কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
১৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৩০৯০
আন্তর্জাতিক নং: ৩১০৪
জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
১৯০. রোগী দেখার সময় তার রোগ মুক্তির জন্য দুআ করা সম্পর্কে।
৩০৯০. হারূন ইবনে আব্দিল্লাহ (রাহঃ) .... আয়িশা বিনতে সা’দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁর পিতা বর্ণনা করেছেনঃ মক্কাতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (ﷺ) আমাকে দেখতে আসেন এবং তাঁর পবিত্র হাত আমার কপালের উপর রাখেন। এরপর তিনি দুআ করেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি সা’দকে রোগমুক্ত করুন এবং তাঁর হিজরত পূর্ণ করুন।
كتاب الجنائز
باب الدُّعَاءِ لِلْمَرِيضِ بِالشِّفَاءِ عِنْدَ الْعِيَادَةِ
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا مَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا الْجُعَيْدُ، عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ سَعْدٍ، أَنَّ أَبَاهَا، قَالَ اشْتَكَيْتُ بِمَكَّةَ فَجَاءَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُنِي وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى جَبْهَتِي ثُمَّ مَسَحَ صَدْرِي وَبَطْنِي ثُمَّ قَالَ " اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا وَأَتْمِمْ لَهُ هِجْرَتَهُ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এটি একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশবিশেষ। বিস্তারিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা জানা যায়, হযরত সা'দ রাযি. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মক্কা মুকাররামায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে যান। হযরত সা'দ রাযি. তাঁকে দেখে কেঁদে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমার ভয় হচ্ছে না জানি আমি যে ভূমি থেকে হিজরত করেছি সেখানেই আমার মৃত্যু হয়। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তাঁর কপালে নিজের পবিত্র হাতখানি রাখেন। তারপর সে হাত তাঁর বুক ও পেটে বুলিয়ে দেন আর দু'আ করতে থাকেন- اَللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا (হে আল্লাহ! সা'দকে আরোগ্য দান করুন)। হযরত সা'দ রাযি. বলেন যে, তখন থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমি আমার বুকের ভেতর তাঁর হাতের শীতলতা অনুভব করছি।
হযরত সা'দ রাযি. খুব সম্পদশালী ছিলেন। তাঁর তখন সন্তান বলতে কেবল এক কন্যাই ছিল। তাঁর নাম আয়েশা। এজন্য তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার ওয়ারিছ হবে আমার একমাত্র কন্যা। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদাকা করে দেব? তিনি বললেন, না। হযরত সা'দ রাযি. বললেন, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। হযরত সা'দ রাযি. বললেন, তবে তিন ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ! তাও তো বেশি। তুমি যদি তোমার ওয়ারিছদের সচ্ছল রেখে যাও, তবে সেটা এর চেয়ে শ্রেয় যে, তুমি তাদেরকে অভাবগ্রস্ত রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই ছাওয়াব পাবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দেবে তাতেও।
হযরত সা'দ রাযি.-এর ব্যাকুলতা দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার সঙ্গীদের হিজরত কার্যকর করো। তাদেরকে তাদের পেছন দিকে ফিরিয়ে দিয়ো না।
এ দু'আয় হযরত সা'দ রাযি. আশাবাদি হয়ে ওঠেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার বন্ধুদের পরও থেকে যাব? তিনি বললেন, তুমি যদি থেকে যাও (অর্থাৎ বেঁচে থাক) আর যে-কোনও সৎকর্ম কর, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। সম্ভবত তুমি তাদের পরেও থাকবে। ফলে তোমার দ্বারা বহু লোক উপকৃত হবে এবং অন্যরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। তিনি এরপর আরও ৪০ বছর বেঁচে ছিলেন।
(সহীহ বুখারী : ৫৬৫৯; সহীহ মুসলিম: ১৬২৮; মুসনাদে আহমাদ: ১৪৪০; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ : ৪৯৯; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৬২৮৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৮১; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ২৩৫৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৬৫৮৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রোগী দেখতে যাওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
খ. সফর অবস্থায় কোনও সফরসঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষভাবে তার খোঁজখবর রাখা উচিত।
গ. রোগী দেখতে গিয়ে তার নিরাময়ের জন্য দু'আ করা উচিত।
ঘ. রোগীর নাম নিয়ে এভাবে অন্তত তিনবার দু'আ করা উত্তম যে, হে আল্লাহ! তুমি অমুককে নিরাময় দান করো।
হযরত সা'দ রাযি. খুব সম্পদশালী ছিলেন। তাঁর তখন সন্তান বলতে কেবল এক কন্যাই ছিল। তাঁর নাম আয়েশা। এজন্য তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার ওয়ারিছ হবে আমার একমাত্র কন্যা। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদাকা করে দেব? তিনি বললেন, না। হযরত সা'দ রাযি. বললেন, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। হযরত সা'দ রাযি. বললেন, তবে তিন ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ! তাও তো বেশি। তুমি যদি তোমার ওয়ারিছদের সচ্ছল রেখে যাও, তবে সেটা এর চেয়ে শ্রেয় যে, তুমি তাদেরকে অভাবগ্রস্ত রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই ছাওয়াব পাবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দেবে তাতেও।
হযরত সা'দ রাযি.-এর ব্যাকুলতা দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার সঙ্গীদের হিজরত কার্যকর করো। তাদেরকে তাদের পেছন দিকে ফিরিয়ে দিয়ো না।
এ দু'আয় হযরত সা'দ রাযি. আশাবাদি হয়ে ওঠেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার বন্ধুদের পরও থেকে যাব? তিনি বললেন, তুমি যদি থেকে যাও (অর্থাৎ বেঁচে থাক) আর যে-কোনও সৎকর্ম কর, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। সম্ভবত তুমি তাদের পরেও থাকবে। ফলে তোমার দ্বারা বহু লোক উপকৃত হবে এবং অন্যরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। তিনি এরপর আরও ৪০ বছর বেঁচে ছিলেন।
(সহীহ বুখারী : ৫৬৫৯; সহীহ মুসলিম: ১৬২৮; মুসনাদে আহমাদ: ১৪৪০; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ : ৪৯৯; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৬২৮৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৮১; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ২৩৫৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৬৫৮৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রোগী দেখতে যাওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
খ. সফর অবস্থায় কোনও সফরসঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষভাবে তার খোঁজখবর রাখা উচিত।
গ. রোগী দেখতে গিয়ে তার নিরাময়ের জন্য দু'আ করা উচিত।
ঘ. রোগীর নাম নিয়ে এভাবে অন্তত তিনবার দু'আ করা উত্তম যে, হে আল্লাহ! তুমি অমুককে নিরাময় দান করো।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)