আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৩. ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের বিবরণ

হাদীস নং: ২১৯৯
আন্তর্জাতিক নং: ২১৯৯
ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের বিবরণ
অচিরেই অন্ধকার রাতের টুকরার মত ফিতনা আসবে।
২২০২. হাসান ইবনে আলী খাল্লাল (রাহঃ) ...... আলকামা ইবনে ওয়াইল ইবনে হুজর তার পিতা ওয়াইল ইবনে হুজর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল আমাদের উপর যদি এমন আমির নিযুক্ত হয় যারা আমাদের হক ফিরিয়ে রাখে অথচ তাদের নিজেদের হক আমাদের থেকে চায় তবে এমতাবস্থতায় আমরা কি করব বলে আপনি মনে করেন?

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা তাদের কথা শুনবে এবং তাদের আনুগত্য করবে। কেননা, যে দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর ন্যস্ত এর জবাবদিহী করতে হবে তাদেরই আর তোমাদের উপর যে দায়িত্বের বোঝা ন্যস্ত এর জবাবদিহী করতে হবে তোমাদেরই।
أبواب الفتن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَابُ مَا جَاءَ سَتَكُونُ فِتَنٌ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلاَّلُ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجُلٌ سَأَلَهُ فَقَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَمْنَعُونَا حَقَّنَا وَيَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোনও শাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, কিন্তু তাদের কাছে নিজের হক দাবি করে, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী, সে সম্পর্কেই এ হাদীছ। শাসকের হক ও অধিকার হল জনগণের আনুগত্য, জিহাদ ও ওইসকল কাজ, যা তাদের সহযোগিতা ছাড়া করা সম্ভব নয়, তাতে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা। আর জনগণের হক হল শাসকের ন্যায় ও ইনসাফসম্মত শাসন, তাদের জান-মালের নিরাপত্তাবিধান, তাদের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ও তাদের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির ব্যবস্থাকরণ, আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা এবং দীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা।

‘আমীর’ শব্দটির অর্থ ব্যাপক। আঞ্চলিক সর্বনিম্ন শাসনকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক পর্যন্ত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। জনগণের কর্তব্য এদের সকলেরই আনুগত্য করা। এখন কোনও শাসক-প্রশাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, কিন্তু নিজেদের হক পুরোপুরি পেতে চায়, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী? সাহাবী হযরত সালামা ইবন ইয়াযীদ রাযি. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে এর কোনও উত্তর দেননি। হয়তো ওহীর অপেক্ষা করেছিলেন অথবা ইচ্ছাকৃতই প্রশ্নটি উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি সে উপেক্ষা দ্বারা সম্ভবত বোঝাতে চাচ্ছিলেন, এটা তো খুবই আপত্তিকর। এমন হবে কেন? কোনও শাসকেরই এমন করা উচিত নয়। তারপরও সাহাবী পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। কেননা অনুচিত হলেও কোনও শাসক তো এরকম করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জনগণের করণীয় কী, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিলেন-
اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا ، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا، وَعَلَيْكُمْ مَا حملْتُمْ (তোমরা শুনবে ও মানবে। কারণ তাদের পাপভার তাদের উপর এবং তোমাদের পাপভার তোমাদের উপর)। অর্থাৎ তারা তোমাদের অধিকার আদায় না করলেও তোমরা অবশ্যই তাদের অধিকার আদায় করবে। তোমরা তাদের আনুগত্য করে যাবে। তাদের কর্তব্য তাদের দায়িত্ব পালন করা। তা পালন না করলে যে গুনাহ হবে, তা কেবল তাদের কাঁধেই চাপবে। তাদের সে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন থেকে নিষ্কৃতি পেতে পার না। তোমাদের দায়িত্ব তাদের আনুগত্য করে যাওয়া। তা করলে তোমরা ছাওয়াব পাবে, না করলে তোমরা গুনাহগার হবে। তোমাদের গুনাহের জন্য তারা দায়ী হবে না আর তাদের গুনাহের জন্যও তোমরা দায়ী হবে না। আখিরাতে প্রত্যেককেই আপন আপন কাজের হিসাব দিতে হবে। প্রত্যেককেই আপন আপন গুনাহের খেসারত দিতে হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শাসকের উপর যেমন জনগণের হক আছে, তেমনি জনগণের উপরও শাসকের হক আছে। প্রত্যেকের উচিত সে হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা।

খ. শাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, তবুও জনগণের কর্তব্য শাসকের হক আদায় করা ও তার আনুগত্য করে যাওয়া।

গ. এক পক্ষের দায়িত্বপালনে অবহেলার কারণে অন্য পক্ষ আপন দায়িত্বপালন থেকে নিষ্কৃতি পায় না।

ঘ. প্রত্যেকের উচিত আপন দায়িত্বপালনে সচেতন থাকা। কেননা তাতে অবহেলা করলে যে গুনাহ হয়, তা কেবল তাকেই বহন করতে হবে, অন্য কেউ বহন করবে না, যেমন তাকে বহন করতে হবে না অন্যের অবহেলাজনিত গুনাহের বোঝা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)