মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৯৭
- নামাযের অধ্যায়
১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৭। হযরত মা'দান ইবনে তালহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মুক্তকৃত ক্রীতদাস হযরত ছাওবান (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন যাদ্বারা আল্লাহ্ আমাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। তিনি নীরব রইলেন। আমি আবার তাঁকে ঐকথা বললাম। তিনি নীরব রইলেন। তৃতীয়বার আমি তাঁকে ঐকথা বললাম। জবাবে তিনি বললেন, আমি নিজে এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ কথা বলেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহ্ পাককে বেশী পরিমাণে সিজদাহ করতে থাকবে। কেননা তুমি আল্লাহকে একবার সিজদাহ করলে আল্লাহ্ পাক তদ্বারা তোমার একটি স্তর উন্নীত করে দিবেন এবং তোমার গুনাহ কমিয়ে দিবেন। মা'দান বলেন, অতঃপর আমি হযরত আবু দারদাহ (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে তাকেও এই ব্যাপারে বললাম। তিনি আমাকে হযরত ছাওবানের অনুরূপ বললেন। -মুসলিম
كتاب الصلاة
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ مَعْدَانَ بْنِ طَلْحَةَ قَالَ: لَقِيتُ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقلت: أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْخِلُنِي اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ فَسَكَتَ ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَسَكَتَ ثُمَّ سَأَلْتُهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ: سَأَلْتُ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ لِلَّهِ فَإِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلَّا رَفَعَكَ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً» . قَالَ مَعْدَانُ: ثُمَّ لَقِيتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ لِي مِثْلَ مَا قَالَ لِي ثَوْبَانُ. رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারাও সিজদার ফযীলত জানা যায়। বলাবাহুল্য, সিজদা দ্বারা ওই সিজদাকে বোঝানো উদ্দেশ্য, যা নামাযের ভেতর করা হয়ে থাকে। নামাযের বাইরে আলাদা সিজদা করা নয়।

এ হাদীছে বেশি বেশি সিজদা করার দুটি ফায়দা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে মর্যাদার উন্নতি। অর্থাৎ একেকটি সিজদা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে বান্দার মর্যাদা একেক স্তর উন্নত করেন। এভাবে সে যত বেশি সিজদা করবে, তার মর্যাদা ততই উন্নীত হতে থাকবে। বান্দার জন্য আল্লাহ তা'আলার নৈকট্যের মর্যাদা কত স্তরবিশিষ্ট, তা তিনি ছাড়া কেউ জানে না। একজন সাধারণ মু'মিনকে যদি মর্যাদার প্রথম ধাপে গণ্য করা হয়, তবে সেখান থেকে কত ধাপ অতিক্রম করলে আওলিয়া কিরামের মর্যাদা শুরু হয়? মানুষের মধ্যে কত লক্ষ লক্ষ ওলী-বুযুর্গ! তাদের মধ্যে রয়েছে মর্যাদার হাজারও স্তরভেদ। আওলিয়া কিরামের উপর সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা। লক্ষাধিক সাহাবায়ে কিরামের সকলেই সমমর্যাদার নন। একজন সাধারণ স্তরের সাহাবী থেকে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. পর্যন্ত মর্যাদার কতগুলো স্তর আছে তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। সাহাবায়ে কিরামের উপর আছেন নবী-রাসূলগণ। তাঁদের মধ্যেও মর্যাদার স্তরভেদ আছে। সবার উপর মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা।

এভাবে একজন সাধারণ মু'মিন থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত মর্যাদার কত কোটি কোটি স্তর হবে, তা কার পক্ষে অনুমান করা সম্ভব? বলাবাহুল্য, নবীদের মর্যাদা যে স্তরে, সেখানে পৌঁছা তো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সাহাবায়ে কিরামের জন্যও রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। অতঃপর তাদের নিচে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্যের যে কোটি কোটি ধাপ রয়েছে, তা সকল মু'মিনের জন্য অবারিত। 'ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে একের পর এক সেসব ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব। সেসব ধাপ অতিক্রম করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম নামাযের সিজদা। বান্দা একেকটি সিজদার মাধ্যমে একেকটি ধাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ পথ খোলা রেখেছেন। আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, হে বান্দা! তুমি সিজদা করতে থাক আর আমার নৈকট্যের সিঁড়ি অতিক্রম করতে থাক। দেখি তুমি সিঁড়ির কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে পার এবং আমার কতটা নিকটে পৌঁছতে পার। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তাওফীক দিন, যেন আপনার ‘ইশক ও মহব্বতে ডুবে গিয়ে আপনার নৈকট্যের ধাপসমূহ অতিক্রমে সচেষ্ট থাকতে পারি, আমীন।

সিজদার দ্বিতীয় ফায়দা হল গুনাহমাফ। একেকটি সিজদা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা বান্দার একেকটি গুনাহ মিটিয়ে দেন।

আমরা রোজ কতরকম গুনাহ করি। কথায়, কাজে ও চিন্তাভাবনায় একের পর এক গুনাহ করে যাচ্ছি। অনেক গুনাহ সম্পর্কে থাকি অসচেতন। তাওবাও করা হয় না। সেসব গুনাহ মাফের উপায় কী? 'ইবাদতের পাশাপাশি যদি গুনাহের বোঝা থাকে, তবে তো নৈকট্যের সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠা কঠিন। উপরে উঠতে চাইলে কাঁধ থেকে গুনাহের বোঝা নামাতেই হবে। আল্লাহ তা'আলা কতই না দয়ালু! গুনাহের বোঝা কমানোর একটা উত্তম ব্যবস্থা হিসেবে তিনি নামায ও সিজদার বিধান দিয়েছেন। এ হাদীছে জানানো হয়েছে, একেকটি সিজদা দ্বারা একেকটি গুনাহ মাফ হয়ে যায়। ফরয- সুন্নতের পাশাপাশি যদি বেশি বেশি নফল নামায পড়া যায়, তবে প্রতি রাক'আতে দু'টি করে সিজদা হিসেবে রোজ কত বিপুল সিজদাই না করা সম্ভব। আর এভাবে কেবল সিজদার মাধ্যমে আমাদের কত গুনাহ মাফ হতে পারে! আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে গুনাহ মাফের এ ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরার তাওফীক দান করুন, আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বেশি বেশি সিজদা করতে নিশ্চয়ই নফস কখনও প্রস্তুত থাকবে না। তা সত্ত্বেও আমাদেরকে বেশি বেশি সিজদা করতে হবে। এভাবে এ হাদীছ থেকে আমরা মুজাহাদার শিক্ষা নিতে পারি।

খ. এ হাদীছ আমাদেরকে আল্লাহর কাছে উচ্চমর্যাদা লাভের উৎসাহ যোগায়, যা বেশি বেশি সিজদার মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব।

গ. আমাদের গুনাহের তালিকাও তো অনেক লম্বা। তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যমরূপে আমরা বেশি বেশি সিজদাকে অবলম্বন করতে পারি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)