মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৭- কিসাসের অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৫৩৯
- কিসাসের অধ্যায়
৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে
৩৫৩৯। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একবার 'উকল' গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক (মদীনায়) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসিয়া ইসলাম গ্রহণ করিল, কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাহাদের অনুকূল হইল না। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদিগকে (বায়তুল মালের) সদকার উষ্ট্রীর নিকট যাইয়া উহাদের পেশাব ও দুধ পান করিতে আদেশ দিলেন। তাহারা গেল এবং তাহাই করিল, অবশেষে তাহারা সুস্থ হইয়া মুরতাদ হইয়া গেল এবং রাখালদিগকে হত্যা করিয়া উটগুলি হাকাইয়া লইয়া গেল। (হুযূর [ছাঃ)-এর নিকট এই সংবাদ পৌঁছিলে) তাহাদের খোঁজে লোক পাঠান হইল, (দুপুরের আগেই) তাহাদিগকে পাকড়াও করিয়া আনা হইল এবং (শাস্তি হিসাবে) তাহাদের হাত পা কাটিয়া দেওয়া হইল, তাহাদের চক্ষু কুঁড়িয়া দেওয়া হইল। অতঃপর (রক্ত বন্ধের জন্য) তাহাদের ক্ষতস্থান দাগান হইল, না, যাহাতে তাহাদের মৃত্যু ঘটিল। অন্য আরেক রেওয়ায়তে আছে, লোকেরা তাহাদের চোখ গরম (লৌহ) শলাকা দ্বারা মুছিয়া দিল। অপর আরেক রেওয়ায়তে আছে, হুযূর (ছাঃ) লৌহ শলাকা আনিবার জন্য আদেশ দিলেন। অতঃপর উহা গরম করা হইল এবং উহা তাহাদের চোখে সুরমার শলাকার ন্যায় টানিয়া দেওয়া হইল। ইহার পর তাহাদিগকে উত্তপ্ত মাটিতে ফেলিয়া রাখিলেন। তাহারা পানি চাহিল। কিন্তু তাহা পান করান হয় নাই। অবশেষে তাহারা এই অবস্থায় মারা গেল। — মোত্তাঃ
كتاب القصاص
وَعَن أَنَسٍ قَالَ: قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَفَرٌ مِنْ عُكْلٍ فَأَسْلَمُوا فَاجْتَوَوُا الْمَدِينَةَ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يَأْتُوا إِبِلَ الصَّدَقَةِ فَيَشْرَبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا فَفَعَلُوا فَصَحُّوا فَارْتَدُّوا وَقَتَلُوا رُعَاتَهَا وَاسْتَاقُوا الْإِبِلَ فَبَعَثَ فِي آثَارِهِمْ فَأُتِيَ بِهِمْ فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ وَسَمَلَ أَعْيُنَهُمْ ثُمَّ لَمْ يَحْسِمْهُمْ حَتَّى مَاتُوا . وَفِي رِوَايَةٍ: فَسَمَّرُوا أَعْيُنَهُمْ وَفِي رِوَايَةٍ: أَمَرَ بِمَسَامِيرَ فَأُحْمِيَتْ فَكَحَّلَهُمْ بِهَا وَطَرَحَهُمْ بِالْحَرَّةِ يَسْتَسْقُونَ فَمَا يُسْقَوْنَ حَتَّى مَاتُوا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোন অপরাধীর হাত পা কাটিয়া উহাকে বিকলাঙ্গ করার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ইহাদের সাথে এইরূপ ব্যবহার করার কারণ এই ছিল যে, তাহারাও রাখালদের সাথে এইরূপ আচরণ করিয়াছিল। সুতরাং আল্লাহর কালামঃ والجروح قصاص এই বিধানের ভিত্তিতে ইহাদের সহিত এই ব্যবহার করা হইয়াছে। আবার কেহ কেহ বলেন, ইহা ‘আয়াতুল হুদুদ' অর্থাৎ, শাস্তির বিধানের আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বের ঘটনা।
উটের পেশাব অর্থাৎ, যেই পশুর গোশত খাওয়া হালাল, উহার পেশাব পাক কি নাপাক এই সম্পর্কে ইমামদের মতভেদ আছে। ইমাম মুহাম্মদ, মালেক ও আমদ বলেন, উহা পাক। তাই পান করার নির্দেশ দিয়াছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফের মতে উহা হারাম, তবে সম্ভবতঃ হুযুর (ﷺ) ওহীর মাধ্যমে জানিয়াছিলেন যে, তাহাদের চিকিৎসার একমাত্র ঔষধ ইহাই। আল্লামা কাসতালানী প্রমুখ বলেন, আসলে পেশাব পান করার নির্দেশ দেন নাই; বরং দুধ পানের এবং পেশাব মালিশ করার নির্দেশ দিয়াছিলেন এবং উক্ত রোগে উটের পেশাব মালিশ করাই ছিল উত্তম প্রতিষেধক। বর্ণনাকারী ابوال শব্দটি প্রথমে উল্লেখ করার কারণে উহা পান করার ভুল ধারণা সৃষ্টি হইয়াছে।
উটের পেশাব অর্থাৎ, যেই পশুর গোশত খাওয়া হালাল, উহার পেশাব পাক কি নাপাক এই সম্পর্কে ইমামদের মতভেদ আছে। ইমাম মুহাম্মদ, মালেক ও আমদ বলেন, উহা পাক। তাই পান করার নির্দেশ দিয়াছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফের মতে উহা হারাম, তবে সম্ভবতঃ হুযুর (ﷺ) ওহীর মাধ্যমে জানিয়াছিলেন যে, তাহাদের চিকিৎসার একমাত্র ঔষধ ইহাই। আল্লামা কাসতালানী প্রমুখ বলেন, আসলে পেশাব পান করার নির্দেশ দেন নাই; বরং দুধ পানের এবং পেশাব মালিশ করার নির্দেশ দিয়াছিলেন এবং উক্ত রোগে উটের পেশাব মালিশ করাই ছিল উত্তম প্রতিষেধক। বর্ণনাকারী ابوال শব্দটি প্রথমে উল্লেখ করার কারণে উহা পান করার ভুল ধারণা সৃষ্টি হইয়াছে।