মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৫২
- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়
১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৫২। হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (আমাকে লক্ষ্য করিয়া) বলিলেনঃ হে বৎস! যখন তুমি (ঘরে) পরিজনদের কাছে প্রবেশ কর তখন তুমি সালাম করিও। ইহাতে তোমার ও তোমার গৃহবাসীদের জন্য কল্যাণ হইবে। — তিরমিযী
كتاب الآداب
وَعَنْ

أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا بُنَيِّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُونُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. হযরত আনাস ইবনে মালেক প্রথম জীবনে একাধারে দশ বৎসর হুযূর (ﷺ)-এর খেদমত করিয়াছেন। তিনি আনাসকে অত্যধিক স্নেহ করিতেন, তাই তিনি আদর করিয়া তাহাকে 'বৎস' বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন।

২. হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তাঁকে নিজ সন্তানের মতো শিক্ষাদান করতেন। যখন যা শেখানোর প্রয়োজন হত, গুরুত্ব দিয়ে শেখাতেন। কী মমতার সঙ্গে তাঁকে শেখাতেন, এ হাদীছে তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি তাঁকে ডাক দিয়ে বলেন- يا بني (হে বাছা!)। بني শব্দটি اِبْنُ থেকে গঠিত। اِبْنُ অর্থ পুত্র। بني এর অর্থ স্নেহের পুত্র। তিনি স্নেহের পুত্র বলে ডাক দিচ্ছেন নিজ খাদেমকে, যে খাদেম কিনা তাঁর শিক্ষার্থীও বটে। এরূপ ডাক শিক্ষার্থীর মনে দারুণ রেখাপাত করে। তারপর যা শেখানো হয় তা সে গভীর আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকে। স্নেহের শিক্ষার্থী আনাস রাযি. অগ্রহের সঙ্গেই এ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন-
إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ، فسلم (তুমি যখন তোমার পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে)। সুতরাং তিনি কেবল এর উপর আমল করেই ক্ষান্ত হননি; বরং এ শিক্ষার প্রচারও করেছেন। তিনি এর প্রচার করতেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যে স্নেহসম্ভাষণ করেছিলেন তার উল্লেখপূর্বক। বড় তৃপ্তির সঙ্গে জানতেন,নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ কথাটি বলেছিলেন 'হে বাছা' সম্বোধনের সঙ্গে।

হাদীছটিতে পরিবারের কাছে তথা ঘরে প্রবেশকালে সালাম দিতে বলা হয়েছে। এর দ্বারা ঘরের লোকজনের প্রতি স্নেহ-মমতা ও আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটে। ফলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার সঞ্চার হয়। পরিবারের সদস্যবর্গের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। তখন একে অন্যের সহযোগী হয়। একের দ্বারা অন্যে উপকৃত হয়। এভাবে পরিবার হয়ে ওঠে সুখের, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণময়। বিষয়টি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র বাণীতে এভাবে ব্যক্ত করেন যে-
يَكُنْ بَرَكَةً عَلَيْكَ، وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ (তাতে তোমার ও তোমার পরিবারের উপর বরকত হবে।)। অর্থাৎ সালাম যেহেতু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলার কাছে শান্তি, রহমত ও বরকতের দু'আ, তাই ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তুমি ও তোমার পরিবারবর্গ পারিবারিক জীবনের সকল দিক থেকে বরকত ও কল্যাণ লাভ করতে থাকবে। তোমার পরিবার অনর্থ, অশান্তি ও দুঃখ-কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।

হাদীছটিতে ঘরে প্রবেশকালে সালাম দিতে বলা হয়েছে। কাজেই ঘরে লোকজন থাকলে তো তাদেরকে লক্ষ্য করে সালাম দেওয়া হবে। আর যদি কেউ নাও থাকে, তবুও সালাম দেওয়া চাই। তখন কী বাক্যে সালাম দেবে? এ বিষয়ে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إِذَا دَخَلْتَ بَيْتًا لَيْسَ فِيْهِ أَحَدٌ فَلْيَقُلِ : السَّلَامُ عَلَيْنَا، وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ
'যখন এমন কোনও ঘরে প্রবেশ করবে, যে ঘরে কেউ নেই, তখন বলবে- السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ( সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি)’। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৮৩৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ১৬৬৮; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ১৯৪৫১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৪৫১; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ; ১০৫৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৩২০)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ছাত্র বা অন্য কোনও স্নেহভাজনকে 'হে প্রিয় পুত্র' বলে সম্বোধন করা যেতে পারে।

খ. ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের সন্তানসুলভ মমতা প্রদর্শন করা উচিত।

গ. নিজ খাদেম-সেবকদেরও দীনী শিক্ষার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

ঘ. পরিবারের সদস্যদের প্রতি আচার-ব্যবহারে আন্তরিক থাকা উচিত।

ঙ. ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়া চাই, ঘরে কেউ না থাকলেও।

চ. সালাম দিয়ে প্রবেশ করার দ্বারা পরিবারের সদস্যবর্গ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকত লাভ করে থাকে।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান