মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩২৪
- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত
৩৩২৪। তাবেয়ী আবু সালামা (রঃ) ফাতেমা বিনতে কায়স হইতে বর্ণনা করেন যে, ফাতেমার স্বামী আবু আমর ইবনে হাফস তাহাকে দূরদেশ হইতে শেষ তালাক দিয়া দিল। অতঃপর আবু আমরের কার্যকারক তাহার নিকট কিছু যব পাঠাইয়া দিল। ইহাতে ফাতেমা নারায হইল। কার্যকারক বলিল, খোদার কসম! আমাদের উপর তোমার বাধ্যতামূলক কোন পাওনা নাই। ইহা শুনিয়া ফাতেমা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেল এবং তাহাকে ইহা বলিল। তিনি বলিলেন: হা, তোমার খোরপোষ পাওনা নাই। রাবী বলেন, এ সময় তিনি তাহাকে উম্মে শরীকের ঘরে যাইয়া ইদ্দত পালন করিতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বলিলেন, না, উম্মে শরীকের ঘর আমার সাহাবীদের আনাগোনার স্থল। তুমি ইবনে উম্মে মাকতুমের ঘরে যাইয়া ইদ্দত পালন কর। সে অন্ধ মানুষ, সেখানে তুমি গায়ের কাপড় ছাড়িতে পারিবে। তবে যখন ইন্দত শেষ করিবে আমাকে খবর দিবে। ফাতেমা বলেন, আমি যখন ইদ্দত শেষ করিলাম তাহাকে বলিলাম, হুযুর, মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এবং আবু জাহম আমার বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছেন। তখন হুযুর বলিলেন, শুন, আবু জাহম কখনও আপন কাঁধ হইতে লাঠি ফেলে না। (অর্থাৎ, সর্বদা মারে) আর মুআবিয়া হইল একজন দরিদ্র ব্যক্তি, মাল বলিতে তাহার কিছুই নাই। তুমি উসামা ইবনে যায়দকে বিবাহ কর। রাবী বলেন, কিন্তু ফাতেমা তাহাকে পছন্দ করিল না। হুযুর পুনরায় বলিলেন, উসামাকে বিবাহ কর। অতঃপর সে উসামাকেই বিবাহ করিল এবং আল্লাহ্ তাহাতে বহু বরকত দিলেন। মানুষ তাহার প্রতি ঈর্ষা করিত। অপর বর্ণনায় আছে, আবু জাহম এমন ব্যক্তি যে বেশী বৌ মারে। —মুসলিম
আর এক বর্ণনায় আছে—তাহার স্বামী তাহাকে তিন তালাক দিল। সে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিল। তিনি বলিলেন, তোমার জন্য নকা বা খোরপোষ নাই। হা, যদি তুমি গর্ভবর্তী হইতে।
আর এক বর্ণনায় আছে—তাহার স্বামী তাহাকে তিন তালাক দিল। সে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিল। তিনি বলিলেন, তোমার জন্য নকা বা খোরপোষ নাই। হা, যদি তুমি গর্ভবর্তী হইতে।
كتاب النكاح
بَابُ الْعِدَّةِ: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ: أَنَّ أَبَا عَمْرِو بْنَ حَفْصٍ طَلَّقَهَا الْبَتَّةَ وَهُوَ غَائِبٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا وَكِيْلُهُ الشَّعِيرَ فَسَخِطَتْهُ فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا لَكِ عَلَيْنَا مِنْ شَيْءٍ فَجَاءَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «لَيْسَ لَكِ نَفَقَةٌ» فَأَمَرَهَا أَنْ تَعْتَدَّ فِي بَيْتِ أُمِّ شَرِيكٍ ثُمَّ قَالَ: «تِلْكِ امْرَأَةٌ يَغْشَاهَا أَصْحَابِي اعْتَدِّي عِنْدَ ابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ رَجُلٌ أَعْمَى تَضَعِينَ ثِيَابَكِ فَإِذَا حَلَلْتِ فَآذِنِينِي» . قَالَتْ: فَلَمَّا حَلَلْتُ ذَكَرْتُ لَهُ أَنَّ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ وَأَبَا جَهْمٍ خَطَبَانِي فَقَالَ: «أَمَّا أَبُو الْجَهْمِ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصُعْلُوكٌ لَا مَالَ لَهُ انْكِحِي أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ» فَكَرِهْتُهُ ثُمَّ قَالَ: «انْكِحِي أُسَامَةَ» فَنَكَحْتُهُ فَجَعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا وَاغْتَبَطْتُ وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهَا: «فَأَمَّا أَبُو جَهْمٍ فَرَجُلٌ ضَرَّابٌ لِلنِّسَاءِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ زَوْجَهَا طَلَّقَهَا ثَلَاثًا فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا نَفَقَةَ لَكِ إِلَّا أَنْ تَكُونِي حَامِلا»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইদ্দত ও শোক পালন
ইদ্দত—অর্থ, শুমার করা, গণনা করা। শরীঅতে ইহার অর্থ, সহবাস করা নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের পর অন্য বিবাহের জন্য এক নির্দিষ্ট সময় গণনা করা বা অপেক্ষা করা। বিভিন্ন নারীর পক্ষে এই সময় গণনা বিভিন্ন হয়। (১) যে নারীর ঋতু চালু আছে তাহার ইদ্দত হইল তিন ঋতু।
কোরআনে আছেঃ وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ “তালাকপ্রাপ্তা নারীগণ তিন ক্বুরূ অপেক্ষা করিবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮) 'ক্বুরূ' অর্থ এখানে ইমাম শাফেয়ীর মতে ‘তোহর' আর ইমাম আবু হানীফার মতে 'হায়য' (ঋতু)। উপরের এক হাদীস হইতেও ইহার এই শেষোক্ত অর্থই বুঝায়। হাদীসে বলা হইয়াছে, বাদীর ইদ্দত দুই হায়য। (২) বার্ধক্যের কারণে যাহার ঋতু বন্ধ হইয়া গিয়াছে অথবা বাল্যের কারণে ঋতু এখনও আসে নাই, তাহার ইদ্দত তিন মাস। কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাহারা ঋতু হইতে নিরাশ হইয়া গিয়াছে বা যাহাদের ঋতু আসে নাই, তাহাদের ইদ্দত হইল তিন মাস। (সূরা তালাক, আয়াত ৪) (৩) যাহারা তালাকের সময় গর্ভবতী, তাহাদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত, সময় বেশী হউক বা কম হউক। কোরআনে আছেঃ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ “আর গর্ভধারিণীদের সময় (ইদ্দত) হইল সন্তান প্রসব।” (সূরা তালাক, আয়াত ৪) (৪) বিবাহের পরে সহবাসের পূর্বে যাহাকে তালাক দেওয়া হইয়াছে তাহার কোন ইদ্দত নাই। কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا
“হে মু'মিনগণ, যখন তোমরা মু'মিনা নারীদের বিবাহ করিবে, অতঃপর স্পর্শের পূর্বেই তাহাদেরকে তালাক দিবে, তখন তাহাদের উপর কোন ইদ্দত নাই। যাহা তোমরা শুমার করিবে।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৪৯) (৫) যাহাদের স্বামী মারা গিয়াছে তাহাদের ইদ্দত হইল চারি মাস দশ দিন। কোরআনে রহিয়াছেঃ
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ
“তোমাদের মধ্যে যাহারা মরিয়া যায় এবং স্ত্রী রাখিয়া যায়, তাহারা (স্ত্রীগণ) অপেক্ষা করিবে চারি মাস দশ দিন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৪) তবে গর্ভবতী হইলে তাহাদের ইদ্দত হইল সন্তান প্রসব। এই পঞ্চমটি হইল আসলে শোক পালন। আরবীতে ইহাকে 'হেদাদ' বলে। স্বামী মরার পর এই শোক পালনের ব্যবস্থা প্রায় প্রত্যেক জাতিতেই আছে।
এই হাদীস অনুসারে ইমাম আহমদ (রঃ) বলেন, তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দতকালে স্বামীর নিকট সোকনা ও নফকা অর্থাৎ, থাকার আবাস ও খোরপোষ কিছুই পাইবে না। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অপর এক হাদীস অনুসারে বলেন, সে আবাস ও খোরপোষ উভয় পাইবে। কিন্তু ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (রঃ) বলেন, সে থাকার আবাস পাইবে, তবে খোরপোষ পাইবে না। (মেরকাত) আবু জাহম বৌ মারে— উপদেশ চাওয়া হইলে উপদেশ স্থলে সত্য কথা বলা ‘গীবত' নহে।
ইদ্দত—অর্থ, শুমার করা, গণনা করা। শরীঅতে ইহার অর্থ, সহবাস করা নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের পর অন্য বিবাহের জন্য এক নির্দিষ্ট সময় গণনা করা বা অপেক্ষা করা। বিভিন্ন নারীর পক্ষে এই সময় গণনা বিভিন্ন হয়। (১) যে নারীর ঋতু চালু আছে তাহার ইদ্দত হইল তিন ঋতু।
কোরআনে আছেঃ وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ “তালাকপ্রাপ্তা নারীগণ তিন ক্বুরূ অপেক্ষা করিবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮) 'ক্বুরূ' অর্থ এখানে ইমাম শাফেয়ীর মতে ‘তোহর' আর ইমাম আবু হানীফার মতে 'হায়য' (ঋতু)। উপরের এক হাদীস হইতেও ইহার এই শেষোক্ত অর্থই বুঝায়। হাদীসে বলা হইয়াছে, বাদীর ইদ্দত দুই হায়য। (২) বার্ধক্যের কারণে যাহার ঋতু বন্ধ হইয়া গিয়াছে অথবা বাল্যের কারণে ঋতু এখনও আসে নাই, তাহার ইদ্দত তিন মাস। কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাহারা ঋতু হইতে নিরাশ হইয়া গিয়াছে বা যাহাদের ঋতু আসে নাই, তাহাদের ইদ্দত হইল তিন মাস। (সূরা তালাক, আয়াত ৪) (৩) যাহারা তালাকের সময় গর্ভবতী, তাহাদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত, সময় বেশী হউক বা কম হউক। কোরআনে আছেঃ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ “আর গর্ভধারিণীদের সময় (ইদ্দত) হইল সন্তান প্রসব।” (সূরা তালাক, আয়াত ৪) (৪) বিবাহের পরে সহবাসের পূর্বে যাহাকে তালাক দেওয়া হইয়াছে তাহার কোন ইদ্দত নাই। কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا
“হে মু'মিনগণ, যখন তোমরা মু'মিনা নারীদের বিবাহ করিবে, অতঃপর স্পর্শের পূর্বেই তাহাদেরকে তালাক দিবে, তখন তাহাদের উপর কোন ইদ্দত নাই। যাহা তোমরা শুমার করিবে।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৪৯) (৫) যাহাদের স্বামী মারা গিয়াছে তাহাদের ইদ্দত হইল চারি মাস দশ দিন। কোরআনে রহিয়াছেঃ
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ
“তোমাদের মধ্যে যাহারা মরিয়া যায় এবং স্ত্রী রাখিয়া যায়, তাহারা (স্ত্রীগণ) অপেক্ষা করিবে চারি মাস দশ দিন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৪) তবে গর্ভবতী হইলে তাহাদের ইদ্দত হইল সন্তান প্রসব। এই পঞ্চমটি হইল আসলে শোক পালন। আরবীতে ইহাকে 'হেদাদ' বলে। স্বামী মরার পর এই শোক পালনের ব্যবস্থা প্রায় প্রত্যেক জাতিতেই আছে।
এই হাদীস অনুসারে ইমাম আহমদ (রঃ) বলেন, তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দতকালে স্বামীর নিকট সোকনা ও নফকা অর্থাৎ, থাকার আবাস ও খোরপোষ কিছুই পাইবে না। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অপর এক হাদীস অনুসারে বলেন, সে আবাস ও খোরপোষ উভয় পাইবে। কিন্তু ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (রঃ) বলেন, সে থাকার আবাস পাইবে, তবে খোরপোষ পাইবে না। (মেরকাত) আবু জাহম বৌ মারে— উপদেশ চাওয়া হইলে উপদেশ স্থলে সত্য কথা বলা ‘গীবত' নহে।