মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

পোশাক-পরিচ্ছেদ ও সাজ-সজ্জা

হাদীস নং: ৪৫
পোশাক-পরিচ্ছেদ ও সাজ-সজ্জা
নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ সংক্রান্ত বিস্তারিত হাদীস।
৪৫। আমার কাছে আফফান (র) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার কাছে হাম্মাম বর্ণনা করেছে। তিনি বলেন, আমার কাছে কাতাদা (র) আবূ শায়খ হুনাঈ (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আমি মু'আবিয়া (রা)-এর নিকট রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবীগণের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। মু'আবিয়া (রা) বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রেশমের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই শুনেছি। তিনি বললেন, আমিও এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। তারপর তিনি বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তিত সামান্য অংশ (যা অন্য কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হয়, তা ব্যতীত স্বর্ণ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, আমিও এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। তারপর বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সওয়ারীতে চিতাবাঘের চামড়া বিছিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, আমিও এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। তারপর বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহ তা'আলার শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রূপার পাত্র দ্বারা পান করতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, আমিও এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। এরপর বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহ তা'আলার শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ্জ ও উমরা একসঙ্গে আদায় করতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেন, এটা তো আমরা জানি না। তিনি বললেন, শোন। এটাও ঐসবের মত। অর্থাৎ এক সঙ্গে হজ্জ ও উমরা আদায় করা যাবে না। (তবে এটা অধিকাংশ আলিমগণের মতের বিপরীত।)
(হাদীসটি অন্যত্র পাওয়া যায় নি। এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।)
كتاب اللباس والزنية
باب أحاديث جامعة لأمور من ذلك منهي عنها
45- حدثنا عفان قال ثنا همام قال ثنا قتادة عن أبي شيخ الهنائي قال كنت في ملأ من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم عند معاوية فقال معاوية أنشدكم الله أتعلمون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن لبس الحرير؟ قالوا اللهم نعم، قال وأنا أشهد، قال أنشدكم الله تعالى أتعلمون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن لبس الذهب إلا مقطعا؟ قالوا اللهم نعم، قال وأنا أشهد، قال أنشدكم الله تعالى أتعلمون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ركوب النمور قالوا اللهم نعم، قال وأنا أشهد، قال أنشدكم الله تعالى أتعلمون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن الشرب في آنية الفضة؟ قالوا اللهم نعم، قال وأنا أشهد، قال أنشدكم الله تعالى أتعلمون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن جمع بين حج وعمرة؟ قالوا أما هذا فلا، قال أما أنها معهن

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর চামড়াকে বিছানা বানাতে কিংবা পশুর পিঠে বিছিয়ে তার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেকালে অনারবরা এটা করত। এটা এক রকম অহমিকা। বিলাসিতাও বটে। অহংকারী লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এ জাতীয় বিলাসিতা সেকালেও করত, এখনও করে থাকে। গৌরব দেখানো ভালো নয়। বিলাসিতাও পসন্দনীয় নয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে দিয়েছেন যে, তারা যেন বাঘ বা অন্য কোনও হিংস্র পশুর চামড়াকে বিছানা বানিয়ে তার উপর না বসে কিংবা তাতে সওয়ার না হয় অর্থাৎ তা দ্বারা সওয়ারীর জিন না বানায়। সারকথা একজন মুমিনের দৃষ্টি থাকবে সর্বদা আখিরাতের দিকে। কীভাবে আখিরাতের মুক্তিলাভ হতে পারে, তার যাবতীয় কাজকর্ম সে লক্ষ্যেই সম্পাদিত হবে। সে ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে আখিরাত থেকে উদাসীন হবে না। তার পোশাক-আশাক ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী হবে সাদামাটা। এসব বস্তু অতিরিক্ত দামি বা বিলাসিতাপূর্ণ হলে অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এগুলো মানুষের সেবক থাকে না, উল্টো মানুষ এর সেবক হয়ে যায়। এভাবে মানুষ আখিরাত থেকে উদাসীন হয়ে এসব সামগ্রী সংগ্রহ ও এর সেবাযত্নে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা কিনা মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থি এবং দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মুমিনদের উচিত সর্বপ্রকার বিলাসসামগ্রী ও অহমিকাজনক বস্তুর ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ৪৫ | মুসলিম বাংলা