ছা পূরণ করলেন। তার ছোঁড়া পাথরের আঘাতে সিংহটি মেরে ফেলে মানুষের চলাচল পথও মুক্ত করে দিলেন, সেইসংগে এটাও প্রমাণ করে দিলেন যে, রাহিবই সত্যের উপর আছে, তার পথই সঠিক।

বস্তুত তার এ ঘটনাটি সেই এলাকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল। অভিজ্ঞ রাহিব বুঝতে পেরেছিলেন সামনে বালকটির কঠিন দিন আসছে। তাকে ঈমানের অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। কেননা নবী-রাসূলগণের ইতিহাস তো আছেই, তাছাড়াও যুগে-যুগে যারা আল্লাহর পথে মানুষকে দা'ওয়াত দিয়েছেন, যারা শিরক ও বিদ'আত এবং কুসংস্কারের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন, যারা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিপরীত কথা বলেছেন, তাদেরকে নিজ জাতির পক্ষ থেকেই কঠিন জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। রাজা-বাদশা ও সমাজপতিগণ তাদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। স্বার্থান্বেষী মহল তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছে। প্রথমত নানারকম প্রলোভন দিয়ে তাদেরকে ক্ষান্ত করার চেষ্টা করেছে। তাতে ব্যর্থ হলে শক্তি আরোপ করেছে। নানারকম কষ্ট দিয়েছে। এমনকি শহীদ পর্যন্ত করে দিয়েছে। বস্তুত দীনী দাওয়াতের পথ কখনওই মসৃণ হয় না। কঠিন ত্যাগ স্বীকার ছাড়া এ পথে সফলতা লাভ হয় না। তো এই বালকের যখন দীনের সত্যতা বুঝে এসে গেছে এবং হিংস্র পশুটিকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তার উচ্চ মর্যাদারও ইশারা পাওয়া গেছে, তখন সে এই সত্যের পতাকা নিয়ে সামনে অগ্রসর হবেই হবে। কোনও শক্তি তাকে নিরস্ত করতে পারবে না। তাকে কঠিন জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে এ উদ্যমী বালক তাতে দমার পাত্র নয়। রাহিব এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঈমানী দৃঢ়তায় বালকটি তারচে' অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যত কঠিন পরীক্ষাই হোক, তাতে সে অবশ্যই উত্তীর্ণ হবে। তিনি চাচ্ছিলেন যেন তার নিজের সেরকম পরীক্ষায় পড়তে না হয়। কেননা জুলুম-নির্যাতনের মুখে নিজেকে সত্যের উপর ধরে রাখা খুব সহজ কথা নয়। সে ক্ষেত্রে ঈমান মস্তবড় ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তিনি সেই ঝুঁকি এড়াতে চাচ্ছিলেন। তাই তাকে বলে দিলেন, তুমি যদি পরীক্ষায় পড়ে যাও, ঈমানের কারণে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হও এবং কে তোমাকে এই পথ দেখিয়েছে তোমার কাছে তা জানতে চাওয়া হয়, তবে সাবধান! আমার নাম কিন্তু বলে দিও না।

ঈমানদার বালকটি আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছায় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করত। তার চিকিৎসায় জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত লোক ভালো হয়ে যেত। তারা ভালো হত আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাতেই। বালকের নিজস্ব কোনও ক্ষমতা ছিল না। তা কারও থাকেও না। রোগ ভালো হয় দেখে কেউ যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়ে, সে লক্ষ্যে বালকটি পরিষ্কারই বলে দিত আমি কাউকে নিরাময় করি না, নিরাময় করেন আল্লাহ তা'আলাই। আমি কেবল আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আই করতে পারি। আমার দু'আ কবুল করে আল্লাহ তা'আলা রোগ ভালো করে দেন।

