মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১২- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯৩০
- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়
১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - অংশীদারিত্ব ও ওয়াকালাহ্ (দায়িত্ব প্রদান)
২৯৩০। তাবেয়ী হযরত যুহরা ইবনে মা'বাদ হইতে বর্ণিত, তাঁহার দাদা সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে হিশাম তাঁহাকে লইয়া বাজারে যাইতেন এবং খাদ্যশস্য ক্রয় করিতেন; অতঃপর তাঁহার সাথে হযরত ইবনে ওমর ও ইবনে যুবায়রের সাক্ষাৎ হইত। তখন তাঁহারা তাঁহাকে বলিতেন, আপনি আমাদিগকেও আপনার সাথে শরীক করুন। কেননা, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দোআ করিয়াছেন। সুতরাং তিনি তাহাদিগকে নিজের শরীক করিতেন। দেখা যাইত, কোন কোন সময় তিনি পূর্ণ এক উট বোঝাই মাল লাভ করিতেন এবং উহা নিজের বাড়ীর দিকে পাঠাইয়া দিতেন। যুহরা বলেন, ব্যাপার হইল এই যে, একদা আমার দাদা আব্দুল্লাহ্ ইবনে হিশামকে তাঁহার মাতা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট লইয়া গিয়াছিলেন, এবং তিনি তাঁহার মাথায় হাত বুলাইয়া তাঁহার জন্য বরকতের দো'আ করিয়াছিলেন। — বোখারী
كتاب البيوع
بَابُ الشِّرْكَةِ وَالْوَكَالَةِ: الْفَصْل الأول
عَن زهرَة بن معبد: أَنَّهُ كَانَ يَخْرُجُ بِهِ جَدُّهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هِشَامٍ إِلَى السُّوقِ فَيَشْتَرِيَ الطَّعَامَ فَيَلْقَاهُ ابْنُ عُمَرَ وَابْنُ الزُّبَيْرِ فَيَقُولَانِ لَهُ: أَشْرِكْنَا فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ دَعَا لَكَ بِالْبَرَكَةِ فَيُشْرِكُهُمْ فَرُبَّمَا أَصَابَ الرَّاحِلَةَ كَمَا هِيَ فَيَبْعَثُ بِهَا إِلَى الْمَنْزِلِ وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هِشَامٍ ذَهَبَتْ بِهِ أُمُّهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ رَأسه ودعا لَهُ بِالْبركَةِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

অংশীদারিত্ব ও ওকালত

অংশীদার হওয়া—মূলে 'শিরকত' শব্দ রহিয়াছে, যাহার অর্থ, শরীক হওয়া, অংশীদার হওয়া। ‘উকিল নিযুক্ত করা’—মূলে 'ওকালত' শব্দ রহিয়াছে, যাহার অর্থ, কাহারো প্রতি কাজ সপর্দ করা, উকিল বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করা।
শিরকত বা শরীক হওয়া প্রথমত দুই প্রকারেরঃ (ক) মালিকানায় শরীক হওয়া। যথা—মুরব্বীর তরকায় শরীক হওয়া, ঘর-বাড়ী বা কোন জিনিসে শরীক হওয়া। ইহাকে ‘শিরকতুল মিলক' বলে। এবং (খ) বেচাকিনায় শরীক হওয়া, কাজ-কারবারে শরীক হওয়া। ইহাকে ‘শিরকতুল অকূদ' বলে।
শিরকতুল অকূদ আবার তিন প্রকারেরঃ (ক) বেচাকিনা বা ব্যবসা-বাণিজ্যে মাল বা টাকাকড়ি দিয়া একে অন্যের শরীক হওয়া। যেমন—দুইজনের দুই লক্ষ টাকা বা দুই হাজার মণ চাউল দিয়া একে অন্যের শরীক হওয়া। ইহাকে ‘শিরকত বিল-মাল' বলে। (খ) শরীর দিয়া শরীক হওয়া। যেমন—দুই শ্রমিকের শরীরের পরিশ্রম দিয়া একে অন্যের শরীক হওয়া এবং কাজের শেষে পারিশ্রমিক অংশমত ভাগ করিয়া নেওয়া। ইহাকে ‘শিরকত বিল-আবদান' বলে। এবং (গ) মান-সম্মান দিয়া শরীক হওয়া। যেমন—দুইজনেরই লোকের নিকট মান-সম্মান আছে। টাকাকড়ি ব্যতীত দুইজনেরই আপন আপন মান-সম্মান দ্বারা এক সাথে বাকীতে জিনিস কিনিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করা। ইহাকে 'শিরকত বিল-ওজুহ' বলে।
এই তিন প্রকারের প্রত্যেকটিই আবার দুই প্রকারেরঃ (ক) সকলের পুঁজি সমান, লাভ লোকসান সমান, দায়িত্ব সমান এবং একে যেরূপ অন্যের উকিল বা প্রতিনিধি, সেরূপ একে অন্যের পক্ষে জামিন বা দায়ী হইলে ইহাকে 'শিরকতে মুফাওজা' বলে। ইহাতে একে অন্যের পক্ষে জামিন বা দায়ী বিধায় উভয়ের ধর্ম এক হইতে হইবে। আর কাহারো মতে ধর্ম এক হওয়া শর্ত নহে। এবং (খ) প্রত্যেকের পুঁজি সমান না হইলে এবং একে অন্যের পক্ষে জামিন বা দায়ী হওয়ার উল্লেখ না থাকিলে ইহাকে 'শিরকতে এনান' বলে। শিরকতে এনানে কাহারো পক্ষে কেহ দায়ী না থাকায় সমধর্মী হওয়াও শর্ত নহে।
এইরূপে ‘শিরকতুল মিলক' আবার কয়েক প্রকারের। কিন্তু উহার তফসীল এখানে সম্ভবপর নহে এবং প্রয়োজনও নহে।
আজকালের ন্যায় তৎকালে আরবে যৌথ কোম্পানী ছিল কিনা জানা না গেলেও আজকাল আরবরা যৌথ কোম্পানীর জন্য এই ‘শিরকত' শব্দটিই ব্যবহার করে। — অনুবাদক
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান