মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৩- উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও ওয়াসিয়্যাত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩০৭০
- উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও ওয়াসিয়্যাত অধ্যায়
২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)
৩০৭০। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ যে মুসলমানের এমন মাল আছে যাহাতে ওছিয়ত করা যাইতে পারে, তাহার নিজের কাছে ওছিয়তনামা লেখিয়া না রাখিয়া দুই রাত্র অতিবাহিত করারও তাহার অধিকার নাই। — মোত্তাঃ
كتاب الفرائض والوصايا
بَابُ الْوَصَايَا: الْفَصْل الأول
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصَى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّة مَكْتُوبَة عِنْده»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. ওছিয়ত
ওছিয়ত অর্থ, এককে অন্যের সাথে মিলান, কল্যাণ কামনা করা। শরীঅতে ইহার অর্থ, মৃত্যুকালে মৃত্যুর পরের জন্য নিজের মালিকানার কিছু অংশ বিনা এওয়াযে কাহাকেও মালিকানা রূপে দিয়া যাওয়া বা উইল করা। কোরআনে রহিয়াছে, “তোমাদের প্রতি ফরয করা হইয়াছে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওছিয়ত করা—যখন তোমাদের কাহারও নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, যদি সে মাল রাখিয়া যায়, ইহা মুত্তাকীদের পক্ষে আবশ্যক।” (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৮০ )
এই আয়াত অনুসারে ইমাম যুহরী, আবু মিজলায ও দাঊদ যাহেরী প্রমুখ ফকীহগণ বলেন, ওছিয়ত করা ফরয। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-সহ অন্যান্য ইমাম ও ফকীহগণ বলেনঃ (১) ইহা মীরাস বা দায়ভাগ নির্ধারিত হইবার পূর্বের কথা। সূরা নেসায় দায়ভাগ নির্ধারিত হইবার পর ইহা মনসূখ হইয়া গিয়াছে। তবে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যাহারা মীরাস হইতে বঞ্চিত, তাহাদের জন্য ওছিয়ত করা জায়েয রহিয়া গিয়াছে। তাহাদের ও অনাত্মীয়দের জন্য ওছিয়ত করা মোস্তাহাব। আর (২) যাহারা মীরাস পাইবে তাহাদের জন্য ওছিয়ত করা সর্বসম্মত মতে নিষিদ্ধ। (কুরতুবী) (৩) যাহার উপর কাহারও দেনা রহিয়াছে বা তাহার নিকট কাহারও আমানত আছে, তাহার পক্ষে ওছিয়ত করা অর্থাৎ, উহা লেখিয়া বা বলিয়া যাওয়া ফরয। মীরাস বন্টনের পূর্বে তাহার এই দেনা আদায় করিতে হইবে। এরূপ যাহার কাহারও নিকট পাওনা আছে বা কাহারও নিকট কিছু আমানত রহিয়াছে, তাহার পক্ষে তাহা বলিয়া যাওয়া আবশ্যক। অন্যথায় ওয়ারিসগণের হক নষ্ট হইবে। (৪) জমহুরে ওলামার মতে সর্বমোট তিন ভাগের এক ভাগের বেশী ওছিয়ত করা জায়েয নহে, কিন্তু ইমাম আ'যম আবু হানীফা (রঃ)-এর মতে যাহার কোনও ওয়ারিস নাই তাহার পক্ষে সমস্ত মাল ওছিয়ত করা জায়েয। (৫) ওছিয়ত লিখিতভাবে হওয়া এবং উহার উপর দুইজন লোককে সাক্ষী করান উচিত। (৬) মৃত ব্যক্তি শরীআতের সীমার মধ্যে থাকিয়া ওছিয়ত করিয়া গেলে উহা পূর্ণ করা ওয়ারিসগণের পক্ষে ফরয। গোপন করা বা পূর্ণ না করা আত্মসাতের শামিল। ওছিয়ত লিখিত হউক বা মৌখিক, শরীআতে উভয়ের হুকুম এক। —অনুবাদক
কেহ কেহ বলেন, এই হাদীস ওছিয়ত করাকে ফরয বুঝায়। কিন্তু ওলামা সাধারণের মতে ইহা তাহা বুঝায় না; বরং মোস্তাহাব বুঝায়। কারণ, এই হাদীসেরই অন্য বর্ণনায় 'মাল আছে'—শব্দের পরে রহিয়াছে, 'যে উহাতে ওছিয়ত করিতে চাহে' – অর্থাৎ, যে উহাতে ওছিয়ত করিতে চাহে তাহার পক্ষে তাড়াতাড়ি করা উচিত। কেননা, কখন মউত আসিয়া যায় তাহা বলা যায় না।
২. এ হাদীছটি অন্তরে মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত রাখা ও মৃত্যুর প্রস্তুতিস্বরূপ অসিয়তনামা লিখে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
مَا حَقٌّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ (কোনও মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, যার বিশ্বাস এ জীবন স্থায়ী নয়, এর পর মৃত্যু আছে, মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল কবরে অবস্থান করার রয়েছে, তারপর আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে ইহজীবনের যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে, তার ইসলামের দাবি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। তার কিছুতেই উচিত নয়...
لَهُ شيءٌ يُوصِي فِيهِ (যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে)। অর্থাৎ যার কাছে এমন অর্থ-সম্পদ আছে, যে সম্পর্কে চাইলে সে অসিয়ত করতে পারে। তার সম্পদ এত কম নয় যে, তাতে অসিয়ত করা যাবে না, তা করতে গেলে ওয়ারিছদের জন্য কিছু থাকবে না। এরূপ ব্যক্তির কী করণীয়, সে সম্পর্কে সামনে বলা হচ্ছে-
(সেই মুসলিম ব্যক্তির) নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু'রাতও কাটানো (উচিত নয়)'। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিন রাত্রের কথা। কোন কোন বর্ণনায় আছে দু'রাত্রের কথা। দু'-তিন রাত দ্বারা মূলত অল্পকাল বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সেই মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা এবং সে প্রস্তুতি হিসেবে সর্বদা নিজের কাছে তার সম্পদ সম্পর্কে অসিয়তনামা লিখে রাখা। অসিয়তনামা ছাড়া সে অল্পকালও কাটাবে না। কেননা মৃত্যু তো যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। যদি হঠাৎ করে মৃত্যু এসে যায় আর অসিয়তনামা লেখা না থাকে, তবে ওয়ারিছগণ তার সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেবে। হয়তো এমন কোনও সৎকর্মে তার কোনও অংশ খরচ করবে না, যা আখিরাতে তার কাজে আসবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো তার সম্পদের অংশবিশেষে অসিয়ত করেছিল, কিন্তু কোনও সাক্ষী নেই। ফলে তার মৃত্যুর পর সে অসিয়ত কার্যকর করা হবে না। যদি লেখা থাকত, তবে কার্যকর করা হতো। সে ক্ষেত্রে লেখাটা সাক্ষীরই বিকল্প বলে গণ্য হতো। তাছাড়া সাক্ষী থাকলেও লিখিত অসিয়তের বাড়তি ফায়দা আছে। তা মৃত্যুর স্মারকরূপে কাজ করে। যখনই অসিয়তনামায় নজর পড়বে, তখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে।
উল্লেখ্য, যদি আল্লাহ তা'আলার বা বান্দার কোনও হক আদায় করা বাকি থাকে, তবে সে হক আদায় সম্পর্কে অসিয়ত করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। অন্যথায় তা ফরয নয়। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে অসিয়ত করা ভালো, যাতে সে অসিয়ত অনুযায়ী সম্পদের একটা অংশ ভালো কাজে ব্যয় করা হয় এবং মৃত্যুর পর তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা জারি থাকে। সে অসিয়ত লিখে রাখার দ্বারা যেহেতু মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়, তাই এর বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণেই এ হাদীছে এটাকে মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্যরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ পালনের ক্ষেত্রে খুবই অগ্রগামী ছিলেন। যেসব কাজ ফরয নয়; বরং নফল পর্যায়ের, সেসব কাজও তিনি সর্বদা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এ হাদীছটিতে যেহেতু অসিয়তনামা সঙ্গে রাখার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে, তাই তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর উপর আমলে যত্নবান থেকেছেন। একটি রাতও তিনি অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা ছাড়া কাটাননি। বস্তুত সব সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ মানার ক্ষেত্রে এরকম যত্নবান থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করা। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়াই যথেষ্ট নয়; ইসলামের দাবি পূরণেও তৎপর থাকতে হবে।
খ. মৃত্যুর দিনক্ষণ কারও জানা নেই। যে-কোনও সময়ই তা হাজির হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেকের সর্বক্ষণ এর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
