আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৯. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত জাহান্নামের বিবরণ

হাদীস নং: ২৬০২
আন্তর্জাতিক নং: ২৬০২
নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত জাহান্নামের বিবরণ
অধিকাংশ জাহান্নামবাসী হল মহিলা।
২৬০৩. আহমদ ইবনে মানী’ (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ জান্নাতের দিকে আমি আগ্রহভরে তাকালাম, দরিদ্র জনদেরকেই আমি এর অধিকাংশ অধিবাসী বলে দেখতে পেলাম এবং জাহান্নামের দিকে তাকালাম। মহিলাগণকেই এর অধিকাংশ অধিকাংশ অধিবাসী বলে দেখতে পেলাম। - বুখারি ও মুসলিম
أبواب صفة جهنم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَابُ مَا جَاءَ أَنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ النِّسَاءُ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ أَبِي رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে আমাদেরকে মৌলিকভাবে দু'টি বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
ক. জান্নাতের অধিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই হবে গরীবশ্রেণীভূক্ত।
খ. জাহান্নামবাসীদের মধ্যে নারীরাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন اطلعت في الجنة ، فرأيت أكثر أهلها الفقراء (আমি জান্নাতে উকি দিলাম। দেখলাম তার অধিকাংশ বাসিন্দাই গরীব)। এর মানে গরীবমাত্রই জান্নাতে যাবে এমন নয়। বস্তুত এর দ্বারা এমন গরীব বোঝানো উদ্দেশ্য, যারা প্রকৃত দীনদার অর্থাৎ ওই গরীব, যে ধনীর প্রতি হাসাদ করে না, নিজ গরীবি হালের উপর সবর করে ও সন্তুষ্ট থাকে এবং গরীবি অবস্থাকে সে এ হিসেবে এক নিআমতও মনে করে যে, অর্থ-সম্পদ কম বলে আশা করা যায় আখিরাতের হিসাবও আসান হবে। সেইসঙ্গে সে তার অভাব-অনটনকে শরীআতের অনুসরণ থেকে পিছিয়ে থাকার অজুহাত বানায় না; বরং অর্থবিত্তের বহুবিধ ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণোদ্যমে শরীআতের বিধানাবলি পালনে যত্নবান থাকে।

এ শ্রেণীর গরীব যেহেতু দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা ও ভোগ-বিলাসিতা থেকে বঞ্চিত থাকে, সেইসঙ্গে ধনী ও প্রভাবশালী মহল দ্বারা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয় এবং তা সত্ত্বেও সবরের সীমানা লঙ্ঘন করে না, তাই এর প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জান্নাতের অনন্ত অফুরন্ত নিআমত দান করবেন।

অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন اطلعت في الجنة ، فرأيت أكثرأهلها النساء আবার জাহান্নামে উকি দিলাম। দেখলাম তার অধিকাংশ লোকই নারী)। এটা বলা হয়েছে জাহান্নামের একটা বিশেষ সময় সম্পর্কে। এটা সাধারণভাবে জাহান্নামের সব সময়কার কথা নয়। মূলত প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি থাকবে। পরে যারা ঈমান নিয়ে মারা যাবে, ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে চলে যাবে। তখন জান্নাতে পুরুষ ও নারী উভয়ের সংখ্যাই সমান হয়ে যাবে।

প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা দান-সদাকা করো, কেননা তোমরাই জাহান্নামে বেশি যাবে। তখন সাধারণ স্তরের এক নারী প্রশ্ন করল, তা কী কারণে? তিনি বললেন
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"

অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।

হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।

উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।

খ. এ হাদীছ দ্বারা আরও জানা যায়, দীনদার গরীবগণ ধনীদের আগে জান্নাতে যাবে। সুতরাং গরীব দেখে কাউকে অবহেলা করতে নেই।

গ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)