মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১০- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র

হাদীস নং: ২২৮৭
- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র
আল্লাহর নাম পর্বঃ
প্রথম অনুচ্ছেদ
২২৮৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার নিরানব্বই—এক কম একশতটি —নাম রহিয়াছে। যে উহা মুখস্থ করিবে বেহেশতে যাইবে। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বিজোড়, বিজোড়কে ভালবাসেন। —মোত্তাঃ
كتاب الدعوات
بَاب أَسمَاء الله تَعَالَى:
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ» . وَفِي رِوَايَة: «وَهُوَ وتر يحب الْوتر»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

[মূল কিতাবে এখানে ‘কিতাবু আসমাইল্লাহ্' বা আল্লাহর নাম পর্ব রহিয়াছে, অথচ পরবর্তী সকল অধ্যায় নাম সম্পর্কিত নহে; বরং দো'আ পর্বের সহিত সংশ্লিষ্ট। সুতরাং ইহাকে পর্ব না বলিয়া অধ্যায় বলাই সঙ্গত। ]
কোরআনে রহিয়াছেঃ وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا “আল্লাহর কতক উত্তম নাম রহিয়াছে, উহা দ্বারা তাহাকে ডাক।”
আল্লাহর নামসমূহ দুই রকমেরঃ (ক) সত্তাবাচক নাম – ইহা মাত্র একটি। তাহা হইল 'আল্লাহ্।' (খ) গুণবাচক নাম। ইহার সংখ্যা শতের উপরে। সত্তাবাচক নাম হইতে আমাদের উপকার লাভের পন্থা হইল উহার অধিকারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, তাঁহাকে সর্বদা স্মরণে রাখা, অন্তরে তাঁহার ভালবাসা সৃষ্টি করা এবং তাঁহাকে সৃষ্টির মূল ও সর্বগুণের আধার বলিয়া বিশ্বাস করা। গুণবাচক নাম হইতে উপকার লাভের পন্থা হইল দুই প্রকারেরঃ (ক) দয়া-দাক্ষিণ্য বা ক্ষমাগুণসূচক নাম হইলে তাঁহার নিকট হইতে উহা লাভের আশা রাখা এবং (খ) নিজে অন্যের প্রতি উহা প্রকাশের চেষ্টা করা। যথা, আল্লাহ্ দয়াময় ও ক্ষমাশীল বলিয়া তাহার নিকট হইতে দয়া ও ক্ষমার আশা রাখা এবং নিজে অন্যের প্রতি দয়া ও ক্ষমা প্রকাশ করা। ইহাকেই আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া বলে। আর তাঁহার রোষ ও শাস্তি প্রদানসূচক নাম হইলে — (ক) তাঁহার রোষ ও শাস্তি হইতে পানাহ চাওয়া, তাঁহার রোষ ও শাস্তির যোগ্য কাজ হইতে বাঁচিয়া থাকা এবং (খ) নিজের ব্যাপারে কাহাকেও শাস্তি দান হইতে বিরত থাকা। কেননা, আল্লাহ্ ক্ষমা করেন যে অন্যকে ক্ষমা করে।
এখানে জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর কোন গুণ মানুষের গুণের ন্যায় নহে, যদিও বাহ্যদৃষ্টিতে এক রকম বলিয়া মনে হয়। যথা, এলম বা জ্ঞানের গুণ। এই গুণে আল্লাহ্ গুণান্বিত এবং মানুষ ও গুণান্বিত, কিন্তু ইহার মধ্যে পার্থক্য আসমান যমীনের। মানুষের জ্ঞান অপ্রতুল ও ইন্দ্রিয়সাপেক্ষ, আবার তাহাও ত্রুটিমুক্ত নহে। ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতিরেকে মানুষ কোন জ্ঞান লাভ করিতে পারে না, আর আল্লাহর জ্ঞান ইন্দ্রিয়সাপেক্ষ নহে।
আল্লাহর নামসমূহ 'তওফিকী' অর্থাৎ, কোরআন-হাদীসে তাঁহার যে সকল নামের উল্লেখ রহিয়াছে তাহার প্রতি কেবল সেসকল নামই প্রয়োগ করিতে পারা যায়। ইহার উপর কেয়াস করিয়া কোন নাম গড়িয়া বলা যায় না। যথা, তিনি ‘শাফী' বা আরোগ্যদাতা বলিয়া তাঁহাকে তবীর বা চিকিৎসক বলা যায় না।

'নিরানব্বই'—অর্থাৎ, প্রসিদ্ধ নিরানব্বইটি, অন্যথায় কোরআনে ও হাদীসে আরও কতিপয় নামের উল্লেখ রহিয়াছে— যথা, রব, মাওলা, নাসীর, মুহীত, কাফী, আল্লাম এবং হন্নান, মান্নান, দায়েম ও জামীল।
‘বেহেশতে যাইবে’—অর্থাৎ, প্রথমেই বেহেশতে প্রবেশ করিবে অথবা বেহেশতে তাহাকে এক বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হইবে। নচেৎ প্রত্যেক মু'মিনই বেহেশতে যাইবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান