মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৮- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৫৫৫
- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়
দণ্ডবিধি পর্ব:
প্রথম অনুচ্ছেদ
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৫৫৫। হযরত আবু হুরায়রা ও যায়দ ইবনে খালেদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত যে, একদা দুই বিবাদমান ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া তাহাদের ঝগড়া পেশ করিল এবং তাহাদের একজন বলিল, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব দ্বারা বিচার করুন। (প্রতিপক্ষ লোকটি ছিল কিছু বুদ্ধিমান। সুতরাং অপর লোকটি বলিল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্য আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ফয়সালা করিয়া দিন এবং আমাকে ঘটনার বিবরণ বলিবার অনুমতি প্রদান করুন। তিনি বলিলেন আচ্ছা বল। লোকটি বলিল, আমার পুত্র এই ব্যক্তির চাকর ছিল এবং তাহার স্ত্রীর সাথে যিনা করিয়াছে। লোকেরা আমাকে বলিয়াছে যে, আমার পুত্রের শাস্তি হইল 'রজম' (পাথর নিক্ষেপ করিয়া হত্যা করা)। কিন্তু আমি রজমের বিনিময়ে একশত ছাগল ও একটি দাসী ফিদিয়াস্বরূপ আদায় করিয়াছি। পরে আমি আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করিলাম। তাহারা আমাকে ফতওয়া দিয়াছেন যে, আমার পুত্রের শাস্তি একশত চাবুক এবং এক বৎসরের জন্য নির্বাসন। আর এই ব্যক্তির স্ত্রীর উপর অবশ্যই পাথর নিক্ষেপ করিতে হইবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, শুনিয়া লও। সেই মহান সত্তার কসম! যাহার হাতে আমার প্রাণ। অবশ্য আমি তোমাদের উভয়ের মধ্যে “আল্লাহর কিতাব দ্বারা বিচার করিব। আর তাহা হইল এই, ঐ একশত ছাগল আর দাসীটি তোমার কাছে ফেরত আসিবে, তবে তোমার পুত্রের উপর পড়িবে একশত চাবুক ও তাহার নির্বাসন হইবে এক বৎসরের জন্য। আর হে উনায়স। আগামীকাল প্রাতঃকালে তুমি এই ব্যক্তির স্ত্রীর নিকট যাও। যদি সে স্বীকার করে, তাহা হইলে তাহাকে পাথর নিক্ষেপ করিবে। পরদিন ভোরে সে ঐ মহিলাটির নিকট গেল এবং সে উহা স্বীকার করিল। অবশেষে তাহাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হইল। মোত্তাঃ
كتاب الحدود
كتاب الْحُدُود: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَزَيْدِ بْنِ خَالِدٍ: أَنَّ رَجُلَيْنِ اخْتَصَمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَحَدُهُمَا: اقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللَّهِ وَقَالَ الْآخَرُ: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فاقْضِ بَيْننَا بكتابِ الله وائذَنْ لِي أَنْ أَتَكَلَّمَ قَالَ: «تَكَلَّمْ» قَالَ: إِنَّ ابْنِي كَانَ عَسِيفًا عَلَى هَذَا فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ فَأَخْبرُونِي أنَّ على ابْني الرَّجْم فاقتديت مِنْهُ بِمِائَةِ شَاةٍ وَبِجَارِيَةٍ لِي ثُمَّ إِنِّي سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَأَخْبَرُونِي أَنَّ عَلَى ابْنِي جَلْدَ مِائَةٍ وَتَغْرِيبَ عَامٍ وَإِنَّمَا الرَّجْمُ عَلَى امْرَأَتِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللَّهِ أَمَّا غَنَمُكَ وَجَارِيَتُكَ فَرَدٌّ عَلَيْكَ وَأَمَّا ابْنُكَ فَعَلَيْهِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ فَاغْدُ إِلَى امْرَأَةِ هَذَا فَإِن اعْترفت فارجمها» فَاعْترفت فرجمها
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হুদুদ الحدود বহুবচন। একবচনে الحد -এর আভিধানিক অর্থ হইল, ‘বিরত রাখা'। এই জন্য দ্বাররক্ষীকে বলা হয় الحداد আল-হিদাদ। আর শরীআতের পরিভাষায় ঐ শাস্তিকে ‘হদ’ বলা হয়, যাহা আল্লাহর হক সংরক্ষণের জন্য ধার্য করা হইয়াছে। অতএব, 'কেসাস' হদ্ নহে। কেননা, উহা বান্দার হক রক্ষার্থে নির্ধারিত হইয়াছে। 'হদের' উদ্দেশ্য হইল মানুষের জান, মাল ও ইজ্জত-আবরুর হেফাযত করা এবং ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপকে সমূলে রোধ করা।
“আল্লাহর কিতাব দ্বারা” অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম দ্বারা। কেননা, 'আয়াতে রজম' কোরআনে বর্তমান নাই, অবশ্য উহার হুকুম ও বিধান বহাল আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকিবে। বিবদমান লোক দুইজনই অন্যান্য লোকের নিকট জানিতে পারিয়াছিল যে, 'আয়াতে রজম' কোরআনে বর্তমান নাই, তাই তাহারা হুযূর (ﷺ)-এর নিকট আসিয়া কোরআন মোতাবেক বিচার প্রার্থী হইয়াছিল।
এক বৎসরের জন্য নির্বাসিত করা ইমাম আবু হানীফার মতে হদ বা দণ্ড নহে, বরং উহা হইল প্রশাসনিক একটা সাময়িক ব্যবস্থা। বিচারক বা ইমাম স্থান-কাল ও পাত্র বিশেষে উহা প্রয়োগ করিতে পারেন।
“আল্লাহর কিতাব দ্বারা” অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম দ্বারা। কেননা, 'আয়াতে রজম' কোরআনে বর্তমান নাই, অবশ্য উহার হুকুম ও বিধান বহাল আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকিবে। বিবদমান লোক দুইজনই অন্যান্য লোকের নিকট জানিতে পারিয়াছিল যে, 'আয়াতে রজম' কোরআনে বর্তমান নাই, তাই তাহারা হুযূর (ﷺ)-এর নিকট আসিয়া কোরআন মোতাবেক বিচার প্রার্থী হইয়াছিল।
এক বৎসরের জন্য নির্বাসিত করা ইমাম আবু হানীফার মতে হদ বা দণ্ড নহে, বরং উহা হইল প্রশাসনিক একটা সাময়িক ব্যবস্থা। বিচারক বা ইমাম স্থান-কাল ও পাত্র বিশেষে উহা প্রয়োগ করিতে পারেন।