মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪৬৪
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা
৫৪৬৪। হযরত হোয়াইফা ইবনে আসীদ গিফারী (রাঃ) বলেন, একদা আমরা পরস্পরে কথা-বার্তা বলিতেছিলাম, এমন সময় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি সম্পর্কে আলোচনা করিতেছ ? তাহারা বলিলেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করিতেছি। তখন তিনি বলিলেনঃ তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হইবে না। আর তাহা হইল- (১) ধোয়া, (যাহা এক নাগাড়ে চল্লিশ দিন পূর্ব হইতে পশ্চিম প্রাপ্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া থাকিবে।) (২) দাজ্জাল, (৩) চতুষ্পদ জন্তু, (৪) পশ্চিমাকাশ হইতে সূর্য উদিত হওয়া, (৫) হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর (আকাশ হইতে) অবতরণ, (৬) ইয়াজুজ ও মাজুজ, (৭, ৮, ৯) তিনটি ভূমিধস — পূর্বাঞ্চলে, পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরব উপদ্বীপে। (১০) সর্বশেষে ইয়ামন হইতে এমন এক অগ্নি বাহির হইবে যাহা মানুষ দিগকে তাড়াইয়া একটি সমবেত হওয়ার স্থান (অর্থাৎ সিরিয়ার) দিকে লইয়া যাইবে। অপর এক বর্ণনায় আছে—আদন (এডেন)-এর অভ্যন্তর হইতে আগুন বাহির হইবে, যাহা মানুষদিগকে সমবেত হওয়ার স্থানের দিকে তাড়াইয়া নিবে। এবং অন্য এক রেওয়ায়তে দশম লক্ষণ সম্পর্কে বলা হইয়াছে; এমন এক বায়ু প্রবাহিত হইবে যাহা মানুষদিগকে (কাফেরদিগকে) সাগরে নিক্ষেপ করিবে। মুসলিম
كتاب الفتن
بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ: الْفَصْل الأول
عَن حذيفةَ بن أسيد الْغِفَارِيّ قَالَ: اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ. فَقَالَ: «مَا تَذْكُرُونَ؟» . قَالُوا: نَذْكُرُ السَّاعَةَ. قَالَ: إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْا قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى بْنِ مَرْيَمَ وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ . وَفِي رِوَايَةٍ: «نَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قَعْرِ عَدَنَ تَسُوقُ النَّاسَ إِلَى الْمَحْشَرِ» . وَفِي رِوَايَةٍ فِي الْعَاشِرَةِ «وَرِيحٌ تُلْقِي النَّاسَ فِي الْبَحْر» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রঃ) বলিয়াছেন, কিয়ামতের পূর্বলক্ষণ বা নিদর্শনসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। (এক) দূরবর্তী লক্ষণসমূহ, যাহা এক সময় ঘটিয়াছে এবং শেষও হইয়া গিয়াছে। (দুই) যাহা ঘটিয়াছে, কিন্তু শেষ হয় নাই; বরং উত্তরোত্তর উহা বৃদ্ধি পাইতেছে এবং শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছিতে থাকিবে। (তিন) নিকটবর্তী লক্ষণসমূহ, যাহা বিরাট আকারের নিদর্শন। প্রথমটির উদাহরণ – যেমন নবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব ও ওফাত। তাঁহার পরে খেলাফত, হযরত ওসমানের শাহাদত, সিরিয়া ও ইরাক বিজয়, সিফফীনের যুদ্ধ, হোসাইনের শাহাদত ইত্যাদি। দ্বিতীয়টির উদাহরণ— যেমন আমানতে খেয়ানত, সুদ ও মদের ব্যাপকতা, দুনিয়ার প্রতি লোভ, নেতা ও শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে খেয়ানত, প্রতারণা, মিথ্যা ওয়াদা, গানবাদ্য ও অশ্লীল চিত্তবিনোদনের প্রসার, হত্যাকাণ্ড ও ব্যভিচারের আধিক্য ইত্যাদি। আর তৃতীয়টি হইল বড় ধরনের লক্ষণ। অত্র অধ্যায়ে সেইগুলির বর্ণনা করা হইবে– যেমন দাজ্জালের আবির্ভাব, হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ, অত্যাচারী ও যালিমের শাসন ইত্যাদি, যাহা কিয়ামতের খুবই নিকটবর্তী সময়ে ঘটিবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান