মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৪৩
- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ গরীবেরা ধনীদের পাঁচ শত বৎসর পূর্বে বেহেশতে প্রবেশ করিবে। আর তাহা হইবে কিয়ামতের অর্ধদিন। – তিরমিযী
كتاب الرقاق
الْفَصْل الثَّانِي
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدْخُلُ الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمِائَةِ عَامٍ نِصْفِ يَوْمٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ কিয়ামতের একদিন হইবে দুনিয়ার এক হাজার বৎসরের সমান দীর্ঘ। গরীব-মিসকীনগণকে বেশী হিসাব দিতে হইবে না বিধায় ধনীদের পাঁচ শত বৎসর আগে জান্নাতে প্রবেশ করিবে বটে; কিন্তু দান-সদকাকারী, সম্পদশালী ও ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রমুখগণ হিসাব-নিকাশ চুকানোর পর জান্নাতে শেষে প্রবেশ করিলেও তাহারা উচ্চ মর্যাদা লাভ করিবে।

২. হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, গরীবেরা ধনীদের পাঁচশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর কারণ, হিসাব-নিকাশের জন্য ধনীদের আটকে রাখা হবে। তারা কোন পথে সম্পদ অর্জন করেছিল এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। গরীবদের তো সে বালাই নেই।

হযরত মালিক ইবন দীনার রহ. এক সফরে নদীর এক পার থেকে অপর পারে গেলেন। ওপারে যেতেই কর আদায়কারীগণ ধরল। তোমার মালামালের কর দিয়ে যাও। তিনি দু'হাত উঁচু করে বললেন, দেখ কী আছে, নিয়ে নাও। তারা দেখল সঙ্গে মালামাল বলতে কিছুই নেই। তাদের তো ব্যস্ততা। শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। তাড়া দিয়ে বলল, যাও যাও! তিনি কতদূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, ওহে দীনারের পুত্র মালিক। আখিরাতের বিষয়টি তো এমনই হবে। অর্থাৎ মাল নেই তো হিসাবও নেই। মাল থাকলে হিসাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।

এর দ্বারা বোঝা গেল ধনী দীনদার অপেক্ষা গরীব দীনদারের আখিরাতে পার হওয়া সহজ হবে। দীনদার ব্যক্তি ধনী হলে তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার একটা ব্যাপার যেহেতু আছে, তাই তার কিছু না কিছু বিলম্ব অবশ্যই হবে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে বিনা হিসেবে পার করে দেবেন তাদের কথা আলাদা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গরীবানা অবস্থা বাহ্যদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর। তাই গরীবদের উচিত অভাব-অনটনের জন্য আক্ষেপ না করে ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে দুনিয়ার জীবন পার করা।

খ. বিষয়টা যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের, তাই দীনদারীর শর্ত অবশ্যই আছে। সুতরাং কেবল গরীবানা অবস্থার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। নিজ দীন ও ঈমানেরও যত্ন নিতে হবে।

গ. বিলম্বে হলেও দীনদার ধনী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তাই ধনী ব্যক্তিরও নিজ দ্বীনদারীর পরিচর্যা করা অবশ্যকর্তব্য।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫২৪৩ | মুসলিম বাংলা