মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৫- গোলাম আযাদ করা সম্পর্কিত

হাদীস নং: ৩৩৮২
- গোলাম আযাদ করা সম্পর্কিত
দাস মুক্ত করা পর্বঃ
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৩৮২। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমান দাসকে দাসত্ব হইতে মুক্ত করিবে, (আযাদকৃত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ্ তাহার (মুক্তিদানকারীর) প্রত্যেক অঙ্গকে দোযখের আগুন হইতে মুক্তি দান করিবেন। এমন কি, ঐ ব্যক্তির (ক্রীতদাসের) লজ্জাস্থানের বিনিময়ে এই ব্যক্তির (মুক্তিদানকারীর) লজ্জাস্থানও আগুন হইতে মুক্তি পাইবে। -মোত্তাঃ
كتاب العتق
كتاب الْعتْق: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُسْلِمَةً أَعْتَقَ اللَّهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنَ النَّارِ حَتَّى فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

العتق বা العتاق এই শব্দদ্বয়ের আভিধানিক অর্থ হইল শক্তি বা প্রাবল্য। এই কারণে খানায়ে কা'বাকে বলা হয় 'বায়তুল আতীক।' কেননা, উহা নিজস্ব শক্তির বদৌলতে তাহার অনিষ্টকারী কিংবা ধ্বংসকারীকে প্রতিহত করিয়া দেয়। যেমন, ইয়ামান দেশীয় কাফের বাদশাহ্ ‘আবরাহাকে’ উহার ধ্বংস ও অনিষ্টকারিতা হইতে প্রতিহত করিয়াছে। আবার কাদীম বা পুরাতন বস্তুকেও 'আতীক' বলা হয়। কেননা, কোন জিনিস পূর্বে সংঘটিত হইলে তাহাতে গুণগত দিক হিসাবে এক ধরনের শক্তি অর্জিত হইয়া থাকে। এই জন্য হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর উপাধি ছিল 'আতীক।' কেননা পূর্ব হইতেই তিনি একাধিক গুণের অধিকারী ছিলেন। আবার কেহ কেহ বলিয়াছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ভাষার দোযখের আগুন হইতে মুক্তি লাভ করিয়াছেন ইত্যাদি কারণে তাঁহাকে 'আতীক' বলা হইত। তবে এইখানে কোন ক্রীতদাস তাহার মালিক হইতে মুক্তি লাভ করার অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। বস্তুতঃ মানুষ জন্মগতভাবে আযাদ বা স্বাধীন, কাহারও করতলগত হওয়াটা তাহার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। দাসত্ব অবস্থায় সে নিজের স্বভাবগত চাহিদা কিংবা দ্বীন-ঈমানের দাবীতে ধর্মীয় কার্যকলাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করিতে অপারক। এমতাবস্থায় সে একজন অসহায় ও অক্ষম, আর সেই দাসত্বের শৃঙ্খল হইতে মুক্তি লাভ করাটাই তাহার শক্তি। যেমন, দাস থাকাবস্থায় সে তাহার মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে হজ্জ করিতে কিংবা বিবাহ করিতে পারে না। আবার স্ত্রীকে দুইয়ের অধিক তালাক দেওয়া কিংবা দুই স্ত্রীর অধিক বিবাহ করার ক্ষমতাও রাখে না। ইসলামের ধর্মীয় যুদ্ধ বা জেহাদে বন্দী নর-নারীকে দাস ও দাসী বলা হয়।

فرجه بفرجه এই বাক্যের বিভিন্ন অর্থ হইতে পারে। যেমন—(১) ‘ফরজুন’ অর্থ লজ্জাস্থান এবং উহা হইল যিনার অঙ্গ। ইহাতে যিনার ন্যায় মারাত্মক কবীরা গুনাহ্ই বুঝান হইয়াছে। অর্থাৎ, যিনার ন্যায় মারাত্মক ধরনের কবীরা গুনাহে লিপ্ত হইলেও দাস মুক্ত করার দরুন সে দোযখের আগুন হইতে মুক্তি লাভ করিবে। (২) নিকৃষ্টতম অঙ্গ বুঝান হইয়াছে। অর্থাৎ, এইরূপ নিকৃষ্ট অঙ্গও দোযখের আগুন হইতে মুক্তি পাইবে। আর উক্ত হাদীস হইতে বুঝা যায় যে, অঙ্গবিহীন গোলামের চাইতে নিখুঁত গোলাম আযাদ করার ফযীলত অধিক।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান