আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৪৮
যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা
যতটুকু প্রয়োজন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং এর উপর সবর অবলম্বন করা।
২৩৫১. আব্বাস ইবনে মুহাম্মাদ দূরী (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি সফলকাম যে ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেছে এবং প্রয়োজন পরিমাণ রিযক পেয়েছে আর আল্লাহ তাকে অল্পে তুষ্টি দান করেছেন।
أبواب الزهد عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
باب مَا جَاءَ فِي الْكَفَافِ وَالصَّبْرِ عَلَيْهِ
حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّورِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ شُرَحْبِيلَ بْنِ شَرِيكٍ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বিষয়কে সফলতার উৎস বলেছেন। তার মধ্যে প্রথমটি হল ইসলামগ্রহণ। তিনটির মধ্যে এটিই আসল। কেননা যে-কোনও নেক আমল আল্লাহ তা'আলার কাছে কবুল হওয়ার জন্য ইসলাম ও ঈমান শর্ত। এখানে ইসলাম বলতে কেবল মৌখিক আনুগত্যস্বীকারকে বোঝানো হয়নি; বরং আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে গোটা দীন ও শরী'আত মেনে নেওয়াকে বোঝানো উদ্দেশ্য।

ইসলামগ্রহণ আল্লাহ তা'আলার সবচে' বড় নি'আমত। এটা আল্লাহ তা'আলার তাওফীকেই সম্ভব। সে কারণেই হাদীসে আছে طوبى لِمَنْ هُدِي لِلْإِسْلامِ (ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যাকে ইসলামের হিদায়াত দেওয়া হয়েছে)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
فَمَن يُرِدِ اللهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ
অতএব আল্লাহ যাকে হিদায়াত দানের ইচ্ছা করেন, তার বক্ষ ইসলামের জন্য খুলে দেন।

সফলতা লাভের দ্বিতীয় ভিত্তি হল প্রয়োজন পরিমাণ জীবিকা। হাদীছে এর জন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে كَفَافًا (প্রয়োজন পরিমাণ)। অর্থাৎ এমন কমও নয় যে, মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। আবার এমন বেশিও নয়, যা অহংকার ও উদ্ধত্য সৃষ্টি করে। বরং মাঝামাঝি পরিমাণ। এটাই নিরাপদ।

তৃতীয়ত বলা হয়েছে— কানা'আত ও পরিতুষ্টির কথা। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাকে যা দিয়েছেন সে বিশ্বাস রাখে যে, এটাই তার তাকদীরে ছিল। তাই সে এতে খুশি থাকে। সে তাকে কম মনে করে না। আর তাই বেশির জন্য লালায়িত হয় না। ফলে যার আরও বেশি আছে তাকে হিংসা করে না। বস্তুত কানা'আত ও পরিতুষ্টি অনেক বড় গুণ। দুনিয়ায় সুখী হওয়ার চাবিকাঠি। নিজের যা আছে তাতে অতৃপ্ত ব্যক্তি কোনওদিন সুখী হতে পারে না। সে হীনমন্যতায় ভোগে। সর্বদা ঈর্ষার আগুনে জ্বলতে থাকে। পরিণামে দুনিয়া ও আখিরাত সব বরবাদ হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ইসলাম অতি মূল্যবান সম্পদ। এর মূল্যায়ন করা ও এর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।

খ. কারও প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ থাকা তার জন্য আল্লাহর রহমত। এর মধ্যেই ঈমান-আমলের নিরাপত্তা।

গ. আল্লাহ তা'আলা যাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা জরুরি। এটা সুখ ও সাফল্যের চাবিকাঠি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)