গ. অসিয়তপত্র মৃত্যুর এক উত্তম স্মারক। তাই প্রত্যেক মুসলিমের অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা দরকার।
ঘ. প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে তার সবটা ওয়ারিছদের জন্য না রেখে অংশবিশেষ কোনও দীনী খাতে খরচ করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
ওছিয়ত অর্থ, এককে অন্যের সাথে মিলান, কল্যাণ কামনা করা। শরীঅতে ইহার অর্থ, মৃত্যুকালে মৃত্যুর পরের জন্য নিজের মালিকানার কিছু অংশ বিনা এওয়াযে কাহাকেও মালিকানা রূপে দিয়া যাওয়া বা উইল করা। কোরআনে রহিয়াছে, “তোমাদের প্রতি ফরয করা হইয়াছে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওছিয়ত করা—যখন তোমাদের কাহারও নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, যদি সে মাল রাখিয়া যায়, ইহা মুত্তাকীদের পক্ষে আবশ্যক।” (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৮০ )
এই আয়াত অনুসারে ইমাম যুহরী, আবু মিজলায ও দাঊদ যাহেরী প্রমুখ ফকীহগণ বলেন, ওছিয়ত করা ফরয। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-সহ অন্যান্য ইমাম ও ফকীহগণ বলেনঃ (১) ইহা মীরাস বা দায়ভাগ নির্ধারিত হইবার পূর্বের কথা। সূরা নেসায় দায়ভাগ নির্ধারিত হইবার পর ইহা মনসূখ হইয়া গিয়াছে। তবে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যাহারা মীরাস হইতে বঞ্চিত, তাহাদের জন্য ওছিয়ত করা জায়েয রহিয়া গিয়াছে। তাহাদের ও অনাত্মীয়দের জন্য ওছিয়ত করা মোস্তাহাব। আর (২) যাহারা মীরাস পাইবে তাহাদের জন্য ওছিয়ত করা সর্বসম্মত মতে নিষিদ্ধ। (কুরতুবী) (৩) যাহার উপর কাহারও দেনা রহিয়াছে বা তাহার নিকট কাহারও আমানত আছে, তাহার পক্ষে ওছিয়ত করা অর্থাৎ, উহা লেখিয়া বা বলিয়া যাওয়া ফরয। মীরাস বন্টনের পূর্বে তাহার এই দেনা আদায় করিতে হইবে। এরূপ যাহার কাহারও নিকট পাওনা আছে বা কাহারও নিকট কিছু আমানত রহিয়াছে, তাহার পক্ষে তাহা বলিয়া যাওয়া আবশ্যক। অন্যথায় ওয়ারিসগণের হক নষ্ট হইবে। (৪) জমহুরে ওলামার মতে সর্বমোট তিন ভাগের এক ভাগের বেশী ওছিয়ত করা জায়েয নহে, কিন্তু ইমাম আ'যম আবু হানীফা (রঃ)-এর মতে যাহার কোনও ওয়ারিস নাই তাহার পক্ষে সমস্ত মাল ওছিয়ত করা জায়েয। (৫) ওছিয়ত লিখিতভাবে হওয়া এবং উহার উপর দুইজন লোককে সাক্ষী করান উচিত। (৬) মৃত ব্যক্তি শরীআতের সীমার মধ্যে থাকিয়া ওছিয়ত করিয়া গেলে উহা পূর্ণ করা ওয়ারিসগণের পক্ষে ফরয। গোপন করা বা পূর্ণ না করা আত্মসাতের শামিল। ওছিয়ত লিখিত হউক বা মৌখিক, শরীআতে উভয়ের হুকুম এক। —অনুবাদক
কেহ কেহ বলেন, এই হাদীস ওছিয়ত করাকে ফরয বুঝায়। কিন্তু ওলামা সাধারণের মতে ইহা তাহা বুঝায় না; বরং মোস্তাহাব বুঝায়। কারণ, এই হাদীসেরই অন্য বর্ণনায় 'মাল আছে'—শব্দের পরে রহিয়াছে, 'যে উহাতে ওছিয়ত করিতে চাহে' – অর্থাৎ, যে উহাতে ওছিয়ত করিতে চাহে তাহার পক্ষে তাড়াতাড়ি করা উচিত। কেননা, কখন মউত আসিয়া যায় তাহা বলা যায় না।
২. এ হাদীছটি অন্তরে মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত রাখা ও মৃত্যুর প্রস্তুতিস্বরূপ অসিয়তনামা লিখে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
مَا حَقٌّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ (কোনও মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, যার বিশ্বাস এ জীবন স্থায়ী নয়, এর পর মৃত্যু আছে, মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল কবরে অবস্থান করার রয়েছে, তারপর আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে ইহজীবনের যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে, তার ইসলামের দাবি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। তার কিছুতেই উচিত নয়...
لَهُ شيءٌ يُوصِي فِيهِ (যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে)। অর্থাৎ যার কাছে এমন অর্থ-সম্পদ আছে, যে সম্পর্কে চাইলে সে অসিয়ত করতে পারে। তার সম্পদ এত কম নয় যে, তাতে অসিয়ত করা যাবে না, তা করতে গেলে ওয়ারিছদের জন্য কিছু থাকবে না। এরূপ ব্যক্তির কী করণীয়, সে সম্পর্কে সামনে বলা হচ্ছে-
(সেই মুসলিম ব্যক্তির) নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু'রাতও কাটানো (উচিত নয়)'। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিন রাত্রের কথা। কোন কোন বর্ণনায় আছে দু'রাত্রের কথা। দু'-তিন রাত দ্বারা মূলত অল্পকাল বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সেই মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা এবং সে প্রস্তুতি হিসেবে সর্বদা নিজের কাছে তার সম্পদ সম্পর্কে অসিয়তনামা লিখে রাখা। অসিয়তনামা ছাড়া সে অল্পকালও কাটাবে না। কেননা মৃত্যু তো যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। যদি হঠাৎ করে মৃত্যু এসে যায় আর অসিয়তনামা লেখা না থাকে, তবে ওয়ারিছগণ তার সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেবে। হয়তো এমন কোনও সৎকর্মে তার কোনও অংশ খরচ করবে না, যা আখিরাতে তার কাজে আসবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো তার সম্পদের অংশবিশেষে অসিয়ত করেছিল, কিন্তু কোনও সাক্ষী নেই। ফলে তার মৃত্যুর পর সে অসিয়ত কার্যকর করা হবে না। যদি লেখা থাকত, তবে কার্যকর করা হতো। সে ক্ষেত্রে লেখাটা সাক্ষীরই বিকল্প বলে গণ্য হতো। তাছাড়া সাক্ষী থাকলেও লিখিত অসিয়তের বাড়তি ফায়দা আছে। তা মৃত্যুর স্মারকরূপে কাজ করে। যখনই অসিয়তনামায় নজর পড়বে, তখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে।
উল্লেখ্য, যদি আল্লাহ তা'আলার বা বান্দার কোনও হক আদায় করা বাকি থাকে, তবে সে হক আদায় সম্পর্কে অসিয়ত করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। অন্যথায় তা ফরয নয়। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে অসিয়ত করা ভালো, যাতে সে অসিয়ত অনুযায়ী সম্পদের একটা অংশ ভালো কাজে ব্যয় করা হয় এবং মৃত্যুর পর তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা জারি থাকে। সে অসিয়ত লিখে রাখার দ্বারা যেহেতু মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়, তাই এর বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণেই এ হাদীছে এটাকে মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্যরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ পালনের ক্ষেত্রে খুবই অগ্রগামী ছিলেন। যেসব কাজ ফরয নয়; বরং নফল পর্যায়ের, সেসব কাজও তিনি সর্বদা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এ হাদীছটিতে যেহেতু অসিয়তনামা সঙ্গে রাখার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে, তাই তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর উপর আমলে যত্নবান থেকেছেন। একটি রাতও তিনি অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা ছাড়া কাটাননি। বস্তুত সব সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ মানার ক্ষেত্রে এরকম যত্নবান থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করা। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়াই যথেষ্ট নয়; ইসলামের দাবি পূরণেও তৎপর থাকতে হবে।
খ. মৃত্যুর দিনক্ষণ কারও জানা নেই। যে-কোনও সময়ই তা হাজির হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেকের সর্বক্ষণ এর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
গ. অসিয়তপত্র মৃত্যুর এক উত্তম স্মারক। তাই প্রত্যেক মুসলিমের অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা দরকার।
ঘ. প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে তার সবটা ওয়ারিছদের জন্য না রেখে অংশবিশেষ কোনও দীনী খাতে খরচ করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)