মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বনী ইসরাঈল ও অতীতের অন্যান্য জাতিসমূহের ঘটনাবলী, আইয়্যামূল আরব তথা আরবদের ইতিহাস ও তাঁদের জাহিলিয়াত সংক্রান্ত ঘটনাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪
বনী ইসরাঈল ও অতীতের অন্যান্য জাতিসমূহের ঘটনাবলী, আইয়্যামূল আরব তথা আরবদের ইতিহাস ও তাঁদের জাহিলিয়াত সংক্রান্ত ঘটনাবলী অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: সেই তিন ব্যক্তির ঘটনা যাঁরা গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং গুহার প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল
(১৪) ইবন 'উমার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এক ফারাক চাল (প্রায় পনের সের)-এর মালিকের মত হওয়ার সামর্থ্য রাখে, সে যেন ঐরূপ হয়ে যায় (বা হওয়ার চেষ্টা করে)। সাহাবীগণ (রা) জিজ্ঞেস করেন, এক ফারাক চালের মালিক কে? রাসূল (ﷺ) বলেন, তিন ব্যক্তি (একদা সফরে) বের হন। হঠাৎ তাঁদের উপর আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। তাঁরা একটি পাহাড়ের গুহার মধ্যে আশ্রয় নেন। পাহাড়ের উপর দিক থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে এবং তাঁদের প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা অনেক চেষ্টা-তদবীর করেন, কিন্তু প্রস্তরখণ্ড সরাতে সক্ষম হননি। তখন তাঁরা পরস্পর একে অপরকে বললেন, তোমরা নিদারুণ বিপদে আপতিত। সুতরাং প্রত্যেকের উচিত তার জীবনের সর্বোত্তম আমলের উসিলা দিয়ে দোয়া করা; হতে পারে আল্লাহ্ তা'আলা এর বদৌলতে আমাদেরকে এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ইয়া আল্লাহ্, আপনি জানেন যে, আমার পিতা-মাতা উভয়ই অত্যন্ত বৃদ্ধ। আমিই তাঁদের জন্য ছাগীর দুধ দোহন করে পান করাতাম (এটি ছিল তাঁদের রাতের খাবার বা পানীয়; তো একদিন কাঠ সংগ্রহের কাজে অনেক দূরে চলে যাওয়ায় রাতে ফিরে আসতে বেশ বিলম্ব হয়)। আমি এসে দেখি তাঁরা দু'জনই ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি তাদের জন্য হাতে দুধের পেয়ালা নিয়ে দাঁড়িয়ে রাতভর জেগে রইলাম। তাঁদের পূর্বে অন্য কাউকে দুধ দিতে আমার পছন্দ হচ্ছিল না; আবার তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলাও ভাল মনে হচ্ছিল না। অন্যদিকে আমার সন্তানরা ক্ষুধার জ্বালায় আমারই পাশে চিৎকার করছিল। সুতরাং (হে আল্লাহ্।) তুমি যদি জেনে থাক যে, এই কাজটি, আমি তোমারই ভয়ে করেছিলাম, তাহলে এই বিপদ আমাদের থেকে দূর করে দাও। এতে প্রস্তরখণ্ডটি নড়াচড়া করলো (এবং কিছুটা ফাঁকা হলো)।
দ্বিতীয়জন বললো, ইয়া আল্লাহ্, আপনি জানেন যে, আমার এক চাচাত বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে আপনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। আমি তার সাথে মিলনের আকাংখা প্রকাশ করলাম। কিন্তু সে একশত দীনার না দেওয়া পর্যন্ত রাজি হল না। তাই আমি একশত দীনার সংগ্রহ করলাম এবং তা তাকে দিলাম (সে রাজী হল)। অবশেষে আমি যখন তার উপর উঠে বসলাম, তখন সে বললো, আল্লাহকে ভয় করো এবং অবৈধভাবে আমার সতীত্ব হরণ করো না। তখনই আমি তাকে ছেড়ে উঠে গেলাম। হে আল্লাহ্, আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনারই ভয়ে এইরূপ করেছিলাম, তাহলে আমাদেরকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। তখন প্রস্তরখণ্ডটি হেলে গেল এবং আকাশ দৃষ্টিগোচর হল।
তৃতীয়জন বললো, ইয়া আল্লাহ্, আপনি জানেন যে, আমি একদা মজুরীর বিনিময়ে (এক ফারাক চাল এর বিনিময়ে) আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। দিন শেষে সন্ধ্যাবেলায় আমি তার মজুরী পেশ করলাম, কিন্তু সে তা গ্রহণে অস্বীকার করে চলে গেল। আমি তাকে খুঁজে পেলাম না। আমি তার মজুরীটা ব্যবসায়ে খাটালাম, তা বৃদ্ধি পেল এবং অবশেষে তা দিয়ে একটি গরু খরিদ করলাম এবং রাখালও রাখলাম। অবশেষে একদা দীর্ঘদিন পর সে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমাকে বললো, আল্লাহকে ভয় কর, আমার পারিশ্রমিক প্রদান কর এবং জুলুম করো না। আমি তাকে বললাম, ঐ গরুর পাল ও রাখালের দিকে যাও এবং ঐসব নিয়ে যাও। সে বললো, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সাথে উপহাস করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না। পরিশেষে সে সবকিছু নিয়ে চলে গেল। ইয়া আল্লাহ্, আপনি যদি জেনে থাকেন যে, এ সবই আমি করেছি আপনার সন্তুষ্টির আশায় এবং আপনার ভয়ে, তাহলে আমাদেরকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। এবার প্রস্তরখণ্ড সরে গেল এবং তাঁরা গুহা থেকে বের হয়ে চলে গেল।
(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ ও অন্যান্য।)
كتاب قصص الماضين من بنى اسرائيل وغيرهم
باب ذكر قصة الثلاثة الذين آوو الى الغار فانطبق عليهم
عن ابن عمر (8) قال قال رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم من أستطاع منكم أن يكون مثل صاحب أنه كان لى أبوان شيخان كبيران وكنت أحلب حلابهما فأجيئهما وقد ناما، فكنت أبيت قائما وحلابهما على يدى أكره أن ابدأ باحد قبلهما أو أن أوقظهما من نومهما وصببّى يتضاّغْون حولى (2) فان كنت تعلم انى انما فعلته من خشيتك فافُرج عنا، قال فتحركت الصخرة، قال (وقال الثانى) اللهم أنك تعلم أنه كانت لى ابنة عم لم يكن شئ مما خلقت أحب الىّ منها فسمتها نفسها (3) فقالت لا والله دون مائة دينار فجمعتها ودفعتها اليها حى أذا جلست منها مجلس الرجل فقالت أتق الله ولا تفض الخاتم (4) ألا بحقه، فقمت عنها: فان كنت تعلم انما فعلته من خشيتك فافرج عنا، قال فزالت الصخرة حتى بدت السماء (وقال الثالث) اللهم أنك تعلم انى كنت استأجرت أجيرا بفرق من أرز فلما أمسى عرضت عليه حقه فأبى أن يأخذه وذهب وتركنى، فتحرجت منه وثمّرته له وأصلحته حتى أشتريت منه بقرا وراعيها فلقينى بعد حين فقال اتق الله وأعطنى أجرى ولا تظلمنى، فقلت أنطلق الى ذلك البقر وراعيها فخذها، فقال أتق الله ولا تسخر بى فقلت انى لست أسخر بك، فانطلق فأستاق ذلك، فان كنت تعلم أنى انما فعلته أبتغاء رضاتك خشية منك فافرُج عنا فتدحرجت الصخرة فخرجوا يمشون
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ১৪ | মুসলিম বাংলা