আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৩৭. কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ
হাদীস নং: ২৫১৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৫১৭
কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ
শিরোনামবিহীন পরিচ্ছেদ।
২৫১৯. আবু হাফস আমর ইবনে আলী (রাহঃ) ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, উট বেধে রেখে তাওয়াক্কুল করব না ছেড়ে দিয়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেনঃ বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল করবে।
أبواب صفة القيامة والرقائق والورع عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَابٌ
حَدَّثَنَا أَبُو حَفْصٍ، عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ، حَدَّثَنَا الْمُغِيرَةُ بْنُ أَبِي قُرَّةَ السَّدُوسِيُّ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ قَالَ " اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ " . قَالَ عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ قَالَ يَحْيَى وَهَذَا عِنْدِي حَدِيثٌ مُنْكَرٌ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عَمْرِو بْنِ أُمَيَّةَ الضَّمْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইয়াকীনের অর্থ ও ব্যাখ্যা
ইয়াকীনের শাব্দিক অর্থ প্রত্যয়। অর্থাৎ সন্দেহমুক্ত জ্ঞান ও নিশ্চয়াত্মক ধারণা। পরিভাষায় ইয়াকীন বলা হয় কোনও বিষয় সম্পর্কে এ বিশ্বাস রাখা যে, তা এই এই রকম এবং তা এরকমই হওয়া সম্ভব, এর বিপরীত হওয়া সম্ভব নয়। কিংবা বলা যায় কোনও বিষয় সম্পর্কে এমন বাস্তবানুগ বিশ্বাসকে ইয়াকীন বলে, যে বিশ্বাস কখনও টলে না।
দীন ও শরী'আত সম্পর্কে কুরআন মাজীদে তিন রকম ইয়াকীনের উল্লেখ পাওয়া যায়ঃ- ১. 'ইলমুল ইয়াকীন, ২. 'আইনুল ইয়াকীন, ৩. ও হাক্কুল ইয়াকীন। এ তিন প্রকার ইয়াকীনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। 'ইলমুল ইয়াকীনের সম্পর্ক দুনিয়ার সাথে। কোনও ব্যক্তি দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত জ্ঞানলাভের পর যতদিন সে দুনিয়ায় থাকে, ততদিন তার জন্য সে জ্ঞান 'ইলমুল ইয়াকীনের পর্যায়ে থাকে।
তারপর যখন মৃত্যু শুরু হয় এবং পরকালের দৃশ্যাবলি চোখের সামনে চলে আসে, তখন সে 'ইলম 'আইনুল ইয়াকীনে পরিণত হয়। অর্থাৎ চাক্ষুষ প্রত্যয় হয়ে যায়। এতদিন সে গভীর বিশ্বাসের সাথে যা জানত, এখন তার সত্যতা চোখে দেখতে পাচ্ছে।
তারপর যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে চলে যাবে,জান্নাতের নি'আমতরাজি ও তার মনোরোম দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে পারে, সর্বোপরি আল্লাহ তা'আলার দীদার লাভ হবে, তখন তার জ্ঞান হাক্কুল ইয়াকীন তথা বাস্তব প্রত্যয়ে পরিণত হয়।
মনে করুন- 'কালোজাম। যে ব্যক্তি কালোজাম কোনওদিন দেখেনি, সে যদি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে এটা একরকম মিষ্টান্ন দ্রব্য, তবে এ সম্পর্কে তার যে বিশ্বাস অর্জিত হবে তা 'ইলমুল ইয়াকীন'। তারপর সে যদি এটা নিজ চোখে দেখতে পায়, তবে তার বিশ্বাস একধাপ উন্নত হবে। এরূপ বিশ্বাসকে বলা হয় 'আইনুল ইয়াকীন। তারপর সে যদি তা খাওয়ারও সুযোগ পায়, তবে তার বিশ্বাস চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হবে। একে বলা হবে 'হাক্কুল ইয়াকীন'।
দুনিয়ায় 'ইলমুল ইয়াকীন সকল মু'মিনেরই অর্জিত থাকে। এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের স্থান সবার উপরে। আইনুল ইয়াকীন অর্জিত থাকে বিশেষ শ্রেণির মুমিনদের। তাদেরকে ‘আরেফ বলা হয়, যারা মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। যেন মৃত্যু তাদের চোখের সামনে। 'হাক্কুল ইয়াকীন অর্জিত হয় সেইসব আওলিয়া কিরামের, যাদের অন্তর সমস্ত মাখলুকাতের ভালোবাসা থেকে ছিন্ন হয়ে এক আল্লাহর 'ইশক ও ভালোবাসায় বিলীন হয়ে যায়।
তাওয়াক্কুলের অর্থ ও ব্যাখ্যা
তাওয়াক্কুল-এর অর্থ নির্ভর করা। বিশেষ অর্থে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাকে তাওয়াক্কুল বলে। পরিভাষায় তাওয়াক্কুল বলা হয় নিজ শক্তি-সামর্থ্য, চেষ্টা ও ব্যবস্থাপনার উপর থেকে নির্ভরশীলতা ছিন্ন করে পরম মনিব আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ও শক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়াকে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞানী বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ইমাম তাবারী রহ.।তিনি বলেন তাওয়াক্কুল অর্থ- আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা ও আল্লাহ তা'আলার ফয়সালাই কার্যকর হয় এ বিশ্বাসের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক খাদ্য, পানীয় ও জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য আসবাব-উপকরণ অর্জনের চেষ্টা করা এবং শত্রু থেকে আত্মরক্ষায় সচেষ্ট থাকা।
প্রকাশ থাকে যে, তাওয়াক্কুলের স্থান বান্দার অন্তর। আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ। এটা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি নয়- যদি অন্তরে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা দৃঢ় থাকে এবং বিশ্বাস থাকে যে, হবে সেটাই যা আল্লাহর ফয়সালা; আমি চেষ্টা পরিশ্রম করছি কেবল এ কারণে যে, তা করা আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর ফয়সালা ছাড়া আমার চেষ্টা পরিশ্রম কোনও সুফল বয়ে আনার ক্ষমতা রাখে না। আবার বিনা চেষ্টা-পরিশ্রমে কোনওকিছু দান করাও আল্লাহর নীতি নয়, যদিও তা দান করার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলার আছে।
সারকথা, তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চেষ্টা পরিশ্রম করা এবং তার ফলাফলের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা। প্রথমটি আল্লাহর আনুগত্য আর দ্বিতীয়টি তাঁর প্রতি ঈমান। তাওয়াক্কুল এ দুইয়ের সমন্বিত রূপ।
চেষ্টা-পরিশ্রম ছাড়া কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা করার নাম তাওয়াক্কুল নয়; বরং এটা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করার নামান্তর। আবার আল্লাহর প্রতি ভরসা না করে কেবল চেষ্টা-পরিশ্রমকেই সবকিছু মনে করা বেঈমানী কাজ। প্রকৃত সত্য এর মাঝখানে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি নির্ভরও করতে হবে এবং শরী'আত মোতাবেক চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।
একবার এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উটটি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করব (যে, আল্লাহ তা'আলা এটি হেফাজত করবেন), নাকি আগে বাঁধব তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করব? তিনি বললেন, আগে এটি বাঁধ, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াক্কুল কী তা বুঝিয়ে দিলেন।
হযরত সাহল তুসতারী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি চেষ্টা-পরিশ্রমকে আপত্তিকর মনে করে, সে মূলত নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকার উপরই আপত্তি করে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াক্কুলের উপর আপত্তি করে, সে যেন ঈমানের উপরই আপত্তি তোলে।
হযরত ফুযায়ল ইব্ন 'ইয়ায রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেউ যদি নিজ ঘরে বসে থাকে আর মনে করে সে আল্লাহর প্রতি ভরসা করেছে, ফলে তার রিযিক তার কাছে এসে যাবে, তবে কি এটা ঠিক হবে? তিনি বললেন, সে যদি আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রেখে এভাবে বসে থাকে, তবে আল্লাহ তার ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবেন। কিন্তু এটা নিয়ম নয়। আল্লাহর কোনও নবী এমন করেননি। নবীগণ শ্রম খেটেছেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন। কাজ করেছেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারূক রাযি.। তাঁরা এমন বলেননি যে, আমরা বসে থাকলাম, আল্লাহ আমাদের খাওয়াবেন।
বস্তুত তাওয়াক্কুল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র। আর কামাইরোজগার তাঁর সুন্নত। উভয়টিই অবলম্বন করতে হবে। এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।
ইয়াকীনের শাব্দিক অর্থ প্রত্যয়। অর্থাৎ সন্দেহমুক্ত জ্ঞান ও নিশ্চয়াত্মক ধারণা। পরিভাষায় ইয়াকীন বলা হয় কোনও বিষয় সম্পর্কে এ বিশ্বাস রাখা যে, তা এই এই রকম এবং তা এরকমই হওয়া সম্ভব, এর বিপরীত হওয়া সম্ভব নয়। কিংবা বলা যায় কোনও বিষয় সম্পর্কে এমন বাস্তবানুগ বিশ্বাসকে ইয়াকীন বলে, যে বিশ্বাস কখনও টলে না।
দীন ও শরী'আত সম্পর্কে কুরআন মাজীদে তিন রকম ইয়াকীনের উল্লেখ পাওয়া যায়ঃ- ১. 'ইলমুল ইয়াকীন, ২. 'আইনুল ইয়াকীন, ৩. ও হাক্কুল ইয়াকীন। এ তিন প্রকার ইয়াকীনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। 'ইলমুল ইয়াকীনের সম্পর্ক দুনিয়ার সাথে। কোনও ব্যক্তি দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত জ্ঞানলাভের পর যতদিন সে দুনিয়ায় থাকে, ততদিন তার জন্য সে জ্ঞান 'ইলমুল ইয়াকীনের পর্যায়ে থাকে।
তারপর যখন মৃত্যু শুরু হয় এবং পরকালের দৃশ্যাবলি চোখের সামনে চলে আসে, তখন সে 'ইলম 'আইনুল ইয়াকীনে পরিণত হয়। অর্থাৎ চাক্ষুষ প্রত্যয় হয়ে যায়। এতদিন সে গভীর বিশ্বাসের সাথে যা জানত, এখন তার সত্যতা চোখে দেখতে পাচ্ছে।
তারপর যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে চলে যাবে,জান্নাতের নি'আমতরাজি ও তার মনোরোম দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে পারে, সর্বোপরি আল্লাহ তা'আলার দীদার লাভ হবে, তখন তার জ্ঞান হাক্কুল ইয়াকীন তথা বাস্তব প্রত্যয়ে পরিণত হয়।
মনে করুন- 'কালোজাম। যে ব্যক্তি কালোজাম কোনওদিন দেখেনি, সে যদি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে এটা একরকম মিষ্টান্ন দ্রব্য, তবে এ সম্পর্কে তার যে বিশ্বাস অর্জিত হবে তা 'ইলমুল ইয়াকীন'। তারপর সে যদি এটা নিজ চোখে দেখতে পায়, তবে তার বিশ্বাস একধাপ উন্নত হবে। এরূপ বিশ্বাসকে বলা হয় 'আইনুল ইয়াকীন। তারপর সে যদি তা খাওয়ারও সুযোগ পায়, তবে তার বিশ্বাস চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হবে। একে বলা হবে 'হাক্কুল ইয়াকীন'।
দুনিয়ায় 'ইলমুল ইয়াকীন সকল মু'মিনেরই অর্জিত থাকে। এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের স্থান সবার উপরে। আইনুল ইয়াকীন অর্জিত থাকে বিশেষ শ্রেণির মুমিনদের। তাদেরকে ‘আরেফ বলা হয়, যারা মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। যেন মৃত্যু তাদের চোখের সামনে। 'হাক্কুল ইয়াকীন অর্জিত হয় সেইসব আওলিয়া কিরামের, যাদের অন্তর সমস্ত মাখলুকাতের ভালোবাসা থেকে ছিন্ন হয়ে এক আল্লাহর 'ইশক ও ভালোবাসায় বিলীন হয়ে যায়।
তাওয়াক্কুলের অর্থ ও ব্যাখ্যা
তাওয়াক্কুল-এর অর্থ নির্ভর করা। বিশেষ অর্থে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাকে তাওয়াক্কুল বলে। পরিভাষায় তাওয়াক্কুল বলা হয় নিজ শক্তি-সামর্থ্য, চেষ্টা ও ব্যবস্থাপনার উপর থেকে নির্ভরশীলতা ছিন্ন করে পরম মনিব আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ও শক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়াকে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞানী বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ইমাম তাবারী রহ.।তিনি বলেন তাওয়াক্কুল অর্থ- আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা ও আল্লাহ তা'আলার ফয়সালাই কার্যকর হয় এ বিশ্বাসের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক খাদ্য, পানীয় ও জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য আসবাব-উপকরণ অর্জনের চেষ্টা করা এবং শত্রু থেকে আত্মরক্ষায় সচেষ্ট থাকা।
প্রকাশ থাকে যে, তাওয়াক্কুলের স্থান বান্দার অন্তর। আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ। এটা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি নয়- যদি অন্তরে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা দৃঢ় থাকে এবং বিশ্বাস থাকে যে, হবে সেটাই যা আল্লাহর ফয়সালা; আমি চেষ্টা পরিশ্রম করছি কেবল এ কারণে যে, তা করা আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর ফয়সালা ছাড়া আমার চেষ্টা পরিশ্রম কোনও সুফল বয়ে আনার ক্ষমতা রাখে না। আবার বিনা চেষ্টা-পরিশ্রমে কোনওকিছু দান করাও আল্লাহর নীতি নয়, যদিও তা দান করার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলার আছে।
সারকথা, তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চেষ্টা পরিশ্রম করা এবং তার ফলাফলের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা। প্রথমটি আল্লাহর আনুগত্য আর দ্বিতীয়টি তাঁর প্রতি ঈমান। তাওয়াক্কুল এ দুইয়ের সমন্বিত রূপ।
চেষ্টা-পরিশ্রম ছাড়া কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা করার নাম তাওয়াক্কুল নয়; বরং এটা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করার নামান্তর। আবার আল্লাহর প্রতি ভরসা না করে কেবল চেষ্টা-পরিশ্রমকেই সবকিছু মনে করা বেঈমানী কাজ। প্রকৃত সত্য এর মাঝখানে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি নির্ভরও করতে হবে এবং শরী'আত মোতাবেক চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।
একবার এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উটটি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করব (যে, আল্লাহ তা'আলা এটি হেফাজত করবেন), নাকি আগে বাঁধব তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করব? তিনি বললেন, আগে এটি বাঁধ, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াক্কুল কী তা বুঝিয়ে দিলেন।
হযরত সাহল তুসতারী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি চেষ্টা-পরিশ্রমকে আপত্তিকর মনে করে, সে মূলত নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকার উপরই আপত্তি করে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াক্কুলের উপর আপত্তি করে, সে যেন ঈমানের উপরই আপত্তি তোলে।
হযরত ফুযায়ল ইব্ন 'ইয়ায রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেউ যদি নিজ ঘরে বসে থাকে আর মনে করে সে আল্লাহর প্রতি ভরসা করেছে, ফলে তার রিযিক তার কাছে এসে যাবে, তবে কি এটা ঠিক হবে? তিনি বললেন, সে যদি আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রেখে এভাবে বসে থাকে, তবে আল্লাহ তার ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবেন। কিন্তু এটা নিয়ম নয়। আল্লাহর কোনও নবী এমন করেননি। নবীগণ শ্রম খেটেছেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন। কাজ করেছেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারূক রাযি.। তাঁরা এমন বলেননি যে, আমরা বসে থাকলাম, আল্লাহ আমাদের খাওয়াবেন।
বস্তুত তাওয়াক্কুল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র। আর কামাইরোজগার তাঁর সুন্নত। উভয়টিই অবলম্বন করতে হবে। এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।
.