মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৯৪
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৮৯৪। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম। তিনি গনীমতের মাল বিতরণ করিতেছিলেন। তখন বনী তামীম গোত্রের যুল-খুওয়াইছেরা' নামক এক ব্যক্তি আসিয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। ইনসাফ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলিলেন তোমার প্রতি আফসোস। আমিই যদি ইনসাফ না করি, তাহা হইলে ইনসাফ আর করিবে কে? যদি আমি ইনসাফ না করি, তবে তো তুমি ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্তই হইলে। (অর্থাৎ, আমার নবী হওয়া অস্বীকার করিলে তুমিও ঈমানদার থাকিবে না।) তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, আমাকে অনুমতি দিন, আমি উহার গর্দান মারিয়া দেই। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলিলেন, তাহাকে ছাড়িয়া দাও। কারণ, তাহার আরও কিছু সঙ্গী আছে। তোমাদের কেহ নিজের নামাযকে তাহাদের নামাযের সাথে এবং নিজের রোযাকে তাহাদের রোযার সাথে তুলনা করিলে নিজেদের নামায-রোযাকে তুচ্ছ মনে করিবে। তাহারা কুরআন পাঠ করে। কিন্তু উহা তাহাদের হলকুম অতিক্রম করে না। তাহারা দ্বীন-ইসলাম হইতে এমনভাবে বাহির হইয়া পড়িবে, যেমন তীর শিকার ছেদ করিয়া বাহির হইয়া পড়ে। অতঃপর সে (শিকারী ) তীরের পাট হইতে ধারাল মাথা পর্যন্ত তাকাইয়া দেখে। (কোথাও কোন কিছু লাগিয়া আছে কিনা?) কিন্তু উহাতে কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারের নাড়ি-ভুঁড়ি ও রক্ত-মাংস ভেদ করিয়া গিয়াছে। (অর্থাৎ, সেইসমস্ত লোক দ্বীন ইসলাম হইতে এমনভাবে দূরে থাকিবে যে, ইসলামের কোন চিহ্নই তাহাদের মধ্যে পাওয়া যাইবে না।) তাহাদের এক ব্যক্তির চিহ্ন হইবে, সে হইবে কালো বর্ণের, তাহার বাহুদ্বয়ের কোন এক বাহুর উপরে স্ত্রীলোকের স্তনের ন্যায় ফুলা অথবা বলিয়াছেন মাংসের একটি খণ্ডের ন্যায় উঠিয়া থাকিবে, যাহা নড়িতে থাকিবে এবং তাহারা উত্তম একটি দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হইবে।
বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, এই কথাগুলি আমি সরাসরি রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে শুনিয়াছি। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) সেই দলের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছেন। আমিও তাহার সাথে ছিলাম। [সেই যুদ্ধ ছিল খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) বিজয়ী হইয়াছেন।] যুদ্ধশেষে হযরত আলী (নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঐ লোকটির খোঁজ লইতে নির্দেশ করেন। সুতরাং তালাশ করিয়া এক ব্যক্তিকে আনা হইল। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি তাহাকে লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই চিহ্নসমূহ বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে সেইসমস্ত চিহ্নগুলি বিদ্যমান ছিল।
অপর এক রেওয়ায়তে আছে [রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) যখন গনীমতের মাল বন্টন করিতেছিলেন, তখন] এমন এক ব্যক্তি তাহার সম্মুখে আসিল, বাহার চক্ষু দুইটি ছিল কোটরাগত, কপাল উঁচু সম্মুখের দিকে বাহির হইয়া রহিয়াছে, দাড়ি ছিল ঘন, গণ্ডদ্বয় ছিল ফুলা আর মাথা ছিল ন্যাড়া। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ আল্লাহকে ভয় কর। জবাবে তিনি বলিলেন, আমিই যদি নাফরমানী করি, তাহা হইলে আল্লাহর আনুগত্য করিবে কে? (তুমি আমাকে আনুগত্যের কি শিক্ষা দিতেছ ?) স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা আমাকে দুনিয়াবাসীর উপর আমানতদার বানাইয়াছেন। আর তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? এই সময় এক ব্যক্তি [অর্থাৎ, হযরত ওমর (রাঃ)] এই ব্যক্তিকে হত্যা করিবার জন্য [নবী (ছাঃ)-এর কাছে] অনুমতি চাহিলেন; কিন্তু তিনি নিষেধ করিলেন। (বুখারীর রেওয়ায়তে আছে, হত্যা করিবার জন্য হযরত খালেদ ইবনুল ওলীদ অনুমতি চাহিয়াছিলেন।
উক্ত লোকটি যখন চলিয়া গেল, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, এই ব্যক্তির পরবর্তী বংশধরের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটিবে, যাহারা কুরআন পড়িবে কিন্তু উহা তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তাহারা দ্বীন-ইসলাম হইতে এমনভাবে বাহির হইয়া যাইবে, যেমন শিকার হইতে তাঁর বাহির হইয়া যায়। তাহারা ইসলামের অনুসারীদিগকে হত্যা করিবে এবং মূর্তিপূজারীদিগকে আপন অবস্থায় ছাড়িয়া রাখিবে। (অর্থাৎ, তাহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিবে না।) যদি আমি তাহাদের নাগাল পাইতাম, তাহা হইলে অবশ্যই আমি তাহাদের সকলকে 'আদ জাতির ন্যায় হত্যা করিতাম। মোত্তাঃ
বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, এই কথাগুলি আমি সরাসরি রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে শুনিয়াছি। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) সেই দলের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছেন। আমিও তাহার সাথে ছিলাম। [সেই যুদ্ধ ছিল খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) বিজয়ী হইয়াছেন।] যুদ্ধশেষে হযরত আলী (নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঐ লোকটির খোঁজ লইতে নির্দেশ করেন। সুতরাং তালাশ করিয়া এক ব্যক্তিকে আনা হইল। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি তাহাকে লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই চিহ্নসমূহ বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে সেইসমস্ত চিহ্নগুলি বিদ্যমান ছিল।
অপর এক রেওয়ায়তে আছে [রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) যখন গনীমতের মাল বন্টন করিতেছিলেন, তখন] এমন এক ব্যক্তি তাহার সম্মুখে আসিল, বাহার চক্ষু দুইটি ছিল কোটরাগত, কপাল উঁচু সম্মুখের দিকে বাহির হইয়া রহিয়াছে, দাড়ি ছিল ঘন, গণ্ডদ্বয় ছিল ফুলা আর মাথা ছিল ন্যাড়া। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ আল্লাহকে ভয় কর। জবাবে তিনি বলিলেন, আমিই যদি নাফরমানী করি, তাহা হইলে আল্লাহর আনুগত্য করিবে কে? (তুমি আমাকে আনুগত্যের কি শিক্ষা দিতেছ ?) স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা আমাকে দুনিয়াবাসীর উপর আমানতদার বানাইয়াছেন। আর তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? এই সময় এক ব্যক্তি [অর্থাৎ, হযরত ওমর (রাঃ)] এই ব্যক্তিকে হত্যা করিবার জন্য [নবী (ছাঃ)-এর কাছে] অনুমতি চাহিলেন; কিন্তু তিনি নিষেধ করিলেন। (বুখারীর রেওয়ায়তে আছে, হত্যা করিবার জন্য হযরত খালেদ ইবনুল ওলীদ অনুমতি চাহিয়াছিলেন।
উক্ত লোকটি যখন চলিয়া গেল, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, এই ব্যক্তির পরবর্তী বংশধরের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটিবে, যাহারা কুরআন পড়িবে কিন্তু উহা তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তাহারা দ্বীন-ইসলাম হইতে এমনভাবে বাহির হইয়া যাইবে, যেমন শিকার হইতে তাঁর বাহির হইয়া যায়। তাহারা ইসলামের অনুসারীদিগকে হত্যা করিবে এবং মূর্তিপূজারীদিগকে আপন অবস্থায় ছাড়িয়া রাখিবে। (অর্থাৎ, তাহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিবে না।) যদি আমি তাহাদের নাগাল পাইতাম, তাহা হইলে অবশ্যই আমি তাহাদের সকলকে 'আদ জাতির ন্যায় হত্যা করিতাম। মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْسِمُ قَسْمًا أَتَاهُ ذُو الْخوَيْصِرَة وَهُوَ رجلٌ من بني تَمِيم فَقَالَ يَا رسولَ الله اعْدِلْ فَقَالَ وَيلك وَمن يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ قَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِن لم أكن أعدل فَقَالَ عمر لَهُ ائْذَنْ لي أضْرب عُنُقه فَقَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلَاتَهُ مَعَ صَلَاتِهِمْ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ إِلَى رُصَافِهِ إِلَى نَضِيِّهِ وَهُوَ قِدْحُهُ إِلَى قُذَذِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ آيَتُهُمْ رَجُلٌ أَسْوَدُ إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ وَيخرجُونَ على حِين فِرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ هَذَا الْحَدِيثَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ قَاتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ فَأَمَرَ بذلك الرجل فالْتُمِسَ فَأُتِيَ بِهِ حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهِ عَلَى نَعْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي نَعَتَهُ وَفِي رِوَايَةٍ: أَقْبَلَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ نَاتِئُ الجبين كَثُّ اللِّحْيَةِ مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ مَحْلُوقُ الرَّأْسِ فَقَالَ يَا مُحَمَّد اتَّقِ الله فَقَالَ: «فَمن يُطِيع اللَّهَ إِذَا عَصَيْتُهُ فَيَأْمَنُنِي اللَّهُ عَلَى أَهْلِ الْأَرْضِ وَلَا تَأْمَنُونِي» فَسَأَلَ رَجُلٌ قَتْلَهُ فَمَنَعَهُ فَلَمَّا وَلَّى قَالَ: «إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ من الإِسلام مروق السهْم من الرَّمية يقتلُون أَهْلَ الْإِسْلَامِ وَيَدَعُونَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأقتلنهم قتل عَاد» . مُتَّفق عَلَيْهِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অর্থাৎ, সমূলে তাহাদিগকে ধ্বংস করিয়া দিতাম। আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যেই জাতি বা ব্যক্তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়া গিয়াছেন, পরবর্তী যুগে খারেজী সম্প্রদায়রূপে তাহার আবির্ভাব ঘটিয়াছে।