মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৭৮১
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮১। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ এই সমস্ত লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে— (১) খেয়ানতকারী পুরুষ ও খেয়ানতকারিণী নারী ; (২) যাহার উপর শরীআতের বিধান অনুযায়ী হদ কায়েম করা হইয়াছে ; (৩) শত্রুর ; যদিও সে তাহার মুসলমান ভাই হয়; (৪) ঐ গোলাম বা ক্রীতদাসের যাহাকে কোন ব্যক্তি দাসত্ব হইতে মুক্ত করিয়াছে, অথচ সে বলে, অন্য আরেক লোকে তাহাকে আযাদ করিয়াছে ; (৫) যে ব্যক্তি নিজের আসল বংশসূত্র গোপন করিয়া নিজেকে অন্য বংশের সহিত সংযোজন করে; এবং (৬) যে ব্যক্তি কোন পরিবারের উপর নির্ভরশীল (অর্থাৎ, পরিবারভুক্ত ভৃত্য, খাদেম ইত্যাদি)। —তিরমিযী এবং তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটি গরীব। আর অধস্তন একজন বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদ দেমাশকী—তিনি মুনকারুল হাদীস।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَجُوزُ شَهَادَةُ خَائِنٍ وَلَا خَائِنَةٍ وَلَا مَجْلُودٍ حَدًّا وَلَا ذِي غِمْرٍ عَلَى أَخِيهِ وَلَا ظَنِينٍ فِي وَلَاءٍ وَلَا قَرَابَةٍ وَلَا الْقَانِعِ مَعَ أَهْلِ الْبَيْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غريبٌ ويزيدُ بن زيادٍ الدِّمَشْقِي الرَّاوِي مُنكر الحَدِيث
হাদীসের ব্যাখ্যা:
‘খেয়ানতকারী' দ্বারা মানুষের আমানতে খেয়ানতকারীও হইতে পারে, আবার আল্লাহর আহকাম অমান্যকারীও হইতে পারে। সুতরাং এইখানে 'খায়েন' অর্থ ফাসেক বা কবীরা গুনায় রত ব্যক্তি, যাহার কার্যকলাপ গোপন থাকে নাই; বরং লোক সমাজে প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। ‘শরয়ী বিধান মোতাবেক সাজাপ্রাপ্ত।' এই কথার অর্থ হইল, অবিবাহিত ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী ও অন্যের উপর যিনার মিথ্যা অপবাদ রটনাকারী, যদ্দরুন সে নিজেই সাজা ভোগ করিয়াছে। 'কাযেফ' (যিনার অপবাদকারী) সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন, ‘কাফের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য তওবা করার পরও কবুল করা যাইবে না। অবশ্য অন্যান্য ইমামগণ বলেন, তওবা করার পর তাহার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাইবে। 'আযাদীর ব্যাপারে মিথ্যাবাদী গোলাম।' এই কথার তাৎপর্য হইল এই, গোলামের পরিত্যক্ত মীরাসকে বলা হয়, 'ওয়ালা'। যে ব্যক্তি কোন গোলামকে দাসত্ব হইতে মুক্ত করে, সেই ব্যক্তিই উক্ত গোলামের মীরাস বা ওয়ালার মালিক হয়। আর যেই মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম তাহার প্রকৃত মালিক ও আযাদকারীর পরিবর্তে অন্য ব্যক্তিকে আযাদকারী বলিয়া দাবী করে, সে পক্ষান্তরে তাহার মীরাস প্রকৃত হকদারকে না দিয়া অন্যকে প্রদান করিতে চায়। এই হিসাবে সে ফাসেক এবং এই কবীরা গুনাহ্য় লিপ্ত হওয়ায় তাহার সাক্ষ্য অগ্রাহ্য। 'আর বংশসূত্র গোপন করা।' এই কথার মানে হইল, নিজের বাপকে অস্বীকার করিয়া অন্যকে বাপ বলিয়া দাবী করা। এমন ব্যক্তির উপর হাদীসে লা'নত ও অভিসম্পাত করা হইয়াছে। আর 'পরিবারের উপর নির্ভরশীল।' এই বাক্যের অর্থ হইল, এমন লোক, যে ব্যক্তি পরিবারের সদস্যভুক্ত। যেমন— চাকর-চাকরানী, ক্রীতদাস, ও সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি। যেমন, পুত্রের সাক্ষ্য পিতার স্বপক্ষে এবং পিতার সাক্ষ্য পুত্রের স্বপক্ষে জায়েয নহে। অনুরূপভাবে চাকর ও গোলামের সাক্ষ্য তাহার প্রভু বা মালিকের স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য নহে।