আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪১- হিবা তথা উপহার প্রদান, এর ফযীলত ও এতে উৎসাহ প্রদান

হাদীস নং: ২৪২৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৯৬
- হিবা তথা উপহার প্রদান, এর ফযীলত ও এতে উৎসাহ প্রদান
১৬২১. কোন কারণে হাদিয়া গ্রহণ না করা।
উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে হাদিয়া (প্রকৃতই) হাদিয়া ছিল, কিন্তু আজকাল তা উৎকোচে পরিনত হয়েছে।
২৪২৪। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ) এর একজন সাহাবী সাআব ইবনে জাছ্ছামা লাইছী (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তিনি একটি বন্য গাধা হাদিয়া দিয়েছিলেন। তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় আবওয়াহ কিংবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাই তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন। সাআব (রাযিঃ) বলেন, যখন তিনি আমার চেহারায় হাদিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি বললেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। এ কারণ ব্যতীত তোমার হাদিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার কোন কারণ নেই।
كتاب الهبة وفضلها والتحريض عليها
باب مَنْ لَمْ يَقْبَلِ الْهَدِيَّةَ لِعِلَّةٍ وَقَالَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ العَزِيزِ: «كَانَتِ الهَدِيَّةُ فِي زَمَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَدِيَّةً، وَاليَوْمَ رِشْوَةٌ»
2596 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ، أَنَّهُ سَمِعَ الصَّعْبَ بْنَ جَثَّامَةَ اللَّيْثِيَّ - وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يُخْبِرُ أَنَّهُ أَهْدَى لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارَ وَحْشٍ وَهُوَ بِالأَبْوَاءِ - أَوْ بِوَدَّانَ - وَهُوَ مُحْرِمٌ، فَرَدَّهُ، قَالَ صَعْبٌ: فَلَمَّا عَرَفَ فِي وَجْهِي رَدَّهُ هَدِيَّتِي قَالَ: «لَيْسَ بِنَا رَدٌّ عَلَيْكَ وَلَكِنَّا حُرُمٌ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে ছিলেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হযরত সা'ব ইবন জাছ্ছামা রাযি. একটি বন্য গাধা, সম্ভবত জেব্রা, তাঁকে হাদিয়া দিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় সেটি জবাই করা ছিল এবং তিনি তার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা গ্রহণ করলেন না। এতে হযরত সা'ব রাযি. দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে কি কোনও কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নারাজ? না হয় তার হাদিয়া ফেরত দিলেন কেন? খুবসম্ভব তখনও পর্যন্ত তার এ মাসআলা জানা ছিল না যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা কিংবা শিকারের কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে এভাবে পশু শিকার করে তার গোশত খাওয়াও তার জন্য হালাল নয়।

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন হাদিয়া ফেরত দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য সাহাবায়ে কেরাম যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন, তেমনি তিনিও তাদেরকে গভীরভাবে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। প্রিয় সাহাবীর মনোবেদনা দীর্ঘ হতে দিলেন না। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, দেখো, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। কেবল এ কারণেই তোমার এ হাদিয়া ফেরত দিয়েছি, অন্য কোনও কারণে নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুহরিম ব্যক্তির জন্য পশু শিকার করা ও শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়।

খ. বুনো গাধা খাওয়া জায়েয।

গ. হাদিয়া দেওয়া ও গ্রহণ করা সুন্নত, যদি না তাতে নিষিদ্ধতার কোনও কারণ থাকে।

ঘ. অকারণে হাদিয়া ফেরত দেওয়া উচিত নয়। তাতে হাদিয়াদাতা মনে কষ্ট পায়।

ঙ. কারও দিক থেকে কেউ মনে কষ্ট পেলে যত দ্রুত সম্ভব তার সে কষ্ট দূর করে দেওয়া উচিত।

চ. কারও আচরণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তার উচিত সে ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)