কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

১৫. কর-খাজনা, প্রশাসনিক দায়িত্ব ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংক্রান্ত

হাদীস নং: ৩০৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৭০
কর-খাজনা, প্রশাসনিক দায়িত্ব ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংক্রান্ত
১৭৪. যমীন খণ্ড করে বন্দোবস্ত দেওয়া।
৩০৫৯. হাফস ইবনে উমর ও মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ ইবনে হাসসান আনবারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার নিকট আমার দাদী এবং নানী, যাঁদের যথাক্রমে নাম হলোঃ সাফিয়া এবং দুহায়বা, যারা উলায়বার কন্যা ছিলেন, তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেছেন যে, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট হাযির হই। তিনি বলেনঃ আমাদের সাথী হারিছ ইবনে হাসসান-যিনি বকর ইবনে ওয়াইল গোত্রের তরফ হতে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আসেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আসেন। এরপর তিনি তাঁর নিকট নিজে এবং তার কওমের পক্ষ হতে বায়’আত গ্রহণ করেন।

অতঃপর তিনি বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের এবং বনু তামীম গোত্রের মধ্যকার সীমান্ত ’দুহনা’ নামক স্থানকে চিহ্নিত করে দিন, যা অতিক্রম করে মুসাফির এবং সামনে অগ্রগামী ব্যক্তি ব্যতীত, ওদের কেউ-ই যেন আমাদের নিকটে না আসতে পারে। তখন তিনি বলেনঃ হে বৎস! তার জন্য ’দুহনাকে’ লিখে দাও।

রাবী বলেনঃ যখন আমি দেখতে পাই যে, তিনি ’দুহনা’ নামক স্থানটি তাকে দিয়ে দিলেন, তখন আমার খুব দুঃখ হয়। কেননা দুহনা ছিল আমার জন্মভূমি। তখন আমি বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ ব্যক্তি ইনসাফের ভিওিতে আপনার নিকট সীমানা চিহ্নিত করার জন্য আবেদন করেনি। কেননা দুহনা হলো উট বাঁধার স্থান ও বকরী চরাবার স্থান এবং এর পেছনেই বনু তামীমের স্ত্রীলোক ও বাচ্চারা বসবাস করে।

এতদশ্রবণে তিনি বলেনঃ হে বৎস! একটু অপেক্ষা কর। এ দুর্বল বৃদ্ধা ঠিকই বলেছে। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তারা একে অপরের পানি ও গাছপালা হতে উপকার নিতে পারে। তাদের উচিত, বিপদের সময় একে অন্যের সাহায্য করা।
كتاب الخراج والإمارة والفىء
باب فِي إِقْطَاعِ الأَرَضِينَ
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، وَمُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، - الْمَعْنَى وَاحِدٌ - قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حَسَّانَ الْعَنْبَرِيُّ، حَدَّثَتْنِي جَدَّتَاىَ، صَفِيَّةُ وَدُحَيْبَةُ ابْنَتَا عُلَيْبَةَ وَكَانَتَا رَبِيبَتَىْ قَيْلَةَ بِنْتِ مَخْرَمَةَ وَكَانَتْ جَدَّةَ أَبِيهِمَا أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُمَا قَالَتْ، قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ تَقَدَّمَ صَاحِبِي - تَعْنِي حُرَيْثَ بْنَ حَسَّانَ وَافِدَ بَكْرِ بْنِ وَائِلٍ - فَبَايَعَهُ عَلَى الإِسْلاَمِ عَلَيْهِ وَعَلَى قَوْمِهِ ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُبْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ بَنِي تَمِيمٍ بِالدَّهْنَاءِ أَنْ لاَ يُجَاوِزَهَا إِلَيْنَا مِنْهُمْ أَحَدٌ إِلاَّ مُسَافِرٌ أَوْ مُجَاوِرٌ . فَقَالَ " اكْتُبْ لَهُ يَا غُلاَمُ بِالدَّهْنَاءِ " . فَلَمَّا رَأَيْتُهُ قَدْ أَمَرَ لَهُ بِهَا شُخِصَ بِي وَهِيَ وَطَنِي وَدَارِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ لَمْ يَسْأَلْكَ السَّوِيَّةَ مِنَ الأَرْضِ إِذْ سَأَلَكَ إِنَّمَا هِيَ هَذِهِ الدَّهْنَاءُ عِنْدَكَ مُقَيَّدُ الْجَمَلِ وَمَرْعَى الْغَنَمِ وَنِسَاءُ بَنِي تَمِيمٍ وَأَبْنَاؤُهَا وَرَاءَ ذَلِكَ فَقَالَ " أَمْسِكْ يَا غُلاَمُ صَدَقَتِ الْمِسْكِينَةُ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ يَسَعُهُمَا الْمَاءُ وَالشَّجَرُ وَيَتَعَاوَنَانِ عَلَى الْفُتَّانِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে এক মুসলিমকে অপর মুসলিমের ভাই বলা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও আছেঃ- إنّما المؤمنون إخوة ‘মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১০

এর দ্বারা দুই মুসলিমের ঈমানী সম্পর্ককে দুই ব্যক্তির ভ্রাতৃসম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দুই ব্যক্তি যখন একই মূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতা অভিন্ন হয়, তখন তারা ভাই ভাই হয়। তেমনি যারা আদর্শগতভাবে একই মূল তথা ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের পরস্পরকেও 'ভাই ভাই' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই ভাই ভাই নামে অভিহিত হওয়ার বেশি উপযুক্ত। কেননা একই পিতা-মাতা-সঞ্জাত হওয়ার দ্বারা যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তা ক্ষণস্থায়ী। এ জীবন তো অল্পদিনের, যা মৃত্যুতেই শেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ঈমান ও ইসলামভিত্তিক সম্পর্ক চিরস্থায়ী, যেহেতু ঈমান ও ইসলাম দ্বারা আখেরাতের অনন্ত জীবন লাভ হয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে মুসলিম ব্যক্তির কয়েকটি কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার আগে ভূমিকাস্বরূপ المسلم أخو المسلم (এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই)- এ নীতিবাক্যটি বলে নিয়েছেন।কেননা মন-মস্তিষ্কে এ ভ্রাতৃত্ববোধ সঞ্চারিত হয়ে গেলে মুসলিম ব্যক্তি সে কর্তব্যসমূহ পালনে প্রস্তুত থাকবে। বস্তুত সে কর্তব্যসমূহ এ ভ্রাতৃত্বেরই দাবি।সে দাবির কারণে মুসলিম ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তা পালন করার কথা। আলাদাভাবে তাকে সেসব কর্তব্যের কথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু উম্মতের এক পরম দরদী শিক্ষকও ছিলেন, তাই ছাত্র পড়ানোর মত করে তিনি এক এক করে সেগুলো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যাতে উম্মতের চরম গাফেল ব্যক্তিও মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আপন কর্তব্য সম্পর্কে অনবহিত না থাকে এবং তা পালন করতে কোনওরূপ অবহেলা না করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ মুসলিম উম্মাহকে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করে ।

খ. আমরা কেউ একে অন্যের প্রতি জুলুম করব না। অর্থাৎ অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের উপর আঘাত করব না। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী।

গ. কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে তার সাহায্য না করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত নয়; বরং তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী: