আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১৪০
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
৭৮-ধৈর্যশীলা বিধবা রমণীর মাহাত্ম-সন্তানের মুখ চাহিয়া যে দ্বিতীয়বার বিবাহ করে না
১৪০। হযরত আউফ ইন মালিক (রাযিঃ) বলেন যে নবী করীম (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, আমি ও বিষন্ন পাণ্ডুর চেহারার সেই রমণী-যাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে অথচ সে তাহার সন্তানের মুখ চাহিয়া ধৈর্যধারণ করিল (দ্বিতীয়বার বিবাহ করিল না।) জান্নাতে এই দুই (অঙ্গুলি)-এর মত পাশাপাশি অবস্থান করিব।
أبواب الأدب المفرد للبخاري
بَابُ فَضْلِ الْمَرْأَةِ إِذَا تَصَبَّرَتْ عَلَى وَلَدِهَا وَلَمْ تَتَزَوَّجْ
حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ نَهَّاسِ بْنِ قَهْمٍ، عَنْ شَدَّادٍ أَبِي عَمَّارٍ، عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ، امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا فَصَبَرْتَ عَلَى وَلَدِهَا، كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল ইয়াতীমের বিধবা মাতা যে কেবল তার ইয়াতীম সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য স্বামী গ্রহণ থেকে বিরত থাকে,আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অনেক অনেক বেশি। বাযযারের এক রেওয়ায়েতে আছে যে, যে ব্যক্তি কোনও ইয়াতীমের লালন-পালন করে, সে ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, ইয়াতীম আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয় ইয়াতীমকে লালন-পালন করার উঁচু ফযীলত রয়েছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতীমের লালন-পালনকারীকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, সে জান্নাতে তাঁর পাশাপাশি থাকবে। ইমাম ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, যে-কেউ এ হাদীছ শুনবে, এর উপর আমল করা তার অবশ্যকর্তব্য, যাতে সে জান্নাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে থাকতে পারে। বলাবাহুল্য, উম্মতের পক্ষে আখেরাতে এর চেয়ে উত্তম কোনও স্তর থাকতে পারে না।
কারও মতে ইয়াতীমের প্রতিপালনকারীর অবস্থান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটবর্তী হওয়ার দ্বারা জান্নাতে প্রবেশকালীন অবস্থা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছন পেছনেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাশি থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে-
أنا أوّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إلا أنه تأتي إمرأة تُبادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا : مَا لَكِ؟ وما أنتِ ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ فَعَدْتُ عَلى أَيتام لي
‘আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলব। হঠাৎ দেখা যাবে এক মহিলা আমার পেছন পেছন প্রবেশ করছে। আমি জিজ্ঞেস করব, তোমার খবর কী? তুমি কে? সে বলবে, আমি এমন এক নারী যে, আমার কয়েকজন ইয়াতীম ছিল, যাদের জন্য আমি (অন্য স্বামী গ্রহণ না করে) বৈধব্য জীবন যাপন করেছি।২৮৫
প্রশ্ন হতে পারে, ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর জান্নাতে প্রবেশ বা তার জান্নাতের মর্যাদাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তুলনা করার রহস্য কী?
এর উত্তর এই যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক উম্মী সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, যারা দীন ও ঈমান কিছু বুঝত না। তিনি মুরশিদ ও শিক্ষক হয়ে তাদের দীনী ও রূহানী প্রতিপালন করেছেন। তদ্রূপ ইয়াতীমের লালন- পালনকারীও অবোধ অবুঝ শিশুর প্রতিপালন করে থাকে। তার দুনিয়াবী দিকও লক্ষ রাখে এবং দীনী শিক্ষারও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তো প্রতিপালন ও পরিচর্যার দিক থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তার একরকম সাদৃশ্য আছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইয়াতীমকে লালন-পালনের এ ফযীলত পাওয়া যাবে তখনই, যখন তার প্রতি পূর্ণ কল্যাণকামিতার আচরণ করা হবে, তার প্রতি কোনওরকম জুলুম করা হবে না, না তার মালের উপর, না তার জানের উপর। অন্যায়ভাবে তার সম্পদ গ্রাস করা কঠিন পাপ, যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
'নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।২৮৭
সুতরাং ইয়াতীমকে লালন-পালন করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। তার সম্পদের প্রতি লোভ করা যাবে না। পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে তার সম্পদের হেফাজত করতে হবে। এমনিভাবে তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে মায়া-মমতার সাথে। অন্যায়ভাবে তাকে মারধর করা চলবে না। এ ব্যাপারে অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে না। জাহিলী যুগে তো তাদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হত। সেকালে মানুষ তাদের সম্পদ তো গ্রাস করতই, শারীরিকভাবেও নির্যাতন করত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে তা নিষেধ করে দেন। একবার কোনও এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি কি কারণে আমি ইয়াতীমকে মারতে পারব? তিনি বললেন-
مِمَّا كُنْتَ ضارِبًا مِنْهُ وَلَدَكَ غَيْرَ وَاقٍ مَالَكَ بِمَالِهِ
‘তুমি তাকে মারতে পারবে এমন কোনও কারণে, যে কারণে তুমি নিজ সন্তানকে মেরে থাক। আর তুমি তার সম্পদ দ্বারা নিজের সম্পদ রক্ষাকারী হবে না (অর্থাৎ নিজের সম্পদ বাঁচানোর জন্য তার সম্পদ খরচ করবে না)।২৮৮
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা ইয়াতীমকে লালন-পালন করার উচ্চ ফযীলত জানা গেল। সুতরাং আমাদের যখনই কোনও ইয়াতীমকে লালন-পালন করার সুযোগ আসে, তখন পূর্ণ আন্তরিকতা ও মমত্ববোধের সঙ্গে তার লালন-পালনে যত্নবান থাকব।
২৮৫. মুসনাদে আবু ইয়া'লা, হাদীছ নং ৬৬৫১; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৬৪২
২৮৭. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১০
২৮৮. বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮২; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৬৬৮৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৪; তাবারানী, আল মুজামুস সগীর, হাদীছ নং ২৪৪
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতীমের লালন-পালনকারীকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, সে জান্নাতে তাঁর পাশাপাশি থাকবে। ইমাম ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, যে-কেউ এ হাদীছ শুনবে, এর উপর আমল করা তার অবশ্যকর্তব্য, যাতে সে জান্নাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে থাকতে পারে। বলাবাহুল্য, উম্মতের পক্ষে আখেরাতে এর চেয়ে উত্তম কোনও স্তর থাকতে পারে না।
কারও মতে ইয়াতীমের প্রতিপালনকারীর অবস্থান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটবর্তী হওয়ার দ্বারা জান্নাতে প্রবেশকালীন অবস্থা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছন পেছনেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাশি থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে-
أنا أوّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إلا أنه تأتي إمرأة تُبادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا : مَا لَكِ؟ وما أنتِ ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ فَعَدْتُ عَلى أَيتام لي
‘আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলব। হঠাৎ দেখা যাবে এক মহিলা আমার পেছন পেছন প্রবেশ করছে। আমি জিজ্ঞেস করব, তোমার খবর কী? তুমি কে? সে বলবে, আমি এমন এক নারী যে, আমার কয়েকজন ইয়াতীম ছিল, যাদের জন্য আমি (অন্য স্বামী গ্রহণ না করে) বৈধব্য জীবন যাপন করেছি।২৮৫
প্রশ্ন হতে পারে, ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর জান্নাতে প্রবেশ বা তার জান্নাতের মর্যাদাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তুলনা করার রহস্য কী?
এর উত্তর এই যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক উম্মী সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, যারা দীন ও ঈমান কিছু বুঝত না। তিনি মুরশিদ ও শিক্ষক হয়ে তাদের দীনী ও রূহানী প্রতিপালন করেছেন। তদ্রূপ ইয়াতীমের লালন- পালনকারীও অবোধ অবুঝ শিশুর প্রতিপালন করে থাকে। তার দুনিয়াবী দিকও লক্ষ রাখে এবং দীনী শিক্ষারও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তো প্রতিপালন ও পরিচর্যার দিক থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তার একরকম সাদৃশ্য আছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইয়াতীমকে লালন-পালনের এ ফযীলত পাওয়া যাবে তখনই, যখন তার প্রতি পূর্ণ কল্যাণকামিতার আচরণ করা হবে, তার প্রতি কোনওরকম জুলুম করা হবে না, না তার মালের উপর, না তার জানের উপর। অন্যায়ভাবে তার সম্পদ গ্রাস করা কঠিন পাপ, যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
'নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।২৮৭
সুতরাং ইয়াতীমকে লালন-পালন করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। তার সম্পদের প্রতি লোভ করা যাবে না। পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে তার সম্পদের হেফাজত করতে হবে। এমনিভাবে তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে মায়া-মমতার সাথে। অন্যায়ভাবে তাকে মারধর করা চলবে না। এ ব্যাপারে অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে না। জাহিলী যুগে তো তাদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হত। সেকালে মানুষ তাদের সম্পদ তো গ্রাস করতই, শারীরিকভাবেও নির্যাতন করত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে তা নিষেধ করে দেন। একবার কোনও এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি কি কারণে আমি ইয়াতীমকে মারতে পারব? তিনি বললেন-
مِمَّا كُنْتَ ضارِبًا مِنْهُ وَلَدَكَ غَيْرَ وَاقٍ مَالَكَ بِمَالِهِ
‘তুমি তাকে মারতে পারবে এমন কোনও কারণে, যে কারণে তুমি নিজ সন্তানকে মেরে থাক। আর তুমি তার সম্পদ দ্বারা নিজের সম্পদ রক্ষাকারী হবে না (অর্থাৎ নিজের সম্পদ বাঁচানোর জন্য তার সম্পদ খরচ করবে না)।২৮৮
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা ইয়াতীমকে লালন-পালন করার উচ্চ ফযীলত জানা গেল। সুতরাং আমাদের যখনই কোনও ইয়াতীমকে লালন-পালন করার সুযোগ আসে, তখন পূর্ণ আন্তরিকতা ও মমত্ববোধের সঙ্গে তার লালন-পালনে যত্নবান থাকব।
২৮৫. মুসনাদে আবু ইয়া'লা, হাদীছ নং ৬৬৫১; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৬৪২
২৮৭. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১০
২৮৮. বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮২; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৬৬৮৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৪; তাবারানী, আল মুজামুস সগীর, হাদীছ নং ২৪৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)