মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৫- স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬২৫
- স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৬২৫। হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ফজরের নামাযের পর) অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁহার সাহাবীদিগকে জিজ্ঞাসা করিতেন, তোমাদের কেহ কোন স্বপ্ন দেখিয়াছে কি? যে ব্যক্তি কোন কিছু স্বপ্ন দেখিত আল্লাহ্ পাক তাওফীক দিলে সে তাহা হুযূর (ﷺ)-এর কাছে বর্ণনা করিত। একদিন সকালে তিনি আমাদিগকে বলিলেনঃ আজ রাত্রে দুইজন আগন্তুক (স্বপ্নের মধ্যে) আমার কাছে আসিয়াছিল। তাহারা আমাকে উঠাইল এবং বলিল, আমাদের সঙ্গে চলুন। আমি তাহাদের সঙ্গে চলিলাম । অতঃপর প্রথম পরিচ্ছেদে যে একটি লম্বা হাদীস বর্ণিত হইয়াছে উহার অনুরূপ বিস্তারিত ঘটনাটি তিনি বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য অত্র হাদীসে এমন কিছু কথা বর্ধিত আছে, যাহা পূর্বে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নাই। আর তাহা হইল—
সম্মুখে আমরা একটি ঘন সন্নিবিষ্ট বাগানে আসিয়া উপনীত হইলাম। বাগানটি বসন্তের হরেক রকম ফুলে সুশোভিত ছিল। হঠাৎ বাগানের মধ্যস্থলে আমার দৃষ্টি এমন এক ব্যক্তির উপরে পড়িল, যিনি এত দীর্ঘকায় ছিলেন যে, উপরের দিকে তাঁহার মাথা দেখা আমার জন্য কষ্টকর ছিল। তাঁহার চতুষ্পার্শ্বে এত বিপুল সংখ্যক শিশু ছিল, যাহাদিগকে আমি কখনও দেখি নাই। আমি সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, এই লোকটি কে? আর ইহারাই বা কাহারা ? কিন্তু তাহারা আমাকে বলিলেন, সামনে চলুন। সুতরাং আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইয়া বিরাট একটি বাগানে আসিয়া উপনীত হইলাম। এইরূপ বড় ও সুন্দর বাগান ইহার পূর্বে আর আমি কখনো দেখি নাই । হুযূর (ﷺ) বলেন, তাহারা আমাকে বলিলেন, বাগানের বৃক্ষে আরোহণ করুন। আমরা উহাতে আরোহণ করিলে এমন একটি শহর আমাদের নজরে পড়িল যাহা সোনা ও রূপার ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা ঐ শহরের দরজায় পৌঁছিলাম, দরজা খুলিতে বলিলে আমাদের জন্য দরজা খোলা হইল। উহার ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমরা কতিপয় লোকের সাক্ষাৎ পাইলাম। যাহাদের শরীরের অর্ধেক ছিল যে সব রূপ তুমি দেখিয়াছ তাহার চাইতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত। আর অর্ধেক ছিল তোমার দেখা রূপের মধ্যে অত্যধিক বিশ্রী। হুযূর (ﷺ) বলেন, আমার সঙ্গী দুইজন ঐ সমস্ত লোকদের উদ্দেশ্যে বলিল, যাও, তোমরা এই ঝর্ণায় নামিয়া পড়। তথায় প্রস্থের দিকে প্রবহমান একটি ঝর্ণা ছিল। উহার পানি ছিল একেবারে সাদা। তাহারা গিয়া উহাতে নামিল। অতঃপর নহরের পানিতে ডুব দিয়া তাহারা আমাদের কাছে ফিরিয়া আসিল। দেখা গেল, এখন তাহাদের দেহের কদাকৃতি দূর হইয়া গিয়াছে। এক্ষণে তাহারা খুব সুন্দর আকৃতিবিশিষ্ট হইয়া গিয়াছে।
হাদীসটির বর্ধিত এই কথাগুলির ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে যে, বাগানে যে দীর্ঘাকৃতির লোকটিকে দেখিয়াছিলেন, তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁহার চারি পার্শ্বের বালকগুলি ছিল সেই সমস্ত শিশু, যাহারা দ্বীনে ফেতরাতের (ইসলামের) উপর মৃত্যুবরণ করিয়াছে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মুসলমানদের কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আর মুশরিকদের সন্তান? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তাহারাও সেখানে। আর ঐ সমস্ত লোক যাহাদের শরীরের অর্ধেক অংশ সুন্দর ছিল আর বাকী অংশ ছিল কদাকার, তাহারা সেই সমস্ত লোক, যাহারা ভালোর সহিত মন্দ কাজও মিশ্রিতভাবে করিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করিয়া দেন। —বুখারী
সম্মুখে আমরা একটি ঘন সন্নিবিষ্ট বাগানে আসিয়া উপনীত হইলাম। বাগানটি বসন্তের হরেক রকম ফুলে সুশোভিত ছিল। হঠাৎ বাগানের মধ্যস্থলে আমার দৃষ্টি এমন এক ব্যক্তির উপরে পড়িল, যিনি এত দীর্ঘকায় ছিলেন যে, উপরের দিকে তাঁহার মাথা দেখা আমার জন্য কষ্টকর ছিল। তাঁহার চতুষ্পার্শ্বে এত বিপুল সংখ্যক শিশু ছিল, যাহাদিগকে আমি কখনও দেখি নাই। আমি সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, এই লোকটি কে? আর ইহারাই বা কাহারা ? কিন্তু তাহারা আমাকে বলিলেন, সামনে চলুন। সুতরাং আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইয়া বিরাট একটি বাগানে আসিয়া উপনীত হইলাম। এইরূপ বড় ও সুন্দর বাগান ইহার পূর্বে আর আমি কখনো দেখি নাই । হুযূর (ﷺ) বলেন, তাহারা আমাকে বলিলেন, বাগানের বৃক্ষে আরোহণ করুন। আমরা উহাতে আরোহণ করিলে এমন একটি শহর আমাদের নজরে পড়িল যাহা সোনা ও রূপার ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা ঐ শহরের দরজায় পৌঁছিলাম, দরজা খুলিতে বলিলে আমাদের জন্য দরজা খোলা হইল। উহার ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমরা কতিপয় লোকের সাক্ষাৎ পাইলাম। যাহাদের শরীরের অর্ধেক ছিল যে সব রূপ তুমি দেখিয়াছ তাহার চাইতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত। আর অর্ধেক ছিল তোমার দেখা রূপের মধ্যে অত্যধিক বিশ্রী। হুযূর (ﷺ) বলেন, আমার সঙ্গী দুইজন ঐ সমস্ত লোকদের উদ্দেশ্যে বলিল, যাও, তোমরা এই ঝর্ণায় নামিয়া পড়। তথায় প্রস্থের দিকে প্রবহমান একটি ঝর্ণা ছিল। উহার পানি ছিল একেবারে সাদা। তাহারা গিয়া উহাতে নামিল। অতঃপর নহরের পানিতে ডুব দিয়া তাহারা আমাদের কাছে ফিরিয়া আসিল। দেখা গেল, এখন তাহাদের দেহের কদাকৃতি দূর হইয়া গিয়াছে। এক্ষণে তাহারা খুব সুন্দর আকৃতিবিশিষ্ট হইয়া গিয়াছে।
হাদীসটির বর্ধিত এই কথাগুলির ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে যে, বাগানে যে দীর্ঘাকৃতির লোকটিকে দেখিয়াছিলেন, তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁহার চারি পার্শ্বের বালকগুলি ছিল সেই সমস্ত শিশু, যাহারা দ্বীনে ফেতরাতের (ইসলামের) উপর মৃত্যুবরণ করিয়াছে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মুসলমানদের কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আর মুশরিকদের সন্তান? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তাহারাও সেখানে। আর ঐ সমস্ত লোক যাহাদের শরীরের অর্ধেক অংশ সুন্দর ছিল আর বাকী অংশ ছিল কদাকার, তাহারা সেই সমস্ত লোক, যাহারা ভালোর সহিত মন্দ কাজও মিশ্রিতভাবে করিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করিয়া দেন। —বুখারী
كتاب الرؤيا
الْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا يَكْثُرُ أَنْ يَقُولَ لِأَصْحَابِهِ: «هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا؟» فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُصَّ وَإِنَّهُ قَالَ لَنَا ذَاتَ غَدَاةٍ: إِنَّهُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتِيَانِ وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِي وَإِنَّهُمَا قَالَا لِي: انْطَلِقْ وَإِنِّي انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا . وَذَكَرَ مِثْلَ الْحَدِيثِ الْمَذْكُورِ فِي الْفَصْلِ الْأَوَّلِ بِطُولِهِ وَفِيهِ زِيَادَةٌ لَيْسَتْ فِي الْحَدِيثِ الْمَذْكُورِ وَهِيَ قَوْلُهُ: فَأَتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتِمَةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ نَوْرِ الرَّبِيعِ وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَيِ الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَوِيلٌ لَا أَكَادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولًا فِي السَّمَاءِ وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلْدَانٍ رَأَيْتُهُمْ قَطُّ قُلْتُ لَهُمَا: مَا هَذَا مَا هَؤُلَاءِ؟ قَالَ: قَالَا لِيَ: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ عَظِيمَةٍ لَمْ أَرَ رَوْضَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا وَلَا أَحْسَنَ . قَالَ: قَالَا لِيَ: ارْقَ فِيهَا . قَالَ: «فَارْتَقَيْنَا فِيهَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبِنِ ذَهَبٍ وَلَبِنِ فِضَّةٍ فَأَتَيْنَا بَابَ الْمَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا فَتَلَقَّانَا فِيهَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ وَشَطْرٌ مِنْهُمْ كَأَقْبَحِ مَا أَنْتَ رَاءٍ» . قَالَ: قَالَا لَهُمُ: اذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهَرِ قَالَ: «وَإِذَا نَهَرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ الْمَحْضُ فِي الْبَيَاضِ فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ» وَذَكَرَ فِي تَفْسِير هَذِه الزِّيَادَة: «وَأما الرجلُ الطويلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ فَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ وَأَمَّا الْوِلْدَانُ الَّذِينَ حَوْلَهُ فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الْفِطْرَةِ» قَالَ: فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَوْلَادُ الْمُشْرِكِينَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأَوْلَادُ الْمُشْرِكِينَ وَأَمَّا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شطرٌ مِنْهُم حسن وَشطر مِنْهُمْ حَسَنٌ وَشَطْرٌ مِنْهُمْ قَبِيحٌ فَإِنَّهُمْ قَوْمٌ قَدْ خَلَطُوا عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا تَجَاوَزَ الله عَنْهُم» . رَوَاهُ البُخَارِيّ