রোগীর জন্য দু'আ করা ও তাতে রোগ ভালো হয়ে যাওয়া বালকটির পক্ষ থেকে ছিল সৃষ্টির এক বিরাট সেবা। সৃষ্টির সেবা দ্বারা যেমন বিপুল ছওয়াব লাভ হয়, তেমনি মানুষের ভেতর ভালোবাসা ও সম্প্রীতিও প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সম্প্রীতি ও ভালোবাস দীনী দাওয়াতের ক্ষেত্র তৈরি করে। ঈমানে উজ্জীবিত এই বালক এভাবে দেবর মাধ্যমে ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিল এবং মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিল। তার দাওয়াত কবুল করে একের পর এক পথহারা মানুষ আল্লাহর পথে ফিরে আসছিল। সবশেষে রাজার মন্ত্রীও তার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে আল্লাহর পথে ঈমান এনে ফেলে। আর তখনই শুরু হয়ে যায় পরীক্ষা, যার বিবরণ এ হাদীছে দেওয়া হয়েছে।

রাজার তো উচিত ছিল অন্ধ মন্ত্রীকে চক্ষুষ্মান দেখে বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগানো। নিজেকে রব্ব ও প্রতিপালক গণ্য করা এমনিতেও চরম নির্বুদ্ধিতা। আল্লাহর পথের ডাক শুনে তার কর্তব্য ছিল নিজ নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। মন্ত্রীর ইসলামগ্রহণ দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাকে সচেতন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদীরা কোথায় কখন সচেতন হয়েছে? স্বার্থরক্ষার ধান্ধায় তারা চরম অন্ধ ও বধির হয়ে যায়। তাদের সে অন্ধত্ব ও বধিরতা কোনও কিছুতেই ঘোচে না। বস্তুত তারা তা ঘোচাতে চায়ও না। বরং যে সত্যের ধ্বনি তা ঘোচানোর চেষ্টা করে, সেই সত্যকেই যারা স্তব্ধ করে দেওয়ার পায়তারা চালায়। এ রাজাও সেই কায়েমী স্বার্থবাদীদের একজন ছিল। তাই যখন তার পাঠানো পেয়াদারা পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল কিন্তু বালকটির কিছুই হল না, সে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় হেঁটে হেঁটে রাজার কাছে ফিরে আসল, তখনও তার চোখ খুলল না। যখন তার পাঠানো লোকেরা সাগরে ডুবে মারা গেল কিন্তু বালকটির কিছুই হল না; বরং সহী-সালামতে রাজার কাছে ফিরে আসল, তখনও তার হুঁশ হল না। যখন বালকটি নিজে থেকে তাকে হত্যা করার কৌশল শিখিয়ে দিল এবং তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণেরও পরামর্শ দিল, তখনও তার অন্তরে কৌতূহল জাগল না। এমনকি যখন আল্লাহর নাম নিয়ে তীর ছুঁড়ল এবং তাতে বিদ্ধ হয়ে বালকটি শহীদ হয়ে গেল, তখনও তার চৈতন্যোদয় হল না। তখনও তার ভাববার অবকাশ হল না যে, প্রকৃতপক্ষে সেই আল্লাহই সবকিছু করেন, যাঁর প্রতি এ বালকটি ঈমান আনার দা'ওয়াত দিচ্ছে। অথচ এই ঘটনা উপস্থিত লোকজনের অন্তরে ঠিকই নাড়া দিয়েছিল। তারা তখনই দলে দলে ঈমান এনেছিল। তারা সমস্বরে বলে উঠেছিল, আমরা এই বালকের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম। অন্ততপক্ষে তাদের ঈমান আনয়ন দেখেও সে বিবেকের একটু তাড়া বোধ করতে পারত। কিন্ত তাও করল না। উল্টো তাদেরকে নির্যাতন করল এবং আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করল।

যাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল, তাদের মধ্যে এক মহিলা ও তার শিশুও ছিল। শিশুটি ছিল খুবই ছোট। তখনও তার কথা বলার বয়স হয়নি। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তার বয়স ছিল মাত্র সাত মাস। তার মা যখন আগুনে পড়তে ইতস্তত করছিল, তখন শিশুটি তার মাকে ডেকে সাহস যোগায়। সে বলে ওঠে, মা তুমি ধৈর্য ধর। কেননা তুমি সত্যের উপর আছ ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহর কাছে প্রভৃত ছওয়াবের অধিকারী হবে।

এই শিশুর কথা বলাটা ছিল একটি অলৌকিক ঘটনা। কথা বলার বয়স হওয়ার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে শিশুর আল্লাহ তা'আলা ক্ষণিকের জন্যে বাকশক্তি আগেই শিশুর মুখে বাকশক্তি দান করা আল্লাহ তা'আলার পক্ষে অসম্ভব কিছুই নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে শিশুরমুখে আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষণিকের জন্য বাকশক্তি দান করেছেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুতী রহ এরকম দশটি শিশুর উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে এই শিশুও একটি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের পরপরই কথা বলার ঘটনা তো সকলেরই জানা। কুরআন মাজীদেও তা বর্ণিত হয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছের প্রধান শিক্ষা তো ধৈর্য সম্পর্কে। বিশেষত দীনের পথে শত্রুদের পক্ষ থেকে যে জুলুম-নির্যাতন আসে, তাতে ধৈর্যধারণ করা এবং ঈমান ও সত্যের উপর অবিচলিত থাকা নবীগণের শান। প্রত্যেক মু'মিন ও দাওয়াতদাতার কর্তব্য এই শান ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করা।

খ. বালক-বয়সেই দীন শিক্ষায় মনোনিবেশ করা উচিত। শৈশবের শিক্ষা মনে গভীর রেখাপাত করে এবং তা বেশি দিন স্মরণ থাকে। তাছাড়া শৈশবের সুশিক্ষা মানুষের স্বভাবগত গুণের মত হয়ে যায়। ফলে কর্মজীবনে সেই শিক্ষা অনুযায়ী চলা তার পক্ষে সহজ হয়।

গ. বালকের পাথর নিক্ষেপে সিংহের মৃত্যু দ্বারা প্রমাণ হয় বুযুর্গানে দীনের কারামত সত্য। বিভিন্ন
রোগীকে ভালো করাও ছিল তার কারামত।

ঘ. কারও কোনও কাজে অন্যের বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকলে তার উচিত বিষয়টা পরিষ্কার করে দেওয়া, যাতে লোকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পায়, যেমন বালকটি রোগ নিরাময়ের বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, এটা আমি করি না, আল্লাহ তা'আলাই করেন (আমি কেবল আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আই করে থাকি)।

ঙ. শত্রুর জুলুম-নির্যাতনে সত্যে অবিচলিত থাকার ব্যাপারে কারও নিজের প্রতি যদি পুরোপুরি আস্থা না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে তার জুলুম-নির্যাতন এড়ানোর পথ খোঁজা জায়েয আছে। যার হিম্মত ও মনোবল উঁচু, বলাবাহুল্য সে তো প্রাণ দিতেও কুণ্ঠিত হবে না। এটা 'আযীমাত বা আমলের উচ্চতর স্তর। বালকটির আমল ছিল এই স্তরের। প্রথমটি অবকাশের স্তর। সে স্তর অবলম্বনেও দোষ নেই। যেমন নবুওয়াতের মিথ্যা দাবিদার মুসায়লিমা আল-কাযযাব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুজন সাহাবীকে পাকড়াও করে একজনকে বলেছিল, মুহাম্মাদ সম্পর্কে তুমি কী বল? সাহাবী উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি আল্লাহর রাসূল। তারপর জিজ্ঞেস করেছিল, আমার সম্পর্কে কী বল? তিনি বলেছিলেন, তুমিও। সে তখন তাকে ছেড়ে দেয়। অন্যজনকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি মুহাম্মাদ সম্পর্কে কী বল? তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর রাসূল। তারপর জিজ্ঞেস করেছিল, আমার সম্পর্কে কী বল? তিনি বলেছিলেন, জানি না। সে একের পর এক ওই প্রশ্ন করতে থাকে। তিনি প্রতিবারই বলতে থাকেন, আমি জানি না। শেষে মুসায়লিমা তার একেকটি অঙ্গ কাটতে শুরু করে। কিন্তু তিনি ঈমানে অবিচল থাকেন। তাদের এ বৃত্তান্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, তাদের একজন আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশকে গ্রহণ করেছে, আর দ্বিতীয় জন সত্যের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছে। তাকে সাধুবাদ জানাই। ইবন কাছীর রহঃ এ হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান