আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ৯৬৫
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
৪৩৫. অপর ভাইয়ের উরুতে থাপ্পড় মারিয়া কথা বলা যদি উদ্দেশ্য খারাপ না হয়
৯৬৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাযিঃ) বলেন, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে একদল সাহাবীসহ ইব্ন সাইয়াদের খোঁজে বাহির হইলেন। শেষ পর্যন্ত তাহারা তাহাকে বনি মাগাল গোত্রের দুর্গে ছেলেপেলেদের সাথে খেলায় রত অবস্থায় পাইলেন। ইব্ন সাইয়াদ তখন প্রায় বালিগ হয় হয়। তাহাদের উপস্থিতি সে টের পায় নাই। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) শেষ পর্যন্ত পবিত্র হস্তে তাহার পিঠে থাপ্পড় মারিলেন। অতঃপর বলিলেন, তুমি কি একথার সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহ্র প্রেরিত রাসূল? সে তখন তাঁহার দিকে তাকাইল এবং বলিয়া উঠিলঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আপনি উম্মী অর্থাৎ নিরক্ষরদের নবী। ইব্ন সাইয়াদ বলিলঃ আমি যে আল্লাহ্র রাসূলুল্লাহ্ আপনি কি তাহার সাক্ষ্য দেন? নবী করীম (ﷺ) তখন তাহার কাধে থাপ্পড় মারিয়া বলিলেনঃ আমি আল্লাহ্র প্রতি এবং তাঁহার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করিয়াছি। অতঃপর তিনি ইব্ন সাইয়াদকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ তুমি কি দেখিতে পাও ? ইব্ন সাইয়াদ বলিল, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী উভয়টাই আসে। প্রত্যুত্তরে নবী করীম (ﷺ) বলিলেন, ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হইয়াছে। নবী করীম (ﷺ) বলিলেন, আমি তোমার কাছে একটি ব্যাপার গোপন করিতেছি। (অর্থাৎ আমি মনে মনে একটি জিনিসের কথা চিন্তা করিতেছি যাহা তোমার কাছে প্রকাশ করিতেছি না।) সে বলিল ও উহা হইতেছে দুখ (ধুয়া) [অন্য হাদীসের দ্বারা জানা যায় নবী করীম (ﷺ) তখন সূরা দুখানের কথাই ভাবিতেছিলেন। (দুখান অর্থ ধোয়াই)] নবী করীম (ﷺ) বলিলেনঃ তুমি তোমার জন্য নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করিতে পারিবে না। হযরত উমর (রাযিঃ) বলিয়া উঠিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি আমাকে উহার গর্দান মারিতে অনুমতি দেন ? নবী করীম (ﷺ) বলিলেনঃ যদি সে (অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতে প্রকাশমান দাজ্জাল) হইয়া থাকে, তবে তুমি তাহার সহিত পারিয়া উঠিবে না, আর যদি সে না হইয়া থাকে, তবে তাহার হত্যায় তোমার কোন মঙ্গল নাই।
রাবী সালিম বলেন, আমি আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমরকে বলিতে শুনিয়াছি, ইহার পর আর একবার নবী করীম (ﷺ) এবং উবাই ইব্ন কাব (রাযিঃ) সেই খেজুর বাগিচায় গিয়াছিলেন সেখানে ইব্ন সাইয়াদ ছিল। নবী করীম (ﷺ) যখন সেখানে প্রবেশ করিলেন তখন তিনি সংগোপনে খেজুর গাছের কাণ্ডের আড়ালে ইব্ন সাইয়াদ তাঁহাকে দেখিবার পূর্বেই সে যাহা বলিয়া যাইতেছিল, তাহা শুনিতে লাগিলেন। ইব্ন সাইয়াদ তখন একটি কম্বল গা-মোড়া দিয়া তাহার বিছানায় শায়িত অবস্থায় কী যেন বিড়বিড় করিয়া বকিতেছিল। ইব্ন সাইয়াদের মাতা তখন তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়া উঠিলঃ হে সাফ (ইহা ছিল তাহার নাম) এই যে মুহাম্মাদ। তখন ইব্ন সাইয়াদ থামিয়া গেল। নবী করীম (ﷺ) বলেন, সে যদি তাহাকে সতর্ক করা হইতে বিরত থাকিত তবে সে তাহার মনের কথা বলিয়া যাইত। এবং তাহার স্বরূপ আমাদের কাছে উদ্ঘাটিত হইয়া যাইত।
সালিম বলেন, আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) বলিয়াছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একদা জনসমাবেশে ভাষণ প্রদান করিতে দণ্ডায়মান হইলেন। চিরাচরিত অভ্যাস অনুসারে প্রথমে তিনি আল্লাহ্র প্রশংসা করিলেনযে প্রশংসা তাঁহার জন্যই শোভনীয়। অতঃপর দাজ্জাল প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন এবং বলিলেন, আমি তোমাদিগকে তাহার ব্যাপারে সতর্ক করিয়া দিতেছি এবং এমন কোন নবী নাই যিনি তাঁহার কাওমকে এ ব্যাপারে সতর্ক না করিয়াছেন এমন কি হযরত নূহ্ নবীও তাঁহার কাওমকে সতর্ক করিয়াছেন, তবে আমি তাহার ব্যাপারে এমন একটি কথা বলিতেছি যাহা পূর্ববর্তী নবীগণ বলেন নাই। জানিয়া রাখ সে হইবে কানা (একচক্ষু বিশিষ্ট) আর আল্লাহ্ কখনো কানা হইতে পারেন না।
রাবী সালিম বলেন, আমি আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমরকে বলিতে শুনিয়াছি, ইহার পর আর একবার নবী করীম (ﷺ) এবং উবাই ইব্ন কাব (রাযিঃ) সেই খেজুর বাগিচায় গিয়াছিলেন সেখানে ইব্ন সাইয়াদ ছিল। নবী করীম (ﷺ) যখন সেখানে প্রবেশ করিলেন তখন তিনি সংগোপনে খেজুর গাছের কাণ্ডের আড়ালে ইব্ন সাইয়াদ তাঁহাকে দেখিবার পূর্বেই সে যাহা বলিয়া যাইতেছিল, তাহা শুনিতে লাগিলেন। ইব্ন সাইয়াদ তখন একটি কম্বল গা-মোড়া দিয়া তাহার বিছানায় শায়িত অবস্থায় কী যেন বিড়বিড় করিয়া বকিতেছিল। ইব্ন সাইয়াদের মাতা তখন তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়া উঠিলঃ হে সাফ (ইহা ছিল তাহার নাম) এই যে মুহাম্মাদ। তখন ইব্ন সাইয়াদ থামিয়া গেল। নবী করীম (ﷺ) বলেন, সে যদি তাহাকে সতর্ক করা হইতে বিরত থাকিত তবে সে তাহার মনের কথা বলিয়া যাইত। এবং তাহার স্বরূপ আমাদের কাছে উদ্ঘাটিত হইয়া যাইত।
সালিম বলেন, আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) বলিয়াছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একদা জনসমাবেশে ভাষণ প্রদান করিতে দণ্ডায়মান হইলেন। চিরাচরিত অভ্যাস অনুসারে প্রথমে তিনি আল্লাহ্র প্রশংসা করিলেনযে প্রশংসা তাঁহার জন্যই শোভনীয়। অতঃপর দাজ্জাল প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন এবং বলিলেন, আমি তোমাদিগকে তাহার ব্যাপারে সতর্ক করিয়া দিতেছি এবং এমন কোন নবী নাই যিনি তাঁহার কাওমকে এ ব্যাপারে সতর্ক না করিয়াছেন এমন কি হযরত নূহ্ নবীও তাঁহার কাওমকে সতর্ক করিয়াছেন, তবে আমি তাহার ব্যাপারে এমন একটি কথা বলিতেছি যাহা পূর্ববর্তী নবীগণ বলেন নাই। জানিয়া রাখ সে হইবে কানা (একচক্ষু বিশিষ্ট) আর আল্লাহ্ কখনো কানা হইতে পারেন না।
أبواب الأدب المفرد للبخاري
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ ، عَنِ الزُّهْرِيِّ ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ أَخْبَرَهُ ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِهِ , قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ ، حَتَّى وَجَدُوهُ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ , فِي أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ ، وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ يَوْمَئِذٍ الْحُلُمَ ، فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظَهْرَهُ بِيَدِهِ ، ثُمَّ قَالَ : " أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ؟ " ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ : أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الأُمِّيِّينَ ، قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ : فَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ؟ فَرَصَّهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ثُمَّ قَالَ : " آمَنْتُ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ " ، ثُمَّ قَالَ لابْنِ صَيَّادٍ : " مَاذَا تَرَى ؟ " ، فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ : يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " خُلِّطَ عَلَيْكَ الأَمْرُ " ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا " ، قَالَ : هُوَ الدُّخُّ ، قَالَ : " اخْسَأْ فَلَمْ تَعْدُ قَدْرَكَ " ، قَالَ عُمَرُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَتَأْذَنُ لِي فِيهِ أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ ؟ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنْ يَكُ هُوَ لا تُسَلَّطُ عَلَيْهِ ، وَإِنْ لَمْ يَكُ هُوَ فَلا خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ " ، قَالَ سَالِمٌ : فَسَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ , يَقُولُ : انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ الأَنْصَارِيُّ يَوْمًا , إِلَى النَّخْلِ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ ، حَتَّى إِذَا دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَفِقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ ، وَهُوَ يَسْمَعُ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ ، وَابْنُ صَيَّادٍ مُضْطَجِعٌ عَلَى فِرَاشِهِ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا زَمْزَمَةٌ ، فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ ، فَقَالَتْ لابْنِ صَيَّادٍ : أَيْ صَافُ وَهُوَ اسْمُهُ هَذَا مُحَمَّدٌ ، فَتَنَاهَى ابْنُ صَيَّادٍ ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَوْ تَرَكَتْهُ لَبَيَّنَ " ، قَالَ سَالِمٌ : قَالَ عَبْدُ اللَّهِ : قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ ، فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ، ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ , فَقَالَ : " إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ ، وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلا وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ ، لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ ، وَلَكِنْ سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ : تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ ، وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্কীকরণ
বিদায় হজ্জের দীর্ঘ ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন জরুরি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। তার মধ্যে একটা ছিল দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করা ও তার কিছু আলামত বলে দেওয়া।
দাজ্জালকে ‘মাসীহুদ-দাজ্জাল' বলা হয়ে থাকে। ‘মাসীহ' শব্দের বিভিন্ন অর্থ আছে, যেমন- অত্যধিক ভ্রমণকারী, হাতের স্পর্শে রোগ নিরাময়কারী। দাজ্জালের মধ্যে এ দু'টি বিশেষত্ব থাকবে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেও মাসীহ বলা হয়ে থাকে। কেননা তিনিও দাওয়াতী কাজে খুব সফর করতেন এবং তাঁর হাতের স্পর্শে অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগী নিরাময় লাভ করত। এদিক থেকে দাজ্জালের সঙ্গে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য আছে। তাই তো দাজ্জালকে বধ করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে এখনও পর্যন্ত আসমানে জীবিত ও নিরাপদ রাখা হয়েছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের পর তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হবে। তাঁর হাতেই দাজ্জালের বিনাশ ঘটবে।
'মাসীহ'-এর আরেক অর্থ- যা মুছে ফেলা হয়েছে। দাজ্জালের ডান চোখের স্থান মুছে ফেলা। অর্থাৎ সেখানে চোখ নেই। জায়গাটি সম্পূর্ণ ভরাট, সমতল। তার থাকবে শুধু বাম চোখ। তাও উপরের দিকে তোলা।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের চোখকে এমন একটি আঙ্গুরদানার সাথে তুলনা করেছেন, যে দানাটি সন্নিবদ্ধ আঙ্গুর থোকার ওপর আলাদাভাবে ভাসমান। এমনিই ডান চোখ নেই। সে জায়গাটি চামড়া দিয়ে ঢাকা সম্পূর্ণ সমতল। আছে কেবল বাম চোখ। তাও এভাবে উপরে তোলা। তিনি জানানঃ-
إنَّ ربكم ليس بأعور، وإنه أعور عين اليمنى، كأن عينه عنبة طافية
তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।
এই যার চোখের অবস্থা, দেখতে সে কতই না কুৎসিত ও বীভৎস হবে! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের এই বিদঘুটে রূপটির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এ কারণে যে, দাজ্জাল অনেক তেলেসমাতি দেখাবে- মৃতকে জীবিত করবে, বৃষ্টি নামিয়ে দেখাবে, আবার বৃষ্টি বন্ধ করে খরার অবস্থা বানাবে, সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের আকৃতি রাখবে আর এসবের ভিত্তিতে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করবে। তো ঈমানদার ব্যক্তি যাতে এসব দেখে বিভ্রান্ত না হয়, তাই বিশেষভাবে বিদঘুটে চোখের আলামতটি উল্লেখ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন- সে যদি তোমাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তার অবস্থা সম্পর্কে তোমাদের যা-কিছুই অজানা থাকুক না কেন, এ বিষয়টা তো অজানা থাকতে পারে না যে, তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।
বস্তুত দাজ্জালের ফিতনা হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। আল্লাহ তা'আলা যাকে হেফাজত করবেন কেবল সে-ই তার ফিতনা থেকে বাঁচতে পারবে। তার ফিতনা এমনকি কবরবাসীদেরকেও স্পর্শ করবে। এজন্যই হযরত নূহ আলাইহিস সালাম থেকে পরবর্তী সমস্ত নবী-রাসূল আপন আপন উম্মতকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। তার আলামতসমূহের মধ্যে একটা বিশেষ আলামত এই যে, তার কপালে ك ف ر লেখা থাকবে। তা দেখে মু'মিনগণ বুঝে ফেলবে যে, সে এক ঘোর কাফের। যার কুফর এতই পূর্ণাঙ্গ ও বলিষ্ঠ যে, তার আছর অন্তর ও দেহের স্থূলতা ভেদ করে কপালেও পরিস্ফুট হবে। মোটকথা কেউ যাতে তার ফিতনায় পড়ে ঈমান না হারায় সেজন্য তিনি তার আলামতসমূহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে তার ফিতনা থেকে বাঁচার দু'আও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন একটি দু'আ হচ্ছে-
«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ»
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই মাসীহুদ-দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ফিতনা থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৫৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৮৮০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৪৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৩০৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৯০৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৬৭)
এ দু'আটি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পড়তেন। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেনঃ-
من حفظ عشر آيات من أول سورة الكهف، عصم من فتنة الدجال
যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে। (সহীহ মুসলিম,হাদীছ নং ৮০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৩২৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩১০৫; নাসাঈ, হাদীছ নং ৮০২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭১২; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৩৩৯১: শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৬৮৩)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামতের আগে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তাঁর ফিতনা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এটা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখতে হবে।
বিদায় হজ্জের দীর্ঘ ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন জরুরি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। তার মধ্যে একটা ছিল দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করা ও তার কিছু আলামত বলে দেওয়া।
দাজ্জালকে ‘মাসীহুদ-দাজ্জাল' বলা হয়ে থাকে। ‘মাসীহ' শব্দের বিভিন্ন অর্থ আছে, যেমন- অত্যধিক ভ্রমণকারী, হাতের স্পর্শে রোগ নিরাময়কারী। দাজ্জালের মধ্যে এ দু'টি বিশেষত্ব থাকবে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেও মাসীহ বলা হয়ে থাকে। কেননা তিনিও দাওয়াতী কাজে খুব সফর করতেন এবং তাঁর হাতের স্পর্শে অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগী নিরাময় লাভ করত। এদিক থেকে দাজ্জালের সঙ্গে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য আছে। তাই তো দাজ্জালকে বধ করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে এখনও পর্যন্ত আসমানে জীবিত ও নিরাপদ রাখা হয়েছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের পর তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হবে। তাঁর হাতেই দাজ্জালের বিনাশ ঘটবে।
'মাসীহ'-এর আরেক অর্থ- যা মুছে ফেলা হয়েছে। দাজ্জালের ডান চোখের স্থান মুছে ফেলা। অর্থাৎ সেখানে চোখ নেই। জায়গাটি সম্পূর্ণ ভরাট, সমতল। তার থাকবে শুধু বাম চোখ। তাও উপরের দিকে তোলা।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের চোখকে এমন একটি আঙ্গুরদানার সাথে তুলনা করেছেন, যে দানাটি সন্নিবদ্ধ আঙ্গুর থোকার ওপর আলাদাভাবে ভাসমান। এমনিই ডান চোখ নেই। সে জায়গাটি চামড়া দিয়ে ঢাকা সম্পূর্ণ সমতল। আছে কেবল বাম চোখ। তাও এভাবে উপরে তোলা। তিনি জানানঃ-
إنَّ ربكم ليس بأعور، وإنه أعور عين اليمنى، كأن عينه عنبة طافية
তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।
এই যার চোখের অবস্থা, দেখতে সে কতই না কুৎসিত ও বীভৎস হবে! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের এই বিদঘুটে রূপটির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এ কারণে যে, দাজ্জাল অনেক তেলেসমাতি দেখাবে- মৃতকে জীবিত করবে, বৃষ্টি নামিয়ে দেখাবে, আবার বৃষ্টি বন্ধ করে খরার অবস্থা বানাবে, সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের আকৃতি রাখবে আর এসবের ভিত্তিতে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করবে। তো ঈমানদার ব্যক্তি যাতে এসব দেখে বিভ্রান্ত না হয়, তাই বিশেষভাবে বিদঘুটে চোখের আলামতটি উল্লেখ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন- সে যদি তোমাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তার অবস্থা সম্পর্কে তোমাদের যা-কিছুই অজানা থাকুক না কেন, এ বিষয়টা তো অজানা থাকতে পারে না যে, তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।
বস্তুত দাজ্জালের ফিতনা হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। আল্লাহ তা'আলা যাকে হেফাজত করবেন কেবল সে-ই তার ফিতনা থেকে বাঁচতে পারবে। তার ফিতনা এমনকি কবরবাসীদেরকেও স্পর্শ করবে। এজন্যই হযরত নূহ আলাইহিস সালাম থেকে পরবর্তী সমস্ত নবী-রাসূল আপন আপন উম্মতকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। তার আলামতসমূহের মধ্যে একটা বিশেষ আলামত এই যে, তার কপালে ك ف ر লেখা থাকবে। তা দেখে মু'মিনগণ বুঝে ফেলবে যে, সে এক ঘোর কাফের। যার কুফর এতই পূর্ণাঙ্গ ও বলিষ্ঠ যে, তার আছর অন্তর ও দেহের স্থূলতা ভেদ করে কপালেও পরিস্ফুট হবে। মোটকথা কেউ যাতে তার ফিতনায় পড়ে ঈমান না হারায় সেজন্য তিনি তার আলামতসমূহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে তার ফিতনা থেকে বাঁচার দু'আও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন একটি দু'আ হচ্ছে-
«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ»
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই মাসীহুদ-দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ফিতনা থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৫৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৮৮০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৪৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৩০৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৯০৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৬৭)
এ দু'আটি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পড়তেন। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেনঃ-
من حفظ عشر آيات من أول سورة الكهف، عصم من فتنة الدجال
যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে। (সহীহ মুসলিম,হাদীছ নং ৮০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৩২৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩১০৫; নাসাঈ, হাদীছ নং ৮০২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭১২; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৩৩৯১: শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৬৮৩)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামতের আগে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তাঁর ফিতনা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এটা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)