আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৭. কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ

হাদীস নং: ২৪২২
আন্তর্জাতিক নং: ২৪২২
কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ
হিসাব এবং অন্যায়ের বদলা।
২৪২৫. আবু যাকারিয়্যা ইয়াহয়া ইবনে দুরুস্ত বসরী (রাহঃ) .... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে,يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - যেদিন লোকেরা রাব্বুল আলামিনের জন্য দাঁড়াবে (মুতাফফিফীন ৮৩ঃ ৬) প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঘামের মধ্যে তারা দাঁড়াবে।
أبواب صفة القيامة والرقائق والورع عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
ابُ مَا جَاءَ فِي شَأْنِ الْحِسَابِ وَالْقَصَاصِ
حَدَّثَنَا أَبُو زَكَرِيَّا، يَحْيَى بْنُ دُرُسْتَ الْبَصْرِيُّ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ حَمَّادٌ وَهُوَ عِنْدَنَا مَرْفُوعٌ (يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ) قَالَ يَقُومُونَ فِي الرَّشْحِ إِلَى أَنْصَافِ آذَانِهِمْ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হাশরের ময়দানে সমস্ত মাখলূক হিসাব-নিকাশের জন্য যখন আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানো থাকবে, তখন তার পরিস্থিতি কী ভয়াবহ হবে তার খানিকটা তুলে ধরা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে যে, সেদিন কেউ কেউ নিজ ঘামের মধ্যে কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডুবে যাবে। এতটা ঘামের কারণ এক তো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।কঠিন উদ্বেগে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও মানুষ ঘেমে যায়। হিসাব-নিকাশের পর শেষ গতি জান্নাত হবে না জাহান্নাম, এরচে' বড় উদ্বেগ আর কিছুই হতে পারে না। ঘামে শরীরের সবটা পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার জন্য এই এক দুর্ভাবনাই যথেষ্ট। তারপর আবার সূর্য মাথার কাছাকাছি চলে আসবে। তদুপরি জাহান্নাম কাছে নিয়ে আসা হবে। হাশরের ময়দানে অবস্থানকালও হবে অনেক দীর্ঘ। কোনও কোনও বর্ণনানুযায়ী দুনিয়ার সময় হিসাবে পঞ্চাশ হাজার বছর। সুতরাং এমন অগ্নিউত্তাপে এত দীর্ঘকালব্যাপী অসংখ্য মানুষের দেহের ঘামে হাশরের ময়দান যদি সাগরেও পরিণত হয়ে যায়, তা অসম্ভব কিছু নয়।

প্রশ্ন হতে পারে, হাশরের ময়দান যদি ঘামের সাগরে পরিণত হয়, তবে তাতে তো সকলেরই সমান ডুবে যাওয়ার কথা, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, আবার কেউ গলা পর্যন্ত ডুববে কেন?

এর উত্তর হলো, হতে পারে আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি কম তার পায়ের নিচের মাটি উঁচু করে দেবেন বা অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে তাকে দাঁড় করানো হবে। এমনও হতে পারে যে, প্রত্যেকের আমল অনুযায়ী তার ঘাম কেবল তার স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সে সীমা অতিক্রম করবে না। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমের জন্য পথ করে দিতে তো সাগরের পানিও দু'পাশে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তেমনিভাবে যার যার ঘাম তার তার স্থানে আটকে রাখা সম্ভব হতেই পারে। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের সবকিছু দুনিয়ায় বসে পুরোপুরি বুঝে ফেলা সম্ভব নয়। আমাদের কাজ যতটুকু বলা হয়েছে অতটুকুতে বিশ্বাস রাখা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ আমাদের সামনে হাশর-ময়দানের বিভীষিকা তুলে ধরেছে, যাতে আমরা সেদিনের কষ্ট হতে বাঁচার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনে আরও বেশি সচেষ্ট হই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান